somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিখোঁজ সংবাদঃ একটি নাম খুঁজে পাওয়া যায় নি.....

২৭ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গানটি শুনতে থাকুন

একটি অ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজাতে বাজাতে দ্রুত বেগে ছুটে গেলো এই মাত্র, এক্সিডেন্টটা ঘটলো কিছুক্ষন আগে, নতুন কেনা বাইকে চেপে যে নাম না জানা ছেলেটি অনেক খুশি মনে স্পিড ব্রেকার তোয়াক্কা না করে বাইক চালাচ্ছিলো, তাকে আমরা দেখেছিলাম, বাতাসে এলোমেলো হয়ে যাওয়া তার চুলগুলোও আমরা দেখেছিলাম, স্পিড ব্রেকারকে তোয়াক্কা না করতে করতে ছেলেটি ট্রাকটিকেও তোয়াক্কা করতে বেমালুম ভুলে গেলো আর ট্রাকটি তার বাইকটিকে দেখেও দেখলো না, বাইকটিকে সহ ছেলেটিকে রাস্তায় রক্তাক্ত আছড়ে ফেলে রেখে চোরের মতো পালিয়ে গেলো, পালিয়ে যাবার আগে ছেলেটিকে টেনে হিচড়ে নিয়ে গেলো বেশ কিছু দূর, সাথে সাথে টেনে নিয়ে গেলো ছেলেটির সব বিষাদ, অবসাদ, ভয়, স্বপ্ন আর বেঁচে থাকার শেষ স্বাদটুকু। নিথর ছেলেটিকে নিয়ে কিছুক্ষন টানা হেঁচড়া চললো, তার নামটি শেষ মুহুর্তেও জানা গেলো না।

হাসপাতালে যখন অ্যাম্বুলেন্স পৌছুলো তখন অচেতন ছিলো ছেলেটি, দ্রুত তাকে আইসিইউ তে নিয়ে যাওয়া হলো, কর্তব্যরত চিকিৎসক ঘোষনা দিলেন ছেলেটির পালস পাওয়া যাচ্ছে না,কিছুক্ষন পর ছেলেটির হৃদপিন্ড মৃদু ভাবে জানালো সে বেঁচে আছে, চিকিৎসকের চঞ্চলতা দেখা দিলো, দ্রুত অক্সিজেন মাস্ক পড়ানো হলো, আরো অনেক নাম না জানা ইঞ্জেকশন দেয়া হলো, তখনো রক্তাক্ত ছিলো তার সারা দেহ, ছেলেটি জানতেও পারলো না জীবন আর মৃত্যুর মাঝে সে একটি খুঁটি গেড়ে বসে আছে, ছেলেটির হয়তো তখন জানার প্রয়োজনও ছিলো না, কাটিয়ে দেয়া তার জীবিত অতীত গুলো ঠিক এই মুহুর্তে কোন অর্থবহ রুপে কারো সামনেই হাজির হলো না, কারন আমরা তার নাম জানতাম না, আমরা তার কিছুই জানতাম না.....ডাক্তার ৭২ ঘন্টা বেঁধে দিলেন ছেলেটির জীবন সূচকে।

গল্পের এ পর্যায়ে, নাম না জানা ছেলেটির একটা নাম দেয়া যাক, 'অনিকেত', অনিকেত কে যখন প্রথম দেখেছিলাম তখন তার বাইকটি নিয়েই ব্যাস্ত থাকতেই দেখেছিলাম, বাইকের গতি একটু বেশিই ছিলো বলেই হয়তো ছেলেটিকে চোখে পড়েছিলো, আর লক্ষ্যনীয় যেটা ছিলো ওর বড় বড় এলোমেলো চুলগুলো, অনিকেত কে ছিলো এই প্রশ্ন কখনো জাগেনি যতক্ষন না সে নিথর হলো, অথচ ছেলেটির সাথে এক্সিডেন্টের আধাঘন্টা আগেও এক দোকানে বসে চা খেয়েছি! .....একটু আগে ডাক্তার জানালেন "ছেলেটির যে অবস্থা তাতে তার বাঁচার আশা খুবই সীমিত, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি, আপনারা দয়া করে ভীড় না করে আমাদের মতো করে চিকিৎসা করার সুযোগ দিন" আমরা যারা অনিকেতকে টেনে হিঁচড়ে এখানে নিয়ে এসেছি তাদের উৎসুক দৃষ্টিতে একটুও অনাত্মীয় কিছু ছিলো না, আমরা আরো বেশি উদ্বিগ্ন ছিলাম প্রকৃতপক্ষে আমরা ছেলেটির স্বজন নই বলেই, কেমন হাত-পা বাঁধা অনুভব করছিলাম, স্বজন হলে হয়তো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো আরো ভালোভাবে নেয়া যেতো, কিন্তু এখন যেটা হয়েছে প্রকৃতপক্ষে আমরা ছিলাম সবাই রাস্তার এদিক সেদিক বিচরনকারী আপন বৃত্তে ঘুরতে থাকা মানুষ, এখন কে এই ছেলের দায়িত্ব নেবে এই ভেবে হয়তো সবাই চুপ আছি। পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছিলো, হয়তো খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়বে, হয়তো সকালের ভেতর ছেলেটির স্বজনরা সব কিছু জানতে পারবে, হয়তো ছেলেটি বেঁচে যাবে, হয়তো অনিকেত তার আসল নামটি ফিরে পাবে, হয়তো........

