somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৌলতননেছা খাতুন -বাগ্মী, লেখক, সমাজকর্মী ও গান্ধীজীর অনুসারী একজন রাজনৈতিক কর্মী

১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কিছু কিছু মানুষ আছে যারা কোন প্রকার পারিবারিক ঐতিহ্য ছাড়াই সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে সুপরিচিত হয়ে উঠেন। দৌলতুননেছা খাতুন তেমনি একজন প্রতিভাবান মানুষ। তিনি একাধারে ছিলেন সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ, সমাজ সংগঠক ও নারী আন্দোলন কর্মী। এসব সবকিছুকে ছাপিয়ে তিনি গান্ধীজীর অনুসারী হিসেবে বেশি পরিচিত ছিলেন।

জন্ম ও শিক্ষা জীবন ঃ দৌলতুননেছা খাতুন এর জন্ম ১৯১৮ খ্রীষ্টাব্দে তার পিতার কর্মস্থল বগুড়া জেলার সোনাতলা গ্রামে। তার পিতা ইয়াছীন আলী ছিলেন রেলের কর্মকর্তা। তিনি একজন সাহিত্যিকও ছিলেন। মাত্র আট বছর বয়সে দৌলতুননেছা খাতুন এর বিয়ে হয় গাইবান্ধার ডাঃ হাফিজুর রহমানের সাথে। সে সময় সামাজিক পরিবেশ মেয়েদের লেখাপড়ার অনুকূলে ছিল না। তা সত্ত্বেও দৌলতুননেছা খাতুন এর বাবা তাকে বার বছর বয়স পর্যন্ত ঢাকার ইডেন উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করার অনুমতি দেন। শিক্ষার প্রতি দৌলতুননেছা খাতুন এর গভীর অনুরাগ দেখে তার স্বামীও তাকে ঘরে বসে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন। স্বামীর উৎসাহ এবং সার্বিক সহযোগীতার ফলে তিনি ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক (এসএসসি), ১৯৪০ সালে আইএ(এইচএসসি), ১৯৪২ সালে বি.এ. এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. এ. পাশ করেন।

রাজনৈতিক কর্মকান্ড ঃ পড়াশুনার পাশাপাশি তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সেটা ১৯৩০ সালের কথা। তখন সর্বত্র কৃষক প্রজার মুক্তির আন্দোলন ও বামপন্থী কমিউনিষ্ট আন্দোলনের জোয়ার বইছে। তরুণী গৃহবধূ দৌলতুননেছা খাতুন এই জোয়ারে নিজকে ভাসিয়ে দিলেন। তিনি পারিবারিক গন্ডি মাড়িয়ে সক্রিয়ভাবে সেই আন্দোলনে যোগ দেন। সে সময় তার রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া ছিল এক আকস্মিক ঘটনা। জানা যায় গাইবান্ধায় তার বাসার সামনে দিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী মিছিল যাচ্ছিল সেদিন। দৌলতুননেছা খাতুন হঠাৎ বাসা থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এসে মিছিলে যোগ দেন এবং মিছিলশেষে এক জনসভায় বক্তৃতাও করেন। সে সময় এভাবে একজন মহিলার মিছিলে যোগদান ও জনসভায় বক্তৃতা করার ঘটনা ছিল কল্পনাতীত।

১৯৩০ সালে ব্রিটিশ সরকার ‘লবণ আইন’ পাশ করলে গান্ধীজী এই আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেন। দৌলতুননেছা খাতুন সক্রিয়ভাবে এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৩২ সালে তিনি গাইবান্ধায় ‘গাইবান্ধা মহিলা সমিতি’ গঠন করেন। এই সমিতির সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সভা, সমিতি, মিছিল, পিকেটিং এ অংশগ্রহণ করতেন এবং বিট্রিশ বিরোধী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজকে উৎসাহিত করতেন। ব্রিটিশ সরকারের জারি করা ১৪৪ ধারার বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদে সোচ্চার হলে সরকার বিরোধী আন্দোলনের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়িঘর ক্রোক করা হয় এবং তার স্বামীকে গাইবান্ধা ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করা হয়। জেল থেকে মুক্তির পর তিনি পুণরায় লেখাপড়া চালিয়ে যান। ১৯৪৩ সালে ইতিহাসখ্যাত পঞ্চাশের দুর্ভিক্ষের সময় তিনি একটি এতিমখানা খুলে মানব সেবার উজ্জল দৃষ্টান্ত তৈরি করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি স্থায়ীভাবে ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।

জানা যায় দৌলতুননেছা খাতুন গুপ্ত বিপ্লবী রাজনৈতিক দলেরও কর্মী ছিলেন। তিনি গোপনে পিস্তল চালনার প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন। একজন সাহসী রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন। জানা যায় একবার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে এলে তিনি নদীতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মরক্ষা করেছিলেন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে তিনি প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সে সময় তার নাম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছিল। সাধারণ মানুষের নিকট তার স্থান ছিল শ্রদ্ধার ও সম্মানের। সবাই তাকে মা বলে ডাকত। এমনকি পুলিশও তাকে মা বলে ডাকত। একবার গাইবান্ধায় তাকে বন্দী করা হলে গাইবান্ধা থেকে তুলসীঘাট পর্যন্ত চার মাইল রাস্তায় জনতা বেরিকেড সৃষ্টি করেছিল।

