somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চরম ব্লগাড্ডা, খাওন, দাওন ইত্যাদির গপ্প।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন ব্লগে কিছু লেখা তো দূরে থাক, ঠিকমত আসাই হয়নি। হঠাৎ করে আব্বার অসুস্থতার খবর পেয়ে ঢাকায় ছুটে গিয়েছিলাম। ফিরে এলাম গতকাল। প্রথম ক'দিন হাসপাতাল আর ঘর, ঘর আর হাসপাতাল করে আব্বাকে বাসায় এনে একটু স্বস্তির নিশ্বাষ ফেলে অন্য দিকে তাকালাম। আব্বার সব রিপোর্ট স্বাভাবিক, হার্টেও কোন ব্লক না পাওয়াতে মনটা বেশ ফুরফুরে মেজাজেই ছিলো। ব্লগার অদিতি কবির, শ্রাবণসন্ধ্যা, পারভীন, নাআমি সবাই ফোন করে খোঁজ খবর নিচ্ছিলো। চতুরের হুদা ভাইও নিয়মিত খোঁজ করেছেন। সাহাদত ভাইকে ফোন দিয়েছিলাম। কিন্তু হাতের কাছে পানির জগ না থাকায় বোধহয় ফোনটা ধরেন নি। ;) যাই হোক, অদিতি, শ্রাবণসন্ধ্যা হুঙ্কার দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, "তুমি কি দেখা না করেই যেতে চাইছ না কী"? ভড়কে গিয়ে মিনমিন করে বললাম, " না, না, তাই কি কখনও হয়। এর মাঝে একদিন শ্রাবণসন্ধ্যা ফোন দিয়ে বল্লো, "আগামী শুক্র,শনি আমার ছুটি' তুমি আমার বাসায় এসো। অদিতি আর পারভীন আপুকেও ডাকছি"। পরে পারভীন ফোন করে জানালো, আড্ডা হবে, তবে তার বাসায়।
শুক্রবারে নিউমার্কেটে বইএর দোকানগুলোতে ঢু দিলাম। অনেক দিন পর দুই হাতে বইএর পাজা বুকে চেপে ফুচকা, লাচ্ছি খেয়ে বুক ভরা খুশী আর টাকা-শুণ্য ব্যাগ নিয়ে ঘরে ফিরলাম। পরদিন ১১টার দিকে বোন-ভগ্নীপতি ধানমন্ডিতে পারুর বাসায় আমায় নামিয়ে দিয়ে গেলো।

নির্দিষ্ট ঠিকানায় বেল বাঁজতেই এক পিচ্চি দরজা খুলে দিয়ে সোজা বেডরুম দেখিয়ে দিলো। ইতস্তত করছি, এমন সময় সদ্য-স্নাতা পারু এসে জড়িয়ে ধরলো। তার উষ্ণ আলিঙ্গনে বুঝলাম ঠিক জায়গাতেই এসেছি। সোজা তার বিছানায় গিয়ে বসলাম। একটু পরেই অদিতি এলো। ছোট্ট মিষ্টি প্রজাপতির মতো চঞ্চল একটি মেয়ে। গল্প জমে উঠলো। রিতুকে( শ্রাবণসন্ধ্যাকে ঘন ঘন ফোন দেয়া হচ্ছে। সে তখনও "আসছে"। এর মাঝে অদিতির আনা মজাদার কেক ( নামটা ভুলে গিয়েছি) :-* আর সসেজ দিয়ে বানানো পারুর মজাদার খাবার আমরা টপাটপ শেষ করে ফেলেছি। শেষ হবার পর মনে হলো, ইয়াল্লাহ!!! ফটুক তো তোলা হলোনা!!! :P এতোক্ষনে শ্রাবণসন্ধ্যা এলো। ঘেমে-নেয়ে একাকার। হ্যাচ্চো, ফ্যাচ্চো করতে করতে চোখ-মুখ লাল হয়ে গেছে। তবুও আড্ডার নেশা ছাড়তে পারেনি। চল্লো আমাদের ম্যারাথন আড্ডা। শুয়ে-বসে, পারুর বিছানাকে চটকে ভর্তা করে আমাদের আড্ডা এগিয়ে চল্লো। এর মধ্যে পারুর বড় বোন শিরিন আপাও এসে যোগ দিলেন। ( দেখে কিন্তু পারুর ছোটই মনে হয়) :) ভাগ্যি ভালো পারুর বর, মানে আমাদের দুলাভাই সেদিন দেশে ফেরার কথা থাকলেও বাংলাদেশ বিমানের কল্যানে ফিরতে পারেন নি। নাহলে বেচারা আমাদের এই চটকা ভটকা আড্ডা দেখে নির্ঘাত ভির্মী খেতেন।;)

এবার এলাম খাবার টেবিলের সামনে। এখন আর ভুল নয়। খাওয়ার আগেই কিছু ছবি তুলে নিলাম।
পোলাও।

