somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অ্যাডভেঞ্চার ইন ক্যুবেক - পর্ব ১

১১ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড্যানিকে যখন বললাম যে, ক্যুবেক সিটিতে ঘুরতে যাচ্ছি, তখন সে আমার দিকে এমন এক তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে তাকালো যে, ক্যুবেক সিটিতে কোন মানুষ কখনো ঘুরতে যায়? আমার কাঁধে হাত রেখে বললো, "শোন বন্ধু, কানাডা এসেছো কাজ করার জন্যে। এখানে দিন-রাত কাজ করবে, টাকা আয় করবে আর গাড়ি-বাড়ির প্রোপার্টি ট্যাক্স, মর্টগেজ পে করবে। এটাই জীবন এখানে। ঘোরাঘুরি করে টাকা আর সময় নষ্ট করোনা। কানাডায় দেখার কিছুই নেই, সব জায়গা-ই এক রকম।" পাঠক, ড্যানির মতো নিরস, নির্জীব মানুষের সাথে তর্ক করাটাই বৃথা। অতএব আর বৃথা বাক্য ব্যায়ে না গিয়ে মনে মনে বললাম, অর্থ অপচয় করে হলেও ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো'র 'ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট' হিসেবে খ্যাত, সেন্ট লরেন্স নদীর পাড়ের সেই নয়নাভিরাম কুইবেক সিটি আমি ঘুরে আসতে যাচ্ছি ড্যানি। তুমি ব্যস্ত থাকো গিয়ে তোমার কাজ নিয়ে।"


এবারের সামারের প্ল্যানটা সাজিয়েছি কয়েকটি সুন্দর জায়গা দেখবো বলে। লোকমুখে ক্যুবেক সিটির সৌন্দর্য-বর্ণনা শুনতে শুনতে আমি অস্থির। ভাবলাম, এবারের ঘোরাঘুরির শুরুটা তাহলে কানাডা'র ক্যুবেক প্রভিন্স দিয়েই কেন শুরু করিনা? নর্থ আমেরিকার সবচাইতে পুরনো শহরগুলোর একটি এই ক্যুবেক যে শহরটি প্রথম ১৬০৮ খ্রীস্টাব্দে Samuel de Champlain নামের এক ফ্রেঞ্চ ভদ্রলোক প্রতিষ্ঠা করেন। 'দ্য বিউটিফুল প্রভিন্স' হিসেবে খ্যাত ক্যুবেক শহরটি নতুন ফ্রান্স রূপে আত্মপ্রকাশ করে। পরবর্তীতে শহরটি ওই একই সালে ফ্রেঞ্চ কলোনীর প্রশাসনিক দপ্তর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। view this link
নতুন কোন জায়গায় যাবার আগে আমার বরাবরের অভ্যাস হলো সেই জায়গা সম্পর্কে টুকটাক একটু পড়াশুনা করে নেয়া। এতে করে ওখানে যাবার পরে স্বল্প সময়ে বেশি ঘোরা সম্ভব হয়। ক্যুবেক যাবার আগেও এর ব্যতিক্রম হলোনা। ইন্টারনেট থেকে জেনে নিলাম ক্যুবেক ভ্রমণ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো। বছরের অধিকাংশ সময়েই ইউরোপিয়ান ধাঁচের তৈরি এই শহরটি ডুবে থাকে সাদা বরফের আচ্ছাদনে। স্প্রিং এর শুরুর এই সময়টাতে ভালো আবহাওয়া দেখে যাওয়াটা তাই আর দেরি করলামনা। মাস দু'য়েক আগেই বুকিং ডট কম থেকে হোটেল রুম বুকিং, এন্টারপ্রাইজ ডট কম থেকে গাড়ি ভাড়া ইত্যাদি কাজ সেরে রেখেছিলাম। ওহ্! এই ফাঁকে বলে রাখা ভালো, ক্যুবেকের এই রোমঞ্চকর ভ্রমণটা'র আনন্দ পুরোপুরি উপভোগ করার জন্যে ট্রেনে যাবার প্ল্যান অনেক আগে থেকেই করা ছিল।


ইউনিয়ন স্টেশনের আশেপাশে

৪ মে, ২০১৫ আমাদের যাত্রা হলো শুরু। ভোর তখন বাজে ৩.৩০। আমরা ডাউনটাউন টরন্টো'র ইউনিয়ন স্টেশনের সামনে। আমরা বলতে আমি, ফিওনা, রেবেকা আর অ্যালেক্স। ব্যাকপ্যাক আর ডিএসএলআর ক্যামেরা হাতে চার মূর্তি। ট্যাক্সি আমাদেরকে নামিয়ে দিয়ে চলে যাবার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, ইউনিয়ন স্টেশন ভোর ৫.৩০ এর আগে খুলবেনা। আর কাছাকাছি যে টিম হর্টনস-এর কফির দোকানটি ২৪ ঘন্টা খোলা ছিল, সেটিও আজ কোন এক কারণে বন্ধ। বাইরে ঠাণ্ডা বাতাসে আমাদের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। যাত্রার শুরুতেই বিপত্তি ঘটায় সবাই কিঞ্চিত হতাশ হলাম। কিন্তু প্রত্যেকেই এমন ভাব করছি যেন, 'ইটস ওকে', গভীর রাতে রাস্তায় হেঁটে বেড়ানো আর এই ঠাণ্ডা বাতাস যেন কোন ব্যাপারই না।