দৌলতুননেছা খাতুন এর রাজনৈতিক জীবন ছিল বেশ উজ্জ্বল। তিনি ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর ১৯৫৫ তিনি নূরজাহান মোরশেদ ও বেগম রাজিয়া খাতুন সহ প্রাদেশিক সরকারের পার্লামেন্টারী সেক্রেটারী নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৫৬ সালে চীন সরকারের আমন্ত্রণে বিশ্ব নারী কল্যাণ সংস্থার চল্লিশ জাতি সম্মেলনে যোগদানের জন্য তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের প্রতিনিধি দলের একজন হিসেবে চীন সফর করেন। ১৯৭৯ সালে তিনি কুড়িগ্রাম-গাইবান্ধা এলাকার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৪ সালে তার স্বামীর মৃত্যু হলে তিনি প্রত্যক্ষ রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান এবং নারীর অধিকার আদায়ে পূর্ণ উদ্যমে কাজ শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি ১৯৭৯ সালের ২৬ মে তারিখে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে যৌতুক বিরোধী সিদ্ধান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তখন বিলটির নাম ছিল “বাংলাদেশ যৌতুক বিরোধী আইন ১৯৭৯”। এটাই পরবর্তিতে পরিমার্জিত হয়ে “যৌতুক বিরোধী আইন ১৯৮০” নামে পাশ হয়।

সাংগ?নিক কর্মকান্ড ঃ পাশাপাশি তিনি সাহিত্যকর্মও চালিয়ে যেতেন অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে। তিনি যেমন ছিলেন একজন সুসাহিত্যিক তেমনি নারীদের উন্নয়নসহ নানাবিধ কর্মকান্ডে লিপ্ত ছিলেন। সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে তিনি ছিলেন নিবেদিত প্রাণ এক ব্যক্তিত্ব। তিনি মহিলা সমিতি ও শিশু রক্ষা সমিতিসহ আরও অনেক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্থানের শিশু কল্যাণ পরিষদের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি। তাছাড়া তিনি ছিলেন ১৯৪৭ সালের মিরাজী সংসদের সেক্রেটারী ও ফিল্ম সেন্সর বোর্ডের সদস্য। তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত “উন্নত পরিবার গঠন মহিলা সংস্থা” এর সভাপতি ছিলেন।

সাহিত্য সাধনা ঃ দৌলতুননেছা খাতুন এর সাহিত্য প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় তার বার বৎসর বয়স থেকে। তখন থেকে তার লেখা বঙ্গশ্রী, দেশ, নবশক্তি, বিচিত্রা প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে। তিনি ছিলেন বহুমুখী সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী। তার রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে নাটক, একাংকীকা, প্রবন্ধ, গল্প ও উপন্যাস। তার প্রথম উপন্যাস ‘পথের পরশ’ প্রকাশিত হয় ১৯৫৭ সালে, দ্বিতীয় উপন্যাস ‘বধূর লাগিয়া’ প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। এ দুটি উপন্যাসই পাঠক প্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি আরও তিনটি উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এগুলো হলো ‘কমরপুরের ছোট বউ’, ‘বিবস্ত্র ধরণী’ ও ‘নাসিমা ক্লিনিক’। তাছাড়া পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত তার পঞ্চাশটিরও বেশি ছোটগল্পের খোঁজ পাওয়া গেছে। তার রচিত নাটকের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ‘ঝর্ণা’ ও ‘চন্দন বিষ’। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত লেখালেখি করে গেছেন। তার মৃত্যুর পর চিত্রনাট্য, টিভি নাটকসহ আরও কিছু ভিন্নধর্মী লেখার পান্ডুলিপি পাওয়া গেছে।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি ঃ দৌলতুননেছা খাতুন তার সাহিত্য সাধনার স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন সময় পুরস্কৃত হয়েছেন। তিনি ১৯৭৭ সালে ‘নুরুন্নেসা খাতুন বিদ্যাবিনোদিনী স্বর্ণ পদক’, ১৯৮৫ সালে লেখিকা সংঘের ‘আব্দুর রাজ্জাক স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার’ এবং ১৯৮৮ সালে ‘দৈনিক দাবানল’ পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া গাইবান্ধা সদর উপজেলা কর্তৃক প্রদত্ত ‘একুশে পদক’ এবং আশরাফ হোসেন ‘স্মৃতি পদক’ও লাভ করেন।

মৃত্যু ঃ এই প্রতিভাময় মহিয়সী নারী নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে ১৯৯৭ সালে ৪ আগষ্ট তারিখে ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল পঁচাত্তর বৎসর। তার শেষ জীবনটা অতিবাহিত হয়েছিল নিতান্ত দুঃখ ও নানা অশান্তির মধ্য দিয়ে। তার বহু সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও সব বেহাত হয়ে গিয়েছিল। শেষ জীবনে তার একমাত্র সঙ্গী ছিল দীর্ঘ দিনের রোগাক্রান্ত ছেলে। শেষ সময়ে তিনি প্রায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। সব মিলিয়ে জীবনের শেষ দিনগুলো তিনি অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৩০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×