somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গৃহ বৈরী

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গৃহ বৈরী
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
.
সন্ধ্যে নাগাদ শালগাড়িয়া হইতে বাড়ি ফিরিতেছিলাম। আমার এক বন্ধু তাঁহার মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ্যে আমাকে নেমন্তন্ন করিয়াছিলো। বেশ খানদানি লোক বলা যায়। বাল্যকালে একই সঙ্গে বিদ্যা শিখিয়াছিলাম। সময়ের পরিক্রমায় সে সরকারি একটা চাকুরি পাইয়া দেখিবার মতো একখানা বাড়ি বানাইয়া ফেলিয়াছে। আর আমি ভবঘুরে হইয়া দেশ দেশান্তর ঘুরিয়া ফিরিতেছি। অবশ্য দেশ দেশান্তর ঘুরিবার পেছনেও যথেষ্ট কারণ রহিয়াছে।

বাড়ির সদর দরজার কাছাকাছি আসিতেই এক ছোকরাকে দেখিলাম, বাড়ির মধ্যে উঁকিঝুঁকি মারিবার বৃথা চেষ্টা করিতেছে। আমি তাঁহাকে ডাক দিতেই সে দৌঁড়াইয়া পালাইয়া গেল। এর আগে কখনো দেখিয়াছি বলিয়া মনে করিতে পারিতেছি না। হ্যাংলা, পাতলা, রোগা শরীর, উস্কুখুস্কু চুল। হয়তো চুরি করিবার জন্যে ঘুরঘুর করিতেছিলো।

নিচ তলা ডিঙাইয়া উপরে উঠিয়া বসিবার ঘরে প্রবেশ করিতেই আদিত্য বলিয়া উঠিলো, এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো?
আমি গা হইতে পাঞ্জাবীখানা খুলিতে খুলিতে বলিলাম, আর বলো না। সৌমিক তো আমাকে আসতেই দেবে না। পরে লাইব্রেরী দেখাশুনার কথা বলে চলে এসেছি।

আদিত্য পকেট হইতে দুইটা সিগারেট বাহির করিয়া একটা আমার দিকে বাড়াইয়া দিয়া বলিলো, খানিক আগে রাকেশচন্দ্র নামের একজন প্রবীণ ভদ্রলোক এসেছিলেন।
আমি বলিলাম, তা কোনো চোর টোর ধরার ব্যাপারে নিয়োগ করতে? নাকি খুন টুনের ব্যাপারে?
সে সিগারেটে একটা লম্বা টান দিয়া চেয়ারে হেলান দিয়া বলিলো, না। চোর ধরার ব্যাপারে না। আজ সকালে খবরের কাগজে একটা জোয়ান তাগরা ছেলের খুনের খবর বের হয়েছিল, মনে আছে নিশ্চয়ই!
আমি মৃদু হাসিয়া বলিলাম, মনে আছে বৈকি? আলবাত মনে আছে। খবরখানা প্রথমে আমিই দেখেছিলাম।
- হ্যাঁ, ঐ খুনের ব্যাপারেই তল্লাসীর জন্য এসেছিলেন।
- তা, কী বললে তুমি?
- আমি তেমন কিছু বলিনি। শুধু বলেছি, আগামীকাল সকালে প্রাতরাশ সেরে একবার দেখে আসবো।
- তা লোকটিকে সেই খুনের ব্যাপারে বিশদ কোনো কিছু জিজ্ঞেস করোনি?
- তা তো করেছিই। তার আগে তোমাকে একটা জিনিস দেখাই।

আমি অতি আগ্রহ লইয়া আদিত্যের সমীপে গিয়া বসিলাম। সে টেবিলের উপর হইতে জলের পাত্রটা সরাইয়া বলিলো, দেখো লোকটা হাজার টাকার দু'খানা নোট রেখে গিয়েছেন।
আমি বলিলাম, তাহলে চলো কাল একবার লোকটার বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।

