জিবনের একটা বাকে এসে টু ওয়ান টার্ম টা ০৭ ব্যাচের সাথে কম্লিট করতে হয়ে ছিলো।আগেই টেনশনে ছিলাম কারণ আমাদের ০৩ ব্যাচ সে সময় থাকবে না...বন্ধু বান্ধবী ছাড়া কিভাবে ঐ সময়টা পার করব এই চিন্তায়।এই টেনশনের কিছুটা লাঘব হয়ে গেল ম্যাথমেটিকস্ রিটেক্ কোর্স করার সময়। আর টু ওয়ান এর সেই ৬ মাস...?আমার আশীর্বাদের পুরোটাই ওদের জন্যে।আমি নিঃশ্চিত আমার অভিজ্ঞতাই ছিলো সব চেয়ে মধুর যা আর কেউ অন্য ব্যাচের সাথে পায়নি।
৬ মাস...কষ্টের ৬ টা মাস... আমি কিভাবে পার করেছি জানিনা...তবে ওরা ছিলো এক ঝাক অসম্ভব ভাল মনের মানুষ।প্রথম যে দিন মাথা নিচু করে ক্লাসে গেলাম এবং সিটে বসলাম...ঐ সিটে কাউকে আর কখনও বসতে দেখিনি।কখনো দেখিনি অন্যরকম কোন আচরণ।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত এটা এখন দেখা যায় না।কেউ রিটেক নেওয়া মানে মহাপাপ করে ফেলা।তাকে যেমন স্যাররা অপমান করে তেমনি যে ব্যাচ্ টার সাথে সে রিটেক কোর্স করছে তারাতো বটেই।কিন্তু আমার বেলায় হয়েছিলো ঠিক উল্টো।প্রচন্ড অলস আর ত্যাড়া আমি ক্লাসে না গেলেও আমার সিটে কেউ বসতো না।মরার উপরে খারার ঘা হিসেবে ছিলো আমার বায়োটেকনলজি রিটেক কোর্স।একই সাথে মাঝে মাঝে বায়োটেকনলজি ক্লাসও করতে হতো সুতরাং ঐ সময় আমার মানসিক অবস্থা ছিলো ভয়াবহ।এবং সাথে ছিলো একজনের কাউকে সঠিক সময়ে মানসিকভাবে আঘাত করে শেষ করে দেওয়ার ক্ষমতা।মনে মনে আল্লাহ্ র কাছে বলতাম একটা দিক দিয়ে রেহাই দিয়ো...আল্লাহ্ আমার কথা শুনেছিলেন...দিনের একটা দীর্ঘ সময় যাদের সাথে কাটাতাম তারা ছিলো আপনের থেকেও বেশি।কখনও ওদের চেহারায় দেখিনি অন্যরকম কোন আভাস...যেন আমি ভিন গ্রহের কেউ।
আমি ব্যাক্তিগত ভাবে আমার অফিসিয়াল ফেয়ার ওয়েলে যাইনি...কারণ এটা আমার প্রতিজ্ঞা ছিলো...কিন্তু আমার ০৭ ব্যাচের ছোট্ট ভাই বোনের দেওয়া বিদায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়েছি।অসম্ভব ভাল লাগা ছিলো ঐ সময়টা...।ছোট ছোট উপহারে ছোট ছোট মনের কথা...কিন্তু যার অর্থের ব্যাপকতা অনেক।সব শেষে ছিলো বিদায়ী কথাবার্তা...আমি প্রাণ খুলে বলেছি যা বলতে চেয়েছি পুরোটা বিশ্ববিদ্যালয় জিবনে।আল্লহ্পাক অনেক কে শুধু দূর্ভাগা করে পৃথিবীতে পাঠান্না...তাকে কিছুটা সৌভগ্যের ছোয়াও দেন...যাকে সম্বল করে সে বেঁচে থাকে আজিবন।আমার ঐ ভাল লাগাটাই আমার কাছে বেশি কিছু।
