খবর: অষ্টম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবিতে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করছে বাংলাদেশ সাংবাদিক-শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্যপরিষদ। জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে সকাল ১০ টা থেকে শুরু হওয়া এই গণঅনশন কর্মসূচি চলবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত।
বিশ্লেষণ: এই মুহুর্তে সরকারিবিধি মতে সপ্তম ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা এবং অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার কথা! তাই এবার অষ্টম ওয়েজ বোর্ডে দাবি ওঠছে, সময়োপযোগী ও উন্নত বেতন-কাঠামোর জন্য। কিন্তু সাংবাদিক নেতারা যখন অষ্টম ওয়েজ বোর্ড গঠনের দাবিতে গণঅনশন পালন করছেন। কিংবা লম্ফ-জম্ফ দিচ্ছেন ঠিক তখন ঢাকা শহরে বিভিন্ন মিডিয়া হাউজে কর্মরত সাংবাদিক এবং সংবাদকর্মীদের সিংহভাগ (শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ) এখনো প্রথম ওয়েজ বোর্ডের আওতাতেও বেতন পাচ্ছেন না! আর সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সাংবাদিকরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো প্রকার বেতন-ভাতা ছাড়াই আল্লারস্তে কাজ করছেন। যার ফলে বেঁচে থাকার দাগিতে তাদেরকে বাধ্য হয়েই নানা অপরাধ কর্মে লিপ্ত হতে হচ্ছে।
ওয়েজ বোর্ড দেওয়া মালিক পক্ষের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। অন্যদিকে ওয়েজ বোর্ড অনুযায়ী বেতন-ভাতা পাওয়া সাংবাদিকদের মৌলিক অধিকার। কিন্তু তথাকথিত সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে যোগসাজসে মিডিয়া মালিকরা তাদের হাউজে ৪/৫ জন-কে ওয়েজ বোর্ড দিয়ে বাকিদের নিয়োগ করে চুক্তিভিত্তিতে। চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ প্রাপ্তরা ওয়েজ বোর্ডের অর্ধেক সুবিধাও পায় না। সব চেয়ে বড় কথা হলো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কোন আইনি ভিত্তি না থাকায় সাংবাদিকরা মালিক পক্ষ দ্বারা সার্বক্ষণিক হয়রানির শিকার হন। তারা যে কোনো সময় চাকরী হারানোর ভয়ে থাকেন। ফলে তারা নিজেদের অধিকারের কথাটাও বলার সাহস করেন না। অনেক সময় মালিক পক্ষের অন্যায় দাবির কাছে মাথানত করে চলতে হয়, নিউজ লিখতে হলেও সেটা লিখতে হয় তাদের খেয়াল-খুশি মতেই। তা ছাড়া ন্যূনতম চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তাপূর্ণ বেতন-ভাতা না পাওয়ায় হয় তাদের নৈতিক অধপতনের শিকার হতে হয় অথবা সামাজিকভাবে হেয় হয়ে থাকতে হয়। অন্যায়ভাবে তাদের চাকরীচ্যুত করা হলেও আদালতে গিয়ে যথাযথ প্রতিকার পাওয়ারও সুযোগ থাকে না।
তাই বলছিলাম, মিডিয়া মালিকরা যখন চলতি ওয়েজ বোর্ডই বাস্তবায়ন করছে না। বরং সরকার এবং সাংবাদিক নেতাদের ম্যানেজ করে বঞ্চিত করছে, শোষণ করছে বেশির ভাগ সাংবাদিকদের। তখন অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের দাবিতে আন্দোলন ভন্ডামি ছাড়া আর কিইবা হতে পারে? সাংবাদিক নেতারা যদি সত্যিই তাদের সহকর্মীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হন, যদি তারা সাংবাদিকতাকে দেশের উন্নয়নে, সমাজের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চান, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই মালিক পক্ষকে বাধ্য করতে হবে সকলের জন্য ওয়েজ বোর্ড নিশ্চিত করতে। অন্যথায় প্রতি হাউজে ৪/৫ জন সাংবাদিকের সুবিদার জন্য অষ্টম ওয়েজ বোর্ড কেন, দশম ওয়েজ বোর্ড গঠন করেও এ পেশার কোনো উন্নয়ন করা সম্ভব হবে না। সরকার এবং মালিক পক্ষের কাছেও তাদের কোনো মূল্যায়ন হবে। যেমনটা এখন চলছে।
সরকার এবং মালিক পক্ষ মনে করে সাংবাদিকরা তাদের পোষা এবং চাকর। যার কারণে তাদের প্রতি তাদের মূল্যায়নটাও সেই অনুপাতেই করে থাকে। আর সে কারণেই তাদের কোনো সহকর্মী খুন হলেও কয়েকদিন হাল্লা-চিল্লা করা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। সাগর-রুনি হত্যাসহ এমন অসংখ্য ঘটনা এর সাক্ষ্য বহন করছে।
তাই অষ্টম ওয়েজ বোর্ডের দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে, হোক। কিন্তু তার আগে সাংবাদিক নেতাদের নিশ্চিত করতে হবে যে, ওয়েজ বোর্ড শুধু মুষ্টিমেয় সাংবাদিকের জন্য দুর্লভ বস্তু নয়, বরং এটা সকল সাংবাদিক-সংবাদকর্মীর মৌলিক অধিকার। সরকারও সাংবাদিকদের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন না হওয়ার দায় এড়াতে পারে না। কেন না, শুধু আইন করেই তাদের দায় শেষ হয়ে যায় না। সংবাদপত্র মালিকগণ সরকারের কাছ থেকে তাদের পত্রিকা দেখিযে নানা রকম সুবিধা আদায় করে। তাই সরকারেরও উচিত মিডিয়া মালিকগণও যাতে আইন মানে সে বিষয়টা নিশ্চিত করা। সাংবাদিকদের মৌলিক অধিকারের দাবি বাদ দিয়ে আর যত আন্দোলন তা শুধু ভন্ডামি! আর এসব ভন্ডামি করে নিজেদের 'সাঙ্গাতিক' পরিচয় লুকানো যাবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




