খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের একটা কমন আচরণ হলো পাশ করে যাওয়ার আগে হয় মনে মনে অথবা প্রকাশ্যে শপথ করা একবার যদি বের হতে পারি তাহলে জিবনে আর ক্যাম্পাসে পা দেবনা ,অবশ্য তেলবাজদের কথা আলাদা।অন্যসব ছাত্রদের মতো আমারও প্রতিজ্ঞা ছিল আর যাবনা খুলনা বিশবিদ্যালয়।এ যেন প্রিয়তমার সাথে রাগ করা...একবার ডাক দাও চলে আসবো।সমাবর্তনের মাধ্যমে আমার মান অভিমানের শেকল ছিড়ে গেল।আমি কিভাবে আমার প্রিয়,খুদ্র আর অসম্ভব সুন্দর খুলনা বিশবিদ্যালয়ে চলে আসলাম আমার নিজেরও খেয়াল নেই।স্বপ্নের মতো যেন পৌছে যাওয়া...।কি জানি হয়তো বালিকা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কে ছেড়ে এসেছি আর কেনো এতদিন যাইনি এই অভিমান দেখাতেই এক ঝলক ঠান্ডা আবহাওয়া দিয়ে আমাকে বরণ করে নিলো।
মোবাইল বেজেই যাচ্ছে...কখনও মেহেদি...অথবা টিটু..."ভাই কোথায় আপনে...?"...চলে আসেন খাজা হলে...সবাই আছে।আর আমার খেয়াল কখন লিটন ভাইয়ের দোকানে যাব...তার চা খেতে হবে তবেই বুঝব আমি খুলনাতে...।যাওয়ার আগে বাসে বসে বসে ভাবছিলাম...লিটন ভাই কি আগের মতই আছে নাকি বয়সের ভারে আমার মত তার চুলে কাশবনের আভা...।ভাল লাগল লিটন ভাইকে দেখে...যেন আরও ইয়ং হয়ে গেছেন।তার পুচকে ভাগ্নে কৈশর পার হয়ে যৌবনের রাস্তায়...।এই বয়সটায় একটা চোরা চোরা ভাব থাকে চেহারায়...তার চেহারাতেও সেটা স্পষ্ট।লিটন ভাইয়ের চা খাওয়া আর দিল্লিকা লাড্ডু খাওয়া একই কথা...কেন খেতাম,কেন ঐ দোকানটায় ঘন্টার পর ঘন্টার আড্ডা দিতাম আজও বুঝিনাই...আর এখন বুঝতে চাইনা...শুধু ফিরে যেতে চাই।
অসম্ভব মিষ্টি হাসি তপনদার...।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জোয়ারে তপনদা তার দোকান নিয়ে একবার এখানে একবার ওখানে যাচ্ছেন তবুও মুখের হাসি আর আর বিখ্যাত দাদা ডাক ম্লান হয়নি।একবার কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই..."ভাল নেই দাদা...ব্যবসা করতি পারছিনে...দাদা"।হাসি পেল...কতৃপক্ষ ক্যাম্পাসে ধুমপান নিষিদ্ধ করার জন্যে তপনদার দোকানেও হামলা চালায়।তপনদা উদাস নয়নে পাশের ধান ক্ষেতে তাকিয়ে থাকেন।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই লিজেন্ড তপনদাও একদিন দাড়িওয়ালাদের জন্যে ক্যাম্পাস থেকে হারিয়ে যাবেন।চলে আসার আগের বিকেলে তপনদার বিষন্ন মুখটা দেখে খুব খারাপ লাগলো।
ক্যাম্পাসে থাকার সময় কেন মুজিব ভাইয়ের চা খেতাম আজকেও বুঝে উঠতে পারিনি।যত ধমক দিতাম মুজিব ভাই ততই আগের চায়ের থেকে বাজে করে চা বানিয়ে আনতো।এখন ভাবি হয়তো তাকে ধমক লাগানই আমার কাজ ছিলো।ক্যাম্পাসে যাবার পর অবাক হলাম মুজিব ভাইয়ের দোকান না দেখে।পরে শুনলাম তার উন্নতি হয়েছে...ভ্যান ছেড়ে মুজিব ভাই এখন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক চিলতে মাটিতে দোকান করেছেন।থার্টি ফাষ্ট নাইটে যখন চিপায় বসে আমার কাজে ব্যাস্ত ঠিক তখনি দেখি কেউ একজন আমার পা এর কাছে কিছু একটা খুজচ্ছে...একরাশ বিরক্তি নিয়ে মোবাইলের আলো ফেলতেই মুজিব ভাইয়ের সেই ভয়াবহ পাওয়ারের চশ্মার আড়ালে ঢাকা মুখ।অন্য সবার মতো মুজিব ভাইয়ের ব্যবসাও উন্ন্য়নের বাতাসে ভাসমান।
