somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গ্রিক পুরাণের দেব-দেবী : বিচিত্র ,বীরত্ব, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১১ সন্ধ্যা ৬:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Sword war মুভি আমার খুব ভাল লাগে ।আর তলোয়ার যুদ্ধের মুভি মানেই গ্রিক পৌরণিক কাহিনীর মুভি ।এসব মুভিতে আছে মানব বীরদের বীরত্ব আর দেবতা-দেবীদের কারসাজি । মুভি দেখে আগ্রহ হয়ে উঠি দেব-দেবী(প্রমিথিউস,জিউস,নার্সিসাস,আফ্রোদিতি,অর্ফিউস,হেফেস্টাস,কিউপিড) ,দেবতা-দেবীদের কর্মকাণ্ড আর গ্রিক পৌরণিক কাহিনীর প্রতি ।
গ্রিক পুরাণের জগৎ এক অদ্ভুত আলো-আঁধারীর জগৎ, এক আবেগ স্পন্দিত বাসনা সম্মোহিত জগৎ। গ্রিক পুরাণে কীর্তিত হয়েছে দেব-দেবীদের জন্মবৃত্তান্ত, তাদের প্রেম-প্রণয়-শঠতা ও বিচিত্র দৈব মহিমার পাশাপাশি মর্ত্যের মানব-মানবীর বিবিধ ও বিচিত্র বীরত্বপূর্ণ কার্যাবলি, প্রেম-বিশ্বাস-ত্যাগে পরিপূর্ণ জীবনকাহিনী।
গ্রিক পুরাণে দেবতা ও মানুষ স্বর্গ ও মর্ত্যের সীমারেখা ছাড়িয়ে এক অখণ্ড পরিমণ্ডলে একাকার হয়ে এক বৃহত্তর জীবনাবর্তে আবর্তিত হয়েছে। মানুষ ও দেবতাকে সেখানে আলাদা করে দেখা বেশ মুশকিল। দেবতার সঙ্গে মানুষের বন্ধু ও অংশীদারের সম্পর্ক। আর দেবতারাও তাদেরই মতো মানুষ। তাদেরও জীবন মানুষের মতো সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, প্রেম-প্রতিহিংসা নিয়ে।
তবে মানুষের জীবন সেখানে পুরোপুরি দৈব ও নিয়তি নিয়ন্ত্রিত। মানুষ বাহুবল ও বুদ্ধিবলে যতই বীরত্ব দেখাক না কেন দৈব অনুগ্রহ না পেলে চূড়ান্ত বিজয় তার অসম্ভব। যে অমোঘ অদৃশ্য শক্তি মানুষের জীবনকে বিচিত্র ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এক অবশ্যম্ভাবী পরিণতির দিকে নিয়ে যায় সে শক্তিকে জয় করতে পারে না মানুষ। শাস্তি হবে জেনেও গ্রিক পুরাণে দেবতাদের বিরুদ্ধে মানুষের বিদ্রোহের প্রচেষ্টা আছে, প্রেম ও সৌন্দর্যের অমলিন চিত্র আছে, আবার শঠতা ও ভয়াবহ প্রতিহিংসার চিত্রও আছে। এসব চিত্র দেখতে পাওয়া যায় মানুষের মধ্যে যেমন, তেমনি দেবতাদের মধ্যেও।
গ্রিক পুরাণের অসংখ্য চরিত্র থেকে কয়েকটি চরিত্র নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লেখার ইচ্ছে আছে ।
আজ লিখব গ্রিক পুরাণ অনুসারে মানব সৃষ্টি রহস্য আর প্রমিথিউসকে নিয়ে ।


সৃষ্টির আদিতে ছিল বিভ্রান্তিকর নিঃসীম শূন্যতা। এ শূন্যতার মধ্য থেকে আবির্ভূত হন আকাশদেবতা ইউরেনাস, ধরিত্রীদেবী গেইয়া, তমসাদেবতা এরিবাস ও নিশাদেবী নিক্স।
ইউরেনাসের সঙ্গে বিয়ে হয় গেইয়ার। ইউরেনাস আকাশ থেকে নেমে আসেন পৃথিবীতে। কালক্রমে ইউরেনাসের ঔরসে গেইয়ার গর্ভে জন্ম নেয় বারোজন টাইটান, তিনজন সাইক্লোপ ও তিনজন হেকাটনচেরি। টাইটানরা দেব বংশের পূর্বপুরুষ। সাইক্লোপরা একচক্ষুবিশিষ্ট, হেকাটনচেরিরা শতহস্তধারী এবং এরা সবাই দানব।
