somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিব খেরা-শিব খেরা-তুমিও জিতবেপার্ট-৬ (স্রোত) :)

০২ রা মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৪:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিক্ষিত মানুয:
তাহলে কাদের আমরা শিক্ষিত বলব ?
প্রথমত, যারা জীবনে একর পর এক যে সমস্ত অবস্থার সম্মুখীন হন, সেই সমস্ত অবস্থার সম্যকভাবে মোকাবিলা করতে পারেন এবং যারা সমস্যাপূর্ণ মুহুর্তগুলিকে যতার্থরূপে বিচার করে সঠিক কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারেন।

তারপর, যারা বিভিন্ন স্তরের মানুষের সঙ্গে সম্মানজনক ব্যবহার করেন, অপরে ব্যবহার অপ্রিয় বা অপমানজনক হলেও তাদের সঙ্গে সহজভাবে ব্যবহার করেন, যারা সহকর্মীদের সঙ্গে সবসময়েই সাধ্যমত ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার করেন।

তাছাড়াও যারা নিজেদের আনন্দ-উল্লাসকে সব সময়েই নিয়ন্ত্রনে রাখেন এবং কখনও কখনও দুর্ভাগ্যের শিকার হলেও অশোভন ভাবে বিচলিত না হয়ে সেই দূর্ভাগ্যকে মানুষের স্বভাবের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে গ্রহণ করেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো যারা সাফল্যের আনন্দে পথভ্রষ্ট হয়ে মানুষের নিজস্ব সত্তাকে বিনষ্ট করেননি, বরং বিজ্ঞ ও স্থিতধীব্যক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থানে দৃঢ় থাকেন, যারা সহজাত বুদ্ধি ও স্বভাব নিয়ে যেমন উচ্ছ্বসিত হন না, তেমনি দৈবক্রমে যে সাফল্যের অধিকারী হয়েছে সে সম্পর্কে আনন্দে উচ্ছল হন না।

যারা চরিত্র উল্লিখিত গুণাবলীর যে কোনও একটির সঙ্গে নয়, সবগুলির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ন তাদেরই শিক্ষিত বলা যায়। তিনি বস্তুতপক্ষে সর্বগুণান্বিত। -সক্রেটিস (৪৭০-৩৯৯ খ্রীঃ পূঃ)-

বহুমুখী শিক্ষা কি ?
বনের কতিপয় জন্তু একটি স্কুল খুলতে মনস্থ করল। স্কুলে ছাত্র হিসেবে এল একটি পাখি, একটি কাঠবেড়ালী, একটি কুকুর, একটি খরগোস এবং একটি মানসিক প্রতিবন্ধী, এবং সব ছাত্রকেই সব বিষয় নিতে হবে। শিক্ষাসূচীর মধ্যে ছিল আকাশে ওড়া, গাছে চড়া, সাঁতার কাটা, মাটি খোড়া ইত্যাদি । সব ছাত্রকেই সব বিষয় নিতে হবে।

পাখি ভালো উড়তে পারে বলে ওড়াতে সে প্রথম; কিন্তু মাটি খুঁড়তে গিয়ে তার ঠোঁট গেল ভেঙ্গে, ডানা গেল মুচড়ে। ফলে ওড়াতেও তার দক্ষতা কমে গেল। সব মিলিয়ে সে পেল তৃতীয় শ্রেণী। কাঠবেড়ালি গাছে চড়াতে সব সময়েই প্রথম, কিন্তু সাঁতারে ফেল, কুকুর স্কুলে ভর্তি হলো না, স্কুলের জন্য চাঁদাও দিল না। উল্টে “ঘেউ ঘেউ করা” কে পাঠ্যতালিকায় স্থান দেওয়ার দাবিতে পরিচালক মন্ডলীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করল। মাটি খোঁড়াতে খরগোস প্রথম, কিন্তু গাছে চড়া তার কাছে সমস্যা। কয়েকবার চড়ার চেষ্টা করতে গিয়ে গাছ থেকে পড়ে মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়ার ফলে সে মাটি খোঁড়াও ভালো করে করতে পারছিল না। ফলে সব মিলে সে পেল তৃতীয় শ্রেনী। এদিকে মানসিক প্রতিবন্ধী সব বিষয়েই মাঝারি। ফলে সব বিষয় মিলিয়ে সেই হলো প্রথম! পরিচালক মন্ডলী খুশি কারণ একটি বহুমুখী শিক্ষাব্যবস্থায় প্রত্যেক ছাত্র ব্যাপকবিষয়ভিত্তিক শিক্ষা পেয়েছে। কিন্তু বহুমুখী শিক্ষার প্রকৃত অর্থ হোল ছাত্রদের যে যে বিষয়ে দক্ষতা আছে এবং স্বাভাবিকভাবে শিক্ষা গ্রহণ করার প্রবণতা আছে তাকে ক্ষুন্ন না করে সেই বিষয়ের দক্ষতাকে আরও উন্নত করে জীবন সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করা।

আমাদের সকলেরই কোনও না কোনও বিষয়ে দক্ষতা আছে ঃ
হামিংবার্ড খুব ছোট্ট পাখি, এক আউন্সের দশভাগের একভাগ মাত্র ওজন। কিন্তু দেহ এত নমনীয় যে সে খুব জটিল ভাবে প্রতি সেকেন্ডে ৭৫বার পাখা সঞ্চালন করতে পারে। ফলে হামিংবার্ড ফুলের উপর উড়ে উড়ে মধু পান করতে পারে কিন্তু সোজা আকাশে উড়তে, বাতাসে ভেসে বেড়াতে কিংবা লাফিয়ে লাফিয়ে মাটির উপর বেড়াতে পারে না। ৩০০পাউন্ড ওজনের উটপাকি পাখিদের মধ্যে বৃহত্তম; কিন্তু উড়তে পারে না। কিন্তু এদের পা এত শক্ত যে ঘন্টায় ৫০ মাইল বেগে দৌড়াতে পারে; এক পদক্ষেপে ১২থেকে ১৫ফুট যায়।