চাইনিজ ভেজিটেবল, আর সালাদ।

মুর্গীর গোস্ত।

গরুর গোস্ত ভুনা।

বেগুন ভর্তা, আলু ভর্তা, মশুর ডাল ভর্তা, আর কালিজিরা ভর্তা।

আরো ছিলো রুই মাছ ভাজা, ঘন ডাল, ভাত। ডাল আর রুই মাছ ভাজার প্লেট আমার হাতে থাকায় ছবি ঠিক মতো আসেনি।
আমরা ছবি তোলা খ্যান্ত দিয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম খাবারের উপর। হুম, হৃদয় কত শক্ত ও পাষান হলে এসব খাবারের সামনে না খেয়ে থাকা যায় তা যদি কেউ শিখতে চায় তবে তাকে শ্রাবণসন্ধ্যা মানে রিতুর কাছে যেতে হবে। সে ছিলো কঠিন ডায়েটে। তাকে কোনমতেই টলানো গেলোনা। অগত্যা কি আর করা? /:) পারু তার নির্দিষ্ট দুধ-কলা সামনে ধরে দিলো। মানে পোষ মানালো। :P
খাওয়ার পরে আবার আড্ডা, এর মাঝে ছোট বোন ফোন করে বল্লো, ভাগনীটার ডিহাইড্রেশন হওয়ায় তাকে স্যালাইন পুশ করাতে হাসপাতালে যাচ্ছে। আমি তাকে নিশ্চিন্ত করলাম, কোন অসুবিধা নেই। আমি রিতুর সাথে চলে আসবো। গপ্পের ফাঁকে ফাঁকে এগুলোও গলাধ্বকরন হলো।
চ্রম মজাদার পুডিং। যেটার লোভ শ্রাবণসন্ধ্যাও সামলাতে পারেনি।

নারকেল দেয়া সেমাই।

রিতুর নিয়ে আসা ডার্ক চকোলেট। আমি না খেলেও অদিতির পেটে অনেকটাই গেছে। :P

কোথা দিয়ে যে দিনের আলো নিভে সন্ধ্যা হয়েছে টেরই পাইনি। "যেতে নাহি দিবো হায়, তবু যেতে দিতে হয়, তবু চলে যায়" পারু আর শিরিন আপার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। অদিতি কাছেই থাকে, ও চলে গেলো এক দিকে আমাকে নামিয়ে শ্রাবণ যাবে উত্তরায়। তাই আমরা সিএনজির আশায় হাটতে থাকলাম। এর মাঝে আব্বা ফোন করছেন। ফোনের ওপারে উনার উৎকন্ঠা টের পাচ্ছি। শ্রাবন আমায় জিজ্ঞাসা করলো, দিদি তোমায় মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে নামিয়ে দিলে তুমি সিএনজি নিয়ে যেতে পারবে তো? বেচারী রিতুর অবস্থা তখন খুব খারাপ। জ্বরে মুখ লাল হয়ে গিয়েছে। ঘন ঘন নাক ডলছে। আমি আশ্বাষ দিলাম। অবশ্যই পারবো।

এই দোলনচাঁপার গুচ্ছ হাতে দিয়ে শ্রাবণ আমায় নির্দিষ্ট জায়গায় নামিয়ে দিলো। আমি ভ্যাবলার মতো অনেকক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলাম। কোন খালি সিএনজি বা ট্যাক্সির দেখা পেলাম না। অগত্যা আর কী!!! হাঁটা শুরু করলাম। এক সময় রাস্তা পার হয়ে বনানী চেয়ারম্যান বাড়ী চেকপোস্টের কাছে গিয়ে দাড়ালাম। লোডশেডিং। অন্ধকার চারিদিক। দু/একটা সিএনজির দেখা পেলেও কেউ ক্যান্টনমেন্ট যেতে রাজী না। অবশেষে ছোট বোন এসে আমায় উদ্ধার করে নিয়ে গেলো। ঘড়ির কাঁটা তখন প্রায় রাত ন'টার ঘরে। আমার পাংশু মুখ দেখে বোন আমায় আশ্বস্ত করলো, "আব্বাকে বলেছি, তোমায় কিছু বলবেন না" যাক! অবশেষে ঘরে ফিরে এলাম। আব্বাও আর বকা দিয়ে আমার আনন্দ ম্লান করলেন না। আমার জীবনের স্মরনীয় একটি আড্ডার ছবি মনের মনিকোঠায় সযতনে উঠিয়ে রাখলাম।
বন্ধুত্ত্বের নিদর্শন স্বরুপ এই মগ।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১১ রাত ৯:৫১
৬৪টি মন্তব্য ৪২টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দাসত্বের শিকল ভাঙার স্বপ্ন দেখা এক ক্রান্তদর্শী ধূমকেতু ওসমান হাদী।

লিখেছেন মুঃ গোলাম মোর্শেদ (উজ্জ্বল), ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশে যে ধরণের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তাহলো বিদেশী প্রভুরদের দাসত্ব বরণ করে রাজনৈতিক দলগুলোর রাষ্ট্র ক্ষমতায় গিয়ে দেশের মানুষের উপর প্রভুত্ব করা , আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×