"সুফল...ওঠ..."...আম্মা একবার ডাক দিয়ে ভেতরে চলে গেলো।আমি জানি আম্মা আর ডাক দেবে না।মিকি মাউসের বিড়ালের মতো ডান চোখ কোন রকম খুলে মোবাইলটা হাতে তুলে দেখি কয়টা বাজলো...১২ টা বেজে ২৮ মিনিট।আমার মোবাইলের ঘড়ি ২৮ মিনিট ফার্ষ্ট...তার মানে ১২ টা বাজে।উঠতেই হবে...উপায় নেই...আমার সকালের রুটি আর ভাজি এতক্ষনে ঠান্ডায় টোষ্ট আর আইস্ক্রিম হয়ে গেছে।কোন রকম মুখে দেই...কারণ অভিযোগ করা যাবেনা।আমার আলস্য দোষের একমাত্র রক্ষাকর্তা আমার বানানো চা...সুতরাং এটা আমি খুব মনযোগ সহকারে বানাই।আম্মার হাতে এক কাপ দিয়ে নিজেরটায় এক চুমুক দিতেই মোবাইল বেজে উঠে...আমি না দেখেই বলে দিতে পারি এটা লিটুর কল্...ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,"কিরে...কোনে?...ম্যাচ টা নিয়ে পৌরসভার ভিতরে আয়...আমি পুকুর পাড়ে"।আমি বলি,"...দাঁড়া আমি আসতেছি"(এই ডট মানে আমাদের মধ্যে আদানপ্রদান হওয়া লেখার অযোগ্য গালি)।
পুকুর পাড়ে চলে ঘন্টাখানেক আমাদের সুখ দুঃখের কথা।চলে একে অপর কে হাসি খুশি রাখার ব্যার্থ কিন্তু আপাত দৃষ্টিতে সফল চেষ্টা।প্রতিদিন একই আলাপ...ধুর মামা কবে যে চাকরি পাবো...চাকরি পেলেই বিয়ে করে ফেলবো।প্রিয় কুষ্টিয়ার ভাষায় চলে মনের মানুষের মুন্ডূপাত।কখনও আমি হতাশ তো লিটু স্বান্তনাদানকারী অথবা কখনো তার উলটা।থাকা হবে লিটুর সাদা আর আমার রেগুলার ব্রান্ড এর সিগারেট শেষ না পর্যন্ত।
এই ফেসবুকে কি পাই জানিনা...তবুও বসলেই নিজের অজান্তেই লগিং দিয়ে বসবো।কে কয়টা কমেন্টস করলো,মেসেজ দিলো কিনা এইতো।ইদানিং একটু লেখি।তবে একটা ফেসবুক আইডি আবার ভাল কাজও করে এই যেমন আমার এক আগের পছন্দ(এখনো বটে) আর বর্তমানে ছোট বোন আমাকে দেখলেই বলবে ভাইয়া একটু সিরিয়াস হন।আমি এই কথাটা শুনলেই আরও অলস হয়ে যাই।আম্মার চিৎকারে সম্বিত ফিরে পাই...গোসল করা হয়নি।গোসল করতে গেলে আমি কখনও কুমার শানু,কখনও আইয়ুব বাচ্চু বা কখনও বন্ জোভি...(পানি কতটা ঠান্ডা এর উপরে ভিত্তি করে আমার গান আর গায়ক পরিবর্তন হয়।)
এই বিকেলটা যে কেনো আসে বুঝিনা...যেমন ঘুম থেকে উঠলেও বিরক্ত লাগে তেমনি না ঘুমালেও।আমার ছোট বেলার অভ্যাস এই সময় আমি মাঝে মাঝে আমার পোষা পায়রার কর্মকান্ড দেখি।ঘর বাধা থেকে বাচ্চা খাওয়ানো,কিংবা নিজেকে পরিচর্যা করা...সবই এরা এই সময়টায় করে।উদ্ভিদ বিজ্ঞানের আতাউর স্যার একদিন প্রাইভেটের সময় বলেছিলেন পৃথিবীর সব প্রাণী সাজতে চায়...তা সে যেমন দেখতেই হোক।মোবাইল এখনি বেজে উঠবে জানতাম...গত দুই দিন তারই দোহাই দিয়ে তাকে দূরে সরিয়ে রাখছিলাম...আজকে আর পারা যাবেনা।পরপর দুইবার কল্ না ধরলে পাঁচ-ছয়টা দাঁড়ি কমা ছাড়া মেসেজ দিবে...যার শুরু আর শেষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।একেক টা হর্ষ বিষাদ সুচক চিন্হ মানে একেকটা ক্যারেক্টার খরচ...তার থেকে কিছু লেখা ভাল...তার যুক্তি।আমি জানি আমার জিবনে এই অসম্ভব ভাল মেয়েটাও পাবনা।আমি শুধু শুনে যাই তার কথা...আর মনে মনে ক্ষমা চেয়ে নিই।ঘুম থেকে উঠে তাকে সন্ধাটা দিতে হবে আমার।কখনও বকা দিলে একটা মেসেজ দিবে..."বেশি দেমাগ বাড়ছে তাইনা?...সামনে থাকলে ছিড়ে ফেলতাম"।কখনো কখনো চোখ বন্ধ করে কয়েক বছর আগে কারও জন্যে অপেক্ষার সন্ধ্যাটা মনে করে নিই...বুঝে নিতে চেষ্টা করি আমার দোষ টা কোথায় ছিলো?...
আমি চা বানাতে বানাতে আম্মা তার আসল কাজটা সেরে ফেলবে...টিভির রিমোট টা এমন জায়গায় লুকাবে যে আমার সাধ্য নেই খুঁজে বের করা।রিমোটের পাচ নম্বর বাটন টা আম্মার জন্যে বরাদ্দ।কখনো সাত পাকে বাধা,কখনো অগ্নি পরিক্ষা অথবা কখনো এরাও শত্রু ...ইত্যাদি ইত্যাদি।আমি ফিরে যাই নিজের ঘরে...কখনো নিজেকে হতাশা থেকে দূরে রাখতে ছেড়ে দেই..."গিভ মি ছাম সান সাইন...গিভ মি ছাম রেইন...গিভ মি এনাদার চান্স ই ওয়ানা গ্রো আপ ওয়ান্স এগেইন"।মজার ব্যাপার হলো দিন দিন আমি আমিই থেকে যাই...আমার শুভ পরিবর্তন অশুভের দিকে যাচ্ছে।
ওরে বাপরে কখন রাত দুইটা বেজে গেলো খেয়াল ই করিনাই।শুতে শুতে শুনি রাত প্রহরী চাচা চিৎকার দিয়ে উঠেন,"ও.........ই.........ওই"।আমি মনে মনে থ্রী ইডিয়টস্ এর ডায়লগ বলি,"আল্ ইজ ওয়েল...আল্ ইজ ওয়েল"।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




