somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘড়ি।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খুব সাবধানে ঘড়িটা নামালেন;পুরাতন একটা দেয়াল ঘড়ি।বেশ কিছুদিন হলো ঘড়িটা ঠিক মতো চলছে না।ঘড়িটা মুছে তাতে নতুন ব্যাটারি সেট করে আবার দেয়ালে টাঙ্গিয়ে দিলেন।প্রথম যখন এই সংসারের এলেন তখন তার একমাত্র সম্বল ছিল একটা পিতলের বদনা।না ভুল হলো...পিতলের বদনার সাথে ছিল বোহেমিয়ান স্বামীর খামখেয়ালীপনা।এক এক করে জমি করেছেন,একটা ছোটো কারখানা করেছেন।মজার ব্যাপার হলো যখন কারখানাটা করলেন তখন এখানে চারজন ব্যবসায়ীর মধে উনি একমাত্র মহিলা।একা হাতে সংসার,ছেলেমেয়ে আর স্বামীর খামখেয়ালীপনা সামাল দিছেন অদ্ভুতভাবে।এক দৃষ্টিতে ঘড়টার দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছুক্ষন।


একে একে আপনজনের মৃত্যু দেখেছেন।এক কুরবানী ঈদে মারা গেলেন বড় দুলাভাই...শোক কাটিয়ে উঠবার আগেই পরের কুরবানী ঈদে মারা গেলেন তার স্বামী...এবং তারচে দুঃখজনক ব্যাপার হলো ঠিক পরের কুরবানী ঈদে মারা গেলেন তার স্নেহময়ী পিতা।সন্তান্দের মানুষ করেছেন তিলতিল করে।পড়ালেখা শিখিয়েছেন।একে একে সন্তানেরা উচ্চশিক্ষিত হয়ে সমাজের উচু স্থানে বসেছে কিন্তু তার জন্যে সেই ঘরিটাই সাথী হয়ে গেছে।


বড় ছেলেকে বিয়ে দিলেন...হঠাৎ ছেলের খেয়াল হলো মেয়ে তার উপযুক্ত না।কিন্তু অতিচালাক ছেলে চুপ করে থাকল...এবং এক সময় স্কলারশিপ নিয়ে জাপান চলে গেল কাউকে কিছু না বলে।মাথার উপরে আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।ছেলের শ্বশুর বাড়ির লোকজন বারবার এসে নানান কথা বলে।বেকার ছেলের সাথে কেন বিয়ে দিলাম,ছেলে কি বেঁচে আছে নাকি...একবার খোঁজ পেলে ছেলেকে কেটে টুকরা টুকরা করে নদিতে ভাসায় দিব ইত্যাদি ইত্যাদি। এভাবেই একদিন ছেলের খোঁজ পাওয়া গেল।ভাল আছে সে।কেউ যেন তাকে না জ্বালায়।মেয়েপক্ষ একদিন না পেরে নিজেরাই তালাক দিয়ে দিল।সাত বছর পর ছেলে ফিরে আসে...মা এর সাথে দেখা হবার আধা ঘন্টার মধ্যে বলে তার মা হলো মাছের মা...তার জিবনের সব ঘটনার জন্য তার মা দায়ী।ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে চেয়ে থাকেন ছেলের দিকে।বড় ছেলের সম্পত্তি লাগবে...খুব চাপ দেয়।তারপরও ছেলেকে বিয়ে দেন নিজের সব কিছু বেচে।এদিকে ছোটগুলো এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি...উনি বলেন তুই সব দেখাশোনা কর।ছেলে সব ক্ষমতা পেয়ে মা এর হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে বলে এইটাই এ মাসের খরচ...পারলে চলেন না পারলে না।অবাক হবার আর কত বাকি তা ভাবেন আবার।ছেলে পারলনা দেখে রাখতে...পরের বউ এর বুদ্ধিতে মা এর বিরুদ্ধে মামলা করে দিলো...তার ভাগ তাকে দিতে হবে...।মাঝেমাঝে ফোন করে গালাগালিও করে...উনি শুধু ঘরিটার দিকে তাকায় থাকেন।


একে একে সব সন্তান বড় হয়ে যায়।মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়।মাঝেমাঝে তারা আসে।যতটুকু পারে খোজ নেয়।আসলে এতটুকু খোঁজ ও কিন্তু কম না।তারপর সবাই আবার নিজ নিজ জায়গায় ফিরে যায়।কখনও ছেলেদের কল এর পর কল দেন একটু খোঁজ নেওয়ার জন্যে।কখনও সেটা রিসিভ হয় কখনও না...কখনও ফিরে আসে।কখনও শুধু টাকা,পোষাক বা কিছু পাঠিয়ে দিয়েই দায়ীত্ব পালন করা।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন ঘড়িটার দিকে..."রাত থেকে দিন...আধার থেকে ভোর...গ্রীষ্ম থেকে বরষা...একা থেকে কখনও আরও একা...কান্না থেকে হাসি...ব্যাথা থেকে তীব্র ব্যথা...রাত ১২ টা থেকে আবার ১২ টা।



***এই ঘটনাটা একটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা।বাস্তবতার প্রয়োজনে আসল ব্যাক্তিকে এখানে আড়াল করা হয়েছে।আমরা আমাদের বাবা মাকে আসলে কতটুকু সময় দেই?তা কতটুকু তাদের জন্যে আসল ভাললাগা বয়ে আনে?একটু ভেবে দেখি***
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৮:০৭
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×