আদিত্য সিগারেটে শেষ টান দিয়া বলিলো, লোকটির ভাইপো খুন হয়েছে। গতকাল সকালে কফি হাতে করে বাড়ির ছাঁদে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলো। এর মাঝে তার অফিসের এক অল্পবয়স্ক ছোকরা এসে তার সাথে দেখা করে যায়। রাকেশ বাবু তখন তার দাওয়াখানায় বসে ছিলেন।
- লোকটা ডাক্তার?
- হ্যাঁ, ঐ হোমিওপ্যাথিক কিছু ঔষুধ বিক্রি করে। তাছাড়া এমনিতে টাকা পয়সার কোনো অভাব নেই। তাকে এই ঔষুধ বিক্রির বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, কী আর করবো মশাই? এই বয়সে এসে কাজকর্মও করা যায় না। আবার বসেও থাকা যায় না। তাই বাড়ির নিচতলার একটা ঘরে হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ বিক্রি করি।
- লাইসেন্স আছে কোনো?
- না, তা নেই। তার বাবা নাকি হোমিওপ্যাথিক ডাক্তার ছিলেন। তিনি তার বাবার থেকেই একটু আধটু শিখেছিলেন।
- হু, তারপর বলো।
- তারপর আর কী! ভাইপোর অফিসের ছোকরাটা চলে যাওয়ার পর তিনি সকালের খাবার তৈরি করে ভাইপোকে ডাক দিলেন। কিন্তু ভাইপোর কোনো সাড়া পেলেন না।
- তারপর?
- তারপর তিনি ভাবলেন, ভাইপো হয়তো তার ডাক শুনতে পায়নি। বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও যখন কোনো উত্তর এলো না। তখন তিনি নিচ থেকেই বললেন, বীররাম নিচে তোর জন্য খাবার রাখা আছে। এসে খেয়ে নিস। আমি একটু বের হলাম।
- তারপর কী হলো?
- তারপর রাকেশ বাবু তার বন্ধুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন। এদিকে দুপুর গড়িয়ে বৈকাল বেলা যখন তিনি বাড়ি ফিরলেন। তখন দেখলেন ভাইপোর জন্য রাখা খাবারটা তিনি যেমন রেখে গিয়েছিলেন। ঠিক তেমনই পরে রয়েছে। পরে তিনি এ ঘর ও ঘর খুঁজেও যখন ভাইপোর কোনো সাড়া শব্দ পেলেন না। তখন তিনি ছাঁদে গেলেন।
- তারপর?
- তারপর দেখলেন ছাঁদের এক কোণায় ভাইপোর মৃতদেহ পরে আছে।
- ঘটনাটা গতকাল ঘটেছে। অথচ তিনি গতকাল না এসে আজ এসেছেন!
- গতকাল ঐ ঘটনার পর তিনি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে ইনফর্ম করেন। এজন্য আর আমাদের কাছে আসার প্রয়োজন মনে করেনি।
- কোন পুলিশকে? সদর থানায় রামকেশর নামে যে একজন পুলিশ অফিসার আছে, তাকে?
- হ্যাঁ, তাকেই।
- সে তো তোমার বন্ধু হয়।
- হ্যাঁ। ঐ বছর ছ'য়েক আগে একবার একটা কেসের সুবাদে তার সাথে পরিচয় হয়েছিল। পরে ইশ্বরদী থানা থেকে সদর থানায় ট্রান্সফার হয়ে এলে পরিচয় এবং সাক্ষাতটা একটু বেড়ে যায়। আর তারপর থেকে তো তুমি জানোই।
- তাহলে তো রাকেশবাবুর বাড়ি যাওয়ার আগে থানা থেকে একবার ঘুরে আসতে হয়!
- তা মন্দ বলোনি। রাতের আহারটা সেরেই চলো রওনা দেই।
- হ্যাঁ, তুমি কালাচানকে খাবার দিতে বলো। আমি একটু স্নানাগার থেকে ঘুরে আসি।
.
রাতের আহার শেষ করিয়া দুইজনে থানার উদ্দেশ্যে বাহির হইলাম। চক ছাতিয়ানি হইতে শহর বেশি দূরে নহে। অটোতে চড়িয়া যাত্রা করিলে মিনিট দশেক লাগে। রাত্রি ন'টা নাগাদ থানায় পৌঁছাইলাম। আদিত্যের বন্ধু জনাব রামকেশর বাবু তখন থানায় ছিলেন না। আমরা থানায় আসিয়াছি শুনিয়া তিনি দ্রুত বেগে থানায় আসিয়া হাজির হইলেন। সৌজন্য সাক্ষাত সারিয়া আদিত্য রামকেশর বাবুকে বীররামের হত্যার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করিলে তিনি বলিলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্টে দেখা গেছে হৃদপিণ্ডে আলপিন জাতীয় কোনো কিছুর খোঁচা লেগে তার মৃত্যু ঘটেছে। পুলিশ এ নিয়ে তদন্ত করছে। কিন্তু খুনির কোনো হদিশ মিলছে না।

আদিত্য কিয়ৎকাল চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলো, বীররামের চাচা জনাব রাকেশবাবু আমাকে এই হত্যার তদন্ত করতে নিয়োগ করেছেন। আমি চাই আপনি এই বিষয়ে আমাকে একটু সাহায্য করবেন।
রামকেশর বাবু হাসিয়া বলিলেন, নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই সাহায্য করবো। আর হ্যাঁ, বসুন। চা নাশতা কিছু করুন। দাঁড়িয়েই তো সব কথা শুনলেন।
আদিত্য বলিলো, ধন্যবাদ। কেসটা সলভ করে অন্য একদিন এসে জমিয়ে চায়ের আড্ডা দেবো। আজ আসি।

দু'জনে থানা হইতে বাহির হইয়া একটা অটো ধরিয়া সোজা বাড়ির পথে যাত্রা করিলাম।
.
পরদিন সকাল হইতেই কালাচান ডাকিয়া বলিলো, নিরব বাবু চা রেখে গেলুম। আদিত্য বাবুকে ডাক দিয়ে চা'টা খেয়ে নেন। নাহলে ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।