টাইটান আইয়াপেটাসের ঔরসে প্রমিথিউসের জন্ম। প্রমিথিউস পরিচিত হন দূরদর্শী হিসেবে। তার অন্য ভাইয়ের নাম এপিমেথিউস। তাকে বলা হতো অদূরদর্শী। মানবজাতির সর্বনাশের জন্য পরবর্তীকালে এই এপিমেথিউসের কাছেই দেবতারা প্যান্ডোরাকে পাঠিয়েছিলেন এক জাদু বাক্সসহ।
ইউরেনাসের সঙ্গে গেইয়ার তেমন বনিবনা ছিল না। বিরক্ত গেইয়া তার পুত্রদের ইউরেনাসের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলেন, সর্বকনিষ্ঠ টাইটান ক্রনাস মাতার অনুরোধে ধারালো একটি কাস্তে দিয়ে ইউরেনাসকে নির্বীর্য করে দেন। ইউরেনাস ক্রনাসকে অভিশাপ দিয়ে আকাশলোকে অন্তর্হিত হন। এরপর সিংহাসনে বসেন ক্রনাস।
সিংহাসনে বসেও মনে সুখ নেই ক্রনাসের। তার রাজ্যে শুধু গাছপালা, পশুপক্ষী ও বাকহীন জীব। পশুদের হুঙ্কার এবং পাখিদের কিচিরমিচির ছাড়া অন্য কোনো কলরব নেই। ক্রনাসের সঙ্গে তাদের নেই কোনো যোগাযোগ। প্রমিথিউসকে ডেকে এর একটা বিহিত-ব্যবস্থা করতে বললেন ক্রনাস। প্রমিথিউস তখন কাদা ছেনে নিজের ক্ষুদ্র ও সংক্ষিপ্ত প্রতিচ্ছায়ারূপে তৈরি করলেন মাটির কিছু মূর্তি। মুগ্ধ ক্রনাস মূর্তিগুলোর মধ্যে প্রাণসঞ্চার করে ছেড়ে দিলেন পৃথিবীতে। পৃথিবীতে আবির্ভূত হলো প্রথম মানব। শুরু হলো পৃথিবীর স্বর্ণযুগ।
ক্রনাসের বিয়ে হলো নিজের সুন্দরী ভগিনী রিয়ার সঙ্গে। রিয়া গর্ভবতী হলে ক্রনাসের হঠাৎ মনে পড়ে যায় পিতৃ অভিশাপের কথা। অভিশাপে বলা হয়েছিল স্বীয় পুত্রদের দ্বারা ক্রনাস একদিন সিংহাসনচ্যুত হবে।
পিতা ইউরেনাসের অভিশাপের ভয়ে ভীত ক্রনাস প্রতিবারই রিয়ার সন্তান জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তাকে গিলে ফেলতে থাকে। অতঃপর রিয়ার কৌশলে বেঁচে যায় কনিষ্ঠ পুত্র জিউস।
কালক্রমে জিউস বড় হয়ে ক্রনাসের উদর থেকে ভাই-বোনদের উদ্ধার করেন এবং যুদ্ধ ঘোষণা করেন ক্রনাসের বিরুদ্ধে। গ্রিক পুরাণে এই যুদ্ধ টাইটানদের যুদ্ধ নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে প্রমিথিউস নিরপেক্ষ অবস্থান নেন। ১০ বছর যুদ্ধ চলার পর ক্রনাস পরাজয় স্বীকার করেন। ক্রনাস ও তার সহযোগী টাইটানদের টাটারাস নামক নরকে ফেলে দেওয়া হয়। যুদ্ধে ক্রনাসের পক্ষে নেতৃত্ব দেওয়ায় টাইটান অ্যাটলাসের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হয় আকাশ ও পৃথিবীর ভার। এরপর অলিম্পাস পর্বতের শিখরে জিউস দেবলোক অর্থাৎ স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। নিজে হন দেবতাদের রাজা। প্রমিথিউস টাইটান হলেও যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকায় দেবলোকে বাস করার অনুমতি পান।
দেবলোকে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জিউস পৃথিবী নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। ক্রনাসের আগ্রহে মানুষ সৃষ্টি হওয়ায় মানুষের ব্যাপারে জিউসের মোটেও কোনো উৎসাহ ছিল না। ক্রনাসের আমলে পৃথিবীতে ছিল চিরবসন্ত। জিউস তাতে পরিবর্তন আনলেন। সৃষ্টি করলেন চার ঋতু, এতে মানুষ পড়ল চরম অসুবিধায়। গ্রীষ্মের খরতাপ এবং শীতের তুষারপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানুষ বন-জঙ্গলে আশ্রয় খুঁজতে লাগল। সেখানে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী হিংস্র জীবজন্তু। বৈরী প্রকৃতি এবং জীবজন্তুর আক্রমণে বিপর্যস্ত হলো মানুষ।