সাবওয়ের ব্রেকফাস্ট


ইউনিয়ন স্টেশন


ইউনিয়ন স্টেশন


ইউনিয়ন স্টেশন


ইউনিয়ন স্টেশন


ইউনিয়ন স্টেশন


ইউনিয়ন স্টেশন


ইউনিয়ন স্টেশন
ফ্রন্ট স্ট্রিট -এর ওপর কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর আমরা আবিষ্কার করলাম কাছাকাছি একটি মাত্র খাবার দোকান খোলা আছে। আর সেটি হলো 'সাবওয়ে'। অতএব সবাই মিলে পড়িমড়ি করে গিয়ে ঢুকলাম সাবওয়ে'র ভেতর কিছু খাবার আর একটু গরমের আশায়। জমপেশ একটা ব্রেকফাস্ট আর গরম কফি'র আড্ডায় সবাই যখন বুঁদ, ঠিক তখনই হাত ঘড়িতে সময় দেখে মাথা নষ্ট। আর বেশিক্ষণ নেই ট্রেন ছাড়ার। পড়িমরি করে চলে এলাম ইউনিয়ন স্টেশনের Via rail প্ল্যাটফরমে। বোর্ডিং পাস আগে থেকেই প্রিন্ট আউট করে সাথে নিয়ে এসেছিলাম। আমাদের ট্রেন নম্বর ৬০ এর প্ল্যাটফরমটি খুঁজে নিয়ে ট্রেনে উঠতে তেমন কোন বেগ-ই পেতে হলোনা। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক যখন সকাল ৬.৪০, আমাদের ট্রেনটিও রওনা দিল তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

এবার চলুন দেখে নেই ট্রেনে চলার পথের জানালার বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্যের কিছু অংশ:


Via rail এর প্রায় ১০ ঘন্টার এই যাত্রাটি আসলেই স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের সবার কাছে। অত্যন্ত আরামদায়ক ভ্রমণের সাথে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা এককথায় অসাধারণ। খুবই মসৃণ গতির Via rail এর এয়ারকণ্ডিশনড কামরার চেয়ারে জানালার পাশের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতে কখনে যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, টের-ই পাইনি। ঘুম ভাঙলো যখন ওয়েটার এসে কফি অফার করলো।


জানালার দিকে তাকিয়ে দেখি টরন্টো শহরের ইট-কাঠ-পাথরের দৃশ্য আর নেই। তার বদলে কখনো ঘন বন, কখনো বা ফসলের ক্ষেতের সাথে দিগন্ত বিস্তৃত নীল আকাশ। যাত্রাপথে কয়েকটি স্টেশনে ট্রেন থামলো। তখন মনে পড়ে গেল বাংলাদেশের ট্রেন জার্নির কথা। বাংলাদেশের মতো এখানে ট্রেন থামার পর স্টেশনে মানুষের ভিড়, দৌড়াদৌড়ি আর ব্যস্ততা নেই, নেই কোন ঝালমুড়ি, চা-ওয়ালা, পেপার, গরম ডিম আর হকারের আওয়াজ। নি:শব্দে ট্রেন থামছে, যাত্রী উঠছে, নামছে। ট্রেনের ভেতর কারও উপস্থিতি টের পাওয়াটাই যেন মুশকিল। কেমন যেন একটা যান্ত্রিক ভাব।



বেলা বারোটার দিকে নির্ধারিত সময়েই আমরা পৌঁছে গেলাম মন্ট্রিয়লে।



ওয়াশরুম আর খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষ করতে না করতেই দুপুর একটার ট্রেনের সময় হয়ে গেল। এবারের গন্তব্য স্বপ্নের 'কুইবেক সিটি'। দ্বিতীয় এই ট্রেনটা প্রথমটার তুলনায় একটু বেশি আরামদায়ক মনে হলো। জানালার বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে দেখতেই বিকাল ৪.২২ মিনিটে একেবারে নির্ধারিত সময়ে পৌঁছে গেলাম কুইবেক সিটির 'গাখ দ্যু প্যালে' স্টেশনে ( Gare du Palais )।


লাগেজ নিয়ে যখন বাইরে এসে দাঁড়ালাম, রৌদ্রজ্জ্বোল বিকেলের চমৎকার আবহাওয়া আমাদের স্বাগত জানালো চারশো' বছরের পুরনো শহর কুইবেকে। তখনও আমাদের ধারণাই নেই সামনে আরও কত চমক অপেক্ষা করছে আমাদের জন্যে।

পর্ব ২ view this link পর্ব ৩ view this link পর্ব ৪ view this link
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৫৯
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার কিছু ভুল!

লিখেছেন মোঃ খালিদ সাইফুল্লাহ্‌, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮

১। ফ্লাস্কে চা থাকে। চা খেতে টেবিলে চলে গেলাম। কাপে দুধ-চিনি নিয়ে পাশে থাকা ফ্লাস্ক না নিয়ে জগ নিয়ে পানি ঢেলে দিলাম। ভাবছিলাম এখন কি করতে হবে? হুঁশ ফিরে এল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×