অনিকেত কে বাঁচানোর যে মৃদু সম্ভাবনাটি দেখা গেলো সেটি হলো একটি মেজর অপারেশন, ওটিতে নিয়ে যাওয়া হলো, শুইয়ে দেয়া হলো অপারেশন বেডে তীব্র আলোয় অনিকেত ভেসে যেতে লাগলো, ডাক্তার তুলে নিলেন ধারালো স্কালপেল আর চিড়ে ফেলতে লাগলেন অনিকেতের বুক, তারপর হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকলেন অনিকেতের বুকে, সেখানে হৃদয় ছিলো না কোনো! সেখানে ভেসে উঠলো নিকষ আঁধার, সেখানে ভেসে উঠলো অচেনা সব ছায়া, ধীরে ধীরে সব স্পষ্ট হতে লাগলো, ছেলেটির বুকে ভেসে উঠতে লাগলো ছেলেটির অতীতগুলো, সেখানে রয়েছে একাকী রাত, সেখানে রয়েছে বাউন্ডুলে ঝড়, ডাক্তার স্তব্ধ হয়ে দেখতে লাগলেন সেসব স্মৃতি আর খুঁজতে লাগলেন ছেলেটির হারিয়ে যাওয়া হৃদয়টি, ডাক্তার হাতরাতে লাগলেন ছেলেটির বুকের ভেতর আর ডুবে যেতে লাগলেন অনিকেতের একাকী রাতের মাঝে, অনিকেত যেমন অচেতন ছিলো তেমনই রইলো কিন্তু ধুকপুক পালস কোথাও না কোথাও থেকে ভেসে আসছিলো, সেই চেঁড়া বুকের মাঝে ডাক্তার খুঁজে পেলেন নাম না জানা এই ছেলেটির একটি অচেনা জগত! যেখানে অনিকেতের একটি শৈশব আটকে ছিলো যেখানে অনিকেত তার বাবার হাত ধরে হাটছে, কিছুক্ষন পর বাবার হাত ছেড়ে ছুটে তার মায়ের বুকে আছড়ে পরলো, মা ছেলের গালে চুমু দিয়ে বুকে টেনে নিলেন..... অনিকেতের স্কুল পালিয়ে বন্ধুদের সাথে অনুচ্চ ইটের দেয়ালের উপরে আড্ডাবাজি, ছেলেটির চেহারা একটু বোকা-বোকাই ছিলো, বিকেলের খেলার মাঠ, এলোমেলো সব স্মৃতির বাঁকে ছেলেটি ছুটে বেড়াতে লাগলো, কিছুক্ষন পর ছেলেটি বড় হয়ে গেলো আর চেহারা হলো ঠিক এই অচেতন ছেলেটির মতো, বন্ধুদের সাথে আড্ডাবাজিতে মেতে উঠলো, তুমুল ঝগড়ায় মেতে উঠলো কখনো, কখনো একা একা অনেক উঁচু পানির ট্যাংকে উঠে বসে থাকলো তখন ছেলেটির বুক জুড়ে বিস্মৃত প্রান্তর। যে মেয়েটির হাত ধরে অনিকেত বসে আছে সেই মেয়েটি অনিকেতের চোখে চোখ রেখে বসে আছে, অনিকেতের বুক জুড়ে এখন মেয়েটির চোখ.....তারপর চোখটি রুপ নিলো বিষাদে, হাতটি ছেড়ে মেয়েটি চলে গেলো, ছেলেটি মেয়েটিকে ডাকতে লাগলো তুমুল চিৎকারে, তারপর ছেলেটির বুক জুড়ে শুরু হলো বাউন্ডুলে ঝড় যেখানে সব কিছু লন্ড ভন্ড হয়ে গেলো তারপর হঠাৎ সামনে এসে হাজির হলো ট্রাকটি তারপর একটি নিকষ কালো রাত আর সব স্মৃতির বাঁকে বাঁকে আটকা থাকা হৃদ-স্পন্দন.....

Since you’re gone
There is an empty space
Since you’re gone
The world is not the same

I go back to the places we’ve been
It feels like you’re still there
I live all those moments again
Wishing you were here

Since you’re gone
There is an lonely heart
Since you’re gone
Nothin’ is like it was

There are memories all over the place
Bringin’ it back all so clear
Remember all of those days
Wishing you were here

All those lonely nights
I gotta fight for you, yes I do
Yes I do

Since you’re gone
There is a heart that bleeds
Since you’re gone
I’m not the man I used to be

I follow you steps in the snow
The traces disappear
We know what we’ve lost when it’s gone
I’m wishing you were here



অনিকেত নামের নাম না জানা ছেলেটির হৃদয় খুঁজে পাওয়া গেল অবশেষে, ডাক্তার অনেক চেষ্টা করে ক্ষত গুলো জুড়তে পারলেও স্মৃতি-বিস্মৃতিগুলো জুড়তে পারলেন না, চার ঘন্টা বত্রিশ মিনিট অপারেশনের পর গভীর রাতে ছেলেটি মারা যায়, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ছেলেটির পরিচয় পাওয়া যায় নি.....
১৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তোমাকে লিখলাম প্রিয়

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০২ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০১


ছবি : নেট

আবার ফিরে আসি তোমাতে
আমার প্রকৃতি তুমি,
যার ভাঁজে আমার বসবাস,
প্রতিটি খাঁজে আমার নিশ্বাস,
আমার কবিতা তুমি,
যাকে বারবার পড়ি,
বারবার লিখি,
বারবার সাজাই নতুন ছন্দে,
অমিল গদ্যে, হাজার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

×