somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট মুখে বড় কথা : বিডিআর বিদ্রোহ বিষয়ে

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ বিকাল ৩:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঘটনাটি যে বিডিআর বনাম সেনাবাহিনীর সংঘর্ষ এটি কীভাবে প্রতিষ্ঠিত হলো :
বিডিআর একটি আধাসামরিক বাহিনী। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব তাদের। বহু বছর ধরে এটি সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। সেনাবাহিনীর যে সদস্যরা বিডিআর পরিচালনা করেন তারা কি আধাসামরিক বাহিনীর আইনে তখন পরিচালিত হন? নাকি কমান্ডিং কর্মকর্তারা সামরিক আর কমান্ড পালনকারীরা আধাসামরিক থেকে যান?
স্বাভাবিকভাবেই মনে করা যায়, সামরিকবাহিনী থেকে আসা কর্মকর্তারা আধাসামরিক বাহিনীতে এসে আধাসামরিক বাহিনীর আইনে পরিচালিত হবেন। কোনো সেনা কর্মকর্তা কোনো পাবলিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত হলে সে প্রতিষ্ঠানটি তো সামরিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে না। বরং ওই কর্মকর্তা বেসামরিক বাহিনীর আইনে পরিচালিত হবেন। তেমনিভাবে সেনাবাহিনী থেকে এলেও সেনাকর্মকর্তারা সেনা কর্মকর্তা হিসেবে বিবেচতি হবার কথা নয়। তারা বিডিআরেরই কর্মকর্তা। বিষয়টি বিডিআরের আভ্যন্তরীণ একটি বিষয় হিসাবে বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে বিষয়টি কেন সেনা বনাম বিডিআর সংঘর্ষের রূপ ধারণ করলো?
ভেতরের ঘটনা সম্পর্কে যখন কারও স্পষ্ট ধারণা নেই। তখনও কেন এ ব্যাপারটিই প্রাধান্য পেল? কারণ, সম্ভবত বিডিআর বিদ্রোহ দমনের জন্য তাৎক্ষণিক সৈন্য সমাবেশ। ঘটনা যেভাবে এগিয়েছে তাতে এটি মনে করার যথেষ্ঠ কারণ আছে যে, সরকার ও বেসামরিক শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর জানবার আগে এই সৈন্য সমাবেশ ঘটেছে।
স্বাভাবিকভাবেই নবগঠিত সরকারকে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিক সৈন্য সমাবেশের পরপরই আস্থায় আনতে পারেনি। সরকার সন্দেহ পোষণ করেছে। বিদ্রোহীরা পিলখানার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয়ার আগে সেনাবাহিনী সেখানে ঢুকতে পারেনি। পরে তারা সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় থেকেছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার মতো করে সরকারও মনে করেছে সংঘর্ষটা সেনাবাহিনী বনাম বিডিআর।
বিদ্রোহীদের আলাদা করে বিদ্রোহী হিসাবে দেখার ও দমন করার কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার ফাঁকে বিদ্রোহীরা সংগঠিত হয়েছে।
যে কোনো কারণেই হোক মানুষ বিশ্বাস করেনি সেনাবাহিনী সরকারের নিয়ন্ত্রণে আছে। মন্ত্রী ও পদস্থ কর্মকর্তাদের তাই বারবার কথার পুনরাবৃত্তি করে বলতে হয়েছে যে সেনাবাহিনী সরকারের নির্দেশ মানছে। সংঘর্ষটি বিডিআর বনাম সেনাবাহিনী সংঘর্ষের রূপপরিগ্রহ করায় প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিডিআর ও সেনাবাহিনী দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তবে, পরে সেনাপ্রধান ও প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সরকার ও সেনাবাহিনী পরস্পরের আস্থায় এসে পদক্ষেপ নিতে পেরেছে।
বিদ্রোহ দমন ও এ পর্যন্ত পুরো ঘটনাকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে জেনারেল মঈন ও শেখ হাসিনা যে প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তার জন্য তারা ধন্যবাদ পাবেন।
খালেদা জিয়ার কুটিল রাজনীতি :
নানক ও আজমের পিলখানায় যাওয়া থেকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা। আর্মড পুলিশের কাছে অস্ত্রাগারের দায়িত্ব অর্পন। শুক্রবার সেনাবাহিনীর মাধ্যমে তল্লাশি পর্যন্ত সরকার যা করেছে তা যথেষ্ঠ ম্যাচিউরিটির সাথেই করেছে। দুই দিন নিখোঁজ থাকার পর খালেদা জিয়া গতকাল সাধারণ ক্ষমার কথা তুলেছেন। যা কুটিল রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। সেনাসদস্যদের ক্ষোভের আগুনে এভাবে ঘি ঢালার জন্য তার লজ্জিত হওয়া উচিত।