আমি বিছানা ছাড়িয়া উঠিতে উঠিতে বলিলাম, শুনো তুমি প্রাতরাশ তৈরি করো। আমরা একটু বের হবো।

কালাচান "জ্বী বাবু" বলিয়া ঘর হইতে প্রস্থান করিলো। আমি আদিত্যকে ডাকিয়া বলিলাম, ওঠো ওঠো। সকাল হয়ে গেছে। কালাচান চা দিয়ে গেছে। ওঠো।
আদিত্য একখানা হাই তুলিয়া বিছানার উপরে বসিয়া বলিলো, তুমি কালাচানকে সকালের খাবারটা দিতে বলো। আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।
- সে বলে দিয়েছি আমি। দ্রুত আসো। চা ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।

প্রাতরাশ সারিয়া দুইজনে রাকেশ বাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে বাসা হইতে বাহির হইলাম। শ্রী শ্রী অনুকূলচন্দ্র আশ্রমের আশেই তাঁহার বাড়ি। গতকাল তিনি আদিত্যের নিকট বাড়ির ঠিকানা দিয়া গিয়াছিলেন। আমরা সেই ঠিকানা ধরিয়াই সম্মুখে আগাইতে লাগিলাম। মানসিক হাসপাতাল রোড ক্রস করিয়া আশ্রমের পাশ দিয়া যেই সরু রাস্তাটা চলিয়া গিয়াছে। সেই রাস্তারই খানিক সামনে গিয়া হাতের বামে তাঁহার বাড়ি।

আমরা যখন তাঁহার বাড়ি পৌঁছাইলাম। তখন দেখিলাম সিড়ির ঘরে কেউ একজন বসিয়া আছেন। আদিত্য গলা খাকারি দেওয়া মাত্রই রাকেশ বাবু বাহির হইয়া আসিলেন। বুঝিতে পারিলাম এই সিড়ির ঘরখানাই রাকেশ বাবুর দাওয়াখানা। আমি একটু উঁকি মারিয়া দেখিবার চেষ্টা করিলাম। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে
কিছুই দেখিতে পারিলাম না।

রাকেশবাবু বেশি বাক্যব্যয় না করিয়া আমাদেরকে ছাঁদে লইয়া গেলেন। তারপর যেই স্থানে খুন হইয়াছে, সেই স্থানটা দেখাইয়া বলিলেন, এইযে, এইযে এইখানে আমার ভাইপোর মৃতদেহটা পরে ছিল।

আমি দেখিলাম, কফির কাপটা এখনো পরিয়া আছে। ভাঙিয়া চুরিয়া খণ্ড কয়েক হইয়াছে। তাছাড়া সন্দেহজনক কোনো কিছু আমার নজর কাড়িলো না।

আদিত্য কিয়ৎকাল এদিক সেদিক দৃষ্টিগোচর করিয়া রাকেশবাবুকে বলিলেন, চলুন এবার একটু বীররামের শোবার ঘরটা দেখে আসি।
রাকেশবাবু কিছুটা ইতস্তত করিলে আদিত্য বলিলো, ভয় পাবেন না। শুধু ঘরটা দেখবো আর আপনাদের বাড়ির সকলকে কয়েকটা প্রশ্ন করবো।

রাকেশ বাবু তাঁহার নিত্য ব্যবহৃত লাঠিখানা বাঁ হস্তে লইয়া ডান হস্ত দিয়া চশমা ঠিক করিয়া বলিলেন, চলুন।

রাকেশ বাবু লাঠি ঠক ঠক করিয়া নিচে নামিতে লাগিলেন। আদিত্য আর আমি তাঁহার পেছন পেছন তাঁহাকে অনুসরণ করিতে লাগিলাম। তিনি নিচে নামিয়া এক ঘর ডিঙাইয়া অন্য ঘরের সম্মুখে গিয়া দরজায় হালকা ধাক্কা দিয়া ভেতরে প্রবেশ করিলেন। অতঃপর বলিলেন, আদিত্য বাবু এটাই আমার ভাইপোর ঘর। এই ঘরটাতে ভাইপো আর তার মা থাকতো।

ঘরখানা বেশ প্রশস্ত। দুই ঘরের মাঝখানে একটা মাত্র দরজা। বোধ করি পেছনের ঘরটাতে রাকেশ বাবু থাকেন। পর্যাঙ্কে চোখ পড়িতেই দেখিতে পাইলাম একজন বয়স্ক ভদ্র মহিলা নিদ্রারত অবস্থায় বিছানায় শুইয়া আছেন। রাকেশ বাবু মহিলার সমীপে গিয়া ডাক দিলেন, অনুরাধা।
কয়েকবার ডাকিবা মাত্রই তিনি অচেতন স্বরে শব্দ করিয়া জাগিয়া উঠিলেন। অতঃপর চারিপাশে নেত্রদ্বয় ঘুরাইলেন। আদিত্যের চোখে চোখে পড়িতেই তিনি শুয়া হইতে উঠিয়া বসিতে লাগিলেন। রাকেশ বাবু তাঁহাকে ধরিয়া বলিলো, উঠতে হবে না, উঠতে হবে না। শুয়ে থাকো তুমি।

ভদ্র মহিলা তবুও উঠিয়া বসিলেন। রোগাক্রান্ত শরীর। আদিত্যের পানে চাহিয়া ভাঙা গলায় বলিলেন, আমার ছেলের খুনের ব্যাপারে কিছু জানতে পারলেন আদিত্য বাবু?

