somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খড়-কুটোর গল্প।

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

০১.
কেএফসি জায়গাটা আমার চরম অপছন্দের। কারণ মোরগা-মুরগি কাঁচা, ভাজা বা সেদ্ধ... সব অবস্থাতেই আমার অপছন্দের খাবার। আর এখানকার ডেন্টিং-পেন্টিং করা খাইয়েরা আর তাদের ব্যাক্ষাতীত ভাবসাবের কোন মানেই আমি করতে পারি না। সম্ভবত প্রচলিত অর্থে আমার অস্থান ক্ষ্যাত ...বা এর কাছাকাছি কোথাও।
তারপরও মাঝে মাঝে এখানে আমাকে শুকনো মুখে সামনে কতগুলো আলুভাজা নিয়ে বসে থাকতে হয় আমার সম্ভাব্য একমাত্র নিকটাত্নীয় মামার কারণে। বেচারার বাসায় নানা কারণে আমার প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। তাই কখনো কখনো দেখা হবার দরকারে তার বাসার বাইরে কোথাও দেখা করতে হয়। যার বেশির ভাগই হয় এসব কোন রেস্টুরেন্টে। ...আমি বিরক্ত মুখে মামার বন্ধ চোখের দিকে তাকিয়ে আছি। গদা ধরার মত করে তার হাতে আংশিক খাওয়া মুরগির একটা ভাজা ঠ্যাং ধরা। সম্ভবত মূল বিষয় এটার পরে আসবে।

'তোর বাবা এসেছিল আমার বাসায়। তোর সাথে দেখা করতে চায়।'

অফিসে কিছু হাতের কাজ ফেলে এসেছি। আনমনা হয়ে সেগুলোর কথা ভাবছিলাম। তাই মামার কথাটা প্রথমে ধরতে পারিনি।
...'কি বললেন?'।
মামা হাতের হাড্ডিটা টিস্যুর উপর রেখে টেবিলের আরেক পাশ থেকে আমার পাশে এসে বসেন। হাতটা আস্তে করে আমার ঘাড়ের উপর রেখে আস্তে আস্তে কথাটা আবার বলেন।

শব্দগুলো খুব কঠিন না আর ভাষাটাও বাংলা... তার-পরও বুঝতে কিছুটা সময় নিই।
...বেশ কিছুক্ষণ আমরা দুজনেই চুপ করে থাকি। মামাই আবার বলে ওঠেন, 'আমি প্রথমে চিনতে পারিনি... বেশ বয়স হয়ে গেছে। চোখে চশমা, ভারি শরীর আর চুলেও পাক ধরেছে। উনিই প্রথমে তোর কথা তুললেন। মাসখানেকের জন্য এসেছেন। খুব করে তোর ঠিকানা আর ফোন নম্বর চাইলেন, কিন্তু আমি তোর সাথে কথা না বলে...'। মামা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকেন।

ওয়ালেট বের করে তার থেকে ভাজ করা একটা কাগজ বের করে টেবিলে রাখেন। 'এখানে ওনার ফোন নম্বর আর বাসার ঠিকানা আছে। তোর কাছে রাখ। ...আর আপসেট হবার কিছু নেই। তুই বড় হয়েছিস। সবই তো তোকে বলা হয়েছে। সবার জীবণে সবকিছু ঠিকমত হয় না। তোর মা'ও কষ্ট পেয়ে পেয়ে চলে গেল আর তোকেও তো ছোটবেলা থেকেই দেখছি...।' ...আবারও মামা কথা শেষ করতে পারেন না। আমি মানুষটার চোখে এবার লজ্জা, আর বেদনা দেখি। সম্ভবত আমার জন্য কষ্ট।
...হাহ... এসব কষ্ট মাখা, করুণা মাখা চোখের সাথে খুব ছোটবেলা থেকেই আমার জানাশোনা। অভক্তির সাথে চোখ সরিয়ে নিই।
'চল ওঠা যাক।' ...কথাটা বলার সাথে সাথেই আমি উঠে দাড়াই। 'হ্যাঁ ..চলো' ...এবার আমি বলে উঠি। আর আড় চোখে দেখি আমার ব্যাগের পকেটে মামা কাগজের টুকরোটা ভরে দিচ্ছেন। যাতে আমার হয়তোবা ...জন্মদাতার এইশহরের ঠিকানা আছে।

