বাচ্চাদের স্কুলের গেটে অনেক সময় লেখা থাকে "খেলতে খেলতে হাতেখড়ি"। আমাদের লেখাজোকা গ্রুপের শুরু অনেকটা তেমন বলা যায়।
অনেক আগে থেকেই ফেসবুকে সামুর প্রায় সব ব্লগারদের সাথে আমরা যুক্ত হয়ে আছি। ফেসবুকে পোস্টকৃত বিভিন্ন পোস্টে নানা রকমের কমেন্টে আমাদের সবার সতস্ফুরত অংশগ্রহন বেশ এনজয় করতাম সবাই। মজার মজার কমেন্টে সবচেয়ে প্রানবন্ত ছিল কাজী ফাতেমা ছবি, কি করি আজ ভেবে না পাই ( ইমরান হাসান জেসন) , জাহিদ অনিক, অক্ষর অনিক, বিদ্রোহী ভৃগু ( মীম মাশকুর ), গিয়াসুদ্দিন লিটন, মনিরা সুলতানা, শায়মা,সোহানী সোহানী, গুলশান কিবরিয়া, গেমু অন সামু ( ও গেমস তোমাকে আমরা সবাই খুব মিস করি ) কোন কোন সময় সবার করা কমেনটের উত্তরে কমেনট বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠত।
জাহিদ অনিক সামুর জনপ্রিয় কবি। প্রায় প্রতি পোস্টে তার করা বুদ্ধিদীপ্ত কমেনটে আমরা সবাই খুব এনজয় করতাম। প্রতি পোস্টে আমি তাকে বলতাম "তোমার এই কমেনট সেরা"।
একদিন জাহিদ অনিক কমেনট করলো “তাহলে সেরা কমেনট দাতাকে পুরস্কার করা হোক “ ।
তার বলা এ কথাটা বেশ মনে ধরলো। কি করি আজ ভেবে না পাই এর সাথে আলাপ করলাম কি করা যায়।
জেসনের তড়িৎ উত্তর আমরা একটা গ্রুপ বানাই তোমার নামে । আমি সাথে সাথে মানা করলাম। বললাম "গ্রুপ হতে পারে তবে আমার নামে নয়"
কয়েকদিন পর কি করি আজ ভেবে না পাই নিজে থেকেই গ্রুপ ক্রিয়েট করে নাম দেয় “ যা খুশি তাই “
শুরু হোল "যা খুশি তাই" গ্রুপের যাত্রা।
“যা খুশি তাই “ গ্রুপে যার যেমন ভালো লাগে যে যা করে তেমন পোস্ট করতে লাগলাম। যেমন - কামরুন নাহারের ঘুরে বাড়ানো নেশা। তিনি পোস্ট করতে থাকলেন প্রাকৃতিক রুপ সৌন্দর্যের কিছু ছবি। আবার নীলা নাজমা তার বাগান করার শখ সে পোস্ট করলো তার বাগানের শাকসব্জি। শায়মা পোস্ট করলো তার চিত্র কলা । আমি আর জেসন পোস্ট করতে থাকলাম কৌতুক জাতীয় পোস্ট। গ্রুপটিকে যা ইচ্ছে তাই বানিয়ে ফেললাম।
অল্প কয়েকদিনেই মেম্বার হিসেবে সামুর অনেকেই জয়েন হতে লাগলো। সামু পরিবারের আমরা কিছু সংখ্যক মেম্বার একটা ড্রয়িং রুম পেয়ে গেলাম যেনো। সেখানে গল্প আর আড্ডা । সামুতে মেম্বারদের নতুন কোন পোস্ট গেলে সেটা গ্রুপে শেয়ার করা হতে লাগলো।
এভাবে যা খুশি তাই চলতে লাগলো ।
বইমেলা আসন্ন। লেখকগন নিজেদের বই প্রকাশ নিয়ে ব্যস্ত । গ্রুপটাও কেমন যেনো ঝিম ধরে গেছে।
কেউ আর তেমন কৌতুক বা ঘুরে বেড়ানোর ছবি বা শাক সবজীর ছবি পোস্ট করেনা। জেসনের কাছে প্রস্তাব করলাম গ্রুপ কে চাংগা করো । জেসন জানতে চায় "কেমন করে?"। বললাম "ভাবো"। তাকে ভাবতে দিয়ে আমিও ভাবতে থাকলাম।
ভাবতে ভাবতে দুজনার ভাবনা গ্রুপের সব মেম্বারদের ভেতর ছডিয়ে দিতে চাইলাম। ভাবনা মোতাবেক পরিকল্পনা হোল গ্রুপের পক্ষ থেকে সব মেম্বারদের লেখা নিয়ে একটি সংকলন বের করা। কি করি আজ ভেবে নাই পাই যেনো এমন একটি প্রস্তাবের জন্য রেডি হয়েই ছিলো। তার সেকি দারুন উৎসাহ! তার উতসাহ দেখে আমিও দ্বিগুণ উৎসাহিত।
এতোদিন আমরা সামুর ব্লগাররা ব্লগে যত লেখা লিখেছি তার থেকে কিছু কিছু লেখা ছাপার অক্ষরে এক মলাটে বন্দী হবে এটাই ছিল ভালো লাগার প্রধান কারন।
ইতিমধ্যে কি করি আজ ভেবে নাই পাই লেখা চেয়ে গ্রুপে এনাউন্স করে দিয়েছে। বেশ সাড়া পেলাম। অনেকেই বেশ উৎসাহ নিয়ে লেখা পাঠাতে লাগলেন। শুরু হলো লেখা বাছাইয়ের কাজ। এই কাজের গুরু দায়িত্ব নেওয়ার মতন শায়মা আর গিয়াসুদ্দিন লিটন ভাই এই দুই জনকেই যোগ্যতর মনে হলো।
সাহিত্য নিয়ে যাচ্ছে তাই তো করা যায় না। তাই এবার গ্রুপের নাম পরিবর্তনের তাগিদ অনুভব করলাম।
“যা খুশি তাই” নামে বই প্রকাশ করা যাবেনা । জোর তাগিদ দিলাম গ্রুপের নাম পরিবর্তন করার জন্য।
সব এডমিনদের গ্রুপ চ্যাটের ফলাফল মনিরা সুলতানার প্রস্তাব "লেখাজোকা" নামটি খুব পছন্দ হয়ে যায় সবার ।
"লেখাজোকা-১" ছাপার অক্ষরে মলাট বন্দী হয়ে "এক রংগা এক ঘুড়ি" স্টলে জায়গা করে নিয়েছে সবার ভালোবাসায় ।
"লেখাজোকা-১" যাদের লেখা ছাপা হয়েছে তাদের সবাইকে গ্রুপের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন জানাই।
৩৭ জন ব্লগারের লেখা এই বইতে রয়েছে। বইটা এখনো হাতে পাইনি। সম্পাদনায় আমি ছিলাম না। তাই বলতে পারছিনা কোন ৩৭ জনের লেখা ছাপা হয়েছে। বইটি হাতে পাওয়ার পর নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবো। ততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা।
ভালোবাসা সবার জন্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:১৫