আমি তাঁহার কথা শুনিয়া বুঝিতে পারিলাম, তিনি পূর্ব হইতে আদিত্যকে চিনেন।
তাঁহার কথার উত্তরে আদিত্য বলিলো, না এখনো জানতে পারিনি। কেবলই এলাম। তবে অতি শীঘ্রই জানতে পারবো আশা করি।
.
বীররামের ঘর হইতে বাহির হইয়া রাকেশবাবুর ঘরে বসিয়া আমি বাক্যলাপ জুড়িলাম। আদিত্য তখনো বীররামের ঘরে অবস্থান করিতেছে। রাকেশ বাবুর ঘর হইতে বীররামের ঘরে আসবাব অনেক কম। ঘরের এক কোণায় একখানা পর্যাঙ্ক, বাঁ পাশের দেয়ালে দাঁড় করানো একখানা আলমারী, আর মাঝখানে একখানা চায়ের টেবিল। এছাড়া কোনো দামি কিছু নজরে পড়িলো না। অথচ রাকেশবাবুর ঘরে সবকিছু যেন ষোলো আনাই ভরপুর।

আমি বাক্যলাপের সময় রাকেশবাবুকে কৌতুহলবশত জিজ্ঞাসা করিলাম, আচ্ছা রাকেশবাবু আপনার হোমিওপ্যাথিক ঔষুধে অসুখ সারে?
তিনি আমার কথায় যেন মজা পাইলেন। হো হো করিয়া হাসিয়া উঠিলেন। কিছুক্ষণ পর বলিলেন, ঔষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করি মশাই। অসুখ না সেরে যাবে কোথায়?

খানিকবাদে আদিত্য এ ঘরে আসিয়া রাকেশবাবুকে বলিলো, তা আপনার কি কাউকে সন্দেহ হয়?
আদিত্যের আচমকা এমন প্রশ্নে রাকেশবাবু কিছুটা সচকিত হইয়া গেলেন। তিনি অপ্রস্তুত হইয়াই বলিলেন, হ্যাঁ, না মানে না। কাউকে সন্দেহ হয় না। তবে বীররামের অফিসের ছোকরাটাকে.....

আদিত্য তাঁহার কথা শেষ করিতে না দিয়া বলিলেন, সে খুন করেনি। সে বাদে কাউকে সন্দেহ হয়?
এইবার রাকেশবাবু কিঞ্চিৎ ভাবিয়া বলিলেন, এ বাড়িতে আমি, অনুরাধা, বীররাম আর একটা কাজের ছেলে থাকি। তাছাড়া তো অন্য কেউ থাকে না।
আদিত্য বলিলো, আচ্ছা আজ তাহলে উঠি। আর হ্যাঁ, বীররামের মাকে ডাক্তার দেখাবেন। আমি আগামীকাল একবার আপনার বাড়িতে আসবো।

আমরা ঘর হইতে বাহির হইতে যাইবো। ঠিক তখনই একটা ছোকরা ঘরে প্রবেশ করিয়া রাকেশ বাবুর পানে চাহিয়া বলিলো, মনিব আপনার সঙ্গে একটা লোক দেখা করতে আসছেন।
আদিত্য রাকেশ বাবুকে বলিলো, এই ছেলেই আপনার বাড়ির কাজের লোক?
রাকেশ বাবু মাথা ঝাঁকাইয়া বলিলেন, হ্যাঁ এই ছোটকুই আমার বাড়ির কাজের লোক।

বাহিরে বাহির হইয়া দেখিলাম একজন সুঠামদেহী যুবক দাঁড়াইয়া আছে। বয়স অানুমানিক বাইশ কিংবা চব্বিশ হইবে বলিয়া ধারণা করিলাম। আদিত্যের চোখে তাঁহার একবার চোখাচোখি হইলো। অতঃপর যুবকটি ভেতরে প্রবেশ করিলো।
.
বাড়ি ফিরিবার সময় আদিত্যকে বলিলাম, আদিত্য আমি ঐ ছোকরাটাকে....
আদিত্য বলিলো, বাড়ি গিয়ে শুনবো। এখন চুপচাপ হেঁটে চলো।
- একটা রিকশা ডাকি?
- না, এখন হেঁটেই যাবো।