অজ্ঞতা ঃ
জ্ঞানের প্রতি মোহ থাকলেই তাকে শিক্ষিত বলা যায় না, বরং বলা যায় সে অজ্ঞ। মূঢ় লোকেদের এক বিশেষ ধরনের আত্নবিশ্বাস থাকে যা অজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় বেনজামিন ফ্রান্কলিন এই প্রসঙ্গে বলেছিলে, “কোনও কোনও বিষয়ে অজ্ঞ হওয়ার মধ্যে কোনও লজ্জা নেই, কিন্তু কোনও করনীয় কাজরে সঠিক পদ্ধতিটি আয়ত্ত করার অনিচ্ছা প্রকৃতই লজ্জাকর।”

কোনও বিষয়ে না জানা দোষের নয়, কিন্তু এই অজ্ঞতাকে সম্বল করে জীবনে উন্নতি করা ইচ্ছাই মূঢ়তা। কিছু মানুষ অজ্ঞতাকে জমিয়ে জমিয়ে তাকেই শিক্ষা বলে চালাতে চায়। অজ্ঞতা মানুষকে সুখী করে না। অজ্ঞতার অর্থ দুঃখ, বিপদ, দারিদ্র্য ও অসুস্থতা। অজ্ঞতা যদি সুখদায়কই হোত তবে বেশিরভাগ মানুষ সুখী নয় কেন? অল্পবিদ্যা যদি ভয়ঙ্করী হয় তবে বেশি অজ্ঞতাই তাই; কারণ অজ্ঞতাও ক্ষুদ্রতা,ভয়,গোঁড়ামী আত্নম্ভরিতা ও কুসংস্কারের জন্ম দেয়। প্রজ্ঞা অজ্ঞতার অন্ধকার দুর করে।
আমরা যে যুগে বাস করি সে যুগে সংবাদের গুরুত্ব অনেক। হিসাব করে দেখা গেছে যে প্রত্যেক বৎসর আমাদের জ্ঞাতব্য বিষয় প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাচ্ছে। তথ্য ও সংবাদ এত সহজে পাওয়া যায় বলে অজ্ঞতা দূর করাও সহজ। কিন্তু এসব সত্ত্বেও আমাদের শিক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় বিষয়গুলিই বাদ পড়ে যায়। আমরা পড়ি,লিখি,অঙ্ক শিখি,কিন্তু এই বুদ্ধির চর্চায় আমাদের কী লাভ হবে যদি আমাদের মানবিক মর্যাদাবোধ ও মানুষের প্রতি সহমর্মিতাবোধ সম্পর্কে কোনও ধারণা না থাকে? আমাদের স্কুলগুলি জ্ঞানের ঝরনা ধারার মতো- কিছু ছাত্র সেই ধারায় তৃষ্ণা নিবারণ করে, কেউ আবার একটু আধটু চুমুক দিয়ে দেখে, আবার কেউ কেউ মুখ ধুয়ে নেয়।

সাধারণ বুদ্ধি ঃ
সাধারন বুদ্ধি ছাড়া শিক্ষা ও জ্ঞানের কোনও মূল্যই নেই । সাধারণ বুদ্ধির অর্থ বাস্তব অবস্থাকে যথাযথভাবে অনুধাবন করা,এবং সেই অনুসারে যে ভাবে কাজ করা উচিত সেইভাবে কাজ করা। আমরা সবাই পাঁচটি ইন্দ্রিয় নিয়ে জন্মেছি-স্পর্শ,স্বাদ,দৃষ্টি,ঘ্রান ও শ্রুতি। কিন্তু সকল মানুষদের আর একটি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় আছে- সেটি হল সাধারণ বুদ্ধি। সাধারণ বুদ্ধি শিক্ষার ফলশ্রুতি নয়। শিক্ষা ব্যতিরেকেও লাভ করা যায়। সাধারণ বুদ্ধি ব্যতিরেকে শ্রেষ্ঠতম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাও বিশেষ ফলপ্রসূ হয় না। প্রখর সাধারন বুদ্ধির নামই প্রজ্ঞা।

কুঠারে শান দাওঃ
জন নামে এক কাঠুরে একটি সংস্থায় পাঁচ বছর কাজ করার পরও তার মাইনে বাড়েনি। সেই সংস্থা তখন বিল নামে এক কাঠুরেকে কাজে লাগাল এবং এক বছরের মধ্যে তার মাইনে বাড়িয়ে দিল। জন ক্ষুদ্ধ হয়ে তার উপরওয়ালার কাছে গিয়ে ব্যাপারটা জানতে চাইল। উপরওয়ালা বলল, “পাচ বছর আগে তুমি যে পরিমান কাঠ কাটতে আজও তাই কাটছ। তুমি যদি তোমার কাঠ কাটার ক্ষমতা বাড়াও তাহলে আমরাও তোমার মাইনে বাড়িয়ে দেব। জন ফিরে গিয়ে কাজ আরম্ভ করল। কিন্তু অনেক বেশি সময় ব্যয় করে, এবং সর্বশক্তি দিয়ে আগাত করেও সে আগের থেকে বেশি গাছ কাটতে পারলো না। তখন সে উপরওয়ালার কাছে গিয়ে তার সমস্যার কথা বলল। উপরওয়ালা পরামর্শ দিল বিলের সঙ্গে কথা বলতে । বিলের হয়ত কিছু কায়দাকানুন জানা আছে- এই ভেবে জন বিলকে জিজ্ঞেসা করল সে এত বেশি কাঠ কাটে কি ভাবে ? বিল উত্তর দিল, “প্রত্যেকটি গাছ কাটার পর আমি দু’মিনিটের বিরতি নিয়ে আমার কুড়ালটতে শান দিয়ে দিই। তুমি তোমার কুড়ালে শেষবার কখন শান দিয়েছ?” এই প্রশ্নটিই জনের চোখ খুলে দিল এবং সে তার সব প্রশ্নের জবাব পেয়ে গেল।

