somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাজী আরিফদের ক্ষমতার উৎস কোথায়? কাদের জোরে তারা রক্ষা পায়? সুমনারা বিচার পায় না কেন?

০৫ ই মে, ২০১০ রাত ৮:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবি মেহেরুন্নেছা (সুমনা মেহেরুন) আত্মহত্যা ঘটনার সরেজমিন তদন্ত প্রতিবেদন

১.০ প্রেক্ষাপট

দৈনিক কালের কন্ঠ পত্রিকায় ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০১০ তারিখ প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায় তরুন কবি মেহেরুন্নেছা, যিনি সুমনা মেহেরুন নামে সমধিক পরিচিত, ১৬ ফেব্রুয়ারী তারিখ দুপুর আনুমানিক ১২:৪৫ মিনিটের সময় তার ভাড়া বাসায় (বাড়ী নং ২৭১/৮, নিরিবিলি আবাসিক এলাকা, শংকর, থানাঃ হাজারীবাগ, ঢাকা) সিলিং ফ্যানের সাথে নিজের ওড়নায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন।

তার মৃত্যু সংবাদে ফেসবুকে সমালোচনা ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ফেসবুকে তার অনেক বন্ধু অভিযোগ করেন যে কবি মেহেরুন্নেছা ওরফে সুমনা মেহেরুন এক বা একাধিক ব্যক্তির অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ তার স্বামীর দিকে সন্দেহের আঙ্গুল নির্দেশ করেন, আবার অনেকে সরাসরি একজন পরিচিত আবৃত্তিকারের নাম উল্লেখ করে এই মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করেন।

মানবাধিকার রক্ষায় আইন সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট পার্টনারশীপ সেন্টার (বিডিপিসি) ঘটনাটি সরেজমিন তদন্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বিডিপিসি পরিচালক শরীফ এ. কাফী ঘটনা সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্যাদি সংগ্রহ করেন। তারপর সরেজমিন তদন্তের জন্য বাধন অধিকারী, ইফতেখার ইবনে জাহিদ এবং ফারজানা আক্তার সমন্বয়ে তিন সদষ্যের একটি তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্তের কাজ শেষ করতে পরে জনাব শরীফ ও. কাফী এবং মোঃ বিল্লাল হোসেন তদন্ত কাজের সাথে যুক্ত হন।

বিডিপিসি কর্তৃক কবি সুমনা মেহেরুন আত্মহত্যা ঘটনাটি সরেজমিন তদন্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে মাননীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী, মহাপুলিশ পরিদর্শক, মহানগর পুলিশ কমিশনার এবং হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।

২.০ তদন্তের উদ্দেশ্য

সরেজমিন তদন্তের উদ্ধেশ্য হল, যদি সুমনা মেহেরুনের আত্মহত্যার পিছনে কারো কোন দায় দায়িত্ব থাকে, তা খুজেঁ বের করা এবং ঘটনার সত্যতা ও বাস্তবতার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরী করে পুলিশ প্রশাসন ও তদন্ত কর্তৃপক্ষকে প্রদান করা যাতে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে খুজে বের করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি বিধান করা যায়। এছাড়া সাংবাদিকসহ সমাজের আপামর জনসাধারণকে বিষয়টি অবহিত করা এবং এই ধরণের ঘটনার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা, যাতে ভবিষ্যতে এই ধরণের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা আর না ঘটে সে বিষয়ে ইতিবাচক ভূমিকা পালনের চেষ্টা করা।।