বড় অদ্ভুত কিসিমের লোক এই আদিত্য রায় দত্ত। কখন কোন ভূত মাথায় চাপিয়া বসে। তাঁহা বলা যায় না।
.
মধ্যাহ্নে বাড়ি ফিরিয়া আদিত্য বিছানায় শরীর বিছাইয়া দিলো। দেখিয়া মনে হইতেছে বড্ড ক্লান্ত সে। এক সঙ্গেই দু'জনে হাঁটিয়া আসিয়াছি। অথচ আমার মধ্যে তেমন কোনো ক্লান্তিভাব নেই। অথচ সে?
বেশ কয়েকবার ডাক দিলাম। কিন্তু কোনো সাড়া শব্দ পাইলাম না। ভাবিলাম, একটু ঘুমাক সে। ততক্ষণ আমি লাইব্রেরী ঘরটাতে গিয়া সময় কাটাই।

বৈকালে ঘুম ভাঙিলে আদিত্য আমায় ডাকিয়া বলিলো, কালাচানকে একটা চা করে দিতে বলো তো।
আমি কালাচানকে ডাকিয়া চা করিতে বলিয়া আদিত্যকে বলিলাম, তখন এসে অমন ভাবে শুয়ে পড়লে কেন?
সে পাঞ্জাবীর পকেট হইতে সিগারেট বাহির করিতে করিতে বলিলো, একটু ক্লান্ত লাগছিলো। ও হ্যাঁ, তুমি কী যেন বলতে চেয়েছিলে? ঐ ছোকরাটাকে না কী যেন?
আমি বলিলাম, হ্যাঁ। ঐযে রাকেশবাবুর বাড়িতে কাজের যেই ছোকরাটা আছে না? আমি ওকে গতকাল সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির গেটের সামনে দেখেছিলাম।
- আচ্ছা, এই কথা?
- হ্যাঁ, এই কথাই। তাছাড়া আর কী কথা থাকতে পারে?
- নীরব, কেসটা যেমন জটিল মনে হচ্ছে। তেমনি সহজও মনে হচ্ছে।
- মানে?
- মানে হলো, বীররামের মা অনুরাধা দেবী। রাকেশ বাবুর বাড়িটা অনুরাধা দেবীর। রাকেশ বাবুর না।
- মানে?
- মানেটা আজ সন্ধ্যায় জানতে পারবে।
- কেন? সন্ধ্যায় জানতে পারবো কেন? এখন জানলে সমস্যা কোথায়?
- ধৈর্য ধরো। সময় হলে সব জানতে পারবে।

"বাবু আপনার চা।" কালাচান চা দিয়া প্রস্থান করিলো। আদিত্য বলিলো, খবরের কাগজখানা একটু বের করো তো।
- কোন খবরের কাগজ?
- আরে বীররামের খুনের খবরের কাগজ।

আমি কাগজখানা বাহির করিয়া দিলাম। আদিত্য বেশ কিছুক্ষণ তাঁহা পর্যবেক্ষণ করিয়া বলিলো, চলো এখনই যেতে হবে।
আমি বলিলাম, কোথায়?
- কাচারিপাড়ায়।
- সেখানে গিয়ে আমাদের কাজ কী?
- বীররাম সেখানেই দলিল দস্তাবেজের অফিসে চাকরী করতো। সেখানে গিয়ে বীররামের মৃত্যুর দিন তার বাড়িতে আসা ঐ ছোকরাটার সাথে একটু দেখা করে আসি।
- তুমি না বললে ঐ ছোকরাটা খুন করেনি?
- হ্যাঁ, সে খুন করেনি। কারণ খুনের দিন সে বীররামকে এই কাগজটা দিতে এসেছিল।

আদিত্য একটা কাগজ আমার দিকে বাড়াইয়া দিলো। দেখিলাম, তাঁহা একখানা প্রেমপত্র। আমি বলিলাম, বীররাম কি এই পত্রটা পড়েছিল?
আদিত্য বলিলো, হ্যাঁ। সে পড়েছিল। পড়ার পর আলমারীর উপরে ঝুলানো একটা তারের সাথে এটা রেখে কফি হাতে করে ছাঁদে গিয়েছিল।
- তার মানে অফিসের ঐ ছোকরা যাওয়ার পরে এই খুনের ঘটনা ঘটে?
- বীররামের মা তো সেটাই বললেন। তিনি বললেন, অফিসের ছোকরাটা চিঠিটা দিয়ে চলে যেতেই রাকেশ বাবু বীররামকে খাবার খেতে নিচে ডাকেন। বেশ কয়েকবার ডেকে তিনিও বের হয়ে যান।
- তাহলে বাড়িতে তখন কাজের ছেলেটা আর বীররামের অসুস্থ মা অনুরাধা দেবী ছিলেন। আর অনুরাধা দেবী তো কখনোই তার নিজের ছেলেকে খুন করবেন না। বাকি রইলো কাজের ছেলেটা। আর তার পক্ষেও বীররামের মতো অমন জোয়ান ছেলেকে খুন করা সম্ভব না।
- হ্যাঁ, তা ঠিকই বলেছো। আর আরেকটা বিষয় কী জানো?
- কী?
- অফিসের ছোকরাটা প্রতিদিন তাদের বাড়িতে এসে একটা করে চিঠি দিয়ে যেতো। আলমারীর উপরে থাকা তারের চিঠিগুলো আর অনুরাধা দেবীর জবানবন্দিই তার প্রমাণ।
- তাহলে কাচারিপাড়ায় গিয়ে ঐ ছোকরার সাথে কিসের আলাপ করবে?
- শুধু জিজ্ঞেস করবো, বীররাম অফিসে থাকাকালীন সময়ে সে চিঠি না দিয়ে প্রতিদিন সকালে বাড়ি এসে কেন চিঠি দিয়ে যেত?
- ও, তাহলে চলো বের হই।
- হ্যাঁ, তুমি তৈরি হও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।
.
একটা অটো ধরিয়া দুইজনে কাচারিপাড়ার দিকে যাত্রা করিলাম। জজকোর্টের পাশেই দলিল দস্তাবেজ সংশোধনের অফিস। বীররাম সেখানেই চাকুরি করিতো।

