somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

আত্মকথন

২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৩৯১ এর এক হৈমন্তিক সন্ধ্যেবেলায় আমি এসেছিলাম মায়ের কোলজুড়ে, সেটা জুড়ে রেখেছিলাম প্রায় ৭টি বছর, কারণ আমার ছোট বোনটির জন্ম আমার জন্মের ৭ বছর পর, তারিখটা দেখে হয়ত খানিকটা অবাক লাগছে, তাই না? সেটা তো লাগবারই কথা, ওটা বাংলা পঞ্জিকার, আর আমরা তো বাংলা তারিখ নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না, তবে বৈশাখ, নবান্ন, চৈত্র সংক্রান্তি ইত্যাদি নিয়ে বেশ উৎসব মুখর হতে দেখা যায়।
নাহ আজকে বাংলা সন তারিখ, হাল খাতা, পূন্যাহ এসব নিয়ে লিখতে চাইছি না, লিখব নিজেকে নিয়ে, নিজের অতিবাহিত কাল আর আগামির ভাবনা নিয়ে, যদিও আমার মনে হয় এগুলো লিখে শুধু পাঠকের বিরক্তির উদ্রেক করা ছাড়া অন্য কিছু হয় না, তবুও লিখতে ভালো লাগে।

আজ ২৯শে আশ্বিন ১৪১৯, প্রায় ২৮ বছর আগে এই ধরণীতে আমার আগমন, সুরমায় কত জল গড়াল, কত শীতে খা খা করল পত্রবিহিন বৃক্ষরাজি, কত বসন্তে কোকিল মধুর স্বরে গান গেয়ে গেল, কিন্তু আমার কী হল, কোথায় গেলাম আমি, কিংবা কী অর্জন করলাম, যা নিয়ে গর্ব করতে পারি, মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর কিছু কী করতে পেরেছি, সহজ বাংলায় এর উত্তর ‘না’। সুযোগ পাইনি সেটা বলা মিথ্যে হয়ে যাবে, আর নিজেও সেভাবে সুযোগ তৈরির জন্যে চেষ্টা করিনি এটা সত্যি। তবে কিছু করবার ইচ্ছেটা আজীবন ছিল আজো আছে, সেটা শুধু এজন্যে নয় যে মানুষের বাহবা পাব, সম্মান পাব, মঞ্চে উঠে হাজার লোকের তালি পাব, আমি কিছু করতে চাই কারণ তাতে আমার মনে কিছুটা প্রশান্তি আসবে।

শুরুটা তো ঘর থেকেই হওয়া উচিৎ, তাই না? হ্যাঁ, আর সবার মত আমিও চাই আমার বাবা-মায়ের মুখে হাসি লেগে থাকুক, বোনেরা শান্তিতে থাকুক, আর বন্ধুরা আমায় নিয়ে আনন্দিত হোক, গর্ব করুক। আমি আজকের এই আমিতে রূপান্তরিত হতে অনেকের অবদান রয়েছে, সেটা বলে শেষ করা যাবে না, আর এখন অব্দি কিছু মানুষ আমার জন্যে সাধ্যমত করছেন, এসব জীবনে আমার পরম পাওয়া।

অতীতের দিকে আজ তাকালে হয়ত অনেকের কাছেই মনে হবে ধূসর এক সময় পেরিয়ে আমি এসেছি এই অব্দি, কিন্তু, প্রকৃত চিত্র ভিন্ন, আমি পেয়েছি অনেক কিছু চাইবার আগেই, সেটা পরিবার বলি, প্রতিবেশি বলি কিংবা বন্ধু-সবার কাছ থেকেই। আর দশজন মানুষ যেমন শৈশব, কৈশোর কাটান আমি বরং তার চেয়ে ভালোই ছিলাম তখন, খেলার মাঠ ছিল, দুরন্তপনায় মাতার জন্যে অনেক কিছুই ছিল চারপাশে ছড়ানো ছিটানো। ওগুলো থেকে সব না হলেও বেশ খানিকটা কুড়িয়ে নিতে পেরেছিলাম, তাই আজ ওসব দিনের কথা ভাবতে ভালো লাগে, ভালো লাগে সেই জাম গাছে ঝুলে থাকা, মধ্য দুপুরে পুকুরে ঝাঁপিয়ে পড়া, অথচ আমি সাঁতার জানতাম না তখন, সকাল বিকেল ব্যাট, বল নিয়ে মেতে থাকা, ভারত পাকিস্তান নিয়ে হৈ হল্লা করা, ব্রাজিল আর্জেন্টিনা নিয়ে বাক বিতন্ডা, তবে আমি বেশ আগে থেকেই ওইসব দলের কোনটাকেই সমর্থন করতাম না, তাতে কী, যখন পাড়ায় দুই দল করে খেলা হত তখন আমি ভারত আর ব্রাজিলের বিপক্ষেই খেলেছি, কারণটা অদ্ভুত, আমি ওদের সমর্থন করি না তাই ওদের বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়েরা আমায় দলে নিত। এভাবেই আনন্দ উল্লাসে কেটেছে দিন, শিখেছি অনেক কিছু, সেটা ছোট বড় নির্বিশেষে সকলের কাছ থেকেই। আমার কাছে তাই আমার অতীত বেশ মূল্যবান।

