somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীল অভ্র
কোনো কিছুর সাথেই খাপ খাওয়াতে না পারা একজন। খানিকটা বোহেমিয়ান তবে ঐতিহ্যর প্রতি ভীষণ অনুরাগী। নিজেকে প্রায়শই মনে হয় ভুল জায়গায় ভুল মানুষ। এলোমেলো আর প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক চিন্তা ভাবনা নিয়েই যাপিত জীবন।

জিপিএ ৫ এর বাম্পার ফলন এবং এর নেপথ্যে

৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মাছরাঙ্গা চ্যানেলের এক প্রতিবেদকের প্রতিবেদন নিয়ে বেশ আলোচনা, সমালোচনা হচ্ছে ভার্চুয়াল জগতে।
প্রতিবেদক এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া এবং অন্যান্য গ্রেড পেয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহন করেন, যেখানে দেখানো হয়েছে জিপিএ-এর পূর্ণ রূপ কী অনেক ছাত্রই জানেন না, বাংলাদেশের বিজয় দিবস, জাতীয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, অপারেশন সার্চলাইট ইত্যাদি নিয়ে প্রশ্নের সদুত্তর অনেকেই দিতে পারেনি।
প্রতিবেদনটিতে শিক্ষাবিদ জাফর ইকবাল এবং আনিসুজ্জামানের মন্তব্যও দেখানো হয়েছে। একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের বক্তব্য দেখানো হয়েছে।
এই প্রতিবেদন দেখানোর পর থেকে ভার্চুয়াল সাইটগুলোতে ব্যাপকহারে শেয়ার হচ্ছে। উক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যঙ্গ করা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতিবেদকের উদ্দেশ্যমূলক প্রতিবেদন নিয়েও অনেকে লিখছেন।
মাত্র ১৩ জন শিক্ষার্থীর জ্ঞান যাচাই করে একটি প্রতিবেদন দেখে অনেকেই বেশ আঁতকে উঠেছেন, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কী হাল। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন পুরো দেশ থেকে আরো বেশি শিক্ষার্থী নিয়ে কি এরকম একটি প্রতিবেদন করা যেতো না। কিংবা, এই যে সৃজনশীল পদ্ধতি শিশু কিশোরদের উপর চাপিয়ে দিয়ে গিনিপিগ বানিয়ে তাদের শিক্ষা জীবনকে ধ্বংসের দিকে ঠেল দেয়া হচ্ছে এই নিয়ে প্রতিবেদন করা হলে আরো ভালো হতো। আমি ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা ব্যবস্থা দুই পক্ষকেই এখানে দায়ী মনে করি। আজকাল অভিভাবকেরা জিপিএ ৫ পাওয়াকে সন্তানের জন্যে আবশ্যক করে ফেলেছেন। সকাল থেকে ইশকুল শুরু করে বিকেলে কোচিং, স্যারের বাসা, ড্রয়িং, নাচ, আবৃত্তি ইত্যাদিতে পারদর্শী করে তুলতে গিয়ে অতি অল্প বয়েসেই একজন শিশুর কাঁধে ভারী বোঝা তুলে দিচ্ছেন। আর সেই সুযোগে এই দেশে কিছু অসাধু মানুষ প্রশ্ন ফাঁস করা, কোচিং বাণিজ্য ইত্যাদি করছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম। আমরা কি সেইসব কোমলমতি শিশু-কিশোরদের দায়ী করবো নাকি তাদের অভিভাবককে?
সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতি প্রচলনের পর থেকেই পাবলিক পরীক্ষায় ব্যাপকহারে জিপিএ ৫ এর ফলাফল দেখা যাচ্ছে। এটা কি এজন্যে করা হচ্ছে যে সৃজনশীল পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের বোধগম্য হয়েছে তা বোঝাতে। আসলেই কি এত পরিমাণ জিপিএ ৫ পাওয়ার মত যোগ্য ছাত্র-ছাত্রী আছে? তার প্রমাণ আমরা পাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল দেখে। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ পাওয়া অনেকেই ভর্তি পরীক্ষায় পাশ নম্বর পায় না। দুই বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটো পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়া ৫২% ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি পরীক্ষায় পাশ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২৯% ইংরেজিতে পাশ নম্বর ৮ তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। এরকম অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও যে হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। তাহলে বোঝা যাচ্ছে এই জিপিএ ৫ শুধু মাত্র লোক দেখানো ভেলকিবাজি ছাড়া কিছু নয়, এই ফল অন্তঃসারশূন্য। পাবলিক স্টান্টের জন্যে আদর্শ হলেও শিক্ষা জীবনের জন্যে দুর্বিষহ অভিশাপ।
এবার ফের যাক সেই প্রতিবেদনে, অধ্যাপক জাফর ইকবাল সরাসরিই বলেছেন যে জিপিএ ৫ শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হচ্ছে। এতে স্পষ্ট হয়েছে যে এদের অনেকেই জিপিএ ৫ পাওয়ার যোগ্য না। অনেকটা যেনো কাকের গায়ে ময়ূরের পেখম লাগিয়ে সৌন্দর্য বর্ধনের ব্যর্থ চেষ্টা। অন্যদিকে, সৃজনশীল পদ্ধতির প্রচলনে অগ্রণী ভূমিকা রাখা অধ্যাপক জাফর ইকবাল পদ্ধতিটি সঠিক আছে কি না বা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় অরকম পদ্ধতি কার্যকরী হবে কি না সেটা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিকে সৃজনশীল পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তো ভিন্ন পদ্ধতি! ব্যাপারটা অসামঞ্জস্যশীল হয়ে যাচ্ছে কি না সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে আলাপ করেছি যাঁরা কলেজ পর্যায়ে শিক্ষকতা করেন, তাদের অনেকেই মত দিয়েছেন যে সৃজনশীল পদ্ধতিটি শিক্ষকগণই পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি। এর জন্যে আরো ব্যাপক প্রশিক্ষণের দরকার আছে। যে বিষয়ে শিক্ষকের জ্ঞান পরিপূর্ণ নয়, সে বিষয়ে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে যথাযথ জ্ঞান দানে ব্যর্থ হবেন তাতে অবাক হবার কিছু নেই।
এবার সেইসব শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করি। তারা কি আসলেই জানেন না নেপালের রাজধানী কোথায়, বা পিথাগোরাস কে। ধরে নিলাম আসলেই জানেন না। প্রতিবেদক এখানে নিজের জনপ্রিয়তা বা চ্যানেলের প্রসারে পর্দার আড়ালে কোনো কারসাজি করেননি। তাহলে এই শিক্ষার্থীদের উত্তরগুলো যে ভুল হলো এর দায় কার? হ্যাঁ, শিক্ষার্থীর জ্ঞান কম বা জানার আগ্রহ কম। এর দায় কিন্তু শিক্ষকের, একজন শিক্ষক কী পড়াচ্ছেন, কী বোঝাচ্ছেন তা-ই একজন শিক্ষার্থী অনুধাবন করতে পারে। শিক্ষক যদি ছাত্র-ছাত্রীর উপলব্ধির দুয়ারগুলো খুলে দিতে না পারেন। শুধুমাত্র ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষার জন্যে উদ্বুদ্ধ করেন। তাহলে সেই শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবেই।
এইসব বিষয় পর্যবেক্ষন করে মানসম্পন্ন শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব। শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভুরিভুরি জিপিএ ৫ পাওয়াকে সাফল্যের মানদণ্ড বিবেচনা করলে অচিরেই এই দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। প্রতিবেদক যে কাজটি করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তিনি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বশীল কারো সাক্ষাৎকার প্রচার করেননি। তাঁরাই তো নীতি-নির্ধারক। অধ্যাপক আবু সায়ীদ কিছুদিন আগে শঙ্কা ব্যক্ত করেছেন, আমরা শিক্ষার গুণগত মানের ওপরে ফলাফলকে অধিক গুরত্ব দিচ্ছি। পঞ্চম এবং অষ্ঠম শ্রেণীতে পিএসসি, জেএসসি পরীক্ষার মাধ্যমে কোমল শিশু মনে অতি অল্প বয়েসেই পরীক্ষা ভীতি ঢুকিয়ে দিচ্ছি ফলে শিশুরা শিক্ষার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তিনি পিএসসি এবং জেএসসি পরীক্ষা বাতিলে আহ্বান জানান।
শিক্ষার্থীরা একটি উপযোগীতাহীন পদ্ধতির শিকার, তাদেরকে একটি পদ্ধতি কার্যকরের গবেষণাগারে ঠেলে দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে পদ্ধতিটি সঠিক। গলদটা এখানেই। আমাদের অতি দ্রুত সেই গলদ সংশোধনের কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে হবে। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিক্ষার আনন্দ থেকে বঞ্চিত করে মেকি ফলাফলে সাময়িক আনন্দে ভাসিয়ে তাদের ভবিষ্যৎ দুর্বিষহ করে তোলা সমীচীন হবে না। সেটা সংশ্লিষ্ট সকলের বোধগম্য হলে মঙ্গল।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৬ রাত ৩:৫৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×