অটোর মধ্যে আদিত্য ফিস ফিস করিয়া কী যেন বলিতেছে। আমি জিজ্ঞাসা করিতেই সে বলিলো, অনুরাধা দেবীর বাড়ির চারপাশ উঁচু দেয়াল দ্বারা আবর্তিত। বাড়ির ছাঁদে উঠার জন্য সিড়ি ব্যতীত কোনো রাস্তা নেই। সুতরাং খুনি সিড়ি বেয়েই উপরে উঠেছিলো।
.
কাচারিপাড়ায় আসিতেই আদিত্য দ্রুত গতিতে অটো হইতে নামিয়া সোজা দলিল দস্তাবেজ সংশোধনের অফিসের মধ্যে ঢুকিয়া গেল। যাইবার সময় আমায় বলিয়া গেল, তুমি অটোর মধ্যেই বসে থাকো। আমি যাবো আর আসবো।

কিয়ৎকাল বাদে সে হাসিমুখে ফিরিয়া আসিলো। আমি তাঁহার হাস্যমুখ দেখিয়া বলিলাম, কী হে? এতো খুশি খুশি কেন?
- পেয়ে গেছি নিরব। পেয়ে গেছি। যা অনুমান করেছিলাম। ঠিক তাই।
- কী অনুমান করেছিলে?
- বাড়ি চলো। তারপর বলছি।
.
অটো হইতে নামিয়া সদর দরজায় পা রাখিতেই আদিত্য আমায় ধাক্কা মারিলো। ঠিক তৎক্ষণাৎ বন্দুকের গুলির আওয়াজ হইলো। কেউ একজন আমাদের দিকে বন্দুক তাক করিয়া ছিল। আদিত্য পশ্চাতে ফিরিয়া কোমর হইতে তাঁহার রিভলভার বাহির করিতেই বৈরী মশাই পালাইয়া গেল। আদিত্য বলিলো, দ্রুত বাড়ির মধ্যে ঢুকো।

ঘরে ঢুকিয়া আমি টেবিলের উপরে রাখা জলের পাত্র হইতে ঢকঢক করিয়া দুই গ্লাস জল পান করিলাম। বড্ড ভয় পাইয়াছি আমি। আদিত্যের সঙ্গে বছর পাঁচেক ধরিয়া আছি। কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হই নাই। তাও আবার নিজের বাড়ির সামনেই।
আদিত্য বলিলো, কী হে নিরব? ভয় পেয়ে গেলে? আমি তো এমনটাই আশা করেছিলাম।
আমি অবাক চোখে তাঁহার পানে চাহিয়া বলিলাম, মানে?
- কেসটা যতটা জটিল মনে হয়েছিল। আসলে ততটা জটিল না।
- মানে?
- স্থির হয়ে বসো। এতো উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। কাল সকালে এই কেসের ইতি টেনে দেবো।

আমি শান্ত হইয়া বসিলে আদিত্য বলিলো, কাচারিপাড়ায় যেই দুইটা কারণে গিয়েছিলাম। সেই দুইটা কারণই লক্ষ্যভেদ করে মর্মস্থানে গিয়ে ঠেকেছে।
- মানে?
- মানে হলো, প্রথমত আমি বীররামের অফিসের ঐ ছোকরাটার সাথে আলাপ করতে গিয়েছিলাম যে, বীররাম অফিসে থাকাকালীন সময়ে সে পত্র না দিয়ে প্রতিদিন সকালে পত্র দিতে যেতো কেন? আর দ্বিতীয়ত যেই কারণে গিয়েছিলাম, সেটা কাল সকালে জানতে পারবে।
- অফিসের ছোকরাটা কী বললো?
- সে বললো, বীররামের সাথে যেই মেয়ের সম্পর্ক ছিল। সেই মেয়েটা রোজ সকালেই চিঠি লিখতো।
- তাহলে তো বীররাম সেটা সকালে অফিসে গিয়েই নিতে পারতো।
- বীররাম রোজ অফিসে যেতো বেলা দু'টা নাগাদ। আর বাড়ি ফিরতো রাত্রি সাড়ে ন'টা নাগাদ।
- ও। তা, দ্বিতীয়টা কারণটা এখন বললে কী এমন ক্ষতি হয়ে যায়?
- এইযে তুমি একটুও ধৈর্য ধরতে পারো না। বললাম তো কাল সকালেই সব জানতে পারবে।