বিউটি মারা গেছে...আলেক চাচার অনেক ক্ষোভ।বিউটি এবার আগেরবারের চাইতেও সুন্দর বাচ্চা দিয়েছিল...কিন্তু কে জানি বাচ্চাগুলো ফেলে দেওয়াতে সে খুব কষ্ট পেয়ে মারা গেছে।বিউটি কিভবে মারা গেলো তা জিজ্ঞেস করতেই আলেক চাচা যেমন করে বর্ননা দিলেন তাতে মনে হবে বিউটি তার কতটা কছের একজন ছিল।আসলে বিউটি আমাদেরও খুব কাছের একজন ছিল।আলেক চাচার ব্যবসাও এখন আগের মতো নেই।"মুনি"...আলেক চাচার মেয়ে যে কিনা কো্ন কথা ছাড়াই আমাদের দিনের পর দিন চা বানায় দিতো সে এখন কিশরী মুনি নেই...পুরদস্তুর গৃহবধু...তার কোল আলো করে ইতিমধ্যে এসে গেছে ফুটফুটে ছেলে সন্তান।আসার আগে চাচার কাছে বিদায় নিতেই বলে উঠলেন...হয়তো আগামিতে এসে আর তাকে দেখা যাবেনা...আমি বললাম আপনারা আছেন বলেই আমরা আসতে চাই...আসার ইচ্ছটা মরে যায়না।
যেন পুরনো দিনে ফিরে গেছি এমন ভংগিতে খাজা হল ৩২৪ এ নক করলাম...এখন সেখানে বাস করে অন্য কেউ।দরজার পাশের বেডে সাব্বির মামার সেই হাসি মুখ আমাকে ডাকে না।কত রাত গল্প করে কাটিয়ে দিয়েছি।কত রাগ,অভিমান,হাসি,কান্না...কত ছোটাছুটি...৩২৪ এখনও সেই ৩২৪ই আছে শুধু সেখানে ব্যক্তির পরিবর্তন।আস্তে আস্তে ৪১৮ নক করি্...নাহ্ নোভেল অথবা সেতু দরজা খুলে দেয়না...সেতু বলে উঠে না "কই যাও মাম্মা...কেবলতো আইলা"...।সেই বারান্দা,জানালা...এমনকি কাপড় ঝোলানো তার...শুধু ওরা নেই।আবার কি কখনও আমরা পিকনিকে মেতে উঠবো?...কিংবা জমজমাট আড্ডায়?সেতুর ব্ল্যাক পিপারের টবটা আছে কিনা দেখার সাহস হয়নি...
বালিকা খুলনা বিশবিদ্যালয় এখন যৌবনের দ্বারে...উন্ন্যয়নের জোয়ার লেগেছে তার গায়ে...।বয়সন্ধির কালে যেমন বালক বালিকা ঘরের আড়ালে লুকিয়ে থাকে ঠিক তেমনি খুলনা বিশ্ববিদ্যলয়ও হারাতে বসেছে লজ্জার আড়ালে।এখন ছাত্র সংখ্যা আগের চাইতে দ্বিগুন হলেও তাদের প্রতিভা বিকাশের জায়গা গুলো ছোটা হয়ে আসছে।নেই আগের আগের দিনের মতো সব ডিসিপ্লিনের সম্মিলিত আড্ডা।এখন ওরা আড্ডার থেকে ঘরে বসে চোথায় ডুবে থাকে।আর যেন কেউ কাউকে না চিনলেই বাঁচে।ভয়ের কথা হলো মোল্লারা এখন তাবলিগের পতাকার আড়ালে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।পাবলিক রিলেশন অফিস জানালো এখন নাকি ক্যালেন্ডার এর ডিজাইন জমা পরে দুই একট... তাও দায়সারা গোছের।
ফিরে আসার বেলায় একদলা কান্না গলায় আটকে যায়...আবার কি আসা হবে আমার খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে?ঘুম ভেঙ্গে দেখবো কি আমি ৩২৪ অথবা ৪২৩ এর বেডে শুয়ে আছি?একটা চড়ুই পাখি একমনে ডেকে যাচ্ছে...যেন বলছে তুমি স্বপ্নে নেই...তুমি খাজা হলেই আছো...আছো খুলনা বিশ্ববিদ্যলয়েই।খালিদের একটা গান মনে পরে যায়...
"মনে পড়ে না আবার মনে পড়ে...
ভাল লাগেনা আবার ভাল লাগে...
ভুলে যেতে চাই...চাইনা আবার মাঝে মাঝে..."
এ ভাল লাগার যেন শেষ নেই।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




