somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাঁধ নির্মানে প্রাকৃতিক সম্পপদ ও রিবেশ বিপর্যয়ের সমপরিমান ক্ষতির আশংকা ভূ-অর্ভন্তরের খনিজ সম্পদের

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদি প্রশ্ন করা হয়, পরিবেশ বিষয়ে আমরা কতটা সচেতন? সাথে সাথে আরও একটি প্রশ্ন এসে যায়, পরিবেশ সম্বন্ধে আমরা কতটা জানি? যে কোন ভাবেই হোক আমাদের মাথায় একটি বিষয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে আর সেটি হচ্ছে ‘গ্লোবাল ওয়ারমিং’। স্কুলের একটি ছোট বাচ্চাও জানে গ্লোবাল ওয়ারমিং সম্পর্কে। আমাদের জানানো হয়েছে গ্লোবাল ওয়ারমিং বা বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে বিশ্বের মেরু অঞ্চলে থাকা বরফের পাহাড় গলে যাবে এবং এর ফলে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের নিন্মাঞ্চল পনিতে ডুবে যাবে। যেহেতু বিশেষজ্ঞরা বলেছেন তাই এই কথার যথার্থতা অবশ্যই আছে। কিন্তু নদীর গতিপথে বাঁধ নির্মাণের কারণে বাংলাদেশ যে খড়ায় পরিণত হয়েছে সে সম্পর্কে আমারা জানি নিতান্তই অল্প। এ বিষয়ে আমাদের সচেতনতারও অভাব আছে। চোখে যা দেখছি আর কান দিয়ে যা শুনছি সে কথা এবার না বললেই নয়।
প্রথমেই আমাদের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল পনি সংকটের কারণে খড়া অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। এর কারণ ফারাক্কা বাঁধ। বাংলাদেশ-ভারত সিমান্ত থেকে ভারতের প্রায় ১৮ কি.মি ভেতরে এই বাঁধ চলে গেছে। ১৯৭৫ সালে বাঁধটি চালু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিস্তির্ণ অঞ্চলে নেমে আসে ব্যপক দূর্যোগ। রাজনৈতিক দূরদর্শীতার অভাবে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় বাধা দেয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। ভারত সরকার চুক্তির নামে মুলো দেখিয়েছে। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে ফারাক্কার পানি নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৭ সালে ভারতের সাথে প্রথমবার চুক্তি করতে সমর্থ হয়। তাও আবার পাঁচ বছরের জন্য! এরপর ১৮৮২, ১৯৮৫ ও ১৯৯৬ সালেও চুক্তি হয়েছে। চুক্তি করতে করতে এখন বাংলাদেশ ক্লান্ত। দরিদ্র পরিবারের ক্ষুধার্ত শিশু যেমন খাবার না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে এক সময় ঘুমেিয় পড়ে তেমনি ‘পানির’ আশায় চুক্তি নামক মুলোর পেছনে ছুটতে ছুটতে বাংলাদেশও এখন ক্লান্ত। বাংলাদেশ যে তার ন্যয্য পাওনা না পেয়ে এক সময় হাল ছেড়ে দেবে এ কথা বোধ করি ভারতও জানত। আর সে জন্যই বাংলাদেশের করুণ কান্নায় ভারত কখনই কর্ণপাত করেনি।
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানে কেউ কেউ বলেছেন হঠাৎ চুক্তি সই এর কথা। বাঁধ নির্মানের বিষয়টি হঠাৎ নয়, বেশ পুরোনো। ভারতেরও অনেক বিজ্ঞানী টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের বিপক্ষে মত দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন এই বাঁধ হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। টিপাইমুখ খুবই ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। যার ফলে ভূমিকম্প হলেই বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা অনেক বেশি। বাঁধটি হঠাৎ ভেঙ্গে গেলে আটকে থাকা পানি ছাড়া পেয়ে প্রবল বেগে ভাটির দিকে প্রভাহিত হবে। ফলে মনিপুর, আসাম এবং বাংলাদেশের অনেক অঞ্চল শুধু তলিয়েই যাবে না, ধ্বংস প্রাপ্তও হবে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হবে বাংলাদেশে। ভারত সরকার এর সবই ভালভাবে জানে। কিন্তু তারপরও হাজার হাজার কোটি রুপি খরচ করে ১৬৪ মিটার উঁচু বাঁধ নির্মানে ভারত কেন এত উৎসাহী? ভারত সরকার সবসময়ই তাদের স্বার্থের বিষয়ে সচেতন। আসলে এটি একটি হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট। বাঁধ নির্মানের একটি প্রধান কারণ হল সেখোন থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন। টিপাইমুখ বাঁধ থেকে ১৫ শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং তা সারা ভারতে ব্যবহার হবে। বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে অনেক বেশি। অন্য যে কোন মাধ্যমের চেয়ে হাইড্রোইলেকট্রিক প্রজেক্ট এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ অনেক কম।
বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, এই বাঁধ নির্মানের ফলে দেশের অন্তত ৭টি জেলা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। ভারতের যুক্তি বাঁধ নির্মানের ফলে পানি নিয়েন্ত্রণ সহজ হবে এবং বাংলাদেশও উপকৃত হবে। কিন্তু প্রকৃত অবস্থা ভিন্ন। প্রকৃতির একটি স্বভাবিক নিয়ম আছে। বাঁধ নির্মানের ফলে সেখানে জমে থাকা পনির উচ্চতা স্বাভাবিকভাবেই অনেক বেড়ে যাবে। এর ফলে ভূ-পৃষ্ঠের উপর পানির চাপও বেড়ে যাবে। অপর দিকে পানিকে সঠিক ভাবে ও প্রাকৃতিক নিয়মে প্রবাহিত হওয়ার সুযোগ না দেয়ায় ভূ-গর্ভের পানির স্তরও নিচে নেমে যাবে। ওই অঞ্চল অত্যন্ত ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হওয়ায় ভূপৃষ্ঠের চাপের পার্থক্যের কারণে ভূমিকম্পের আশংকা আরও বেড়ে যাবে এ কথা সহজেই বোধগম্য। জাতীয় দৈনিকের প্রকাশিত(১৫ মার্চ ২০১০, দৈনিক জনকণ্ঠ) সংবাদ থেকে জানা যায়, দেশের ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোকে বাংলাদেশে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে জোন-১ সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে বিবেচিত। দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা সিলেট, ময়মনসিংহ এবং রংপুর এই জোন-১ এর অন্তর্গত। টিাপইমুখ বাঁধ এই অঞ্চলে ভুমিকম্পের আশংকায় নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ভূমিকম্প ছাড়াও টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের ফলে এই অঞ্চলে পরিবেশের বহুমাত্রিক ক্ষতি সাধিত হবে। সিলেট অঞ্চলের ভূমির অভ্যন্তর বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের আধার। রয়েছে কয়লা ও গ্যাসের খনি। টিপাইমুখ বাঁধের কারণে ভূমির উপরিভাগে অতিরিক্ত চাপ এবং বিভিন্ন স্থানে চাপের তারতম্যে কারণে এসব খনিতে বিপর্যয়ের আশংকা থেকেই যায়। এছাড়াও বাঁধ নির্মানের কারণে যদি ভূমিকম্প হয় তবে নিশ্চিতভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের এসব খনি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। হাওর অঞ্চলের ইকোসিস্টেম(ঊপড়ংুংঃবস) বা বাস্তুতন্ত্র নষ্ট হবে। হবিগঞ্জ,সুনামগঞ্জ, মৌলভিবাজার এর হাকালুকি হাওর, হাইল্যার হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, কওয়াদীঘির হাওরসহ আরও বেশ কয়েকটি হাওরে পানির প্রবাহে অস্বভাবিকতা তৈরি হবে। ভারত তাদের প্রয়োজনে ইচ্ছামত পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করবে। হাওরে বর্ষাকালে পানির প্রবাহ বেশি হয় এবং বিস্তির্ণ অঞ্চল পানির নিচে তলিয়ে যায়, ফলে সেখানে জমে থাকা পলি মাটির স্তর জমির উর্বরতা বাড়িয়ে দেয়। আবার শীতের শুরুতেই পানির স্তর নিচে নেমে যায় এবং মাটি দিয়ে অল্প উচ্চতার বাঁধ তৈরী করে পলির উপরে বোরো ধানের চাষ হয়। বছরে একটি ফসলই ফলে। ভারত যদি সারা বছর পানির প্রবাহ একইরকম রাখে তবে একটি নির্দিষ্ট হাওর অঞ্চল জলাশয়ে পরিণত হবে। যে জলাশয়ের পানির উচ্চতা হবে স্বভাবিকের চেয়ে বেশি অথবা কম। তখন সারা বছর একই উচ্চতার পানি থাকবে এবং অনেক অঞ্চল স্থায়ীভাবে পানির নিচে তলিয়ে যাবে। ওই নির্দিষ্ট অঞ্চল বাদ দিয়ে বাকি এলাকায় থাকবে খড়া। ফলে বাঁধ দিয়ে পলির উপর ফসল ফলানোর প্রক্রিয়াই ধ্বংস হবে। বাংলাদেশ ফসল উৎপাদনের বিশাল এলাকা হারিয়ে খাদ্য ঘাটতি পূরণে অরও সংকটে পড়বে।
সমস্যার এখানেই শেষ নয়! হাওর অঞ্চলে পর্যটনের যে অমিত সম্ভমনা আছে সেটাও ধ্বংস হবে। ইকোসিস্টেম নষ্ট হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রজাতির মাছও বিলুপ্ত হবে, অতিথি পাখির আবাসস্থল নষ্ট হবে।
অর্থাৎ মোদ্দা কথা হচ্ছে টিপাইমুখ বাঁধ নির্মানের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের যেমন ক্ষতি হবে তেমনি ক্ষতির আশংকা আছে প্রাকৃতিক সম্পদের। তাই পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষায় সবাইকে এগিযে আসতে হবে। বাংলাদেশ ডুবে যাবে এ কথা বহুবার বলা হয়েছে। এখন আমরা দেখছি বাংলাদেশে পানির অভাবে খড়া চলছে। ফারাক্কা বাঁধের কারণে পানির অভাবে আমাদের চোখের সামনে দিনে দিনে উত্তরাঞ্চলের সবুজ হয়েছে হলুদ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর বিষয়ে আমারা যতটা সচেতন তার চেয়েও বেশি গণসচেতনতা তৈরী করতে হবে নদীর গতিপথে বাঁধ নির্মানে বাংলাদেশের সমূহ ক্ষতির বিষয়ে।
ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যেও মতভেদ আছে কিন্তু দেশের স্বার্থে তারা সবসময় একমত হয়ে কাজ করে। দেশের জাতীয় সার্থে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে সব রাজনৈতিক দলকেই এক হয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। ভারত বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী রাষ্ট্র, ভারতের প্রতি আমাদের ভালবাসা আছে। কিন্তু একপাক্ষিক ও অন্ধের মত ভালবাসা যে কেবলই বিপর্যয় ডেকে আনে, এ কথা বোধ করি সকলেই জানে। অপরিপক্ক(রসসধঃঁৎবফ) বাংলাদেশের সে বিপর্যয় ঠেকানোর ক্ষমতা কতটুকু?
##
লেখক:
আমিনুল ইসলাম দীদার;
প্রাবন্ধিক;
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:০৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×