somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রাবেয়া রাহীম
কস্তুরী খুঁজে ফিরে তার সুবাস..হায় মৃগ, যদি জানত গন্ধ কার! পাখিও খুঁজে ফিরে শিস--হায়, যদি সে জানত! সুর থাকে ভেতরে, অন্তরে.। চুপটি করে এই তো এখনো ডাকে, ব্যকুল হয়ে - ডাকে আর ডাকে ।।

মা

০৩ রা মার্চ, ২০২০ ভোর ৬:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শূন্যের নীচে ঠান্ডায় পথঘাটে বেরোতে হলে ভালো মতন গা ঢেকে, মাথায় টুপি চাপিয়ে, হাতে গ্লাভস পরে নিতে হয়।
কিন্তু মুখ ঢাকতে গেলে আমার দমবন্ধ লাগে। মায়ের পান্ডুর মুখটি ভেসে উঠে।
মায়ের শরীর থেকে সবটুকু বাতাস বের হয়ে যাওয়ার পর তাঁর কষ্টের তীব্রতা অনুভব করতে থাকি।
আমার হাঁসফাঁস লাগে।

জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহের এক সন্ধ্যায় মা চলে গেলেন ।
মায়ের চলে যাওয়ার ক্ষণটির কথা খুব মনে হয়। হঠাত মায়ের পা থেকে ঠান্ডা হতে থাকে।
প্রবল শীতের সময় গল্ভস আর পা মোজা ছাড়া ঘর থেকে বের হলে যেমন হয়। না,তার চেয়েও বেশী ঠান্ডা।
আচ্ছা মা চিরকাল কেন থাকে না?
আমি আকুল হয়ে কাঁদতে থাকি!

শহরের আবছা গলিতে এলোমেলো পায়ে হাঁটতে থাকি।
রাস্তার নেড়ি কুকুরের করুন ডাকে রাত্রির শহরটা খুব আপন লাগে।
মায়ের হাসি মুখের ছবি ভেসে উঠে। দুর্দান্ত শৈশব জলজ্যান্ত হয়ে উঠে আমার চোখের তারায়!
আমার ছয় কি সাত বছর বয়স। চাকুরি সুত্রে বাবাকে তখন আমাদের থেকে দূরে অন্য একটি শহরে থাকতে হত।
সাপ্তাহিক ছুটির আগের রাতে যথানিয়মে বাড়ী হাজির থাকতেন বাবা। তবে বাবা ঘরে প্রবেশ করার আগেই আমি ঘুমিয়ে যেতাম।

সেই সময়কার এক সন্ধ্যায় আমার তরুণী মা দেওয়ালে ঝোলানো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে
চুলে সিঁথি কেটে বিনুনি বাঁধছেন আর গুনগুন সুর তুলে চলেছেন।
দেওয়ালের সাথে লাগানো বিছানায় বসে আমি স্কুলের হোম ওয়ার্ক করতে ব্যস্ত। মায়ের খুশি আমাকে ছুয়ে যাচ্ছে।
বিনুনি হাতে ধরে মা জানতে চাইলেন " তোর বাবা এতক্ষণে অনেকখানি পথ চলে এসেছেন তাইনারে?"
মায়ের হাসির স্ফুরণ আমাকে আহ্লাদিত করে দিলো। আমি হেসে বললাম "হ্যা মা"।
আমার হাসি দেখে মা চোখে কাজল টেনে দিলেন। কি অপূর্ব আমার মায়ের চোখ দুটি!

একদিন ভোর রাতে মায়ের চাপা কান্নায় আমার ঘুম ভাঙ্গে। আমাকে দেখে কেমন অসহায় দৃষ্টি মেলে ধরেন তিনি!
চোখের দু'কোনে জল জমে এক আকাশ মেঘে ঢাকা বিমর্ষতা মায়ের মুখে। আমার বুক ফেটে কান্না আসলো।
তার হাত ধরে টেনে আমার সামনে বসালাম। ব্যাকুল হয়ে জানতে চাইলাম ‘কী হয়েছে, মা?’ আমার সদ্য হাস্যময়ী "মা" হু হু আর্তনাদে হাতে ধরা এক টুকরো সাদা কাগজ । যেখানে লেখা ছিল ভালোবাসা প্রত্যাখ্যান করে, উড়ে যাচছে সব বিশ্বাস।

সেই থেকে বাবাকে ছেড়ে মা কে নিয়ে আমাদের দুজনার সংসার দিব্যি চলে যাচ্ছিল।

অনন্ত আফসোস নিয়ে প্রকৃত ভালোবাসা খুজে মরিয়া আমার মা বাবাকে ভালোবেসে নিঃস্ব, রিক্ত হয়েছিলেন।
মায়ের ভাবলেশহীন উদাসী মুখের দিকে তাকিয়ে প্রায় ভাবতাম যে মানুষটি রিপুর তাড়নায় আমাদের প্রত্যাখ্যান করে অন্য কোথাও সুখ খুঁজে নিয়েছেন কখনো কি তাঁর অনুতাপ হয়? পাপ স্বীকার করতে না পারার দায় কি তাঁকে তাড়ায় ?

হাতে ধরা মোবাইল ফোন বেজে চলেছে অনেকক্ষন! আমি অপলক স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছি।
চোখের ঝাপ্সা পাপড়ির ফাঁক গলে স্ক্রিনের নাম পড়ার চেষ্টা করতে থাকি। মসজিদের ইমাম, মহল্লার মুরুব্বি, নিকট আত্মীয়
আরও অনেক---অনেক নাম ! এতো নামের ভীড়ে আমার ছয় ফুট শরীরটিকে অনাথ লাগছে খুব।
কী যেন নেই ঘরে কী যেন হারিয়ে ফেলেছি এই মাত্র আমি। আমার চারপাশ ঘিরে আছে দীগন্ত বিস্তৃত শূন্য মাঠ।
কেবল অস্ফুট কান্নায় উচ্চারিত হতে থাকে "মা" "মা"।


***** বিঃ দ্রঃ আমার মা আল্লাহর রহমতে সুস্থ আছেন ভালো আছেন। কেউ যেন মনে না করেন যে এটা আমার মাকে নিয়ে লেখা। কখনো কখনো অনেক রকমের ভাবনা মনে আসে। সে সব ভাবনা থেকেই এই লেখা *********

সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:৫৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×