পহেলা বৈশাখ এসেছে।
আমরা ব্যাপকভাবে উদযাপন করবো বাঙলা নববর্ষের এই দিন।
আমরা লাল সাদা পোষাক পরে ঘুরে বেড়াবো, আমরা হৈ হুল্লোড়ে মাতবো সারা বেলা।
তাতে ক্ষতি কিছু নেই, কোনো প্রতিবন্ধকতাও নেই।
এই উৎসব সকলের, এই আনন্দের ভাগ সবার সমানভাবে।
আমরা লাল সাদা পড়ে ঘুরবো, হয়ত আমাদের পাশের গলির বা বাসার কেউ সংসার খরচের টাকার হিসেবের অসামঞ্জস্য নিয়ে ব্যাকুল থাকবে।
আমরা খুব শখ করে পান্তা ইলিশ খেয়ে সেলফি তুলে আপলোড করবো। অথচ সারা বছর যারা পান্তা খেয়ে কোনোমতে জীবন ধারণ করে। তাদের দু’বেলা অন্নের জোগাড় হবে না।
আমরা খুব শুনবো পল্লি সঙ্গীত, জারি-সারি-ভাটিয়ালি, মাথা দোলাবো প্রাণভরে। আর পরদিন থেকেই রেশামিয়া, ইয়ো ইয়ো হানি সিং, হার্দ কাউরের গান বাজাবো পুরো বছর জুড়ে, ফোন থেকে শুরু করে ল্যাপটপ অবধি সবকিছুতেই থাকবে হিন্দি গান।
আমরা কাল লক্ষ টাকার শ্রাদ্ধ করে মঙ্গল শোভাযাত্রা করবো, যে যাত্রায় কোনো মঙ্গল আসার কোনো প্রমাণ নেই, সম্ভাবনা নেই, সে যাত্রায় আমরা অংশ নেবো নানান ধরণের পশু-পাখির মুখোশ পরে।
অথচ এই অনর্থক খরচের কিছু অংশ দিয়ে কিছু দুস্থ মানুষের জীবিকা নির্বাহের পথ করে দেয়া যেত।
আমরা খুব দামি মিউজিক সিস্টেমে বাজাবো লালন, হাসন, শাহ আব্দুল করিমের লোক গান, আর বাকি দিনগুলোতে অগুলো কাউকে শুনতে দেখলেই বলবো- কী খ্যাত!!!
আমরা সফেদ পাঞ্জাবি, ফতুয়া পড়বো, আমাদের কন্যা-জায়া-জননীরা পড়বেন শাড়ি, একেবারে খাঁটি বাঙ্গালিয়ানা যাকে বলে, সেই স্টাইল অনুসরণ করে।
আর কালকের দিন পরেই আমরা পড়বো লেটেস্ট ফ্যাশনের পোষাক। ছেলেরা মার্কেটে গিয়ে খুঁজবে সালমান-হৃতিক বা অন্যকোন বলিউড তারকার পরা কাপড়ের ডিজাইনের পোষাক, মেয়েরা খুঁজবে লেহেঙ্গা, ভারতীয় শাড়ী, বা সিরিয়ালের কোনো অভিনেত্রির স্টাইলের পোষাক।
কাল আমরা যাত্রা দেখবো, পুতুল নাচ দেখবো, দেখবো কবি গান, এবং আরো নানান গ্রাম বাঙলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আর কাল রাতেই আমরা স্টার প্লাস, লাইফ ওকে, জি বাঙলার সামনে হুমড়ি খেয়ে পড়বো অত্যন্ত কদর্য মানের, বিকৃত মস্তিষ্ক প্রসূত মানসিক বিকারগ্রস্ত অভিনয়ের ধারাবাহিকগুলো দেখার জন্য।
আমরা বীর বাঙালি, সেটা আমাদের প্রমাণ করার জন্যে পহেলা বৈশাখ আদর্শ উপলক্ষ, আর ৩৬৪ দিন বাঙালি থাকার কোনো আবশ্যকতা বা দরকার নেই।
আমাদের নিজেদের সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য বা রীতি-নীতি চর্চার জন্য আর কোনো দিন নেই, সময় নেই।
আমরা ভিক্ষুকের মত ঝোলা নিয়ে হাত বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছি অন্যের পাতের উচ্ছিষ্ট তুলে নেবার জন্য, আমরা সেই উচ্ছিষ্ট নিয়ে গর্ব করতেও দ্বিধা করি না।
অথচ নির্মল, সামাজিক সমতার আদর্শ ভিত্তিতে রচিত বাঙলার হাজার বছরের গৌরবোজ্বল ইতিহাস, ধারে এবং ভারে যা বিশ্বের অন্য যে কোনো সংস্কৃতির থেকে কোনো অংশে কম নয়, আছে বৈচিত্র, আছে সোহার্দ্য, আছে সম্প্রীতি। সব জলাঞ্জলি দিয়ে আমরা নিজেদের একদিনের বাঙালি করে রেখেছি।
এই বাঙালি হবার সাধ আমার নেই, আর পরের ধনে ময়ূর সাজার কোনো দরকারও নেই আমাদের।
এই মধুর দিনে সকলের জন্য অশেষ শুভ কামনা।
শুভ নববর্ষ ১৪২২।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