সাধারণ ক্ষমা ও আলোচনা ছাড়া দেশের দুটি বাহিনীর মধ্যে আরও ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ লাগতে পারতো। সারাদেশে সংঘর্ষ ছড়িয়ে যেতে পারতো। ব্যাপক সাধারণ মানুষের প্রাণক্ষয় হতে পারতো। যার পরবর্তী প্রভাব কী হতো তা একটু কল্পনা করলে সবাই বুঝতে পারবেন, সরকার ও সেনাপ্রধান খুব দক্ষ পদক্ষেপ নিয়েছেন।
মিডিয়া কি নেতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে :
না। মিডিয়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে যা করার তাই করেছে। পিলখানার চারদিকের সেনারা মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেনি। শুক্রবারের আগে মিডিয়াকে নির্দেশনা দেওয়ার কোনো চেষ্টা করেনি আইএসপিআর। নির্দেশনা ছাড়া কোনো সামরিক ঘটনা নিয়ে যথার্থ কভারেজ দেওয়া মিডিয়ার পক্ষে কঠিন। তাই সাধারণ মানুষের মতো তারা যা দেখেছে তাই প্রচার করেছে। তারা ঘটনা জানতে চেয়েছে। বরং শুক্রবারের পর মিডিয়ার হঠাৎ নীরবতাকে সবাই সন্দেহের চোখে দেখেছে।
বিডিআর জওয়ানদের দাবি কি যুক্তিসংগত :
অনেকেই বলছেন, বিডিআর জওয়ানদের দাবি ন্যায্য। কিন্তু ভালভাবে খেয়াল করে দেখা যাবে। জওয়ানদের দাবি অন্যায্য। তারা মনে করেছে, ডালভাত কর্মসূচির মাধ্যমে অফিসাররা প্রচুর টাকা কামিয়েছেন। এই টাকার ভাগ তারা চেয়েছেন। এখান থেকেই ঘটনার সূত্রপাত। পরে এতে কিছু ন্যায্য দাবি যুক্ত হয়েছে। কিন্তু মূল দাবিটি এই। বিডিআর জওয়ানরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন এমন ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। অফিসারদের ব্যর্থতা হলো, তারা জওয়ানদের কাছে নিজেদের স্বচ্ছতার প্রমাণ হাজির করতে পারেননি।
গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা :
বিডিআর বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিষয়ে সবাই একমত যে আমাদের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ব্যর্থ হয়েছে। তারা অসামরিক স্থানগুলোতে মনোযোগ দেয়ায় এই ব্যর্থতার কারণ তৈরি হতে পারে। যদি কোনো কারণে বিদ্রোহ আগের দিন ঘটতো তাহলে কী হতো?
এমন অবস্থায় সরকার প্রধান মনে করতেই পারেন যে, তিনি অল্পের জন্য বেঁচে গেছেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তাদের কাজের ব্যাপারে সচেতন করতে না পারলে সামনে আরও পস্তাতে হবে।
পাবলিক কি বিডিআর-এর অন্যায় বিদ্রোহ সমর্থন করেছে:
না। জনমনে একটা গভীর সন্দেহ দানা বেঁধেছে যে, গত দুই বছরে সেনাবাহিনী এমন কিছু করেছে যা তাদের দায়িত্ব ও কর্মপরিধির মধ্যে পড়ে না। এর মাধ্যমে তাদের কিছু সদস্য দুর্নীতি করে থাকতে পারেন। টাকা আয় করতে পারেন। তাই জনমনে আর্মির বিরুদ্ধে একটা মনোভাব তৈরি হতে পারে। বিডিআর জওয়ানদের কথায় আমি বিরোধিতাকে তারা সায় দিয়েছেন এ কারণেই। একে বিদ্রোহ সমর্থন না বলে আর্মি বিরোধিতা বলতে হবে।
এ ঘটনায় জনগণ, সামরিক বাহিনী ও সরকারকে মনে রাখতে হবে :
১. বিদ্রোহের জন্য দায়ি বিডিআর সদস্যদের শাস্তি দিতে হবে। সেটা আইনগত প্রক্রিয়ার হতে হবে।
২. সেনাবাহিনীর কেউ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাইলে তাকে থামাতে হবে।
৩. ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. সেনাবাহিনীকে অবশ্যই সরকারের নির্দেশে চলতে হবে।
৫. কোনো নির্দেশনা ছাড়াই মিডিয়াকে সংবাদ পরিবেশনের সুযোগ দিতে হবে।
৬. বিডিআর বনাম সেনাবাহিনী সংঘর্ষের মনোভাব দ্রুত জনমন থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
৭. আমাদের সীমান্ত সুরক্ষিত আছে এটি জনগণকে নিশ্চিত করতে হবে।
৮. দ্রুত বিডিআর সংগঠিত করতে হবে।
৯. বেসামরিক দায়িত্ব থেকে সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ফিরিয়ে এনে তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে উৎসাহ দিতে হবে।
১০. গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে তাদের দায়িত্ব পালনে উৎসাহিত করতে হবে।
১১. জনগণ যদি বুঝতে পারে গণতন্ত্রের প্রতি সেনাবাহিনীর বিশ্বাসে বিন্দুমাত্র ফাটল আছে তাহলে তাদের জনপ্রিয়তা কমে যাবে। এটি দেশের জন্য ভাল ফল বয়ে আনবে না।


৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×