এই প্রশ্নটিই গুরুত্বপূর্ণ। “তুমি শেষবার কখন তোমার অস্ত্রে শান দিয়েছ?” অতীত গৌরবগাথা কিংবা উচ্চশিক্ষার মর্যাদাপূর্ন তকমা দিয়ে হবে না । সফল হতে হলে সকলকেই সদা সর্বদা কুড়লে শান দিয়ে কাজ করতে হবে।

মনের খোরাক যোগাওঃ
আমাদের দেহের পুষ্টির জন্য যেমন ভালো খাদ্যবস্তুর প্রয়োজন, তেমনি মানসিক উন্নতির জন্য প্রত্যহ সৎ চিন্তার প্রয়োজন। ভালো খাদ্যের বদলে খারাপ খাদ্য খেলে যেমন শরীর অসুস্থ হবে, তেমনি সৎ চিন্তা না করলে মনও অসুস্থ হবে। সৎ ও ইতিবাচক চিন্তার দ্বারাই মনকে সঠিক পথে চালনা করতে হয়। বাস্কেট বল খেলায় যেমন, তেমনি ক্রমাগত অনুশীলন এবং অনেকের সঙ্গে সংস্পর্শের মধ্য দিয়েই সাফল্যের মূলমন্ত্রগুলি আয়ত্ত্ব করতে হয়।


জ্ঞানই শক্তিঃ
আমরা প্রায়ই শুনি জ্ঞানই শক্তি। ঠিক তা নয়। জ্ঞান শক্তির উৎস । জ্ঞান হচ্ছে তথ্যের সমাহার। এই জ্ঞানকে শক্তিতে রূপান্তরিত করা হয়,যখন তা যথাযথভাবে প্রয়োগ করা হয়। যে মানুষ পড়তে জানে না আর যে পড়তে জেনেও পড়ে না তাদের মধ্যে বিশেষ কোনও তফাৎ নেই। জ্ঞান অর্জন খাদ্য গ্রহনের মতো কতটা খাওয়া হচ্ছে তার উপর স্বাস্থ্য নির্ভর করে না-কতটা হজম হচ্ছে তার উপর স্বাস্থ্য নির্ভর করে। জ্ঞান শক্তির উৎস,আর প্রজ্ঞা,যা হচ্ছে জ্ঞানের নির্যাস হচ্ছে প্রকৃত শক্তি।

শিক্ষা অনেকভাবেই গ্রহণ করা যায়। কেবল স্কুল-কলেজের ‘ডিগ্রি’বা ‘গ্রেড’ ই শিক্ষার মান নির্ধারন করে না। শিক্ষার অর্থ -
-আত্নশক্তি বৃদ্ধি করা
-স্থিরভাবে শোনার ও বোঝার ক্ষমতা অর্জন করা
-আরও জানার ইচ্ছা অর্জন করা।

মাংসপেশীর সংকোচন ও প্রসারণ যেমন ব্যায়ামের উপর নির্ভর করে, সেই ভাবে আমাদের মনও কতটা সংকুচিত বা প্রসারিত হবে তা নির্ভর করে মানসিক ব্যায়ামের উপর।

ডেরেক বক বলেছেন,‘শিক্ষাকে যদি দুর্মূল্য মনে হয় তবে অজ্ঞতাই বাঞ্ছনীয় ।’ শিক্ষা ইতিবাচক হলে চিন্তাধারাও ইতিবাচক হবে।

শিক্ষা যেন একটা ভান্ডার বিশেষঃ
ইতিবাচক চিন্তাশীলরা অ্যাথ্লিটদের মতো,তারা অনুশীলনের দ্বারা তাদের পরিশ্রমের ক্ষমতা এত বাড়িয়ে নিতে পারে যে প্রতিযোগিতার সময় সেই ভান্ডার থেকে খরচ করতে পারে। অনুশীলন না করলে ভান্ডারে সঞ্চয়ও বাড়ে না এবং সেই সঞ্চয় থেকে ব্যয়ও করা যায় না।

এইভাবে চিন্তাশীলরা নিয়মিতভাবে পরিচ্ছন্ন,দৃঢ় ও ইতিবাচক চিন্তার দ্বারা তাদের মনের সমৃদ্ধি ঘটায়,এবং একটি ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলেন। একথা তারা জানেন যে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে নঞর্থক চিন্তার সঙ্গে প্রতিঘাত অবশ্যম্ভাবী এবং ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি যদি দৃঢ়ভাবে ইতিবাচক চিন্তার উপর প্রতিষ্ঠিত না হয় তবে নঞর্থক চিন্তাকে জয় করা সহজ হবে না। শেষ পর্যন্ত হয়ত নঞর্থক চিন্তাই প্রবল হয়ে উঠবে। যারা ইতিবাচক চিন্তা করেন তারা মূর্খ নন,এবং তারা চোখ বুজে পথ চলেন না। তারা বিজয়ীর দলে,এবং সেই জন্যই তাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অবহিত। তাই তারা সীমাবদ্ধতাকে জয় করে তাদের ক্ষমতাকেই তুলে ধরার চেস্টা করেন। কিন্তু যারা পরাজিতের দলে তারা তাদের ক্ষমতা সম্পর্কে একটি বাস্তব ধারণা পোষণ করেন;কিন্তু যা তুলে ধরেন তা আসলে তাদের দুর্বলতা।

