somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তাদেউজ রজেভিচ- তাকে নিয়ে কিছু কথা আর তার কবিতা

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালের সবচেয়ে প্রভাবশালী পোলিশ কবি তাদেউজ রজেভিচ (জন্ম ১৯২১)। প্রতীক, উপমা, শব্দব্যবহারের অভূতপূর্ব কলাপ্রকৌশলে পোলান্ডের কবিতার তথাকথিত লিরিকময়তাকে একেবারে বদলে দিয়েছেন তিনি। খুবই শক্তিশালী, অন্তর্ভেদী তার দৃষ্টি আর উপস্থাপনা। তিনি বলেছেন, “কবিতার তথাকথিত ছন্দোস্পন্দের বিষয়টি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাৎসিদের বন্দিশিবির সৃষ্টির মধ্য দিয়েই শেষ হয়ে গেছে।” যুদ্ধের বীভৎসতা, নির্যাতন আর যুদ্ধপরবর্তী সময়ের সংকট ও অপ্রাপ্তিকে তিনি তার কবিতার বিষয় করে তুলেছেন। রজেভিচকে মনে করা হয় যুদ্ধোত্তর পোলিশ কবিতার অন্যতম প্রধান কবি। তবে শুধু কবি নন, তিনি পোলিশ ভাষার একজন গুরুত্বপূর্ণ নাট্যকার, সমালোচক ও ছোটগল্পের রচয়িতা।

তাদেউজ রজেভিচ (Tadeusz Rozewicz; জন্ম. রাদোমস্কো, পোল্যান্ড ৯/১০/১৯২১)
পশ্চিমের অনেক সমালোচক প্রশ্ন তুলেছিলেন, ফ্যাসিবাদী রূঢ় বাস্তবতা আর নির্মমতার পর কী ভালো কবিতা রচনা করা সম্ভব? বিশেষ করে রাজনীতি যেখানে প্রধান ও প্রখর হয়ে ওঠে? রজেভিচ পোলিশ কবিতার ইতিহাসে ‘চতুর্থ সাহিত্য ঘরানা’র সৃষ্টি করে দেখিয়ে দিয়েছেন, রাজনীতি ও নির্মমতার ভেতর থেকেও নিয়ন্ত্রিত শৈলী, পরিমিত শব্দ ব্যবহার, অন্তর্গত অনুভবকে অবলম্বন করে ভালো কবিতা লেখা সম্ভব। কাব্যজীবনের প্রাথমিক পর্বে এই ধরনের কবিতা রচনার মধ্য দিয়েই পোলিশ সাহিত্যভুবনে তার আবির্ভাব ঘটে উদ্বেগ (১৯৪৭) ও লাল দস্তানা (১৯৪৮) কাব্যগ্রন্থ প্রকাশের মধ্য দিয়ে।
জীবনের প্রথম দিকে তীব্র সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলেন রজেভিচ। গেস্টাপো বাহিনী তার বড়ো ভাইকে খুন করে, এই ভাইয়ের স্মৃতি তিনি কখনও ভুলতে পারেননি; নিজেও মৃত্যুর প্রান্ত থেকে ফিরে এসেছিলেন। কবিতায়, গল্পে, এমনকি নানা ধরনের গদ্যে সেই নির্মমতার কথা ঘুরে-ফিরে এসেছে। ফলে সমকালসম্পৃক্ত, আপাত অগভীর কবিতা রচনা করাই ছিল তার জন্যে স্বাভাবিক, কিন্তু তিনি প্রচলিত পথে না হেঁটে রচনা করতে থাকেন অন্তর্গত সংবেদনশীল কবিতা। তারই মাধ্যমে অস্তিত্বের জন্যেই বেঁচে থাকা—পোলিশ কবিতার ধারায় সংযুক্ত হলো এই নতুন সংবেদ। শূন্যতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম হয়ে উঠলো তার কবিতার মর্মবস্তু। পরবর্তী সময়পর্বে রচিত রাজপুত্রের সঙ্গে কথপোকথন (১৯৬০), অনামা কণ্ঠস্বর (১৯৬১), একটি মুখ (১৯৬৪) তৃতীয় মুখ (১৯৬৮) ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে এই বিষয়টিই প্রধান হয়ে উঠেছে।
রজেভিচের সময়ে আভাঁগার্দধর্মী কবিতার ধারাটি পোলান্ডে বেশ শক্তিশালী ছিল। এই ধরনের কবিতায় সরাসরি উপমা, বাক্প্রতিমা, শব্দের ব্যবহার ঘটতো। রজেভিচ সেই পথে না হেঁটে রচনা করেছেন মানব অস্তিত্বের স্মারক হয়ে উঠতে পারে এমন সব কবিতা, যা তার কথায় হয়ে উঠেছে জন্মের কার্যকারণ আর মৃত্যুর কার্যকারণে পরম্পরিত জীবনবেদ। কবিতায় এই জীবনের কথা সবটা বলা সম্ভব নয় ভেবে এই সময় তিনি গড়ে তোলেন ‘মুক্তমঞ্চ’, লিখে ফেলেন বেশ কিছু নাটক—কার্ডে লিপিবদ্ধ নির্ঘণ্ট (১৯৬৮), উপবিষ্ট অপেক্ষমান বৃদ্ধা (১৯৬৯), সেই চারজনকে নিয়ে (১৯৭২) ইত্যাদি।
সমালোচকদের মতে তার কানটি প্রখর, অর্থাৎ তার শ্রবণদক্ষতা ও তজ্জনিত প্রতিক্রিয়া চোখে পড়ার মতো। সমকালের নন্দনরীতি সম্পর্কে তিনি যেমন ছিলেন সচেতন, তেমনি সৃষ্টিশীলতার কোন নতুন রাস্তায় তাকে হাঁটতে হবে, সেটাও তিনি বেশ ভালোই জানতেন। নারীবাদ ও উত্তর-আধুনিকতার দ্বারা স্পৃষ্ট হয়ে এভাবেই তিনি রচনা করেন কাব্যগ্রন্থ শ্বেতবিবাহ (১৯৭৫)।
রজেভিচ এখন আর আগের মতো সৃষ্টিশলিতায় সক্রিয় নেই, তবে তিনি লিখে চলেছেন তার কবিজীবননির্ভর আত্মজীবনী। কবিতা ও জীবন যে একাকার হয়ে থাকে, সেটাই হচ্ছে এই আত্মজীবনীর মূল বিষয়। রজেভিচ এমন এক কবি যিনি কবিতার সংজ্ঞাকে অগ্রাহ্য আর প্রবলভাবে প্রতিরোধ করেছেন। কবিতার যত ধরনের তথাকথিত ফাঁদ আছে, তার সবগুলো তিনি সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন। তাকে তাই বলা হয় নৈঃশব্দ্যের কবি, সংবেদনার কবি। অনেকে তাকে ‘প্রায়-মিস্টিক’ কবি বলেও আখ্যায়িত করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ধ্রুপদী আভাঁগার্দ কবি হিসেবেও পরিচিত, উত্তর-আধুনিক কবির শিরোপাও জুটেছে তার।
যেভাবেই আখ্যায়িত করা হোক না কেন, রজেভিচের স্বর ও কাব্যশৈলী সরল কিন্তু স্নায়ুক্ষয়ী, সন্ত্রাস আর শূন্যতাকে তিনি ধরতে পারেন সহজেই। তিনি বলেছেন, আমার লক্ষ্য “পদ্য লেখা নয় ঘটনার বিবরণ দেয়া।” কিন্তু দেখা গেছে এই ঘটনার বিবরণই হয়ে উঠেছে এক-একটি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট অভূতপূর্ব কবিতা। তার শেষের দিকের লেখায় মানবজীবনের দ্বন্দ্ব, ক্ষোভ, হতাশা, আনন্দ, বেদনার ছবি বেশ স্পষ্ট। কবিতায় নোবেল পুরষ্কার বিজয়ী আরেক পোলিশ কবি চেশোয়াভ মিউশ তাকে এসব কারণে চিহ্নিত করেছেন নৈরাজ্যের কবি বলে, “রজেভিচ হচ্ছেন নৈরাজ্যের কবি যিনি নস্টালজিয়া বা স্মৃতিকাতরতাকে বিন্যস্ত করে কবিতা লিখতে ভালোবাসেন।”
এ পর্যন্ত তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ১৪। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় তার কবিতা অনূদিত হয়েছে। এখানে অনূদিত কবিতাগুলোর উৎস বিভিন্ন ওয়েবসাইট এবং জে. ডি. ম্যাকক্লাচির সম্পাদিত দ্য ভিনটেজ বুক অফ কনটেমপোর্যারি ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি (১৯৯৬)।


