হঠাৎই আমার মেয়েটা কাঁধে হেলে পড়লো। আমি একটু চমকে উঠলাম। তাকিয়ে
দেখি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।
কিছুক্ষণ আগেই আমার সাথে কথা বলছিল। এর মধ্যেই আবার ঘুমিয়ে পড়লো।
.
যাই হোক, আমি কিছুই বললাম না। কেন
জানি ব্যপারটা এনজয় করছিলাম।
একটা মেয়ে আমার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে..!!
মুহুর্তটা সত্যিই এনজয়াবল। কিছুটা অস্বস্তি
লাগছিল। কারণ বাসের মধ্যে লাইটের মৃদু আলোয় ব্যপারটা লক্ষ করে দু-একজন
আমাদের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছিল।
যদিও বাসের বেশিরভাগ যাত্রীই ঘুমিয়ে ছিল।
আমি মেয়েটা কে সরিয়ে দিতেও পারছি না। ও যে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিল।
.
ও হ্যাঁ, মেয়েটির নাম অরিন। ইন্টার
ফার্সট ইয়ারে পড়ে।
চট্রগ্রামে থাকে এবং সেখানেই পড়ালেখা করে। এখন
ঢাকায় যাচ্ছে মামার বাসায়।
একা একাই যাচ্ছিল। সাহস আছে বলতে
হবে..!!
.
আর আমিও চট্রগ্রাম থেকে ঢাকায়
যাচ্ছিলাম। পাঁচ
দিনের ছুটিতে দেশের বাড়ি আসছিলাম।
এখন আবার
হোস্টেলে ফিরে যাচ্ছি। .
নাইট কোচ বাস। রাত প্রায় ৮ টা।
আমি আমার সিটে বসে আছি। হঠাৎ
দেখলাম লাল টকটকে জামা পরিহিত
একটি ফুটফুটে "বা লি কা"
এসে আমার পাশের সিটে বসলো।
আমি একটু ইতস্তত বোধ করলাম।
.
রাত ৮ টায় বাস ছাড়লো। দুজন পাশাপাশি সিটে বসে আছি, কিন্তু কারো মুখে কোনো কথা নেই। মনে হয়
দুজনের্ই খুব অস্বস্তি লাগছিল। হঠাৎই সব
নীরবতা ভেঙ্গে অরিন্ই
কথা বলা শুরু করলো। দুজন দুজনার সাথে পরিচিত
হলাম।
.
বাস ছুঁটে যাচ্ছিল দুরন্ত গতিতে।
বাইরে ঘুঁটঘুঁটে অন্ধকার থাকলেও গাড়ীর
লাইটের আলোয় রাস্তাটা আলোকিত ছিল।
কথা বলছিলাম দুজনে।
কথা বলতে বলতে এক সময় অরিন
ঘুমিয়ে পড়লো আর আমার কাঁধে হেলে পড়লো।
.
তখন রাত প্রায় ২ টা হবে। গাড়ী গুলো খুব
জোরেই ছুঁটে যাচ্ছিল।
অরিন তখনো আমার
কাঁধে মাথা রেখে ঘুমোচ্ছে।
.
হঠাৎই আমার কাছে কেমন যেন
অস্বস্তি লাগতে শুরু করলো। কেন জানি খুব
ঘামাতে লাগলাম।
বাসের প্রায় সব যাত্রীই তখন ঘুমিয়ে ছিল।
সোজা রাস্তায়্ও ড্রাইভার গাড়ীটা কে এদিক-ওদিক
করছিল। অরিন আমার কাঁধ থেকে পড়ে যাচ্ছিল, আমি
এক হাত দিয়ে ওকে শক্ত করে ধরলাম।
.
হঠাৎ করে বিকট জোরে একটা শব্দ হলো।
কিছু মানুষের
চিৎকারের শব্দ শুনলাম।
ঠিক তখন্ই আমি জ্ঞান
হারিয়েছিলাম।
.
যখন আমার জ্ঞান ফিরে
তখন নিজেকে আবিষ্কার করলাম
হসপিটালের বেডে। আমার শরীরের
ভিবিন্ন জায়গায় বেন্ডেজ করা। সারা
শরীরে খুব ব্যথা করছিল। আমার
পাশে একজন বসে ছিল। তার
থেকে জানতে পারলাম আমাদের
বাসটি একসিডেন্ট করছিল।
বাসের ৩৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৭ জন নিহত আর বাকিরা মোটামুটি ভাবে আহত হয়।
.
হঠাৎ অরিনের কথা মনে পড়লো। অরিন
কোথায়? পাশের লোকোটিকে জিগ্যেস
করলাম..!!
উনি কিছুই বললেন না।
পরে জানতে পারলাম ওই ৭
জন লাশের কাতারে লাল টকটকে
জামা পরিহিত একটি ১৭-১৮ বছরের মেয়েও ছিল..!!