somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অজয় শীল
মানুষের মাঝে মানবীয় গুণাবলী বিকশিত হোক, মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে মানুষের সম্মান নিয়ে বেচে থাকুক। বাঘ, ভাল্লুক, জন্তু-জানোয়ারের বিশেষণে যেন আর বিশেষায়িত না হয়। এ উদ্দেশ্যে আমার মিশন "চরিত্র গঠন আন্দোলন"।

আসুন শুদ্ধাচার চর্চা আরম্ভ করি

১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জীবনে আর কিই বা আছে। আপনি নিশ্চয় এমন একটা ইচ্ছে পোষণ করেন যেন আপনাকে সবাই ভালোবাসে, সবাই আপনার সাথে হেঁসে কথা বলে, আসা যাওয়ার পথে আপনার কুশল জিজ্ঞেস করে, চেনা অচেনা সকলে আপনার কল্যাণ কামনা করে, আপনার পরিচিতজনদের সুখের দিনগুলোতে আপনাকে কাছে ডেকে নেয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় মানুষের মনের চাহিদা মাফিক কিছুই ঘটে না। ঘটে উলটাপালটা কিছু।



ধরুন, আপনি আগামীকাল সকালে ঘুম থেকে উঠলেন। আর ভাবলেন আজ আমি পাঁচটি মানবকল্যাণমূলক বা সেবামূলক কাজ করবো, সম্পূর্ণ স্বার্থহীন ভাবে এবং বিনিময়ে কিছু চাইবো না। ঘর থেকে বের হলেন, কিন্তু মাথায় আসছে না আপনি কি সেবামূলক কাজ করতে পারেন। একবার ভাবলেন পাঁচটা ভিখারীকে ১০০ টাকা করে মোট ৫০০ টাকা দিবেন। হতে পারে এটা এক ধরণের সেবামূলক কাজ। কিন্তু এভাবে তো আর প্রতিদিন ৫০০ টাকা করে ব্যয় করা হয়তো সম্ভবপর নয়। তাহলে কি কাজ করতে পারি।

সত্যি বলতে কি, আমরা সব কিছুকে আর্থিক মূল্যে নিরূপন করার চেষ্টা করি। কিন্তু আপনি জানেন না আপনি চলতি পথে কতো উপায়ে মানুষের ক্ষতি করে যাচ্ছেন। অথচ ঐসমস্ত কাজ থেকে বিরত থাকলেই কিন্তু অনেক মানুষের উপকার হয়। যেমনঃ আপনি যে বিল্ডিংয়ে থাকেন তার আশেপাশে আপনি জানালা দিয়ে কিছু ফেলছেন নাতো! ঘরে ময়লার নির্দিষ্ট বাস্কেট থাকার সত্ত্বেও অনেকে নানান রকমের প্লাস্টিকের প্যাকেট, ক্যান, ফলের খোসা, এসব কিছু আমরা অন্যমনষ্ক ভাবে জানালা দিয়ে ফেলে দিই। আমি গতকাল দেখলাম আমার বিল্ডিংয়ের নিচের তলায় যে কেয়ারটেকারের রুমটি আছে তার উপর পানি জমে আছে যেখানে ডেঙ্গু মশার উৎপাদন হতে পারে।

কেয়ারটেকারকে জিজ্ঞাসা করাতে ও জানালো উপরের তলার বাসিন্দারা বেশ কয়েকবার বলে দেয়ার সত্ত্বেও প্লাস্টিক ফেলে যার ফলে বৃষ্টির পানি আটকে মশা উৎপাদন হয়। অথচ বেচারা কেয়ারটেকার গতবছরও ডেঙ্গুর আক্রমণে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জার লড়েছে। এ ঘটনাটা বলেছি এ কারণে যে আমাদের মানুষের কল্যাণমুলক কাজ করতে রাস্তায় নামতে হয় না, যেখানে আছি সেখান থেকেও নিজের কাজকে সংশোধনের মাধ্যমে করতে পারি।

রাস্তার পাশে আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আপনি আপনার মালামাল এমন ভাবে রাখলেন পুরো ফুটপাত জুড়ে। যার ফলে স্কুলের বাচ্চা সহ সকল মানুষ রাস্তার উপর দিয়ে যাতায়ত করতে হয়। এতে করে গাড়ি চলাচলে যেমন বিঘ্ন ঘটছে ঠিক তেমনি জীবনের ঝুঁকিও থেকে যাচ্ছে। তো আপনার উচিৎ মানুষের কল্যাণে ৫০০ টাকা দান না করে আগে ফুটপাত পরিষ্কার করা।