০২.
দিনের বাকী অংশটা আমি অনুভূতিশূণ্য হয়ে কাটাই। করতে হয় তাই করছি এমন ভাবে কাজগুলো করে যাই। সম্ভবত কষ্টের মেঘ বা ক্রোধের কোন ঝড় মনের কোথাও মাথাচাড়া দিতে চাইছে। অনুভূতিরা মাঝে মাঝে খুব অসংজ্ঞায়িত আর দূর্বোধ্য হয়ে যায়। বুঝতে পারছি কোন কাজেই মন দিতে পারছিনা।
খুব গোপন কোন কাজ করছি এমন অভিব্যাক্তির সাথে আমার রুমের দরজা লক করে ব্যাগ থেকে কাগজের টুকরোটা বের করি। সাদা কাগজে সবুজ কালির গোটা গোটা লেখাগুলো বড় বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। হটাৎ করেই আমার অনুভূতিগুলোর সংজ্ঞা আমি পেয়ে যাই।
প্রচন্ড রাগ ...আর ক্রোধে আমার মনে হতে থাকে আমার হাতে কাগজের টুকরো না... ওই লোকটার শরীর ধরে রাখা। খুব যত্ন করে টুকরো টুকরো করি কাগজটা। দরজা খুলে ওয়াশরুমের কমোডে ফ্লাশ করে হাতদুটো বার বার সাবান দিয়ে ঘষি। ....মনে হতে থাকে কাগজে আমি ওই লোকটার হাতের স্পর্শ পেয়েছি।

০৩.
ব্রোকেন ফ্যামিলির বিচ্ছিন্ন মানুষ আমি। কথাটা খুব ছোট থেকে আমার চারপাশের সবার আচরণে অনেকবার বুঝতে হয়েছে। কখনো সহানুভূতি, কখনো করুণা, কখনো স্রেফ মানুষের অচ্ছুৎ আচরণে। ...কষ্টটা সম্ভবত মা'কে অনেক বেশি বুঝতে হয়েছে।
হবেই বা না কেন... স্বাধীনচেতা হওয়াটা যে খুব অন্যায় একটা মেয়ের জন্য।
নিশ্চই তোমার কোন দোষ ছিল... নয়ত এমন সোনার টুকরা ভাল ছেলে কেন ছেড়ে যাবে?

ছোটবেলায় বুঝতাম না... কেন আত্নীয়দের সব আয়োজনে, পার্বনে আমরা দুটো প্রাণী হুট করে বাদ পড়ে যেতাম। কেন খালাদের বাড়ীতে যেতে চাইলে মা ভুলিয়ে রাখতে চাইতেন। ...রাগ হত তখন মায়ের উপর। ...এখন বুঝি.. আসলে আমাকে সবার সবরকম সহানুভূতি, করুণা, কৌতুহল থেকে আড়াল করতে চাইতেন। অবুঝ হলেও এটুকু বুঝতাম... ঠিক কোন বিষয় নিয়ে কখনো মায়ের কাছে কোন কৌতুহল দেখানো যাবে না।

...এমনকি মায়ের শেষ সময়েও ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের মৃত্যুর গন্ধমাখা বাতাসে যখন অস্ফুটস্বরে আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন তার ওপর আমার কোন ক্ষোভ আছে কিনা, কিছু জানতে চাই কিনা... কিছুই বলতে পারিনি, জানতেও চাইনি।
যে মানুষটা আমাকে আকড়ে ধরে সব কিছু থেকে নিজে ঢাল হয়ে আমাকে বাচিয়ে রেখে, তার বাকিটা জীবণ পার করে দিয়েছেন ...তার উপরে কি কোন ক্ষোভ রাখা যায়?

