somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৈনিক প্রথম আলো তে পুরস্কার বিজয়ী আমার লেখা একটি গল্প

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গত বছর ঈদুল ফিতরের আগে ঈদ নিয়ে আনন্দের অভিজ্ঞতা বা বিশেষ স্মৃতি নিয়ে প্রথম আলো আয়োজন করে ‘আমার ঈদ’ নামের প্রতিযোগিতা। সেরা লেখকের জন্য ছিল ব্যাংকক, কলকাতা ও কক্সবাজার আসা-যাওয়ার এয়ার টিকিট। আমি পেয়েছিলাম ৩য় পুরস্কার কক্সবাজার আসা-যাওয়ার এয়ার টিকিট।[ আমার ইচ্ছে করলো গল্পটি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে। তাই এই প্রয়াস।


আমার কষ্টের ঈদ, আমার আনন্দের ঈদ

আমি জন্মেছি মফস্বলের খুবই দরিদ্র এক পরিবারে। দুটো খেয়ে পরে কোনোরকমে দিন চলে যেতো আমাদের। তো, সেবার আমি যখন ক্লাস ফোরে, তখন আমাদের সংসারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। নুন আনতে পান্তা ফুরায়, এমন বলা চলে। রোজা ১৫টা পার হলে পাড়ার বন্ধুদের সবার ঈদের জামা কাপড় কেনাকাটা শুরু হয়ে যেত। খেলার মাঠে এসে সবাই সবার নতুন জামার ধরন আর দাম নিয়ে আলাপ আলোচনা করত। বিকেলে মাঠে খেলতে এসে এক বন্ধুর মুখে চার পকেটওয়ালা জামার কথা শুনলাম। আমি তো অবাক। ধুর! তাও হয় নাকি! আরও কয়েকজনের মুখে ওই জামার কথা শুনলাম। এবার আর বিশ্বাস না করে উপায় নেই।

আমার মনে আছে আমি কখনো কোনো কিছুর জন্য মা-বাবার কাছে জেদ করিনি। কী করে কী হলো জানি না, ওই চার পকেটওয়ালা জামাটা পেতে আমার খুব ইচ্ছে করল। সোজা মার কাছে গিয়ে জানান দিলাম, আব্বা যেন আমার জন্য ওই জামাটা কিনে আনেন। সন্ধ্যায় মা আব্বাকে আমার জামার বিষয়ে বললেন, ‘দেখো তো কিছু করা যায় কিনা।’ আব্বা নিশ্চুপ। আমার ছোট্ট মনটা বুঝত না, নতুন জামা কেনার সামর্থ্য তাঁর নেই। আমি প্রতিদিন একটু পরপর আব্বার কাছে গিয়ে জামার জন্য ঘ্যানঘ্যান করতাম। আব্বা প্রথমদিকে স্বাভাবিক থাকলেও শেষমেশ খুব বিরক্ত হলেন। ২৫ রোজার দিনে আব্বা আমাকে আচ্ছামতো মার দিলেন। ভাবলেন, মার খেয়ে আমি বুঝি জামার জন্য তাঁকে আর বিরক্ত করব না! আমি সেদিন খুব কেঁদেছি। আমার সঙ্গে মা-ও কেঁদেছেন। আমি আরও কেমন যেন হয়ে গেলাম। আমার এই জামা চাই, চাই, চাই।

রোজ আব্বাকে আগের মতোই বিরক্ত করি। ২৯ রোজার দিনে আব্বা বাজারে নিয়ে গেলেন। আমি তো মহাখুশি। আজকে আমাকে পায় কে! আমার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। চার পকেটওয়ালা জামা পরে ঈদের সারা দিন ঘুরে বেড়াব। সারা বিকেল এই দোকান, সেই দোকান করে সন্ধ্যা হয়ে এল প্রায়। আব্বা বললেন, ‘আজকে বরং থাক, কাল ঠিক তোর জামা কিনে দেব।’ আমি ঘাড় কাত করে সম্মতি জানিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম। মাগরিবের নামাজের পর সারা পাড়া হই হই রব—চাঁদ উঠেছে, চাঁদ উঠেছে।

সেবার রোজা ২৯টা হয়েছিল। আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম। কাঁদলাম না, আব্বার কাছে জামার জন্য আবদার করলাম না। চাঁদ উঠেছে। কাল ঈদ। আজকে হাটও শেষ। আমি অসাড় হয়ে শুয়ে রইলাম। চোখের কোণ বেয়ে শুধু পানি গড়িয়ে পড়ছে। মা এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে গেলেন। রাতে কিছু খেলামও না। কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পরেছি, জানি না।

সকালে ঘুম ভাঙল। আমার চোখ তো ছানাবড়া। আমার মাথার কাছে একটা নতুন জামা। হাতে নিয়ে দেখলাম, ওরে বাবা! সেটাতে আবার চারটা পকেট। উঁহু, আজকে না ঈদ! এই চার পকেটের জামা গায়ে দিয়ে সারাদিন ঘুরব, কত আনন্দ করব। আমার খুশি দেখে মা ডুকরে কেঁদে উঠলেন। মাস কয়েক আগে বড় মামা মাকে একটা শাড়ি কিনে দিয়েছিলেন। মা সেটা যত্ন করে তুলে রেখেছিলেন। কোথাও বেড়াতে গেলে তখন শুধু পরতেন। মায়ের সেই শাড়িটা কেটে সারা রাত জেগে আমার জন্য জামাটা সেলাই করেছেন। আমার পছন্দমতো চারটা পকেট বসিয়েছেন।

মায়ের কান্না দেখে আমার চোখেও পানি চলে আসে। আমি দুই চোখ ভরা পানি নিয়ে গাল ভরে হাসছি তো হাসছি।

পত্রিকায় প্রকাশিত আমার গল্পের লিংক
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৭
৭১টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×