হাতিয়ার নিঝুমদ্বীপ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নজরুলকে গণপিটুনি
দাবীকৃত চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধর করার প্রতিবাদে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার নিঝুমদ্বীপ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের (ফাঁড়ি) ইনচার্জ এসআই নজরুল ইসলামকে আটক করে গণপিটুনি দিয়েছে এলাকাবাসী। মঙ্গলবার সকালে দ্বীপের নামার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইব্রাহীম পার্টির দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, নিঝুমদ্বীপ নামার বাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, নারী ধর্ষণসহ পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে নানান অপকর্ম চালিয়ে আসছে । তিনি স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ী ও নৌকার মাঝিদের থেকে মোটা অংকের চাঁদা ও মাছ আদায় করতেন। দাবীকৃত চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তার নির্যাতনের শিকার হন তারা। তারই ধারাবাহিকতাই মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় ইব্রাহীম পার্টির মাছের ক্লোষ্টার থেকে চাঁদা দাবী করে। সে ঁচাদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে ইব্রাহীম পার্টির ছোট ভাই আবুল হোসেনকে ব্যাপক মারধর করে তার দোকানের ক্যাশ বাক্স ভেঙ্গে নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যাওয়া চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মাছ ব্যবসায়ী ও মাঝিরা একত্রিত হয়ে তাকে দোকানের ভেতর বেঁধে মারধরের পর আটক করে রাখে। প্রায় ৭ ঘন্টা পর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার অনুরোধে এসআই নজরুলের কাছ থেকে স্টাম্পে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয় এলাকাবাসী। এ ঘটনায় মাছ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন (২৬) ও হেলাল মাঝি (২৮) নামে ২ মাঝি আহত হয়েছে। এলাকাবাসী চাঁদাবাজ এসআই নজরুল ইসলামের বিচারের দাবীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
নিঝুমদ্বীপ নামার বাজারের মাছ ব্যবসায়ী, ইব্রাহীম পার্টি, আব্দুল আলী পার্টি, হাবিব উল্যাহ ডালি, দুদুমিয়া গাঁজিসহ উপস্থিত এলাকাবাসী জানান, চাঁদপূর থেকে আসা মাছ ব্যবসায়ী দুদু মিয়া গাঁজি বলেন, ৬ অক্টোবর থেকে মাছ ধরা নিষেধ হলেও সোমবার রাত্রে এসআই নজরুল ইসলাম বাজারের মাছ ব্যবসায়ীদেরকে নদীতে মাছ ধরতে নিষেধ করে। কেউ মাছ ধরলে তাকে ১০ হাজার টাকা দিতে হবে বলেও তিনি হুমকি দেন।
একই এলাকার জেলে শামিম মাঝি (২৫), আবুল কাশেম মাঝি (৪০), সোহরাব মাঝি (৩৫), কামাল মাঝি (২৫), কেফায়েত মাঝি (২৫), আবুল হোসেন ওরফে ভেনু মাঝিসহ বহু মাঝি বাংলানিউজকে অভিযোগ করে বলেন, এআই নজরুল বিভিন্ন সময়ে তাদের থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা করে চাঁদা আদায় করতো। চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে গাল মন্দসহ বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করতো সে। তারা আরো বলেন, গত আউশ মৌসূমে কৃষকের জমি চাষাবাদ করার জন্য থানা সদর ওছখালী থেকে একটি পাওয়ার টিলার নিঝুমদ্বীপে আসলে এসআই নজরুল তার থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দাবী করে। চাঁদা না দেওয়ায় ড্রাইভারকে জুতাদিয়ে মারধর করে তাকে দ্বীপ থেকে তাড়িয়ে দেয়। নিঝুম দ্বীপের পাড়ি থানার ইনজচার্জ নজরুল ইসলামের বিরদ্ধে নারীবাজি, চাঁদাবাজি, ঘুষ কেলেংকারীসহ শতশত অভিযোগ রয়েছে। বিগত ৪ মাস আগে উক্ত এসআই নজরুল ইসলাম শুধু নিরীহ জেলেদের কাছ থেকে ১০লাখ টাকা চাঁদা গ্রহণ করেছেন। তার চাঁদাবাজির ধরণ সম্পর্কে নিঝুমদ্বীপের স্থানীয় জেলে আনোয়ার হোসেন জানান, প্রতি নৌকায় ১৬ ইঞ্জিন বিশিষ্ট ৫হাজার, ২০ ইঞ্জিন বিশিষ্ট নৌকা ১০ হাজার টাকা দিতে হয়। নচেৎ মাছ ধরা বন্ধ করে দেবে। মৎস্য আড়েৎদার আবুল হোসেন জানান, প্রতি আড়তের জন্য এক লাখ টাকা করে দিতে হবে। টাকা না দিলে মাছ বিক্রী করতে দিবেনা। এছাড়াও নিঝুমদ্বীপ ভাড়ায় চালিত হুন্ডার জন্য প্রতি মাসে ২ শত টাকা করে। এলাকাবাসী জানান, তার অত্যাচারের কাছে জলদস্যু মুন্সিয়া বাহিনীর অত্যাচারকে হার মানিয়েছে।
সূত্র: দৈনিক ইনকিলাব, ৫ অক্টোবর, ২০১১ ইং।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




