বাড়িটি যেন চড়ুইদের অভয়াশ্রম। সন্ধ্যার আগে আগে হাজারো চড়ুই পাখির কিচিরমিচিরে এলাকা মুখরিত হয়। অন্ধকার ঘন হয়ে এলে থেমে যায় কলরব। আবার ভোরে সরব হয়ে ওঠে অগুনতি চড়ুইয়ের দলটি।
আমাদের খুব আপন, ঘরের পাখি চড়ুইয়ের কাকলিতে মুখর এ বাড়িটি বরিশাল নগরের ব্যস্ত আমানতগঞ্জ এলাকায়। খান বাড়ি নামে পরিচিত বাড়িটির মালিক আবদুল্লাহ খান পাখিগুলোকে খুব পছন্দ করেন। তাঁর কাছে এরা সন্তানের মতো।
‘সকাল-সন্ধ্যা নজর রাখি, কেউ যেন এদের উৎপাত না করে।’ প্রথম আলোকে বলেন আবদুল্লাহ খান। তিনি জানালেন, বাড়ির জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা ও বড়ইগাছে এসব চড়ুই থাকে। অন্তত এক যুগ ধরে তারা এখানে আছে। তাঁর ধারণা, এরা সংখ্যায় পাঁচ-ছয় হাজারের কম হবে না।
আবদুল্লাহ খান অবশ্য জানাতে ভুললেন না, এলাকার মানুষও পাখিগুলোকে ভালোবাসে। পাড়ার ছেলেরাও কেউ গুলতি মারে না বা ঢিল ছোড়ে না। প্রতি সন্ধ্যায় চড়ুইগুলোর ঝাঁকে ঝাঁকে ফিরে আসা দেখতে অনেকে তাঁর বাড়ির সামনে ভিড় করে।
আবদুল্লাহ খানের মেয়ে শুকরিয়া খানম বললেন, তিনি অনেক দিন ধরে দেখছেন, আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে চড়ুইগুলো অদ্ভুত নিয়ম মেনে চলে। সন্ধ্যার আগে আগে পাখিগুলো ফিরতে থাকে। প্রথমে বড় জামগাছে এসে বসে। পাখির সংখ্যা বাড়তে থাকলে আগে আসা পাখিগুলো যেন অন্যদের জায়গা ছেড়ে দিতে সেখান থেকে কাঁঠাল, পেয়ারা ও বড়ইগাছে গিয়ে বসে। আবার ভোর ছয়টার দিকে পাখিগুলো ছোট গাছ থেকে বড় জামগাছটিতে গিয়ে জড়ো হতে থাকে। একসময় সেখান থেকে ঝাঁক বেঁধে উড়াল দেয়। প্রায় সারা দিন গাছগুলো পাখিশূন্য থাকে। দিনে দিনে সংখ্যা বাড়ায় চড়ুইয়ের দল পাশের বাড়ির গাছগুলোতেও আশ্রয় নিচ্ছে।
খান বাড়ির ভাড়াটে রীমা বেগম বললেন, পাখি বাঁচাতে সন্ধ্যায় ফ্যান চালানো বন্ধ রাখেন তাঁরা। একদিন সন্ধ্যায় জানালা দিয়ে ঘরে ঢোকা কয়েকটি চড়ুই ফ্যানে লেগে মরে যায়। এরপর থেকেই এ ব্যবস্থা।
রীমা বেগমের মেয়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়া ফাতেমা আক্তার জানায়, সন্ধ্যার দিকে মনে হয়, এক গাছের পাখি অন্য গাছের পাখির সঙ্গে ঝগড়ায় মেতে ওঠে। ওরা একটানা কিচিরমিচির করে। তখন দারুণ ভালো লাগে।
পাখিবিশেষজ্ঞ শরীফ খান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, এত চড়ুই পাখি গাছে থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে ডিম পাড়ার সময় বাসা বানালে ঘরের ভেন্টিলেটর বা মাথার ওপর একটি ছাউনি আছে, এমন স্থানেই তা করবে। একসঙ্গে থাকলে বিড়াল বা পেঁচার আক্রমণ থেকে নিরাপদে থাকা যায়, যা দলবেঁধে থাকার একটা কারণ। পাখি পর্যবেক্ষক ও পরিবেশ গবেষক সৌরভ মাহমুদও বললেন, চড়ুই পাখি সাধারণত যেখানে নিরাপদ মনে করে, সেখানেই রাত যাপন করে। সে ক্ষেত্রে ওই বাড়িটি ওদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হওয়া এবং কাছাকাছি খাবারের উৎস থাকায় সেখানে থাকছে বলে মনে হয়।
সূত্র : প্রথম আলো, ১৯-০৮-২০১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