পঞ্চম পদ্ধতিঃ
ইতিবাচক আত্নমর্যাদাবোধ গড়ে তুলূনঃ
আত্মমর্যাদাবোধ কি ? নিজের ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে নিজের যা মূল্যায়ন তাই আত্মমর্যাদাবোধ। আমরা যখন অন্তরে একটা স্বাচ্ছন্দ্য ও তৃপ্তি বোধ করি তখন আমাদের কাজ কর্মের মানও উন্নত হয়,এবং বাড়িতে কিংবা কর্মস্থলে সবার সঙ্গে সম্পর্কও ভালো থাকে। সারা পৃথিবীই তখন সুন্দর মনে হয়। আমাদের অন্তরের অনুভূতি ও বাইরের কাজকর্মের মধ্যে একটা সরাসরি যোগসূত্র আছে।

কিভাবে ইতিবাচক আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তোলা যায় ঃ
দ্রুত ইতিবাচক আত্মমর্যাদাবোধ গড়ে তুলতে হলে মানুষের জন্য এমন কিছু ভালো কাজ কারতে হবে যার প্রতিদান কেউ মূল্য বা জিনিসের মাধ্যমে দিতে পারবে না। কয়েক বছর জেলের বন্দীদের মধ্যে সুস্থ মনোভাব ও আত্মমর্যাদাবোধ শিক্ষা দেওয়ার ভার নিয়েছিলাম । কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আমি যা শিখলাম তা আমি কয়েক বৎসরেও শিখতে পারিনি।

প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে আমার একটি কার্যক্রমে যোগ দেওয়ার পর একজন কয়েদী আমাকে জিজেঞস করল, “শিব, আমি তোমার সঙ্গে কথা বলতে চাই। আমি দু’সপ্তাহরে মধ্যে জেল থেকে ছাড়া পাব।” আমি জিজ্ঞেস করলাম,“এই যে মনোভাব তৈরি করার কার্যক্রমে তুমি যোগ দিয়েছ,সেখানে তুমি কি শিখেছ?” একটু ভেবে কয়েদীটি বলল,যে নিজের সম্পর্কে তার ধারণা ভালো হয়ে গিয়েছে। আমি বললাম,“ভালো মানে কী? আমাকে নির্দিষ্ট করে বল তোমার কোন ব্যবহার বদলে গিয়েছে?” আমার বিশ্বাস যথার্থ শিক্ষা দিতে না পারলে ব্যবহারের পরিবর্তন ঘটে না। কয়েদীটি আমাকে বলল যে কার্যক্রম শুরু হওয়ার সময় থেকে সে বাইবেল পড়েছে। আমি প্রশ্ন করলাম,বাইবেল পড়ে তার কি লাভ হয়েছে। সে জবাব দিল যে এর ফলে সে নিজের এবং বাইরের জগতের সম্পর্কের মধ্যে শান্তি খুঁজে পেয়েছে। এটি আগে সে পায়নি। আমি বললাম,“এটি খুব ভালো কথা; কিন্তু শেষ কথা হল তুমি জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কী করবে? সে বলল যে,সে সমাজের একজন সক্রিয় সহায়ক সদস্য হওয়ার চেষ্টা করবে। আমি আবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলাম। সে একই জবাব দিল। তৃতীয়বারও তাকে জিজ্ঞেস করলাম,“জেল থেকে মুক্তি পাবার পর সে কী করবে? আমি একটু অন্যরকম উত্তর আশা করেছিলাম, এবার সে রেগে জবাব দিল,সে সমাজের একজন সক্রিয় সহায়ক সদস্য হবে। তার প্রথম ও শেষ উত্তরের মধ্যে যে পার্থক্য আচে তা তাকে দেখিয়ে দিলাম। প্রথমে সে বলেছিল যে সক্রিয় সদস্য হওয়ার চেষ্টা করবে,শেষে অবশ্য সে বলল যে সক্রিয় সহায়ক সদস্য হবে। হতে চেষ্টা করা ও হওয়ার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে চেষ্টা করার মধ্যে যে দোদুল্যমানতা আছে তা সবসময়েই ব্যর্থতার দরজা খোলা রাখতে সাহায়্য করে,এবং সেই সঙ্গে জেলে ফেরার দরজাও।

ঐ কয়েদখানার আরেকজন বাসিন্দা যে আমাদের কথাপোকথন শুনছিলেন জিজ্ঞাসা করলেন “শিব,তোমার এই কাজের জন্য কি পাও?” উত্তরে বললাম, আমি যা অনুভূতি লাভ করলাম তার মূল্য পৃথিবীর সব অর্থের চেয়ে বেশি। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন,“আপনি কেন এখানে আসেন?” বললাম,“আমি এখানে আসি নিজের স্বার্থের জন্য এবং তা হল আমি এই পৃথিবীকে আর ভালো বাসযোগ্য করে তুলতে চাই।” এই ধরনের স্বার্থপরতা স্বাস্থ্যকর। সংক্ষেপে বলতে গেলে তুমি যা দেবে তা সর্বদাই ফিরে পাবে। তাই বলে কিছু ফিরে পাওযার ইচ্ছা নিয়ে তুমি কিছু বিনিয়োগ করবে না।