ছোট্র মেহেদি এখন অনেক বড়... Rag-07 এর টি-শার্ট কমিটির মেম্বর।ফোন দিয়ে তার জিজ্ঞাসা ভাই কখন আসবেন?...।আমি খুলনা নামার আগে বললাম,"মেহেদি, আমি উঠবো কোথায়?...আমারতো থাকার জায়গা নেই...মেহেদি বিন্দুমাত্র সময় না নিয়ে বলে উঠে..."ক্যান আমার রুমে...আমার বেডেই থাকবেন...যতদিন খুশি...ভাই আছে না?..."।মনে মনে বলি...আমিতো তোর কাছেই উঠবো...শুধু একটু মজা করলাম।শওকত একা হাতে সামাল দিচ্ছে পুরা ছাত্র হল(বর্তমান খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ হল)।শান্ত বাধনের কাজ নিয়ে ব্যাস্ত।অসীমতো রীতিমতো কয়েকটা সংঘটনের চেয়ারম্যান...ডাক দিলে আগের থেকেও মিষ্টি করে হাসি দিয়ে বলবে..."সুফল ভাই ভাল আছেন?"।স্বরুপ এখন আগের থেকেও স্মার্ট...সে ব্যাস্ত ক্রেষ্ট নিয়ে।তারপড়ও ওরা আমার থাকা সব কটা দিন সময় দিয়েছে। আর রাব্বি দ্যা স্পোর্টসম্যান...আছে আগের মতোই...সে এখন আমাদের ডিসিপ্লিনের প্লেয়ার সিলেক্টর।হড়বড় করে বলে..."জানেন ভাই...অমুকরে সিলেক্ট করছি...সে প্র্যাকটিসেই আসেনা..."।বোহেমিয়ান সাগর আছে আগের মতই...আর রত্নটাও।অনেক মজা করেছি ২০৮ এ...জ্বালায়ছিও অনেক।
সমাবর্তনের দিন বিকাল বেলা দল বেধে এগিয়ে আসে...রিমা,অন্তরা,সোনিয়া আর পাগলী শিরিণ..."ভাইয়া আপনি কোথায় ছিলেন?...আপনাকে খুজেই পেলাম না আমরা...ইত্যাদি ইত্যাদি।এবারে খুব একটা দেখলাম না রুপালী কে...শুনেছি সে অনেক বড় হয়ে গেছে।তবে নিউ ইয়ারের পিকনিকে সে আমাকে হাল্কা ঘুষি দিয়ে অভ্যার্থনা জানায়ছে।মুক্তা কে দেখলামনা কোথাও।আর এক পলক মুনের সাথে দেখা হলেও কথা হলোনা।অবাক হলাম ছোঁয়ার ব্যাপারটায়।এমন ছিলোনা।একবারই মাত্র দেখেছি গাইন স্যারের বাসা থেকে আসার পথে...কোন কথা হয়নি।যেন বাড়ীর বড় ভাই...এমন করে রান্না করে খাওয়ালো ওরা।আবার খাওয়ার সময় আমার অনুভুতিও বোঝার চেষ্টা করে ওরা; ঠিক যেমনটা অনেক দিন বাদে বাসায় গেলে বোন বা মা করে।আড় চোখে দেখে নিই কিন্তু বুঝতে দেইনা না কিছুই।আমি আরও একবার নিজেকে সৌভাগ্যবান ভাবি।শিরিনের দাবি..."ভাইয়া আপনাকে নুডূলস্ রান্না করে খাওয়াবো..."।হড়বড় করে পাগলীটা বলে উঠে..."ছি! ছি! ছি!...ভাইয়া আপনি দাড়ী না কেটে কনভোকেশনে আসছেন?...আপনি চুল কাটান্না না কেন..."।আমি কোন রকম পালিয়ে বাঁচি।
খুলনা থেকে আসার পরে শিরিনের ফোন..."ভাইয়া আপনের লেখা পড়লাম...চোখে পানি এসে গেছে...আপনি চুল কাটায়ছেন?।না বলাতে সে আবার বলে উঠে আপনার আম্মা কিছু বলে না...আমি ওকে বোঝাতে পারিনা যার জন্যে ব্যাকুল হয়ে স্মার্ট থাকার চেষ্টা করতাম...সে এখন দুই টিফিন ক্যারিয়ারে ভাত তরকারী সাজিয়ে একটা দেয় তার স্বামীকে আর একটা নিয়ে সে অফিসে যায়।আর আমি?...থাক সে কথা।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