আমি চেয়ার ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইলাম। তারপর লাইব্রেরী ঘর হইতে একখানা সাদা কাগজ আনিয়া পশ্চিম দেয়ালে একটা পেরেক দিয়া তাঁহা গাঁথিয়া দিলাম। আর তাঁহাতে লিখিলাম, আজ থেকে আমি ধৈর্যশীল।

আমাকে দেয়ালে কাগজ লাগাইতে দেখিয়া আদিত্য বসা হইতে দাঁড়াইয়া উঠিয়া বলিলো, পেয়েছি। আমি পেয়েছি।
আমি প্রশ্ন করিলাম, কী পেয়েছো?
সে বলিলো, অস্ত্র।
- মানে? কিসের অস্ত্র?

আদিত্য আমার প্রশ্নের কোনো উত্তর না করিয়া কাঁহাকে যেন টেলিফোন করিলো। খানিক বাদে বুঝিতে পারিলাম সে রামকেশর বাবুর সহিত কথা বলিতেছে। কথা বলা শেষ হইলে সে কেবল একটা শব্দই উচ্চারণ করিলো, আলপিন।
.
পরদিন সকালে আদিত্য রামকেশর বাবুকে টেলিফোন করিয়া দ্রুত তলব করিলেন। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে রামেকশর বাবু আমাদের বাড়ি আসিয়া হাজির হইলেন। আদিত্য রামকেশর বাবুকে বলিলেন, চলুন। একবার বীররামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি।

বাড়ির বাহিরে পুলিশের একখানা ভ্যান দাঁড়াইয়া ছিল। রামকেশর বাবু তাঁহাতে চড়িয়াই আমাদের বাড়িতে আসিয়াছেন। আমরা তিনজনে সেই ভ্যানে চড়িয়া রাকেশবাবুর বাড়ির পথে যাত্রা করিলাম।
.
রাকেশবাবুর বাড়িতে ঢুকিবার মাত্রই দেখিতে পাইলাম তিনি বাহিরে যাইবার জন্যে বাহির হইতেছেন। আদিত্য তাঁহাকে বলিলো, তা রাকেশবাবু এই সাত সকালে কোথায় যান?
রাকেশবাবুর মুখাবয়ব দেখিয়া মনে হইলো, বোধ করি এই সময়ে তিনি আমাদেরকে তাঁহার বাড়িতে মোটেই প্রত্যাশা করেননি।
তিনি বলিলেন, ঐ বাইরে একটু কাজ ছিল।
- কাচারিপাড়ায়? আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

আদিত্যের এমন কথায় রাকেশবাবু ভড়কে গেলেন। তিনি আমতা আমতা করিয়া বলিলেন, কী.. কী.. কী বলেন এসব?
- অনুরাধা দেবীকে ডাক্তার দেখিয়েছিলেন? নাকি আপনার হোমিও ঔষুধ দিয়ে দিন দিন অসুস্থ বানিয়ে ফেলছেন?
- কী বলতে চাচ্ছেন আপনি?

আদিত্য রামকেশর বাবুকে বলিলেন, রামবাবু আপনি উনার হাতের লাঠিটা নিয়ে নিন। তবে সাবধান! ওটা বড় ভয়ানক জিনিস।
রামকেশর রাকেশবাবুর হাতের লাঠিখানা লইতে গেলে রাকেশবাবু লাঠির হাতল ঘুরাইয়া পুলিশের বুক বরাবর ধরিতেই আদিত্য তাঁহার রিভলবার বাহির করিয়া রাকেশবাবুর দিকে তাক করিয়া বলিলেন, লাঠি ফেলুন, ফেলুন লাঠি। নয়তো বন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিতে আমার সময় লাগবে না। নিরব তুমি রাকেশবাবুর লাঠিটা নিয়ে নাও।

আমি লাঠিটা লওয়া মাত্রই পুলিশ জনাব রামকেশর বাবু বীররামের খুনি জনাব রাকেশচন্দ্রকে গ্রেফতার করিলেন। আদিত্য বলিলো, ভালোই খেল খেলেছিলেন আপনি। আপনি প্রথম ভুলটা করেছিলেন আপনার বাড়ির কাজের ছোকরাকে আমার উপর নজর রাখতে বলে। আর দ্বিতীয় ভুলটা করেছিলেন, আমার উপর হামলা করে।