সেসময় অনেক স্বপ্ন দেখতাম, কিছু স্বপ্ন পূরণ হবে না জেনেও দেখতাম, পূরণ না হোক দেখতে কিসের বাধা। বয়েসের সঙ্গে সঙ্গে অনেক স্বপ্নই ফিকে হয়ে গেছে, কিছু ভেঙ্গেছে সশব্দে, কিছু নিঃশব্দে, কিছু ভেঙ্গেছে নিজেও টের পাইনি এতটুকু, সেই ভাঙ্গা গড়ার খেলায় চেপে আজ অব্দি এসে পৌঁছে গেছি, এখান থেকেও হয়ত মৃত্যু অব্দি যাব ভাঙ্গা গড়ার খেলা খেলতে খেলতে, সেটায় আমার খুব বেশি আপত্তি নেই, কিন্তু, আজ নিজের কাছে নিজেই পণ করতে চাইছি যে, মরণের আগে মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্যে কিছু একটা করবার চেষ্টা করব, সেটা সামান্য হোক কিংবা বিশাল কিছু, মানুষ হয়ে জন্ম নেয়াটা স্বার্থক করবার জন্যে হয়ত এমন কিছু আবশ্যক যা আমায় মানুষের কাছে মানুষ হিসেবে মর্যাদা লাভে সফল করবে, আর যিনি আমায় সৃষ্টি করে পৃথিবীর বুকে পাঠিয়েছেন, তাঁরও একটা অভিপ্রায় ছিল যে আমি তাঁর উদ্দেশ্যে কিছু একটা করব, যা নিয়ে তিনি গর্ব করতে পারেন, আর আমায় ক্ষমাও করবার কোন একটা সুযোগ পান, মানুষকে শুধু নিজের জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকবার জন্যে সৃষ্টি করা হয়নি, সকলকে নিয়ে সুখ, সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হবার জন্যে প্রেরণ করা হয়েছে, সে অনেক কথা, হয়ত কঠিন কথাও বটে। আমি সেসব পাড়তে চাইছি না।

আজকে শুধু বলে যেতে চাই নিজের জন্য চাই বা না চাই কিছু তো করা হবেই, কারণ মানুষ বাঁচবার জন্যে করতে পারে না হেন কাজ ধরায় নেই, কিন্তু আজকে এই সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার যুগে আমরা মানুষ যেন পরস্পরের থেকে শুধু দূরেই চলে যাচ্ছি। যাবার জন্যে চেষ্টা করছি, জ্ঞান বিজ্ঞান, প্রযুক্তি আজ মানুষকে সবকিছু হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে, ফলে যন্ত্র নির্ভর জীবন থেকে মানবিক মূল্যবোধ, ভাবের আদান প্রদান, যোগাযোগ খুব সীমিত হয়ে পড়ছে, আর আমরা ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গড়ে উঠছি, ফলে, দেখা দিচ্ছে নানান সমস্যা, এসব থেকে পরিত্রাণের জন্যে দরকার ব্যক্তির মনোবিকাশ, আর স্মরণে আনা দরকার সেসব মানুষকে যাঁরা একদিন আমায় হাসতে শিখিয়েছেন, হাত ধরে হাঁটতে শিখিয়েছেন, এক হয়ে থাকতে শিখিয়েছেন, দুঃখ-কষ্টে স্বান্তনার বাণী শুনিয়েছেন, পরশ বুলিয়েছেন, তাঁদের কারণেই তো আজ আমি নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতে পারছি, এসব কি আমায় আমার কিছু দায়িত্ব কর্তব্যের কথা মনে করিয়ে দেয় না?

আমি জানি আমার ক্ষমতা সসীম, আমি কর্মঠ নই, কোন কাজ ঠিকঠাক শেষ করতে পারি না, তাতে কী আসে যায়, আজ যখন মাথার ভেতর কিছু একটা করবার পোকা পাখা ঝাপটাচ্ছে, তাকে সেটাই করতে দেয়া দরকার যতক্ষণ লক্ষ্য অর্জিত না হয়।

সবসময় মানুষকে পাশে পেয়েছি, জানি এবারো সেটার ব্যতিক্রম হবে না।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×