যখন মাটির সাথে মায়ের চিহ্নটুকু মিলিয়ে দিয়ে ফিরছিলাম, তখন আজকের মত খুব রাগ হয়েছিল বাবা নামের অচেনা মানুষটার জন্য।

০৪.
যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি, তখন মনে হত খুব বড় হয়ে গেছি। আর কোন ভয়, সংকোচের দরকার নেই। নিজের মত করে বাঁচতে পারব। ...খুব চমৎকার একটা সময় ছিল। ক্ষণিকের জন্য একজন ছিল, যাকে নিজের অংশ বলে মনে হত। যে আমাকে ভাবতে শিখিয়েছিল পুরানো দিনগুলো দুঃস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।
...ভালবাসা ...খুব চমৎকার একটা ব্যাপার।

কিছু দুঃস্বপ্ন যেমন ফিরে ফিরে আসে... কিছু অতীতও তেমন কাঁটার মত বিধে থাকে। যখন আমরা ভাবছিলাম বাকিটা জীবণ একসাথে থাকার.. তখন তার পরিবারের মনে হল আমি ভাঙ্গা সংসারের খড়-কুটো। ইতিহাস এসব মানুষের জীবণে, ফিরে ফিরে আসে।
...বুঝতে পারছিলাম আস্তে আস্তে সব বদলে যাচ্ছে আবার।
অপেক্ষার সেই দিনটা অবশেষে এসেছিল একদিন। যেদিন সে শেষ বেলায় আমাকে জানিয়েছিল পরিবারের কাছে তার দ্বায়বদ্ধতার কথা। কণ্যাসুন্দর আলোয় সেই মায়াময় শান্ত মুখটির দিকে তাকিয়ে যখন ভাবছিলাম এটি তাহলে একটা সুখস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না আমার জীবণে...
খুব ইচ্ছে করছিল একবার বলি ...

"একবার ডাক দিয়ে দেখো আমি কতটা কাঙাল,
কতো হুলুস্থূল অনটন আজন্ম ভেতরে আমার।"

তখন ঠিক আজকের মত ক্রোধের ঝড় উঠেছিল ...পুরো পৃথিবী আর বাবা নামের আমার জীবণের জঘন্য অংশের উপর।

০৫.
পরের কয়েকটা দিন আমার খুব খারাপ কাটল। কারণ মনে মনে খুব অবাস্তব একটা ভাবনা ভেবে চলেছি সর্বক্ষণ। ক্রোধগুলো এখন প্রতিশোধের ইচ্ছেয় পরিণত হয়েছে। মাথার ভেতরে চিন্তার স্বপক্ষে যুক্তির ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
অফিসে জমে থাকা ছুটি থেকে এক সপ্তাহের ছুটি নিলাম। ...কারণ এই শহরে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারব না।
কিন্তু যখন বাসায় ফিরলাম... মায়ের ছবিটা দেখে... মায়ের, আর আমার অপমানগুলোর কটাক্ষ আবার নতুন করে যেন সব ক্রোধ ফিরিয়ে দিল।

০৬.
ধানমন্ডি আটনম্বর ব্রিজের আগে লেকের পাশের ফুটপাথের চায়ের দোকানে দাড়িয়ে আছি সন্ধা থেকে। আমার নজর রাস্তার ওপাশের বাড়িটার গেটের দিকে। এই বিল্ডিংয়েরই একটা এপার্টমেন্টে মানুষটা থাকে। সাথে তার স্ত্রী, আর মেয়ে। বিয়ে করেছে আমেরিকা থাকতেই। তার মেয়ের জন্মও ওখানে। স্ত্রী ডাক্তার, মেয়ে হাইস্কুলে পড়ে। প্রতিদিন সন্ধায় বা রাতে লেকে হাটতে বের হন। খুব সুখী একটা পরিবার।
গত কয়েকদিন আমার এসব খোঁজ বের করতেই গেছে। আজকে লোকটাকে সম্ভবত প্রথম দেখব। চিনব কিভাবে জানি না... তবে মনে হয় চিনতে পারব।