কবি কে
তিনিই কবি যিনি কবিতা লেখেন
আবার তিনিও কবি যিনি পদ্যটদ্য লেখেন না।
তিনিই আসলে কবি যিনি পায়ের বেড়ি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দেন
আবার তিনিও কবি যিনি এই শৃঙ্খলে আবদ্ধ হতে ভালোবাসেন
কবিকে আসলে বিশ্বাসী হতে হয়
তিনিও কবি যার কোনো কিছুতে বিশ্বাস নেই
কবি আসলে এমন মানুষ যাকে মিথ্যে কথা বলতে হয়
আবার তিনিও কবি যাকে বলা হয়েছে অনেক মিথ্যে কথা
তিনিই হলেন কবি যিনি টাল খেয়ে ভেঙে পড়েন
আবার তিনিও কবি যিনি উদ্ধত ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ান
কবি তিনিই যাকে সবকিছু ছেড়েছুড়ে ফেলে দিতে হয়
আবার তিনিও কবি যিনি কোনো কিছুই ছেড়ে চলে যান না।

অনেক কাজের ভিড়ে
অনেক কাজের মাঝে
খুব জরুরি
আমি ভুলেই গিয়েছিলাম
এটাও খুব দরকারি
মরে যাওয়া
অকিঞ্চিৎকর
আমি এই বাধ্যবাধকতাকে অবহেলা করেছিলাম
অথবা একে পূরণ করছিলাম
হেলাফেলার সঙ্গে
আগামীকালের শুরুতে
সবকিছু বদলে যাবে
বিজ্ঞতার সঙ্গে আশা নিয়ে
সময়ক্ষেপণ না করে
আমি নিষ্ঠার সঙ্গে মরে যাওয়া শুরু করবো

০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×