somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুভি রিভিউ নয়। মুভি দেখার পর কিছু অনুভব

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই উইক এন্ডে দুটি মুভি দেখলাম। গুঞ্জন সাক্সেনা ও শকুন্তলা দেবী।

মুভি রিভিউ কিভাবে লিখতে হয় আমার জানা নেই। তাই শুধুমাত্র ভালোলাগা থেকেই এসম্পর্ক কিছু আলোচনা করতে ইচ্ছে করলো।

গুঞ্জন সাক্সেনা ছবিটা দেখতে দেখতে নিজের ফেলে আসা কিছু ইচ্ছার কথা মনে পড়ছিলো খুব। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করার পর আমার খুব ইচ্ছে ছিলো আকাশ পথে দেশ বিদেশ ঘুরে বেড়ানো । রাস্তার পাশে বড় বড় বিলবোর্ড জুড়ে বাংলাদেশ বিমানের বিজ্ঞাপনে হাসিখুশি বিমান বালাদের সেবা দেওয়ার ছবির দিকে তাকিয়ে এই আকর্ষণ জন্মেছিলো ।

বিমান বালা হওয়ার দূরনিবার ইচ্ছে নিয়ে ফর্ম যোগাড় করি ।কিন্তু বাসায় জানাজানি হওয়ার পর ভীষন আপত্তির মুখে আমার বিমান বালা হওয়ার স্বপ্ন ঐ ফর্ম জোগাড় করা পর্যন্ত । আমার দেখা জীবনের প্রথম স্বপ্ন ধুলিসাৎ হওয়াতে এখন আর আফসোস হয় না ।

ভীষণ রক্ষনশীল পরিবারে আমার বাপ ও মায়ের চৌদ্দ+চৌদ্দ আটাশ গুষ্ঠিতে এমন স্বপ্ন আর কেউ দেখেছে বলে মনে হয না। তবে পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখার সাহস কেনো হয়নি ? এটা মনে হয় আমার হাইট ফোবিয়ার কারনে। খুব উপর থেকে নীচের দিকে তাকাতে আমার খুব ভয় হয়।

একদিন মনের দুখের কথা কাছের বান্ধবী কে বলেছিলাম। উত্তরে সেই বান্ধবী সান্তনা দিয়েছিলো “তুই তো শাড়ী পরতে পারিস না । বিমান বালা হতে হলে অনেক সুন্দর করে টাইট ফিট শাড়ী পরা জানতে হয়।”

যাইহোক আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর কারোর হাত নেই। তিনি চাননা আমি বিমানে মানুষের সেবা করি। আমার মায়ের ভাষায় কাজের মেয়েদের মতন সবার ঝুটা থালা বাসন পরিস্কার করি। তবে মহান রবের ইচ্ছায় আজ আমেরিকায় আমার সথায়ী বসবাস। বিমান বালাদের সেবা নিয়ে ইউরোপ আমেরিকা এশিয়া ঘুরে বেড়াই । বিমান বালা পাশে এসে মিহি সুরে জানতে চায় “ ম্যাডাম উড ইউ প্লিজ লাইক জুস কফি ওর টি? “

নিউ ইয়রক থেকে ঢাকা বা ঢাকা থেকে নিউইয়র্ক আকাশ পথে দীর্ঘ ভ্রমনের বিমান বালাদের আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে যাই। দুবাই থেকে নিউইয়রক ১৪ ঘন্টার উড়ালে আমিরাতের বিমান জে এফ কে এয়ারপোরটে খুব ভোরে ল্যানড করে।প্লেন ল্যানডিংয়ের ঘন্টা দুয়েক আগে ঘুম ঘুম চোখে বিমান বালারা এতোগুলো মানুষকে ব্রেক ফাস্ট সার্ভ করে কি ভীষণ আন্তরিকতায় ! লম্বা ভ্রমনের ক্লান্তি নিয়েও তারা তাদের কাজে কোন রকম বিরক্তি প্রকাশ করেনা। হাসিমুখে দায়িতত পালন করে যায়।