"রামবাবু, আপনি নিয়ে যান এই গৃহ বৈরীকে।"
রামকেশর বাবুকে রাকেশচন্দ্রকে ভ্যানে তুলিয়া থানায় লইয়া গেলেন। আদিত্য অনুরাধা দেবীর বাড়ির মধ্যে ঢুকিয়া দেখিলেন অনুরাধা দেবী এখনো শয্যাশায়ী। আদিত্য তাঁহার সমীপে গিয়া বলিলো, আপনার ছেলের খুনি ধরা পড়েছে।
অনুরাধা দেবী পূর্বের মতোই ভাঙা গলায় বলিলেন, কে সে?
- সে আর অন্য কেউ নয়। বরং সে আপনার ঘরের লোক জনাব শ্রী রাকেশচন্দ্র।

অনুরাধা দেবী কিছুটা উত্তেজিত হইয়া উঠিলো। আদিত্য বলিলো, আপনি একদম উত্তেজিত হবেন না। আমরা যাওয়ার পথে আপনার চিকিৎসার জন্য ডাক্তার পাঠিয়ে দেবো।
.
বাড়ি ফিরিয়া আদিত্যকে জিজ্ঞাসা করিলাম, এ কী হলো? রাকেশবাবু নিজে বীররামকে খুন করে আবার নিজেই এই তদন্তের জন্য তোমার কাছে এসেছিলেন?
- তিনি কি আর এমনি এমনি এসেছিলেন? অনুরাধা দেবীর চাপে পরে তিনি এই তদন্তের ব্যাপারে আমাকে নিয়োগ করতে এসেছিলেনন।
- তা, তুমি কিভাবে বুঝলে যে রাকেশবাবুই বীররামের প্রকৃত খুনি?
- তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, যখন আমরা রাকেশবাবুর বাড়ি থেকে বের হচ্ছিলাম। ঠিক তখনই তার বাড়ির কাজের ছেলেটি এসে জানালো একজন লোক তার সাথে দেখা করতে এসেছে।
- হ্যাঁ।
- আমি যখন লোকটাকে দেখলাম। তখন মনে হলো তাকে এর আগেও কোথায় যেন দেখেছি আমি। পরে বাড়ি এসে মনে হলো কাচারিপাড়ায় তাকে দেখেছিলাম একবার। মানুষের জমিজমার দালালী, সাথে দুই নম্বরের ব্যবসায়ও করে। সরকারি উকিলের সাথেও তার যোগাযোগ ভালো। আর তারপরেই বিকেলে তোমাকে নিয়ে একবার কাচারিপাড়ায় গেলাম। যদিও আমার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বীররামের অফিসের ঐ ছোকরার সাথে কথা বলা। কিন্তু দেখো, সেখানে গিয়ে ঐ লোকটির সাথেও দেখা হয়ে গেল। রাকেশবাবুর মেইন টার্গেট ছিল বীররামকে হত্যা করে আর অনুরাধা দেবীকে হোমিওপ্যাথিক ঔষুধ খাইয়ে মানসিকভাবে দূর্বল বানিয়ে বাড়ির সম্পত্তিটুকু নিজের নামে উইল করে নেওয়া। কিন্তু লোকটা সবচেয়ে বড় ভুল করেছিল আমাকে এই খুনের তদন্তের ভার দিয়ে। তাছাড়া তার বাড়ির কাজের ছোকরাকে দিয়ে আমার উপর নজর রাখা, সাথে গতকাল আমাদের উপর হামলা করাটা ছিল তার আরেকটা ভুল। রাতে যখন তুমি একটা পেরেক দিয়ে দেয়ালে কাগজ গাঁথলে। ঠিক তখনই আমার মনে হলো খুনের অস্ত্র কী হতে পারে। তুমি লক্ষ করলে দেখবে, রাকেশবাবু প্রবীণ ব্যক্তি হলেও লাঠি ছাড়া তার চলাচল করার যথেষ্ট শক্তি রয়েছে। অথচ তিনি চলাচল করার জন্য লাঠি ব্যবহার করতেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, বীররামকে তার বাড়ির লোক ছাড়া অন্য কেউ কোনোভাবেই তার বাড়ির ছাঁদে এসে খুন করতে পারবে না।
.
মাস খানেক পর রঙিন খামসমেত একখানা পত্র আসিলো। আদিত্য খামখানা খুলিয়া দেখিলো, হাজার টাকার তিনটে নোট। আর একটা চিঠি। চিঠিতে লেখা, প্রিয় আদিত্য রায় দত্ত, আপনার কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আপনার এই ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। তবুও সম্মানসূচক কিছু টাকা পাঠালাম।
ইতি
অনুরাধা দেবী।

আদিত্য চিঠিখানা টেবিলের উপরে রাখিয়া বলিলো, আপন ঘরে শত্রু থাকলে বেঁচে থাকা বড় দায়।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:০৪
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×