somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিমকি

০২ রা জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাসর রাতে বউ আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, আমি নিমকি খাবো। আপনি নিমকি এনে দেন।
আমি বউয়ের দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম। বয়স বিশ হবে। অনার্সে পড়ে। কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই যে, এই মেয়ের মধ্যে বাচ্চাসূলভ আচরণ রয়েছে।
তার নাম ঝুমুর। নামের সাথে তার কথারও মিল আছে। ঝুমুর যেমন একটুতেই ঝনঝন করে ওঠে। এই মেয়েও দেখছি তাই। আমি বললাম, এখন নিমকি কোথায় পাবো? আর অমনি সে কান্না জুড়ে দিলো। তার একটাই দাবি, তার এখনই এই মুহুর্তে নিমকি চাই। বড়ো মুসিবতে পড়ে গেলাম। রাত বারোটা পেরিয়েছে। চারিদিকে দোকানপাটও বন্ধ। আর তাছাড়া এখন যদি বাসার বাইরে বের হই। তাহলে কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে। আমি ঝুমুরকে বললাম, দেখো এত রাতে নিমকি পাওয়া যাবে না। তুমি বরং চা কিংবা কফি খেতে পারো। আমি বানিয়ে আনছি।
সে বাধা দিয়ে বললো, থাক। চা, কফি বানাতে হবে না। আর নিমকিও লাগবে না।
- তাহলে কী খাবে এখন?
- কিছুই না।
- ওকে। তাহলে তুমি বসে থাকো। আমি বরং চা করে এনে বসে বসে খাই।
- না। আপনি চা বানিয়ে খেলে আমাকে এখনই নিমকি এনে দিতে হবে।
- তাহলে এখন কী খাবে তুমি?
- বললামই তো কিছুই খাবো না।
- ও, বেশ তো!
- এই শুনুন না।
- বলো।
- আপনি এতো আনরোমান্টিক কেন?
- মানে?
- আমার না অনেকদিনের ইচ্ছে, বাসর রাতে আমার স্বামী আমাকে নিমকি এনে দেবে। নিমকি খাওয়া শেষে সে আমার কপালে একটা চুমু দেবে। তারপর জড়িয়ে ধরে ঘুমাবে। কিন্তু আপনি? আপনি তো সেসবের কিছুই করছেন না।
- ওকে, আমি তাহলে নিমকি বাদে বাদ বাকি কাজগুলো করি।
- না, একদম না। কখনো কি কাউকে দেখেছেন A না পড়ে B পড়তে?
- না।
- তাহলে আপনিও নিমকি না এনে আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারবেন না।

আমি বারান্দায় এসে পায়চারি করছি। আস্ত পাগল একটা মেয়েকে বিয়ে করে এনেছি। অবশ্য এই মুহুর্তে আমার বিয়ে করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। মা আর মামা মিলে জোর করে এই বিয়েটা করিয়েছে।
.
অফিস থেকে সাতদিনের ছুটি নিয়েছি। তাই অফিসে যাওয়ার কোনো চিন্তা নেই। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই বাজারের দিকে গেলাম। নিমকির দোকানদারেরা তখনও আসেনি। ঘণ্টা খানেক বাজারের আশেপাশেই ঘুরাঘুরি করলাম। নিমকিওয়ালা এলে আমি কেজি খানেক নিমকি নিয়ে বাসায় ফিরলাম। ছোট বোন নিমকি দেখে বললো, ও ভাইয়া তুমি আমার জন্য এনেছো তাই না?
- জ্বী না, আপনার জন্য না। আপনার ভাবির জন্য।
- ভাবি মানেই তোর আমার জন্য।
- কি?
- মানে ভাবিকে দিলে তো আমি পাবোই। সো, আমাকে এখনই কিছু দিয়ে যাও। যাতে পরে ভাবির থেকে চাইতে না হয়।
সুপ্তিকে কিছু নিমকি দিয়ে রুমে গেলাম। বউ আমার গোসল করে এসে আয়নার সামনে বসে সাজুগুজু করছে। আমি পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললাম, আমার বাচ্চা বউটাকে দেখি অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।
সে পেছনে ঘুরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, এই একদম টাচ করবেন না বলে দিচ্ছি। আগে নিমকি আনবেন, তারপর সব হবে।
এর মাঝে হঠাৎই তার বিছানার দিকে চোখ পড়লো। খুশিতে তার চোখ দু'টো জ্বলজ্বল করে উঠলো। সে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, আমি জানতাম আমার বর মশাই সকাল হলেই আমার জন্য নিমকি নিয়ে আসবেন।
- ঝুমুর।
- বলুন।
- তুমি করে বলতে হবে।
- আপনি আমার সব কথা শুনলে শুধু তুমি না তুই করেও বলতে পারবো।
- তুই করে বলতে হবে না। তুমি করে বললেই হবে।
.
ছুটি শেষ হয়েছে। কাল থেকে অফিস শুরু। সারাটাদিন কেমন কাটবে জানি না। ঝুমুরকে ছাড়া আমার একদম ভালো লাগবে না। মেয়েটা এই কয়দিনে আমার হৃদপিণ্ডে মিশে গিয়েছে। সারাদিন সে বাচ্চাদের মতো আচরণ করে সারা বাড়ি মাতিয়ে রাখে। আবার কখন কাকে কী বলবে, সেটাও সে জানে না। সব উল্টাপাল্টা বলে ফেলে।

