somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অল্পকথায় আমাদের ওষুধশিল্পঃ জানতে হবে, ভাবতে হবে আর জানাতে হবে

৩০ শে অক্টোবর, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ওষুধ শিল্পঃ

পঞ্চাশের দশকে শুরু হওয়া এই শিল্প এখন বাংলাদেশের অন্যতম রপ্তানিমুখী শিল্প। বিশ্বের ৯০টি দেশে প্রায় ১০০০ রকমের ওষুধ রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। চাহিদার ৯৫ ভাগ ওষুধই এখন উৎপাদন হচ্ছে দেশে। শুধু ক্যান্সারের মত রোগের কিছু ওষুধ আমদানি করা হয় । দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন ওষুধ রপ্তানি হচ্ছে বিশ্ব বাজারে। এ শিল্প থেকে বছরে আয় হচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি মার্কিন ডলার (সত্যিকার অর্থে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার ) । যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ছিল ৪ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৪ কোটি ৪০ লাখ ডলার ।


ওষুধ কোম্পানির বর্তমান সংখ্যাঃ

ওষুধ প্রশাসন সূত্র মতে, সারা দেশে-

অ্যালোপ্যাথি ওষুধ কোম্পানি রয়েছে ২৪৬টি,
ইউনানি ২৬১টি,
আয়ুর্বেদিক ১৬১টি ও
হোমিওপ্যাথি ওষুধ কোম্পানি ৭৭টি


ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তরের হালচালঃ

ওষুধ তৈরি, ওষুধের মান নিয়ন্ত্রন, ওষুধ আমদানি, ওষুধের কাঁচামাল আমদানির অনুমতি দেয় ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর। দুঃখজনক হলেও সত্য, প্রয়োজনীয় লোকবল , যানবাহন ও ওষুধের গুন ও মান নিয়ন্ত্রনের পরীক্ষাগারের অভাবে ঠিকমত কাজ করতে পারছেনা ওষুধ প্রশাসন পরিদপ্তর।

ওষুধ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ওষুধ প্রশাসনে ৭৪৫ জন লোকবলের প্রয়োজন; কিন্তু আছে মাত্র ১২২ জনের মত । প্রশাসন সূত্র বলছে, দেশের ৬৪টি জেলায় একজন করে ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক (ড্রাগ সুপার) প্রয়োজন। কিন্তু ওষুধ তত্ত্বাবধায়ক আছেন মাত্র ২৯ জন। এর মধ্যে শুধু ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন ১৪ জন। বাকি ১৫ জন দিয়ে ৬৩টি জেলার ও গ্রামাঞ্চলের কার্যক্রম চলছে।

ফলশ্রুতিতে,

→ ওষুধ প্রশাসনের অবকাঠামোগত সমস্যা ও জনবলস্বল্পতার কারণে বাজারে নকল, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ ছেয়ে যাচ্ছে।

→ এ ছাড়া চোরাই পথে অনেক বিদেশি ওষুধ আসে, যা বিক্রি ও ব্যবহারের অনুমতি বাংলাদেশে নেই। (বাংলাদেশে ব্যবহারের বা বিক্রির অনুমতি নেই—এমন ওষুধের নাম বড় বড় হাসপাতালের চিকিত্সকদের ব্যবস্থাপত্রেও দেখা যায়। এসব অবৈধ ওষুধ রাজধানীর বড় বড় ওষুধের দোকানে কিনতেও পাওয়া যায়। কিন্তু নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করার মতো জনবল ওষুধ প্রশাসনের নেই।)

→ ভারতীয় চ্যানেলের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কিছু ওষুধের বিপনন হচ্ছে । (যেমন, অনেকে কোমরে ব্যাথা কিংবা মাজায় ব্যাথার ওষুধ হিসেবে শুধু "মুভ" কেই চেনে ।)


আমাদের দেশে ওষুধের বাণিজ্যিক প্রচারণাঃ

আমাদের দেশে ১৯৮২ ও ১৯৯৭ সালের (সংশোধিত) ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশে ওষুধের বাণিজ্যিক প্রচারণা নিষিদ্ধ, তবে ওষুধ কম্পানিগুলো নিজ নিজ ওষুধ সম্পর্কে চিকিৎসকদের মধ্যে প্রচারণা চালাতে পারবে।

তবে বাস্তব চিত্র হল,

কোম্পানিগুলো বিভিন্ন স্মারক, প্রকাশনাসহ বিভিন্ন কৌশলে প্রতিনিয়ত ওষুধের প্রচারণা চালাচ্ছে। টেলিভিশনেও বিভিন্ন অজুহাতে ওষুধ কোম্পানির বিজ্ঞাপন চলছে। এ ছাড়া দেশের বাইরের অনেক ওষুধের প্রচারণা চলছে টেলিভিশনের মাধ্যমে। বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে চিকিৎসকদের আর্থিক সুবিধাসহ নানা উপঢৌকন দেওয়ার জোরালো অভিযোগ তো আছেই।


এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা যা বলেনঃ

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধ নিয়ে এমন লুকোচুরি না করে বরং বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের মতো এ দেশেও ওষুধের জেনেরিক নাম চালু করে কিছু জরুরি ওষুধ বাছাই করে প্রচারণার আওতায় আনা উচিত। এটি করা হলে ওষুধ কেনা ও সেবনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের বিভ্রান্তি ও হয়রানি দুটিই কমে আসবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের ডিন অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বলেন, 'জেনেরিক নাম প্রচলনের পাশাপাশি আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানিয়েছি দেশে বিদ্যমান ওষুধগুলোর মধ্য থেকে একটি ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) ওষুধের তালিকা প্রণয়ন করার জন্য, যাতে মানুষ তার প্রয়োজনমতো সাধারণ জ্ঞান থেকে চিকিৎসকের পরামর্শপত্র ছাড়াই ফার্মেসিতে গিয়ে ওই তালিকার যেকোনো ওষুধ কিনতে পারে। এ ক্ষেত্রে ওই ওটিসিভুক্ত ওষুধগুলোর ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা চালানো যেতে পারে। তবে ওই তালিকার বাইরের কোনো ওষুধ নিয়ে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক প্রচারণা এখনকার মতোই নিষিদ্ধ রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসনকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।'


জেনেরিক নাম ও ওটিসি চালুর বিষয়টি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও বিষয়টি সমর্থন করেন। তার মতে, 'এখন যেভাবে ফুড সাপ্লিমেন্টের নামে কিংবা বিভিন্ন অজুহাতে আইন লঙ্ঘন করে ফাঁকফোকর দিয়ে প্রচার চলছে, সেটাও বন্ধ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে সুষ্ঠু একটি নীতিমালা করা যেতে পারে।'


পরিশেষে, শুধু এই কথাই বলব, ওষুধ কোন গৃহস্থালি কিংবা মনোহরি পন্য না । সুতরাং এ বিষয়ে ন্যুনতম ছাড় দেয়া কখনই উচিত হবে না ।


সুত্রঃ

http://www.ekattor.tv/DetailsNews.php?Id=831
Click This Link
http://www.dailykalerkantho.com
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×