নীল রঙের হাওয়াই শার্টপড়া মানুষটাই যে শওকত রহমান... গেটের পাশের উজ্জল হ্যালোজেন বাতির আলোয় দেখে আমার আর কোন সন্দেহ থাকে না। ...মামার কথাই ঠিক। আমার সাথে এর অনেক মিল।
...একটা তাচ্ছিল্লের হাসি খেলে যায় আমার ঠোটে... হবেই বা না কেন... আমার জন্মদাতা যে..!

হাতের কাপটা চা-ওয়ালার ঠেলায় রেখে উঠে দাড়াই আমি। ...ব্যাগের ভেতর হাত রেখে সব্জি কাটার মাঝারি ছুরিটার ইস্পাতের শীতলতা মাখি আমার ঘেমে যাওয়া হাতের তালুতে। সম্ভবত আমার মুখের ভাবও বদলে যায়। কয়েকদিনের না কামানো খোচা-খোচা দাড়িগুলোর জন্য সম্ভবত মুখের ভাব বোঝা যাচ্ছে না।
চারপাশে অনেক মানুষ। ধানমন্ডি লেকের ব্যাস্ত সন্ধা। ...কিছু করা যাবে না। ...আমি চেয়ে চেয়ে লোকটার আস্তে আস্তে হেটে যাওয়া দেখি। ....ফুটপাতে পড়া তার ছায়ার দিকে চোখ চলে যায়...। ...আচ্ছা ছায়াটার মধ্যে কি বাবার ছায়া আছে? ...আমি ছায়ায় বিভ্রান্ত হই।

০৭.
গত কয়েক দিনে, আমি লোকটার অনেক অভ্যাসই ধরে ফেলেছি। ...অফিসে ছুটির দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে নিয়েছি। দিনগুলো এই এলাকাতেই কাটে। ...নিজের মধ্যে কেমন যেন শ্বাপদের ঘন্ধ পাই আজকাল। ...আমি অধীর হয়ে আমার শিকারের জন্য অপেক্ষা করছি।
মাঝে মাঝে একটু অনুশোচনা হয়...। কি করছি আমি!! ...কিন্তু যখন দেখি বাড়ীটা থেকে লোকটা তার স্ত্রী আর মেয়ের হাত ধরে হাটতে বের হয় মাঝে মাঝে... তখন আমার ক্রোধ, আর প্রতিশোধের ইচ্ছে ...আগের থেকেও বেড়ে যায় প্রতিবার। মনে পড়ে মায়ের অসহায় মুখের কথা, স্কুল শেষে বা পরীক্ষার আগে ছেলেগুলোর বাবার হাত ধরে আসার কথা। ...বা আমি যখন এসএসসিতে প্রত্যাশার বাইরে ফল করলাম তখন কোন কোন আত্নীয়ের কটাক্ষের কথা।
...প্রতিশোধ তো আমাকে নিতেই হবে।

