আমার এই বক্ষজ্বলা রাত্রিতে নীরবে বয়ে চলে বিস্বাদের মৃত্যু, শুধু সংগোপনে রয়ে যায় হৃদয়ের চিরজীবী দীর্ঘশ্বাসগুলো । অজস্র তারকাপুঞ্জ পেরিয়ে আকাশ, বাতাস, পর্বত, মৃত্তিকা পুড়ে পুড়ে যে শীতল জল বয়ে চলছে নিষ্পেষিত হৃদয়ের গহীনে তার জন্য আমি ঋণী হবো কার নিকট ? একরাত্রিতে আমি দেখি রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে আমার চোক্ষে, অলিন্দ ঘিরে, আমি ধ্যানমগ্নে ছিলাম অজস্র মাইলের সমুদ্রের জলরাশিতে...সবেমাত্র বিহঙ্গের আঁখিতে বেঁধেছিলাম সবুজ পাতার ঘর। রাত্রি বলল, তুমি দীর্ঘকাল আমার খোঁজ করেছিলে? আমি ভাবলেশহীনভাবে উত্তর দিলাম, হ্যাঁ ।ক্ষণিকের মধ্যেই আমি অনুভব করলাম, আমি পেয়ে গেছি আমার ঋণদাতাকে ! রাত্রিকে বললাম, আমাকে তোমার হৃদয়ের সঙ্গী করে সঙ্গে নিয়ে চলো, তোমার সেবায় আমি নিমগ্ন হবো। তোমার ঋণ শোধ দেওয়ার মত আমার আর কোন পথ জানা নেই, তুমি পথ দেখাও.... রাত্রির বিহঙ্গরূপ আমাকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে, আমি বিহঙ্গের আঁখিতে সবুজ পাতার ঘরে বসে রইলাম, দূর থেকে দূরে উড়ে যাচ্ছে রাত্রি আমাকে নিয়ে..... কোথাও... দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে...
সেই থেকে আজ অব্দি রাত্রির সাথে আমার শর্তহীন লেনাদেনা, সে আমাকে দেখায় তার পৃথিবী, আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি আর ভাবী কোথায় আমার সেই আলেয়া ? তখন ভেতর থেকে হুংকার আসে, আমি প্রজ্জ্বলিত ! তুমি রাত্রির সাথে থাকো, আমি তোমার সাথে আছি.... আমি ভিসুভিয়াসের ন্যায় হবো অথবা এর চেয়েও অধিক, তবে তার মত উত্তপ্ত শিখা হবো না, তোমাকে আমি দিয়ে যাবো ছাই উড়িয়ে শীতল শিহরণ, শিহরণের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লেগে থাকবে সুপ্ত সুখ...
আমার এই রাত্রিজ্বলা আঁখিতে সুখের অশ্রু গড়িয়ে পড়ে । রাত্রি জিজ্ঞেস করে, তুমি কাঁদছো কেন? আমি বলি, প্রিয় রাত্রি তোমার কী কোন দুঃখ নেই ? রাত্রি কিছুক্ষণ স্থির থেকে শুধায়, আমার জন্য পৃথিবী পাপ জমিয়ে রাখে অথচ আমার গহীনে রয়েছে মহাপূণ্যের দিশা। আমি বলি, এর জন্য কী তুমি দুঃখী ? রাত্রি বলে, আমি দুঃখী নই, আমাকে দুঃখ পাওয়া সাজে না। আমি বরং অন্যতম নির্ধারক হয়ে কাজ করি, আমার বুকে কে পাপ করছে আর কে পূণ্য খুঁজছে। দু'টোরই হস্তারক আমি, অন্যতম প্রমাণস্বরুপ আমি নিজেকে উপস্থাপন করবো । তবে আমি পাপীদের আফসুসে পুড়ি, ওদের অবলীলায় করে যাওয়া পাপগুলো আমাকে পোড়ায় যেখানে অপর প্রান্তে রয়েছে নিষ্পাপ । আমি রাত্রি হয়ে সবার পাপ-নিষ্পাপ লুকিয়ে রাখি সমভাবে । প্রায়শ্চিত্ত্বের দরজায়ও অনুতপ্ত অনেকে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের দেখে মায়া হয়। কারো নিষ্কৃতি মেলে, কেউ নতুনভাবে যুক্ত হয়, কেউ ঘুরেফিরে আসে যায়। এভাবে অজস্র শতাব্দী পাপী থেকে নিষ্পাপী হচ্ছে অনেকে, নিষ্পাপী থেকে পাপী, আবার কেউ ঘুরেফিরে পাপ নিষ্পাপে আছে...। তুমি কী মনে করছো এটা ভারসাম্য ? না, এটা মোটেও ভারসাম্য নয়। এটা এক লোকাতীত নিয়ম- নিজেকে চারপাশে পাপের অনেকগুলো উপকরণের মাঝে রেখে নিজেকে নিষ্পাপী করে রাখার। পরিশেষে যে যার মূল্য পেয়ে যাবে । তুমি কী আমার বক্তব্যে উদাস হচ্ছো ?
আমি ভাবছি তবে তুমি একাধারে পাপ এবং পূণ্যের নগরী.... আজ অনেকদিন হয় আমি আমার দুঃখ ভুলে গেছি । কী দুঃখ ছিলো তা আর মনে পড়ছে না । তোমার গল্পে আমি নিজেকে সঁপে দিয়ে জেনেছি জীবনকে। তার আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে ক্ষণজীবী ভোগের ঘ্রাণ । যার জন্য কেউ মরতে চায় না । তুমি বরং মহাসৃষ্টি মহাকালের, যার মধ্যে ঢুকে আছে অজস্র শতাব্দীর ক্ষণজীবী অজস্র জীবন, ক্রমে ক্রমে ঘুরে ফিরে তোমার বুকেই বিচরণ... তবে মৃত্যু এবং তুমি কী এক ? আচ্ছা গোরস্থানে কী রাত্রি হয় ? রাত্রি আমার প্রশ্ন শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে আমার দিকে আর আমি নিজেকে বিভ্রান্তিতে অবনত করে রাখি.....
ছবি বন্ধু- গুগল ইমেইজ ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৮ সকাল ১১:১৯