বাংলাদেশে হাজার হাজার রোহিঙ্গাদের আগমন বাংলাদেশকে বিপদে ফেলেছে । এই রোহিঙ্গা শরনার্থীরা না এলে আমরা বুঝতেই পারতাম না যে বিশ্বের কোন দেশ আমাদের শত্রু আর কোন দেশ মিত্র । রোহিঙ্গা ইস্যু মূলত বাংলাদেশকে সমস্যায় ফেলেছে । রোহিঙ্গাদের আসার কারণে শুধু বাংলাদেশের ক্ষতি হচ্ছে, বাকি মুসলিম বিশ্বের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না । রোহিঙ্গাদেরকে বর্মায় বাঙালি বলে মারা হয়, তাঁদেরকে বলা হয় তোমরা বাংলাদেশের নাগরিক । এসব জেনেও মুসলিম বিশ্বের বেশ কিছু দেশ বাংলাদেশের পাশে
দাঁড়িয়েছে । কারণ, বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের অধিকাংশই মুসলমান । একই কারণে ভারত বাংলাদেশের পেছন থেকে সরে গিয়েছে । আজ যদি বাংলাদেশ কোনো মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামতো তাহলে ভারত বাংলাদেশের পেছন থেকে পালাতো না । বলা হয় রোহিঙ্গারা বাঙালি, তাহলে ভারতের হিন্দু বাঙালি জনগণ রোহিঙ্গাদের পক্ষে কেন কথা বলে না ? সোশাল মিডিয়ায় ভারতের বাঙালিদের কমেন্ট গুলো পড়লেই বুঝতে পারবেন যে তাঁরা কত অমানুষ ।
৯/১১-এর বিন লাদেনের কুকর্মের পর অমুসলিমরা মুসলিম বিদ্বেশি হয়ে গেছে । এখন তাঁরা মানবতার আগে ধর্মকে রাখে । সারা বিশ্ব বাংলাদেশিদের মতো ধর্ম নিরপেক্ষ মন দিয়ে ভাবে না । আমি মনে করি ধর্ম নিরপেক্ষতার ক্ষেত্রে আমরা বাংলাদেশিরা মহান । কাগজে-কলমে যাই হোক, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আশি শতাংশ মুসলিম ধর্ম নিরপেক্ষ, এই কারণেই আমরা বাঙালি জাতি ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন করতে সক্ষম হয়েছি । তবে এখন সময় এসেছে বৈশ্বিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের সঠিক বন্ধু দেশকে চিনে নেওয়ার । আমি দেশের বাইরে অন্য একটি মুসলিম দেশে আছি । এই রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতি-ভাষার উর্ধ্বে উঠে মুসলিমদেরকে যেই ভাবে চিন্তা করতে দেখেছি এমন আর কাউকে দেখিনি । এত দিন যাদেরকে আমরা সব চাইতে বেশি বন্ধু ভাবতাম সেই ভারত, চীন ও রাশিয়া আমাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে । বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাধারণ মুসলিম জনগণ রোহিঙ্গাদের জন্য যুদ্ধে নামতেও প্রস্তুত । একেই বলেই আত্মার সম্পর্ক ।
সবার আগে নিজের বাহু শক্ত হওয়া জরুরি নইলে আপনাকে মানুষ যা-তা মনে করবে । সামরিক শক্তিতে বর্মা বিশ্বে ৩১তম আর বাংলাদেশ ৫৭তম । বর্মা ভালো করেই জানে যে বাংলাদেশ অধিক শক্তিশালী বর্মার সাথে সামরিক লড়াইয়ে নামবে না তাই দেশটি বাংলাদেশকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে রোহিঙ্গাদের পিটিয়ে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে । আমাদের নেতারা (সব দলের) সামরিক শক্তিতে দেশকে এতটাই দুর্বল করে রেখেছে যে ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো দেশকে আমাদের ভয় পেতে হবে । কোন দেশ আপনার পেছনে আছে আর কোন দেশ নেই সেটা পরের কথা, সবার আগে নিজের শক্তি । আপনি দুর্বল হলে কেউ আপনাকে মূল্যায়ন করবে না । ৮ কোটি জন সংখ্যার দেশ তুর্কি সামরিক শক্তিতে বিশ্বে ৮ নম্বরে । এমনি এমনি তুর্কি এত কথা বলে না । সামরিক শক্তির বিকল্প নেই, তাই দেশের সামরিক শক্তি বাড়াতে হবে । অন্তত বর্মার চেয়ে বাংলাদেশের শক্তি বেশি থাকা চাই ।
বৈশ্বিক সম্পর্ক দুই রকমের হয়, ১- কৌশলগত সম্পর্ক ও ২- আত্মিক সম্পর্ক ।
কৌশলগত সম্পর্ক যে কোনো দেশের সাথে থাকতে পারে । তবে আত্মিক সম্পর্কের জন্য কিছু দেশকে চিনে রাখা দরকার । ঐ সব দেশের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমাদের কিছু নীতিতে পরিবর্তন আনা দরকার । এবারের জাতিসংঘ অধিবেশনে দেখেছি কারা আমাদের পক্ষে কথা বলছে । ঐ সব দেশ আত্মার সম্পর্ক থেকেই আমাদের পক্ষে কথা বলেছে । ভারত হলো হিন্দু রাষ্ট্র, তাঁরা বাংলাদেশের পক্ষে কেন কথা বলবে । আমাদের দেশে হিন্দুরা তথা তাদের সম্পত্তি নিরাপদ নয় । তারপরও ভাবছেন ভারত আপনার পক্ষে থাকবে । শত শত হিন্দু পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে চলে গেছে- যারা পাকিস্তান আমলে এই দেশেই ছিল, আজ কেন চলে যাচ্ছে ? রোহিঙ্গাদের বর্মা পিটিয়ে বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে এতে ভারতের চেয়ে বেশি আনন্দিত আর কে হতে পারে ? সমস্যা হলো- আমাদের দেশের নেতারা বিশ্ব রাজনীতিতে এখনও নাবালক । তাঁরা বুঝতেই পারছেন না পানি কোন দিকে গড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে মনে হয় আমাদের দেশের নেতারা অন্য কোনো গ্রহে বাস করেন । রোহিঙ্গা দুর্ঘটনার পর এই দেশের মানুষ নিজেদেরকে অসহায় মনে করছে ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালে এই দেশের মানুষকে মুক্তির পথে এনেছিলেন, আজ তাঁর সুযোগ্য কন্যার পালা । প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ এই দেশেকে সঠিক পথে নিয়ে যাবেন এই আশাই রইলো ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ১০:০৯