০৮.
আজকের আহাওয়াটা যেন সকাল থেকেই গুমরে মরছে। আকাশটাও যেন আমার প্রতিক্ষার কষ্টে গুমোট আর আমার মনের অন্ধকার রঙে রঙিন। ....সন্ধার পর থেকেই টিপ-টিপ বৃষ্টিতে আর শুক্রবারের আমেজে চারপাশের লোকজন কমে গিয়েছে। আটটার দিকে যখন চাওয়ালাও তার দুচাকার দোকান ঠেলতে ঠেলতে চলে গেল ...তখন আমি লেকের অন্ধকার কোণা থেকে বের হয়ে রাস্তার আরেক পাশে দাড়ালাম। ছুরিটা খুব যত্ন করে আমার জিন্সের প্যান্টের পকেটে গোঁজা। বের হয়ে থাকা অংশটুকু ঢাকা শার্টের আড়ালে। স্ট্রিট ল্যাম্পের মরা আলো আর বৃষ্টির ফোটার প্রতিফলনে গাছে ঢাকা রাস্তাটা অন্যরকম লাগছে।
লোকটা সন্ধায় বাইরে গেছে। রিকশায় করে যাওয়া দেখেই বুঝেছি ফিরবেও রিকশায়... সো.. দিস ইজ দ্যা পারফেক্ট নাইট।

০৯.
রিকশাটা দূর থেকে দেখেই আমার স্নায়ু টানটান হয়ে যায়। ...গেটের সামনে থামার সাথে সাথেই আমি রাস্তা পেরুতে থাকি... মাঝামাঝি প‌ৌছুতেই রিকশার ভাড়া মেটানো হয়ে যায়। ...আমি গলা তুলে ডাক দেই... 'শওকত সাহেব...'।

গেট পেরুনোর আগে উনি ঘুরে দাড়ান... আমি প্রথম চশমার ওপাশের চোখদুটোর দিকে সরাসরি তাকাই। ...রিকশাওয়ালা টুং-টাং করে বেল বাজিয়ে কলাবাগানের দিকের রাস্তায় চলে যায়। আরেকটু এগিয়ে আমি থামি...।

কখনো মাছ ধরেছেন? মাছ ধরার আগে বরশিতে গাঁথা মাছটার যন্ত্রনা নিয়ে খেলতে খুব মজা পায় শিকারীরা। ...লোকটাকে নিয়ে খেলতে ইচ্ছে করে আমার।

'...আমি বাবন, মাসুদা নাসরিনের ছেলে।'.... ...

আমার কথায় লোকটার মুখ যে রক্তশূণ্য হয়ে যায়.. সেটা এই রাতের অন্ধকার মেশানো আলোতে আর টিপটিপ বৃষ্টির ছেড়া পর্দার মাঝে কিছুটা দূর থেকেও টের পাই। ... উনি কিছুটা এগিয়ে এসে থামেন।
চশমার কাচে জমে থাকা পানি মুছে আবার চশমাটা পড়ে আমাকে দেখতে চেষ্টা করেন... সম্ভবত কিছু বলতেও চাইছেন... ঠোট নড়ছে আলতো করে... কিন্তু আমি কোন শব্দ পাচ্ছি না। আমার জগৎ ...ঠিক এই মূহুর্তে ..শব্দ, গন্ধ, চিন্তাহীন।
...পকেটে রাখা ইস্পাতের স্পর্শ আমাকে মনে করিয়ে দেয় ...কয়েকপা সামনে যেতে হবে।

আমি পা বাড়িয়ে এগিয়ে যাই। ...যেখানে আমার সব প্রতিশোধের সমাপ্তি হবে। ...





১০.
মিরপুর রোড ধরে আমি হনহন করে হেটে চলেছি... কোন দিকে তাকাতে পারছিনা। ...নিচের পিচের ভেজা রং দেখতে দেখতে আমি ছুটছি। পা দুটো ভেঙ্গে আসতে চাইছে... কিন্তু আমাকে যতদূর সম্ভব যেতে হবে। ...যতটা দুরে পারা যায়।
ডাস্টবিনের পাশে জটলা করা কুকুরগুলো আমাকে দেখে ঘেউ ঘেউ করে ওঠে... চমকে ফিরে তাকাই আমি...।
ডাস্টবিন... ভেতরের ময়লা... আর পাশের লোমওঠা ঘেয়ো কুকুরগুলোর দিকে তাকিয়ে আমার নিজেকেই যেন দেখতে পাই। ....লজ্জা লাগে।
আচ্ছা... কুকুরগুলো কি বুঝতে পারছে এ শহরে ওদের থেকেও তুচ্ছ একজন মানুষ আছে?