আমি অফিসে থাকলে ঝুমুর আমাকে রোজ একটা করে কল করে। সেটাও আবার দুপু্র টাইমে। কল করে জিজ্ঞেস করে আমি দুপুরের খাবার খেয়েছি কিনা! আজ ফিরবো কখন ইত্যাদি ইত্যাদি!

বিয়ের দুই মাস কেটে গিয়েছে। ঝুমুরের আচরণের একটুও পরিবর্তন হয়নি। সে আগের মতোই চঞ্চলা রয়ে গিয়েছে। আব্বা আম্মু আর ছোট বোন নানির বাড়িতে ঘুরতে গিয়েছে। ফিরতে সপ্তাহ খানেক লেগে যাবে। যাবার সময় আম্মু বলে গিয়েছে, যেন এই সাতটা দিন আমি অফিস থেকে ছুটি নেই। নয়তো ঝুমুর বাসায় একা থাকবে। কিন্তু দু'মাস আগেই আমি বিয়ের জন্য ছুটি নিয়েছিলাম। তাই এখন আর ছুটি নিতে পারলাম না।
.
আজ আমি বড্ড ক্লান্ত। অফিস থেকে ফিরে এসেই বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। তাছাড়া অন্যদিন আমি অফিস থেকে ফিরে ফ্রেশ হওয়ার আগে ঝুমুরকে সাথে নিয়ে নিমকি মাখাই। তারপর দু'জন একসাথে বসে খাই। কিন্তু আজ আমার একদমই ভালো লাগছে না। ঝুমুর আমাকে শুয়ে থাকতে দেখে নিজেই নিমকি মাখিয়ে আনলো। বললো, তুমি খেতে থাকো। আমি আসতেছি। নিমকির দিকে চোখ পড়তেই আমার জিভে জল চলে এলো। দারুণ মাখিয়েছে বউটা আমার। আমি তার জন্য না রেখে নিজেই সবগুলো খেয়ে ফেললাম।

খানিকপর সে রুমে এলো। এসে দেখলো আমি বসে বসে ফোন টিপছি। সে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আমাকে দিকে তাকিয়ে রইলো। আমি বললাম, গত মাসে টেলিফোন বিল কত এসেছিল যেন?
সে সঠিক উত্তরই দিলো। আমি বললাম, আজকের নিমকি মাখানোটা দারুণ ছিল।
সে অবাক চোখে চেয়ে বললো, তো তোমার কিছু হলো না কেন?
- বাপুরে, তুমি শোনোনি পাবলিক আজকাল সবকিছুতেই ফর্মালিন দেওয়া শুরু করেছে। ঠিক তেমনি ঔষুধ বিক্রেতারাও আজকাল বিষের মধ্যে ফর্মালিন দিতে শুরু করেছে। আর চিন্তা করো না, বাবা মা বাড়িতে ফিরলেই টেলিফোনের বিল আগের মতো করার ব্যবস্থা করবো।
.
নিমকি
লেখক: Srabon Ahmed (অদৃশ্য ছায়া)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×