এখন মুভি নিয়ে কিছু কথা । গুঞ্জন সাক্সেনার গল্পটা শুরু ভারতে জন্ম নেয়া এক মেয়ে ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে আকাশে ওড়ার। প্রাইভেটে পাইলট ট্রেনিং নেয়ার সামর্থ্য পরিবারের নেই, তাই এয়ারফোর্সে যোগ দেয়া। সেখানেও সে টেকে না। ফিজিক্যাল ডিজেবিলিটির কারনে রিজেক্টেড হয়। স্বপ্ন ভাঙ্গে। পিতা এগিয়ে আসে কন্যার স্বপ্ন পূরনের বাহন হিসেবে। এক অসাধারন পিতা-কন্যার সম্পর্কের সিনেমা এটি। “গুঞ্জন সাক্সেনা - the Kargil girl" দেখা উচিৎ পিতা কন্যার সম্পর্কের জন্য। কন্যা সন্তানের প্রতি নেগেটিভ দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর জন্য।

এমন পিতা যদি দেশের ঘরে ঘরে জন্ম হয়, তাহলে উপমহাদেশের মেয়েদের ভাগ্য বদলে যাবে একশত ভাগ।

সিনেমাটি প্রতিটা মেয়ের দেখা উচিৎ, কিভাবে নিজের স্বপ্নকে বাস্তব রুপ দিতে হয় এই প্রেরনার জন্য।পংকজ ত্রিপাঠি এবং জাহ্নবী কাপুরের অভিনয় ভালো লেগেছে।

এই ছবির একটি একটি চমৎকার সংলাপ মন ছুয়েছে। পংকজ ত্রিপাঠীর কণ্ঠে, "প্লেন ছেলে ওড়াক অথবা মেয়ে, দুইজনকেই "পাইলট" বলে। যখন প্লেনের কোন সমস্যা নাই তাকে কে ওড়াচ্ছে, তাহলে তোমার কী আপত্তি?" এই সংলাপটি ভীষণ সাম্যবাদী আর নারীবাদী মনে হয়েছে । আলাদা করে ধন্যবাদ জানাই এই সংলাপ রচয়িতা কে।

'শকুন্তলা দেবী' মুভিতে নাম চরিত্রে বোধ হয় বিদ্যা বালান ছাড়া অন্য কেউকে মানাতোই না। বাবা মা আর সন্তানের সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখে নিজের ফেলে আসা অনেক অতীত মনে হয়ে চোখ ভিজে পানি গড়িয়ে পরেছে। অনুভব করলাম অনেক কিছু। নিজে বাবা - মা না হলে এই যন্ত্রণা উপলব্ধি করা যায় না। জীবন সত্যি খুব বেশী জটিল হয় কখনো কখনো। এই ছবিটার কোনও অংশেই নেই একঘেয়েমি।

Rabiya Rahim
নিউ ইয়রক
ইউ এস এ
১৭/০৮/২০২০
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৫৩
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গু এনালিস্ট কাম ইন্টারন্যাশনাল সাংবাদিক জুলকার নায়েরের মাস্টারক্লাস অবজারবেশন !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২৬

বাংলাদেশের দক্ষিণপন্থীদের দম আছে বলতে হয়! নির্বাচন ঠেকানোর প্রকল্পের গতি কিছুটা পিছিয়ে পড়তেই নতুন টার্গেট শনাক্ত করতে দেরি করেনি তারা। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ ঘিরে নতুন কর্মসূচি সাজাতে শুরু করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক্ষমতাচ্যুত ফ্যাসিবাদ: দিল্লির ছায়া থেকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৫:৫৭

একটা সত্য আজ স্পষ্ট করে বলা দরকার—
শেখ হাসিনার আর কোনো ক্ষমতা নেই।
বাংলাদেশের মাটিতে সে রাজনৈতিকভাবে পরাজিত।

কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ হয়নি।

ক্ষমতা হারিয়ে শেখ হাসিনা এখন ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×