আর একজন কয়েদী বলল,“একজন মানুষ যা করে তা তার নিজের ব্যাপার। একজন মাদকাসক্ত যখন মদ খায় তখন তাতে কারুর কিছুই করার নেই,তুমি তার বিষয়ে মাথা ঘামাও কেন?’উত্তরে বললাম ,“বন্ধু তোমার কথা কিন্তু সম্পূর্ন মেনে নেওয়া যায় না। যে কেউ মাদক দ্রব্য গ্রহণ করলে আমার মাথাব্যাথার কিছু নেই। তুমি কি নিশ্চিত করে বলতে পারবে যে ঐ মাদকাসক্ত ব্যক্তিটি গাড়ি চালিযে কেবল গাছের সঙ্গেই ধাক্কা লাগাবে,এবং তোমাকে,আমাকে কিংবা আমাদের ছেলেপুলেদের চাপা দিয়ে মারবে না?আর এই ব্যাপারে যদি নিশ্চিত আশ্বাস দিতে না পার তবে আমার কথা মেনে নাও যে মাদকাসক্তদের মাদক ছাড়ানো আমার কাজ। তাদের গাড়ি চালানো থেকেও বিরত রাখা উচিত।”

“জীবনটা আমার;আমার জীবন নিয়ে আমি যা ইচ্ছে তাই করব।” এই ধারণাটা ক্ষতিকারক। সাধারণত লোকে এর গূঢ় অর্থটি অগ্রাহ্য করে সহজ অর্থটিই গ্রহণ করে। নিতান্ত আত্মকেন্দ্রিক অর্থটি এই বাক্যটির প্রকৃত অর্থ নয়। আত্মকেন্দ্রিক মানুষ ভুলে যায় যে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে বাঁচতে পারি না। আমি যা করি তা যেমন আমার আশেপাশের লোককে এবং অন্যরা যা করে তা আমাকে প্রভাবিত করে। আমরা বিভিন্নভাবে পরস্পরের সঙ্গে সংযোজিত ও নির্ভরশীল। এ কথা অনুধাবন করা দরকার যে আমরা সবাই এই গ্রহের অংশীদার এবং আমাদের কাজকর্মও সেই অনুসারে দায়িত্বশীল হওয়া দরকার।

পৃথিবীতে দু’রকমের মানুষ আছে।
একরকম, যারা সব কিছু গ্রহণ করে,
দুই, যারা সব কিছু দিয়ে দিতে পারে।
যারা নিতে জানে তারা খায় ভালো;আর যারা দিতে জানে তারা ঘুমোয় ভালো ।
যারা দিতে জানে,তাদের আছে প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ,একটি ইতিবাচক মনোভাব এবং তারা সমাজ সেবায় আগ্রহী। অবশ্য সমাজ সেবার অর্থ বর্তমানের নেতা তথা রাজনীতিকদের ছদ্ম সমাজ সেবা নয়। এরা প্রকৃতপক্ষে সমাজসেবার নামে নিজেদেরই সেবা করে থাকে।

প্রত্যেক মানুষেরই কিছু নেওয়ার প্রয়োজন হয়,এবং নিতেও হয়। কিন্তু একজন সুস্থ মানসিকতার প্রখর আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন ব্যক্তি কেবলমাত্র গ্রহণ করেন না,দেওয়ারও চেষ্টা করেন।

এক ব্যক্তি সকালে যখন তার গাড়ি দোওয়া-মোছা করছিলেন, তখন প্রতিবেশী জিজ্ঞেস বরলেন গাড়িটি কখন কিনেছেন। তিনি বললেন,তার ভাই গাড়িটি দিয়েছেন। প্রতিবেশী আক্ষেপ করে বললেন,“আমার যদি এই রকম একটা গাড়ি থাকত।” গাড়ির মালিক মন্তব্য করলেন,“আপনার যদি আমার ভাইয়ের মতো একটি ভাই থাকত!” প্রতিবেশীর স্ত্রী এই বাক্যালাপ শুনছিলেন। তার মন্তব্য হোল,“আহা,আমি যদি ভাই হতাম।” প্রাপ্তির প্রত্যাশায় মানুষের চিন্তা কিরূপ তির্যক পথ নেয়।


পদ্ধতি ছয়ঃ
নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে থাকুনঃ
আজকের দিনে অল্পবয়সীরা বয়স্কদের ব্যবহার থেকে এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমগুলি থেকে অনেক কিছু শেখে। তারা তাদের সম-বয়স্কদের চাপেও পড়ে। কেবল অল্পবয়স্করা নয়,বয়স্করাও এই সহকর্মী ও সমগোত্রীয়দের চাপের শিকার হয়। আত্মমর্যাদার অভাবে এরা তাদের নেতিবাচক প্রভাবকে অস্বীকার করতে পারে না। এই নঞর্থক বা নেতিবাচক প্রভাব কিরকম?
১. নেতিবাচক মানুষ
এক বনমুরগীর বাসাতে একটা ঈগলে ডিম রাখ হয়েছিল। বনমুরগী ডিমে তা দিয়ে যে বাচ্চা হোল, সে বনমুরগী বলেই পালিত হোল। ক্রমে ক্রমে সেই ঈগলের বাচ্চা দেখতে ঈগলের মতো হলেও, বনমুরগীর স্বভাবই পেল। সে খাবারের জন্য আস্তাকুঁড়ে আঁচড়াত, বনমুরগীর মত ডাক ছাড়ত, ‘এবং ফয়েক ফুটের বেশি উড়ত না। বনমুরগী বেশি উড়তে পারে না। একদিন সে একটি ঈগলকে মহিমময়ভঙ্গিতে সাবলীলভাবে আকাশেউড়তে দেখল। সে তখন অন্য সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করল ঐ সুন্দর পাখিটি কি পাখি? বনমুরগীরা বলল “ওটি ঈগল, একটি অসাধারন পাখি। কিন্তু তুমি ওর মত উড়তে পারবে না, কারণ তুমি এখন বনমুরগী হয়ে গেছ।” বনমুরগীদের সঙ্গী ঈগল এরপর এই কথা সত্য মনে করে বনমুরগীদের একজন হয়েই জীবন যাপন করে একদিন বনমুরগী লীলা-সাঙ্গ করল। বেচারাজানলই না যে সে আসলে ঈগল। সে জন্মেছিল ঈগল হয়ে, কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে ঈগল হয়ে ওঠার সুযোগ দিল না। জন্মেছিল আকাশের উঁচুতে ওড়ার জন্য, কিন্তু ঘটনাচক্রে আস্তাকুঁড়ের পরিবেশকে এড়াতে পারল না।

