somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জমানো শীতে আনন্দময় সারদিন (ঘরোয়া ব্লগ আড্ডা)

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছুটিতে কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয়নি আমাদের। তিনদিনের ছুটিতে অদিতি ভাবছিল সিলেটে সুরঞ্জনা দিদির বাসায় যাবে। পাজিটা আমাদের বলেও নাই! এদিকে দিদিকে ঢাকায় আসতে হবে জরুরী তলব। কাজেই অদিতির যাওয়া বাদ। দিদি আমাদের মানে আমাকে আরপারু আপাকে জানিয়ে রাখলেন সে কথা। যেন আমরা তার ওখানে হাহাহিহি, খাইদাই, গড়াগড়ি করতে পারি দিনমান, যেন আর কোথাও না যাই অন্তত একটা দিন।

আমরা সব আড্ডাবাজ। এই কথা কি আর ভুলি! আসবার আগেই তাকে খোঁচানো শুরু, "এই কবে আসছো?" বেচারা আট ঘন্টা গাড়ী চড়ে, জাম ঠেলে বাড়ী ফিরে আমায় জানালো, "এসেছি তোমাদের রাজধানীতে।" আমি বত্রিশ দাঁত বের করে বললাম "এই হল আমাদের ঢাকা, আর এই হল জীবন, ব্যপার না"।

ঠিক হোল শনিবার দিন আমরা চারজন সেদিনের মতন হুলুস্থুল হাসি আনন্দে মেতে উঠবো। অদিতিটা আরেক কাঠি চাল্লু, সে শুক্রবারে যেয়ে আগাম ভুনা খিচুড়ি পেট পুড়ে খেয়ে এল। আমরা তো ভাবছিলাম সে বুঝি বাড়ীই ফিরবে না আর মজার মজার সব খাবারগুলো একাই খাবে। শেষে সব হিংসার অবসান করে ফেসবুকে আমাকে নকনক....এইদিকে যেয়ে ঐদিকে যাবা, তারপর ঐ সাদা বাড়ীর সাততলায় দিদিকে পাবা। আমি বল্লাম তুই কোথায়। বলে বাড়ীতে। বল্লাম কখন যাবি? বলে ভোরে :P। প্রমাদ গুনি আমি। শীতের এই ছুটির দিনে দশটা পর্যন্ত ঘুমানোর তাহলে কি হবে! ওরে দেই ঝাড়ি, "এত সকালে যেয়ে কি করবি? দিদিরে কি রান্নার জন্য পেয়াজ কেটে দিবি?" বলে "না, আমার অন্য কাজ আছে"। বললাম "কাজ নাই তোর এত আগে যাওয়ার, সারাক্ষন পকপক করবি, আর দিদির রান্না পচা হয়ে যাবে।" বান্দরটা বলে "হোক, তুমি ঐটাই খাবা।" আর কি হাল ছাড়লাম।

এরপর দিদির নক, একগাদা খাবারের লিস্ট শুনিয়ে বলে আর কি খাবি বল, কার কি আবদার আছে বলে ফেল।" আমি বললাম "সিলেটে যেয়ে আবদার করবো, আর তোমার পেছন পেছন ঘুরে রান্নাগুলো সব শিখেও ফেলবো।" বলে আচ্ছা।

খাবারের মেনুতে গুড়ের পায়েস ছিল। কি অদ্ভুত ব্যপার! আমার কিছুক্ষন আগেই মনে হচ্ছিল গুড়ের পায়েস এর কথা। আমি বললাম আমি খাব, আর জাফনা এবং মি. প্যাং প্যাং এর জন্য নিয়েও আসবো :P । আগের রাতে একগাদা দুষ্টুমিকরে ঘুমাতে গেলাম।

সকালে দেখি কি ঠান্ডারে বাবা! একটু আলোর মুখ দেখার আশায় লেপের নীচে বসে নেট দেখছি। দিদির ফোন, লেপের নীচে আছি শুনে বলে "এখানে এসে লেপের নীচে বসে থাক"। অদিতি পাজীটা এরই মধ্যে ওখানে হাজির। আধঘন্টা পর পারুপার ফোন, তোমার জন্য চা খেতে পারছি না। অথচ তারা তখন ধোয়া উঠানো গরম চা হাতে নিয়ে বসে আছে :(( । আমি পড়ি মরি করে তৈরী হলাম, হুলুস্থুল করে বাসা থেকে বের হলাম, আসলেই দেরী করে ফেললাম। এর মধ্যে তিনজনে কত আড্ডা দিয়ে ফেলল কে জানে। এমনি ভাবতে ভাবতে শেষ পর্যন্ত পৌঁছলাম। দিদি বড় একটা হাগ দিয়ে বুঝিয়ে দিল কি তার উষ্ণতা। আমি তো মাইর খাওয়ার ভয়ে ছিলাম। এর আগে পারুপা বাসায় আড্ডাতেও আমি লেইট করেছিলাম। এরা সবাই এত ভাল, বলল আমি নাকি অনেক টায়ার্ড থাকি তাই ছুটির দিনে বেরুতে দেরী হতেই পারে।

এবং একই সাথে এরা এত দুষ্টু বলে জন্মদিনের পর থেকে সুন্দর লাগছে আমাকে :P ;)। আমি বলি আরে মেকআপ করি আমি আর প্রসংশা আরেকজনের এইসব কি X((!