আমার কষ্ট, লজ্জা আর দৈন্যতা সম্ভবত প্রকৃতির কৃপাযোগ্য হয়। ...তাই টিপটিপ বৃষ্টির বদলে মুষলধারে বৃষ্টির চাদরে চারপাশ ঢাকা পড়ে যায়। ...এমনকি কিছু দুরের কুকুরগুলোও ঝাপসা লাগে আমার কাছে।

নিজের কাছে হেরে যাওয়ার মত কষ্ট ...মনে হয় আর কিছুতেই নেই।
প্রতিশোধ নিতে পারিনি। ...লোকটা যখন আমার কাধে হাত রেখে ভাঙ্গা গলায় ঢেকে ওঠে 'বাবারে..' ...তখন আমার আধো বের করা ইস্পাতের টুকরোটাও মনে হয় লজ্জা পেয়ে থেমে যায়।
নাহ্... ... বাবা ছেলের সম্পর্কের উষ্নতার আবেগঘন বাবা ডাকে না...
আমি যা করতে চলেছি, তার পরে শওকত সাহেবের হাত ধরে দুটো বেণীদুলিয়ে হাটা ফুটফুটে মেয়েটার কৈশরও যে বাবা শূণ্য হবে সে কথাটা চকিতে আমার সামনে এসে যাওয়ায়। আর আমার নিজের কৈশরের কথা মনে পড়ে যাওয়ায়।
এতবড় শূণ্যতা তৈরির মত ইস্পাত আমি নিয়ে আসিনি যে...।


১১.
আমার মায়ের আর আমার অপমানের, না-পাওয়ার, হারানোর কষ্টগুলোর প্রতিশোধ আমি নিতে পারিনি ঠিকই। তবে সেটা নিয়ে আর কষ্ট নেই। ...শওকত সাহেবকে আমি এখনও ঘৃণা করি।

...যদি কখনও কোন অন্য জগতে মায়ের সাথে দেখা হয়, সম্ভবত আমাকে কোন ব্যাক্ষা দিতে হবে না। ...আর যাই হোক... নিজের মাকে তো আমি চিনি।
...আমি তো তারই মত।



কবিতার দুটো লাইন কবি হেলাল হাফিজের, "তুমি ডাক দিলে" থেকে প্রথম দুই লাইন।

কাউকে লেখা উৎসর্গ করার মত তালেবর এখনো হইনি। আর... যা টাইপ করি... সেটা প্রচলিত অর্থে লেখা না... আবজাব, আবর্জনা মাত্র। ...
তারপরও ...একজন মানুষ আছে... যে আমার ব্লগ পোস্টগুলোতে ...ক্ষমার অযোগ্য পরিমাণ বানান ভুল বের করে ...গালাগালির স্নেহ মাখা ইমেইল করেন। আমি এবং আমার মত নির্বোধেরা নাকি বাংলা ভাষার ইয়ে করে দিচ্ছি। :) ...
দুঃখ্য, কষ্ট যদি আগুন হয় ...আর মানুষের হৃদয়টা যদি হয় সোনার আকরিক... তাহলে কিছু মানুষের দুঃখ্য, কষ্টের আগুনে পোড়ানো একটা খাঁটি সোনার হৃদয় আছে। সেইরকম একজনের কথা এই আবজাবের শেষে মনে করলাম। জীবণে কোন সমস্যায় পড়লে, তার সমস্যাগুলোর কথা মনে করি। ...নিজের সমস্যা পানিভাত মনে হয় তখন।

---তারেক ভাই, যার একটা খাঁটি সোনার হৃদয় আছে , ২৪ ক্যারেট :D

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ রাত ১০:০৭
২৯টি মন্তব্য ৩০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×