অধিকাংশ মানুষ সম্পর্কেই এই কথা সত্য। জীবন সম্পর্কে দুর্ভাগ্যজনক সত্যটি অলিভার উইন্ডাল হোমসের ভাষায় প্রকাশ করা যায়, “বেশিরভাগ মানুষই যখন জীবনরে অন্তিম লগ্নে পৌছায় তখনও তাদের মধ্যে কিছু করার ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকে।” আমরা সমস্তটুকুর সদ্ব্যবহার করতে পারি না, তার কারণ আমাদের দূরদৃষ্টির অভাব।

ঈগলের মতো উঁচুতে উঠতে হলে ঈগলে ক্ষমতা আয়ত্ত করতে হবে। সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে সফল হওয়ার সম্ভাবনা, চিন্তাশীলদের সান্নিধ্যে ভাবুক হওয়ার সম্ভাবনা, দানী ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে দানী হওয়ার সম্ভাবনা, আবার ছিদ্রান্বেষীদের সান্নিধ্যে ছিদ্রান্বেষী হয়োর সম্ভাবনা থাকে।

জীবনে সফল হলে ক্ষুদ্রমনা ব্যক্তিরা বিদ্রুপ করার ও সাফল্যকে ছোট করে দেখানো চেষ্টা করে। তাদের সঙ্গে লড়াই না করলেই আপনি জয়ী হবেন। সামরিক কৌশলও সেই রকম- যদি কেই আপনাকে আঘাত করার জন্য লক্ষ্য করে, তবে আঘাত আটকাবার চেষ্টা না করে সরে দাঁড়াবেন। কারন আঘাত আটকাতে গেলেও শক্তির প্রয়োজন। শক্তির অপচয় না করে অন্য উৎপাদনশীল কাজে শক্তি প্রয়োগই শ্রেয়। ক্ষুদ্রমনা ব্যক্তিদের সঙ্গে লড়াতে গেলে তাদের স্তরে নেমে আসতে হয়। তারাও তাই চায়। এই সমস্ত লোকেরা টেনে সবাইকে তাদের স্তরে নামিয়ে আনুক এরকম হতে দেবেন না। স্মরণ রাখা উচিত, কী ধরনের মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করে শুধু তাই দিয়ে নয়, কাদের সঙ্গ এড়িয়ে চলে তাই দিয়েও মানুষের চরিত্র বিচার হয়।

২. ধূমপান,মাদক ও মদঃ
লেডি অ্যাষ্টর বলেছেন, “আমার আনন্দময় সময়টি কখন তা জানার জন্যই মদ খাই না।” মদ্যপান মানুষের সংযম নষ্ট করে, তার উৎকন্ঠা প্রদর্শন-প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়।

বিভিন্ন দেশ সফরের সময় লক্ষ্য করেছি যে কয়েকটি দেশে মদ্যপান একটি জাতীয় অবসর-বিনোদনের উপায়ে পরিণত হয়েছে। যদি মদ্যপান না করেন তবে তারা সন্দেহ করবেন আপনার কোনও অসুখ-বিসুখ আছে। তাদের নীতি হোল, আপনার ইংরেজি কতটা খারাপ তাতে কিছু যায় আসে না, কিন্তু আপনার স্কচ্ হুইস্কিটি উৎকৃষ্ট হয়ো প্রয়োজন। স্কচ্ হুইস্কির বোতলকে তারা সম্পদের মধ্যে গন্য করে।
মদ্যপান ও ধূমপানকে আজাকাল নানাভাবে আকর্ষণীয় করা হয়েছে। নেশাসক্তদের যদি নেশা করার কারণ জিজ্ঞাসা করেন তবে অনেক রকম জবাব পাবেন-
কোনও বিশেষ উপলক্ষে মজা করার জন্য,
সমস্যা ভোলার জন্য,
ক্লান্তি অপসারণের জন্য,
কেবল পরীক্ষা করে দেখার জন্য,
কাউকে বিশেষভাবে চমকে দেওয়ার জন্য,
চলতি রীতি মেনে চলার জন্য,
সমাজে মেলামেশা করার উদ্দেশ্যে,
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ইত্যাদি ।
কেউ কেউ আবার সঙ্গীদের চাপে মদ্যপান শুরু করে। সঙ্গীর উপর চাপ সৃষ্টি করতে তারা বলে,“তুমি কি আমার বন্ধু নও, তাহলে খাবে না কেন?” কিংবা “আমার স্বাস্থ্যের জন্য এক পেগ নাও,” কিংবা “রাস্তার জন্য এক পেগ” ইত্যাদিদ । একজন অনামা কবির একটি কবিতা এই বিষয়ে প্রাসঙ্গিক।

আমি শুঁড়িখানায় তোমার স্বাস্থ্যপান করেছি,
আমি আমার বাড়িতে তোমার স্বাস্থ্যপান করেছি,
আমি এতবার, চুলোয় যাক,
তোমার স্বাস্থ্য পান করেছি যে,
আমার নিজের স্বাস্থ্যকে !
প্রায় ধ্বংস করে ফেলেছি।

