১৯৮৪ সাল, ফাষ্ট ইয়ারের শেষের দিকের ঘটনা। সকাল থেকে ঝির ঝির বৃষ্টি, কলেজে যাবো কি যাবো না বুঝতে পারছি না, নাস্তা খাওয়া হয়ে গেছে, আবার ও বিছানা নিয়েছি..বাহিরে অঝোর ধারায় ঝরিছে শ্রাবণ।
গতরাতের অর্ধেক পড়া হুমায়ূণ আহমেদ নিয়ে বসবো কিনা ভাবছি..তখন বাবার গলা শোনা গেলো, "কি? কলেজ হবে?
বাবার এই এক প্রবলেম, কলেজ হলে পঞ্চাশ টাকা দিতে হবে, আর বৃষ্টির কারণে যদি না যায় তাহলে সেটা দিতে হবে না..আমি সেই সবে মাথা ঘামাচ্ছি না..টাইম হলে কাপড় পড়ে চলে যাবো এমন চিন্তা...
কর্মাস কলেজের ক্লাশ তাও মন্জুর হাসি দত্তের প্রথম পিরিয়ড মিস করা যাবে না, আমি ভাবছিলাম, এইদিকে মা চাই কলেজ যাওয়ার আগে গরম গরম ভাত যদি কিছু খাইয়ে দেওয়া যায়। সেটা নিয়ে মা বিজি।
কিছুক্ষণ পর বাবা অফিসে চলে গেলো তার পুরানো সাইকেল নিয়ে..আমি এতক্ষণ কিছু মনে করিনি এমন ভাব নিয়ে থাকলেও এবার ঠিক ঠিক ভাব নিলাম, মা'কে বললাম..দাও, টাকাটা দাও..
কি...রে তুই তো কলেজে যাবি না, টাকা কেনো নিবি..মার প্রশ্ন? মা'কে বললাম, কখন বললাম আমি কলেজে যাবো না..মা বলছে এই ঝির ঝির বৃষ্টিতে কলেজে যাই কেউ..আমি একটু মুড অফ করে বললাম মা প্রথম ক্লাশটা সিরিয়াস ক্লাস, যেতে হবেই..মা বললো..তুই এই বৃষ্টিতে যাবি আর তোর শার্টে পড়বে চিটে...সেই দাগ কে উঠাবে শুনি?
আমি পাত্তা না দিয়ে মা'র থেকে টাকা নিয়ে বাইক বের করলাম কেননা তখন বৃষ্টি খানিক ধরে এলো বলে কথা। এই ম্যাডামের ক্লাস আমার মিস হয় না এটা কলেজের সবাই জানে..তখন আমার একটা এম.টি ফাইভ মোটর সাইকেল ছিলো..কাপড় পড়ে বই খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে পুরো ফিটিং নিয়ে বের হতে যাবো মা এসে দাড়ালো, বললো দাড়া, কপালে সাইন অফ দা ক্রস দিয়ে দিলো..মা এইটা সব সময় করবেই.. মায়ের.আশীর্বাদ।
ছুটে চলেছি সরকারী কর্মাস কলেজের উদ্দেশ্যে, তার আগে বাইকে এক লিটার তেল ঢুকিয়ে নিলাম। কলেজে যেতে যেতে বৃষ্টি বাবুর আর দেখা নেই, পুরা অফ..হালকা রোদ ও উঠেছে..আমি ফেচি বিল্ডিং পার হয়ে কলেজের মুখে পৌছতেই দেখলাম মোটা আসিফকে..সে রিক্সা থেকে নামছে...
(আসিফকে অনেক মিস করি..কোথায় যে আছে ছেলেটা, তার বাবা রেলের বড় কর্তা ছিলেন) আমি ইশারায় আসিফকে বললাম তুই আয় আমি বাইক ষ্ট্যান্ডে রাখছি..।
যেহেতু বৃষ্টি হয়েছে চারিদিকে কাদা ময়লা পানি..জুতার অবস্তা বেশী খারাপ..জিন্স পেনট'এর নীচের দিকে বেশ কাদা লাগে....কাদা আমার দুচোখের বিষ। আমি ঢুকতে যাবো তখন মোটা আসিফ ও চলে এসেছে..আমি আগে ও পিছনে...
আমরা এগিয়ে যাচ্ছি..সেইদিন নোটিশ বোর্ডে কোনো নোটিশ ছিলো যার ফলে ছাত্র ছাত্রীদের ঢুকতে বেশ সময় লাগছিলো..আসিফ আমাকে ধাক্কাচ্ছে..আমি বললাম, এমন করছিস কেন..সামনে মেয়ে, গায়ে লেগে যাবে যে..আসিফ বলল আমি কিছু করছি না পিছন থেকে ধাক্কা হচ্ছে..
এইভাবে এক পা দু পা করে এগুচ্ছি, সিড়ি দিয়ে দুই ধাপ উঠতে হবে, আমি উপরে উঠছি আর ঠিক তখন দেখলাম ময়লা কাদা লাগানো ভিজা তেনা তেনা একটা পাচ শ টাকার নোট। আমি এগিয়ে গিয়ে সেই টাকার উপর পা দিয়ে রেখেছি আর আগ বাড়াচ্ছি না...আসিফ বলছে..কিরে..দাড়িয়ে গেলি কেন?
আমি বললাম ওয়েইট জুতার ফিতা খুলে গেছে..এইটা বলে আমি চট করে জুতার ফিতা লাগানোর ভান করে এক ফাকে টাকাটা হাতে নিয়ে ফেললাম আর সাইড কেটে আসিফকে বললাম নোটিশ বোর্ডে কি লেখা আছে সেটা পড়ে ওয়াশরুমের দিকে আয়.....
বাদবাকীটা শুধুই ইতিহাস। বেশ মজা হয়েছিলো দিনটি আমি আসিফকে ফিফটি ফিফটি হিসাব দিলাম আর তাতেই আসিফ আমাকে তার খুব প্রিয় বন্ধু বানিয়ে ফেলে..এতটুকুই ঘটনা তবে সেইদিন আমরা খাওয়া দাওয়া করেছি, ঘুরেছি, সিনেমা দেখেছি (দি রেইন, ছবির নাম) এই ছবি আমি দেখছিলাম আর আসিফ কাচ্চি বিরায়ানী খেয়ে আরামসে এয়ারকন্ডিশনের ঠান্ডায় ঘুমাচ্ছে..এই হারামী নাক ও ডাকছিলো..সেই দিনটির কথা মনে পড়ে গেলো আজকের বৃষ্টি দেখে। (ইচ্ছে করে সংক্ষিপ্ত করলাম কেননা বড় লেখা হলে অনেকে পড়তে চাই না, আমরা টিয়া পাখি দিয়া হাত গুনিয়েছি, তারপর মারবেল দিয়ে লটারী ও খেলেছি, বেশ মজা হয়েছে, যদি এই স্মৃতি চারণ ভালো লাগে তবে আরেকটা লিখবো যেটা আমার জীবনের সেরা স্মৃতি)।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৩