অলিম্পাস থেকে সবই দেখছিলেন প্রমিথিউস। মানুষের দুঃখে তিনি কাতর হয়ে উঠলেন। দেবরাজ জিউসের কাছে মানুষের জন্য আগুন প্রার্থনা করলেন_ যাতে তারা শীত এবং অন্ধকার অরণ্যের হিংস্র জীবজন্তুর হাত থেকে রক্ষা পায়। প্রমিথিউসের আবেদনে সাড়া দিলেন না জিউস। জানিয়ে দিলেন মানুষ নিয়ে তার কোনো মাথাব্যথা নেই। মানুষের পরিবর্তে মর্ত্যলোকে তিনি বরং অন্য কিছু সৃষ্টি করবেন। তাই মানুষের হাতে আগুন পেঁৗছানোর কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
জিউসের কথায় শিউরে উঠলেন প্রমিথিউস। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, যে করেই হোক তিনি মানুষকে জিউসের রোষানল থেকে রক্ষা করবেন। তিনি গোপনে মর্ত্যে গিয়ে মানুষকে আত্মরক্ষার কলাকৌশল শিক্ষা দিতে থাকলেন। তারপর একদিন সুযোগ বুঝে অ্যাপোলোর অগি্ন রথের চাকা থেকে আগুন নিয়ে মানুষকে দিলেন। মানুষকে শিখিয়ে দিলেন আগুনের ব্যবহার।
আগুনের ব্যবহার শিখে মানুষ উন্নততর জীবনব্যবস্থার সুযোগ পাওয়ায় জিউস অত্যন্ত ত্রুক্রদ্ধ হলেন প্রমিথিউসের ওপর। ত্রুক্রদ্ধ জিউসের আদেশ হলো দেব কারিগর হেফেস্টাস কঠিনতম শৃঙ্খল দিয়ে ককেসাসের এক নির্জন চূড়ায় প্রমিথিউসকে বেঁধে রাখবেন আর প্রতিদিন জিউসের ঈগল এসে তার যকৃৎ ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাবে। সারাদিন এ যন্ত্রণা চলবে, রাতে আবার নতুন যকৃৎ সৃষ্টি হবে, পরের প্রভাতে আবার আসবে জিউসের ঈগল_ এই দণ্ড চলবে অনন্তকাল।
জিউস ভেবেছিলেন প্রমিথিউস ক্ষমা চাইবেন তার কৃতকর্মের জন্য। প্রমিথিউস ছিলেন দূরদর্শী ও ভবিষ্যৎদ্রষ্টা। এ কারণে জিউসের প্রয়োজন ছিল প্রমিথিউসের সাহায্যের। কিন্তু প্রমিথিউস ক্ষমা চাইলেন না। কেননা তিনি জানতেন, যে মানুষের হাতে তিনি আগুন তুলে দিয়ে অমিত শক্তির মন্ত্রে দীক্ষিত করেছেন, তারা তাকে ভুলবে না। মানুষের হাতেই মুক্তি ঘটবে তার।
বহু শত বছর পর প্রমিথিউসের প্রত্যাশা পূরণ হয়েছিল। মানুষ ভোলেনি তার যন্ত্রণাকাতর আর্ত কণ্ঠের আবেদন। বীর হারকিউলিস জিউসের ঈগলকে বধ করে হেফেস্টাসের বজ্রশৃঙ্খল ভেঙে প্রমিথিউসকে মুক্তি দিয়েছিলেন।

আজ এ পর্যন্ত , ইচ্ছে আছে আর ও দেবতা-দেবীদের গল্প শোনানোর ।
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইসলামে পর্দা মানে মার্জিত ও নম্রতা: ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্ক

লিখেছেন মি. বিকেল, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১:১৩



বোরকা পরা বা পর্দা প্রথা শুধুমাত্র ইসলামে আছে এবং এদেরকে একঘরে করে দেওয়া উচিত বিবেচনা করা যাবে না। কারণ পর্দা বা হিজাব, নেকাব ও বোরকা পরার প্রথা শুধুমাত্র ইসলাম ধর্মে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×