মদ্যপানের পর মোটর চালাতে গিয়ে জীবন নষ্ট হয়। জেরী জনসন লিখেছেন, আমেরিকান হসপিটাল এ্যাসোসিয়েশন’ এর রিপোর্ট অনুসারে হাসপাতালের প্রায় অর্ধেক রোগী মাদক সম্পর্কিত সমস্যায় ভর্তি হয়। ‘ন্যাশন্ল্ সেফটি কাউন্সিল” এর ১৯৮৯সালের রিপোর্ট অনুসারে প্রতি ৬০ সেকেন্ডে মদ্যপান জনিত দুর্ঘটনায় একজন আহত হয়।

৩. অশ্লীল রচনাঃ
অশ্লীল সাহিত্য বিশেষ করে মহিলা ও শিশুদের অমানবিক স্তরে অবনয়ন ঘটায়। অশ্লীল রচনা ও ছবির ব্যবহারের ফলাফল নিম্নরূপঃ

-মহিলাদের প্রতি এক অমানবিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে
-শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে
-বিবাহ নষ্ট হয়ে যায়
-যৌন হিংস্রতাকে প্রশ্রয় দেয়
-নীতি ও ন্যায়-অন্যায় বোধকে বিদ্রুপ করার প্রবণতা বাড়ে
-ব্যক্তি,পরিবার ও সমাজকে নষ্ট করে

আমেরিকায় প্রতি ৪৬ সেকেন্ডে একজন মহিলা ধর্ষিত হন।
৮৬ শতাংশ ধর্ষনকারী স্বীকার করেছে যে তারা নিয়মিত অশ্লীল-রচনা, চিত্র ইত্যাদি ব্যবহার করে, এবং ৫৭ শতাংশ স্বীকার করেছে তারা ধর্ষনের বা অনুরূপ যৌন অপরাধের সময় অশ্লীল রচনা ও ছবির অনুকরণ করেছে।

খুবই দুঃখের বিষয় যে, অশ্লীল রচনা ও ছবির ব্যবসায়ীরা এই নীচ ব্যবসা করে পয়সা উপার্জন করে। কিন্তু যে অসুস্থ মানুষরা এইগুলি কেনেন তারা কঠোর ভাষায় নিন্দার যোগ্য।

৪. না-ধর্মী চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন কার্যক্রমঃ
আজকাল সিনেমা ও টেলিভিশন অল্পবয়সীদের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে দেয়। আমেরিকায় একজন তরুণ হাইস্কুলের পাঠ শেষ করার আগেই অন্তত ২০ হাজার ঘন্টা টেলিভিশন দেখে এবং এক লক্ষ মদ্য ও মদ্যপান সংক্রান্ত বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন দেখে। এই সমস্ত থেকে একটাই শিক্ষা হয় যে মদ্যপান একটা মজার বিষয়, ধূমপান আকর্ষণীয় ব্যাপার এবং ড্রাগ একটা সাধারণ চালু জিনিস। আশ্চর্য কী,এই অবস্থায় আপরাধ বাড়বে।

টেলিভিশনের অবাস্তবতার ফেনায়-ভরা নাটকগুলি বিবাহোত্তর বা বিবাহ বহির্ভূত যৌন মিলনকে স্বাভাবিক ভাবে দেখায়। ফলে পারস্পরিক দায়বদ্ধতা কমে যায় এবং বিবাহ-বিচ্ছেদের সংখ্যা বেড়ে যায়। টেলিভিশন ও সিনেমায় যা দেখে বা সংবাদ মাধ্যমে যা শোনে তার তেকে যে সব দর্শকরা সহজে প্রভাবিত হয় তারা তাদের নৈতিক মানদন্ড স্থির করে নেয়। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রচার মাধ্যম কিছু কিছু বিষয়ে আমাদের প্রবাবিত করে।

৫.অবজ্ঞাপূর্ণ ব্যবহারঃ
অবজ্ঞাপূর্ণ ব্যবহারের দ্বারা কেবল নিজের আত্নসংযমের ও শৃঙ্খলাবোধের প্রভাবই প্রমাণিত হয়।

৬.রক মিউজিক
অনেকগুলি গানের কথা অশ্লীল। আমরা অবচেতনভাবে এরূপ গান ও অঙ্গভঙ্গির দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি।


সপ্তম পদ্ধতিঃ
যে কাজ করতে হবে সেই কাজকে ভালোবাসতে শেখা দরকারঃ
আমরা পছন্দ করি বা না করি কতকগুলি কাজ আমাদের করতে হয়। যেমন বাচ্চাদের জন্য মায়ের যত্ন। এই কাজগুলি সবসময় মজার বিষয় নাও হতে পারে; কিন্তু এই কাজগুলিকে ভালোবেসে অন্তর দিয়ে করলে তবে তা সার্থক হবে। তখন অসম্ভব কাজ করাও সম্ভব হবে।

সেন্ট ফ্রান্সিস অফ্ আসিসি এই সম্পর্কে সার কথা বলেছেন, “যা প্রয়োজনীয় তা করা শুরু কর, তারপর যা সম্ভবপর তা করা শুরু কর; অবশেষে দেখা যাবে যে অসম্ভব কাজও সম্ভব হচ্ছে।”

অষ্টম পদ্ধতিঃ
ইতিবাচক ভাবনা দিয়ে দিন শুরু করুনঃ
সকালেই কিছু পড়া বা শোনা দরকার যা হবে ইতিবাচক। রাত্রে ভালো ঘুম হলে আমাদের ক্লান্তি দূর হয় এব আমাদের মন গ্রহণ করার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে।