ফুটপাতে দাঁড়িয়ে আপনারা ৪/৫জন এমন ভাবে আড্ডা মারছেন, অন্যদের যে যাতায়তে বিঘ্ন ঘটছে তা বুঝতেই পারছেন না। হয়তো ১ কিলোমিটার হেঁটে একজন বয়স্ক লোক বাজার হাতে করে নিয়ে আসছেন। আপনাদের কারণে তাঁকে ফুটপাত থেকে রাস্তায় নামতে হচ্ছে তারপর আপনাদের ডিঙ্গিয়ে তিনি আবার ফুটপাতে উঠলেন। এ নামতে আর উঠতে উনি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়েছেন। হয়তো এ দীর্ঘশ্বাসও আপনার কান্নার কারণ হতে পারে। সুতরাং রাস্তা ছেড়ে দিয়ে অন্তত উনাদের চলাচলের পথ পরিস্কার করেন।

আপনি সিগারেট ফুঁকতেফুঁকতে ফুটপাত দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন আর পেছনে যারা হাটছে তাদের সবাইকে ধোঁয়া খাওয়াচ্ছেন। আপনি আনন্দ করছেন আর পেছনের মানুষ গুলো আপনার মা-বাপকে গালি দিচ্ছে। একটু সভ্যতা শিখেন, কোন নির্জন জায়গায় গিয়ে ইচ্ছেমতো সিগারেট টানেন। নিজের বিষ খেতে ইচ্ছে নিজে খান, অন্যদের কেন বিষ খাওয়াচ্ছেন।

রাস্তায় পানি জমেছে। আপনার গাড়ি আছে। এমন ভাবে চালিয়ে গেলেন ফুটপাতে যারা হাঁটছে তাদের কাদাজলে ভিজিয়ে দিলেন। সাথে সাথে নিজের মা-বাবাকে অভিসম্পাতে ভরিয়ে দিলেন।

আপনি পথ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। এক ভিক্ষুক আপনার কাছ থেকে ভিক্ষা চাইছে। আপনি তাকে তো ভিক্ষা দিলেনই না বরং তাকে তিরস্কার করলেন। “ওর হাত পা আছে ও ভিক্ষা করছে কেন”, “বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাজ করে খেতে পারে না”, এসব বলার জন্য ঐ ভিক্ষুকটি আপনাকে কনসাল্টেন্ট নিয়োগ করেন নি। ওর ব্যাপার ও ভালো বুঝে। আর ১ মিনিটের দেখায় ওর ব্যাপারে আপনি কিই বা বুঝলেন। ভিক্ষা দিতে হবে তেমন কোন কথা নেই, অন্তত আপনি উনাকে তিরস্কার করবেন না। উনাকে উনার মতো থাকতে দেন।

এগুলো মাত্র কয়েকটা উদাহরণ, এরকম শতশত উদাহরণ রয়েছে যা সংশোধন করে আমরা শতশত মানুষের উপকার করতে পারি। আমরা নাটক-সিনেমায় দেখি নায়ক মানবের কল্যাণ করতে গিয়ে ভূমি দস্যুদের মেরে একেবারে তক্তা বানিয়ে দেয়। যা বাস্তবে সম্ভব নয়। মারামারি করা ছাড়া যেন মানব কল্যাণের আর কোন পথ নেই।

সচেতনতার দৃষ্টি দিয়ে দেখুন আপনার কারণে কেউ কষ্ট পাচ্ছে কিনা। মানব কল্যাণে আমাদের প্রধান এবং প্রথম পদক্ষেপ হবে মানুষকে বিরক্ত কিংবা কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা। ঢালু রাস্তায় অথবা গর্তে পড়ে টানতে পারছেনা যে ভ্যান চালকটি তাকে একটু ধাক্কা দিয়ে সাহায্য করুন, আলু কিনতে গিয়ে যে আলুটি ফেলে দিলেন সেটা কুড়িয়ে ভ্যানে তুলে দিন, সবজি বিক্রেতা হিসেবে ভুল করতেই পারে, তার শিক্ষাদীক্ষাই বা কতটুকু। আপনি তাকে শুধরে দিন এবং তার ন্যায্য টাকা বুঝিয়ে দিন। বর্তমান মুদ্রাস্ফীতিতে দ্রব্যমূল্যের দাম লাগামহীন হয়ে গেছে। অথচ রিক্সা ভাড়া আগের মতই দিয়ে যাচ্ছেন। তারাও তো মানুষ তারা কিভাবে সংসার চালায়। যদি পারেন তাদের ২/৪/৫টাকা বাড়িয়ে দিন। দেখবেন এভাবে আপনি চলতে থাকলে আপনি বাসা থেকে বের হওয়ার পর থেকে সবাইকে আপন মনে হবে। সবাই আপনাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করবে, ভালোবাসবে। ঠিক যেমন জীবন আপনি অতিবাহিত করতে চান তেমন হয়ে উঠবে আপনার জীবন। আমাদের শুদ্ধাচারই আমাদের জীবনটাকে আনন্দময় করে তুলবে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৯
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×