পারুপা আমাদের সবার জন্য একটা করে মোবাইল রাখবার ব্যাগ নিয়ে এসেছে, আর আমার জন্য কিছুদিন আগে পেরিয়ে যাওয়া জন্মদিনের উপহার। আর তাই নিয়ে আমাকে পচানোর আগে আমিই দুষ্টুমি জুড়লাম।

জন্মদিনের গিফ্ট



শুরু হল হুলুস্থুল ছবি তোলা। এদিকে খাবার সার্ভ করা হয়ে গেছে। শীতের তীব্রতায় খাবার ঠান্ডা হবার উপক্রম। তাই চটপচ সব খেতে বসে গেলাম। আমি বললাম খেয়েই চলে গেলে একটি বিশেষ এলাকার কথা বলা হয়। এসেই খেতে বসলে তাকে কি বলা হবে? কে এত কথার উত্তর দেয়। সব খাওয়ার দিকে নিমগ্ন। দিদি বোঝাচ্ছে কোনটা কোন খাবার, রেসিপি ইত্যাদি। এতএত মজার মজার খাবার, সাতকরা দিয়ে গরুর মাংস, মুরগী, বেগুন আর ডিমের ভর্তা, শোল মাছ দিয়ে মুলা, সব্জী, সালাদ, আচার, গুড়ের পায়েস........উহ আরো বললে সবাই আমাদের রাক্ষস বলবে।

এই হল খাবার :)



পারুপা খেতে খেতে আচারের প্রসংশায় অস্থির দেখে দিদি তাদের মাস্টারশেফকে বলল ছোট বাটিতে পারুপাকে একটু আচার প্যাক করে দিতে । পারুপার ঝটপট উত্তর ছোট বাটি কেন? বড় হলে কি হয়:P । এই হলাম আমরা।

পারুপার আচার আত্তিকরণ :)




এরপর সব বিছানায়। অদিতি আর দিকে একপাশে বসতে দিয়ে পারুপা আর আমি আরাম করে কম্বলের নীচে উষ্ণতায় বসলাম, চারজন কম্বলের চারধারে। শুরু হোল গল্প। গল্প আর গল্প। এর মধ্যে আরিয়ানার ফোন। শুরুহয় আমাদের পাচজনের আড্ডা। ও ঢাকা এলে আমরা কত মজা করবো তার প্ল্যান করা হয় :)। অদিতির একটা বিশেষ নামকরন ও করা হয়েগেছে এরই মাঝে। এই মেয়েটা এত ভাল, আমাদের হাজারো উল্টাপাল্টা কথায় কিচ্ছু বলে না। সে আবার এত শীতার্তপ্রানী...অদ্ভুদ একটা রঙচঙা মোজা আছে তার ;)। ওটার ছবি তুলতে চাইলে আমি বলি একটু রোমান্টিক করে পা টা রাখ। ও বলে পায়ের আবার রোমান্টিক কি! বুঝলাম ওর ঐ নামকরনটা কতটা ঠিক:P। এর মধ্যে পারুপা আর ভাইয়ার প্রেমের শুরুর একটা গুঢ় খবর্ও পেয়ে গেলাম ;), তারা এত সুইট আর রোমান্টিক!

এরমাঝে জানা গেল আমাদের মাঝে একজনের আয়োডিন কম তাই তার থায়রয়েড এর সমস্যা :((। আর যায় কোথায় সব্বাই একযোগে তাকে আয়োডিনযুক্ত খাবারের উতসের সন্ধান দেয়া শুরু হল। এটা যে একটা বিটলামী বুঝবার সময়ই হল না :P। আমি বললাম এখানে একজন গবেষক আছেন তার কার্যকরনের স্বার্থকতা প্রমান করতেই আমরা আয়োডিন যুক্ত খাবারের গবেষণা করলাম। তাকে টুনা মাছ থেকে লইট্টা মাছ পর্যন্ত খেতে পরামর্শ দেয়া হোল। বেচারার ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি অবস্থা :((

এর মধ্যে আরেকজন একখানা বানী ঝাড়লো, "পুরুষ মানুষের ভালবাসা আর মুসলমানের মুরগী পোষা" নাকি একই। কথাটা শুনে চিন্তায় আছি :|

আর পারুপা বলেছে আমাকে নাক ফুটো করতে, করলে নাকি একটা জারকনের নাকফুল কিনে দিবে। অদিতি রোমান্টিক বুঝুক আর না বুঝুক এতে চক্ষু বুজে সায় দিল। নাকফুলের লোভে কি করি তার ঠিক নাই :P । যদিও আমার ধারনা নাকফুলে আমাকে ফুলবানুর মতন লাগে।


গল্পে গল্পে বিকেল হলে দিদি আমাদের জন্য পায়েস, সাতকরা, আর আমার পারু আপার জন্য শুকানো ডেফল (যা কিনা হাচ্চু পার্টির জন্য দাওয়াই) যার যার ব্যাগে গুছিয়ে দেন। সাতকড়া কিভাবে রান্ধতে হবে তার টিপস্ও দেন, এই টিপস নাদিলে নির্ঘাত কাল পারু আপু ভাইয়ার কাছে আরেকবার নাকাল হতেন। আমি তো আগে আমরা কিভাবে সাতকড়া খেযেছিলাম সেটা ভেবে হেসেই খুন হচ্ছিলাম বারবার।
আমি মনে করে আমার পুতুল গিফ্টটা নিয়ে নিলাম।
এরপর বিকেলের ঘন দুধের মজার চা। মাসাটারশেফের স্পেশাল চায়ের আশায় আমাদের চা পেতে দেরী হোল। তবে এই চান্সে দিদির হাতের দারুন চা খাওয়া হয়ে গেল।

পারুপা র গাড়ী এসে পড়তেই আমাদের আসর ভাঙলো। ভাগ্যভালো শীত ছিল, নইলে নাকি আমাকে এক জায়গায় ছুড়ে ফেলে ওরা চলে যেত:((। এরপর আমি একা ফিরলাম, পারুপা আর অদিতি একসাথে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ১০:৪৯
৩৬টি মন্তব্য ৩৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×