এই ইতিবাচক চিন্তা সারাদিনের কাজের সুর বেঁধে দেয় এবং সারাদিন আমাদের মনকে সঠিক অবস্থানে রাকে। আমাদের কাজের প্রণালীতে পরিবর্তন আনতে হলে ইতিবাচক চিন্তা এবং ব্যবহারকে সচেতন প্রয়াসের দ্বারা জীবনের অংশ করে নিতে হবে। প্রতিদিনই এরুপ ব্যবহারের অনুশীলন করতে করতে তা অভ্যাসে পরিণত হবে । হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়ের উইলিয়ম জেমস বলেন, “যদি নিজের জীবনকে বদলাবার মনস্থ করে থাকো, তাহলে শুরু করা দরকার এখনই এবং খুব সোচ্চার ও দর্শনীয়ভাবে।”


বিজয়ী বনাম বিজেতা
 বিজয়ীরা সব সময় প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন, বিজিতরা প্রশ্নের সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত ।
 বিজয়ীদের একটি কার্যক্রম থাকে, বিজিতদের থাকে সর্ববিষয়েই অজুহাত।
 বিজয়ীরা বলেন, “তোমার হয়ে কাজটা করে দিচ্ছি”, বিজিতরা বলেন ‘এটা আমার কাজ নয়’।
 বিজয়ীরা প্রতি সমস্যার একটা সমাধান দেখতে পান, বিজিতরা প্রতি সমাধানে একটি সমস্যা দেখেন।
 বিজয়ীরা বলেন, “কাজটি কঠিন, কিন্তু করা সম্ভাব”, বিজিতরা বলেন, “কাজটি করা গেলেও এটি খুবই কঠিন”।
 বিজয়ীরা ভুল করলে স্বীকার করেন,“ভুলটা আমারই”, বিজিতরা ভুল করলে বলেন “এটা আমার দোষ নয়।”
 বিজয়ীরা দায়িত্ব গ্রহণ করেন, বিজিতরা প্রতিশ্র“তি দেন।
 বিজয়ীরা বলেন “আমি অবশ্যই কিছু কবর”, বিজিতরা বলেন, “কিছু করা উচিত”।
 বিজয়ী ব্যক্তি দলের একজন সদস্যরূপে কাজ করেন, বিজিত ব্যক্তি দলের তেকে পৃথক একজন হয়ে কাজ করেন।
 বিজয়ীরা প্রাপ্তির প্রতি নজর দেন, বিজিতরা ক্ষতির দিকে নজর দেন।
 বিজয়ীরা সম্ভাবনা বিচার করেন, বিজিতরা সমস্যা বিচার করেন।
 বিজয়ীরা জয়ে বিশ্বাস করেন, বিজিতরা ভাবেন জয়ী হলেও অন্য একজনের পরাজয় হবে।
 বিজয়ীরা ক্ষমতাও সম্ভবনা দেখেন, বিজিতরা দেখেন অতীত।
 বিজয়ীরা থার্মোষ্টাট যন্ত্রের ন্যায় উষ্ণতা নিয়ন্ত্রন করে, বিজিতরা থার্মোমিটারের ন্যায় উষ্ণতা মাপে।
 বিজয়ীরা বিবেচনা করে কথা বলে, বিজিতরা যা মনে করে তাই বলে।
 বিজয়ীরা কঠিন তর্কে মোলায়েম বাক্য ব্যবহার করে, বিজিতরা সহজ বিতর্কে কঠিন বাক্য ব্যবহার করে।
 বিজয়ীরা মূল্যবোধের ক্ষেত্রে দৃঢ়, কিন্তু সামান্য ব্যাপারে আপস করেন।
 বিজিতরা মূল্যবোধের ক্ষেত্রে আপস করেন, কিন্তু সামান্য বিষয়ে দৃঢ় হন।
 বিজয়ীরা সহমর্মিতার দর্শন অনুসরণ করেন, এবং বলেন, “যা তুমি নিজের ক্ষেত্রে করা পছন্দ কর না, তা অপরের ক্ষেত্রেও করবে না” বিজিতরা এই নীতি অনুসরণ করেন, “তোমার প্রতি কঠোর আচরন করার আগেই তুমি অপরের প্রতি সেই আচরণ কর”।
 বিজয়ীরা ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন, বিজিতরা ঘটনা ঘটতে দেন।
 বিজয়ীরা জয়ের পরিকল্পনা করে ও প্রস্তুতি নেয়, প্রস্তুতিই তাদের নিকট গুরুত্বপূর্ণ।

বিজয়ী হওয়ার কার্যকর পদক্ষেপঃ
যে আটটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে সেগুলি সংক্ষেপে বিবৃত করে পরিচ্ছেদ শেষ করা যাক।
১.একজন ভালো সন্ধানকারী হোন।
২.কাজটি এখনই সম্পন্ন করার অভ্যাস তৈরি করুন।
৩.কৃতজ্ঞ হওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন।
৪.নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষার কার্যক্রম গ্রহন করুন।
৫.ইতিবাচক আত্নমর্যাদাবোধ তৈরি করুন।
৬.নেতিবাচক প্রভাব থেকে দূরে থাকুন।
৭.যে কাজ করতে হবে তার প্রতি ভালোবাসার মনোভাব তৈরি করুন।
৮.ইতিবাচক চিন্তা ও কাজের মধ্য দিয়ে দিনটা শুরু করুন।

(চলবে)
টাইপকারক স্রোত
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ১
Click This Link
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ২
Click This Link
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ৩
Click This Link
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ৪
Click This Link
শিব খেরা-তুমিও জিতবে ৫
Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০০৮ বিকাল ৪:১৪
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×