somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এবং গুজব, একটি অবরোধ ও একটি মৃত্যু :

০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নোট: M1803

রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম, উদ্দেশ্য বাসস্টপেজ। লোকাল বাস ধরে যাব ক্যাম্পাসে। আজ অনেক বড় ফাংশন আছে ডিপার্টমেন্টে। নবীন বরন। সেকেন্ড ইয়ারের সিআর বলে নবীন বরনের বিশাল একটা দায়ীত্ব কাঁধে। সেসব ভাবছিলাম।

পাশের স্যুট টাই পড়া ভদ্রলোকের কথায় সম্বিত ফিরে পেলাম, "ভাই, আজ নাকি ধর্মঘট? কোন বাসই নাকি ছাড়ছে না?" ভিতরে ভিতরে চমকে উঠলাম, বলে কি? তাহলে ক্যাম্পাসে যাব কিভাবে? মনের ভাবটা কিছুতেই প্রকাশ করলাম না। খুব কনফিডেন্সের সাথে বলে উঠলাম, "আরে ধুর! কি যে বলেন! এসব গুজবে কান দিয়েন না। মানুষ মানুষকে বিভ্রান্ত করে কি যে মজা পায়! দেখবেন এখনই বাস চলে আসবে।"
আমার কথার সত্যতা প্রমাণের জন্যেই বোধয় সাথে সাথে একটা বাস এসে পৌছুলো। খুব ভীড়, আসলেই আজ ধর্মঘট, যার কারনে বাস কম যাত্রী বেশি। যাক বাস আসাতে এই যাত্রায় বেঁচে গেলাম। আসলেই গুজবে কান দিতে নেই।

বাস চলতে শুরু করল, হ্যান্ডেল ধরে দাড়িয়ে আছি, দাঁড়িয়ে না ঠিক, বলা যায় ঝুলে আছি। পেছন থেকে দুই মুরব্বির টুকটাক আওয়াজ কানে আসছে। "শুনলাম সামনে নাকি ভাংচুর হচ্ছে? বাস তো বেশিদুর যাবে না, সামনের স্টপেজে নেমে হেঁটে যেতে হবে" আবার ছোটখাট একটা ধাক্কা খেলাম! বলে কি? সাথে সাথে বাম বুকে হাত দিয়ে মনকে প্রবোধ দিলাম " সব গুজব, সব গুজব, ভাংচুর হবে কেন? কিচ্ছু হবে না। "

এমন সময় কাচ ভাংগার আওয়াজে সব উত্থাল পাতাল হয়ে গেল৷ হার্ডব্রেক করা বাসের মেঝেতে আম চিৎপটাং! আমার উপর দিয়ে মানুষ দৌড়ে নামছে আর চারপাশ থেকে একের পর এক ইটের আঘাত বাসের গায়ে। ভাবলাম এও হয় নাকি? এই স্টপেজে তো ভাংচুর হওয়ার কথা না, তবুও এসব কি? আর সবাই পালায় কেন? মনকে বুঝালাম এসব সত্য না, কেও হয়তো গুজব রটিয়েছে বাসে হামলা হয়েছে। সবার মনে ভয়। গুজবে কান না দিয়ে কানে আঙ্গুল ঢুকিয়ে শুয়ে রইলাম।
হঠাৎ মাথায় কিসের যেন আঘাত, এটা কি গুজবের আঘাত ছিল? ভাবার আগেই জ্ঞান হারালাম।

চোখ খুলতেই আবিষ্কার করলাম নরম এক বিছানায়, উপরে লাইট জ্বলছে আর আশেপাশে এপ্রোন পরা কিছু মানুষ তাড়াহুড়ো করে আমার মাথায় কি যেন করছে।হঠাৎ একটা যন্ত্র থেকে চিকন একটা শব্দ এলো। এতক্ষণ বিপ বিপ শব্দ আসছিল। এপ্রোন পড়া ভদ্রলোকটি সেদিকে তাকিয়ে বড় একটি নিশ্বাস ফেলে দরজার দিকে এগিয়ে গেল। বিছানা থেকে উঠে তার পিছু নিলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখি ডিপার্টমেন্ট এর অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে। ভিতর থেকে বের হওয়া লোকটি মাথা নাড়তেই সবাই একজন আরেকজনকে ধরে কেঁদে উঠল। এর মধ্যে একজন আবার কাকে জানি ফোন করে আমার নাম ধরে বলল আমি নাকি মারা গেছি। মেজাজ চরমে উঠে গেল! আমি জলজ্যান্ত দাঁড়িয়ে আছি, আর আমার সামনে দাঁড়িয়ে আমার নামে গুজব ছড়ায়! ওদের পরে দেখব, আগে ডাক্তার ব্যাটাকে শায়েস্তা করতে হবে। উলটা ঘুরে ভিতরে গেলাম। দরজা খুলে ঢুকতেই আমার তো অবাক হওয়ার পালা। বেডে শুয়ে আছে আমার মতো অবিকল দেখতে এক ছেলে। আমি কিছু বুঝতে পারছি না। এখানে আমাকে নিয়ে এত গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে আর ওরা আরেকজনকে নিয়ে টানা টানি করা শুরু করছে।

কিছুক্ষণ পর বাড়ির সবাই আসল আমার মতো দেখতে ছেলেটার দেহ ধরে কান্নাকাটি করল সবাই মিলে। তারপর নিয়ে গেল বাড়িতে। সব আত্মীয়স্বজন উপস্থিত। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম, "সব গুজব! আমি বেঁচে আছি। এই যে আমি কথা বলছি!!"

আমার কন্ঠ দিয়ে কোন আওয়াজ বেরোল না।

08/08/18
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×