৩.০ তদন্ত প্রক্রিয়া

তদন্ত দলের সদস্যগণ যে বাসায়, যে ঘরে সুমনা মেহেরুন আত্মহত্যা করেছিলেন সেই বাসা ও ঘর (বাড়ী নং ২৭১/৮, নিরিবিলি আবাসিক এলাকা, শংকর, থানাঃ হাজারীবাগ, ঢাকা-এর দোতলার ফ্লাট)পরিদর্শন করেছে। তার ১০ বছর বয়সী ছেলে, স্বামী ও বাসার দারোয়ানের সাথে কথা বলেছে। ঘটনার ১৬/১৭ দিন আগে সুমনা মেহেরুন ও তার পরিবার যে বাসায় ছিলেন (বাড়ী ৭৭, রোড ৯এ, ধানমন্ডী, থানা-হাজারীবাগ, ঢাকা) সেই বাসা পরিদর্শন করেছে এবং বাসার মালিকসহ দারোয়ানদের সাথে কথা বলেছে। সুমনা মেহেরুনের দুইজন আত্মীয়ের সাথে কথা বলেছে। ধানমন্ডী ও হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ মোট চার জন পুলিশ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছে। বাড়ী নং ৮৬, রোড ৯এ, ধানমন্ডীতে অবস্থিত ডেকন নামে একটি বাণিজ্যিক সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জনাব কাজী আরিফ এবং উক্ত অফিসের একজন দারোয়ানের সাথে কথা বলেছে। (এর মধ্যে পুলিশ কর্মকর্তা ও সুমনা মেহেরুনের দুই আত্মীয় ছাড়া সকলের সাথে আলাপ ও সাক্ষাৎকারের বিষয় হ্যান্ডিক্যাম ক্যামেরাতে বিস্তারিত রেকর্ড করে রাখা হয়েছে)। এছাড়া, ফেসবুকের মাধ্যমে মেসেজ অপশনে আনেকের লিখিত বক্তব্য ও মন্তব্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে তদন্ত দল মোট ২৪ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে ও বক্তব্য সংগ্রহ করেছে।

তদন্ত দল ঢাকা মহানগরীর হাজারীবাগ থানায় সুমনা মেহেরুনের মামা জনাব মোস্তফা কামাল কর্তৃক দায়েরকৃত অপমৃত্যু মামলার এজাহার এবং পুলিশ কর্তৃক দায়েরকৃত প্রাথমিক অভিযোগের কপি সংগ্রহ করেছে। তদন্ত কাজ ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০১০ তারিখ থেকে ৩১ মার্চ ২০১০ তারিখের মধ্যে শেষ হবার কথা থাকলেও বিবিধ বাস্তবতার কারণে এপ্রিল মাসের ১৯/২০ তারিখ পর্যন্ত তদন্তের কাজ চলেছে।

৪.০ পর্যবেক্ষন

৪.১ মেহেরুন্নেছা বা সুমনা মেহেরুনের সাথে মাকসুদুর আব্বাস সাহেবের বিয়ে হয় ১৯৯৮ সালের ০৫ ডিসেম্বর। তাদের দুটি ছেলে মেয়ে। ছেলেটির বয়স আনুমানিক সাড়ে দশ বছর আর মেয়েটির বয়স আনুমানিক তিন বছর।

৪.২ বিয়ের পর আব্বাস সাহেব দীর্ঘ দিন চাকরী করেন। তার শেষ চাকরী ছিল যমুনা ফিউচার পার্কে। তারপর তিনি চাকরী ছেড়ে বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ভর্তি বা প্রেরণের ব্যবসা শুরু করেন। কিন্তু এই ব্যবসায় তিনি সাফল্য অর্জন করতে পারেন নি। আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়লে তারা ঢাকা শংকর থেকে পল্লবীতে গিয়ে বাসা নেন ২০০৮ এর শেষ বা ২০০৯ এর শুরুর দিকে।

৪.৩ এই সময় তাদের আর্থিক অবস্থা যথেষ্ট দুর্বল হয়ে পড়লে ছেলে মেয়ের স্কুল যাওয়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। অনেক মাস ধরে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যায়নি। এ সময় সুমনা মেহেরুন দারুন ভেঙ্গে পড়েন, তিনি আব্বাস সাহেবের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেন এবং নিজের জন্য চাকরী খুঁজতে থাকেন।

৪.৫ এই রকম একটি অবস্থায় সম্ভবতঃ ২০০৯ সালের জুন বা জুলাই মাসে সুমনা মেহেরুনের সাথে পরিচয় হয় আবৃত্তিকার কাজী আরিফের সাথে। ফেসবুকের কল্যাণে এই পরিচয় গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে কাজী আরিফ তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব বা প্রতিশ্রুতি প্রদান করলে সুমনা মেহেরুন কাজী আরিফের সে কথা বিম্বাস করে বসেন। সম্পর্ক আরও গভীর হতে থাকে।

৪.৬ সুমনা মেহেরুন বিবাহ বিচ্ছেদের কথা স্বামী মাকসুদুর আব্বাসকে জানিয়ে দেন। তবে কাজী আরিফ পাকাপাকি ভাবে তার একটি বিহিত না করায় তিনি ঘর ছাড়তে বা বিবাহ বিচ্ছেদ কার্যকর করতে বিলম্ব করছিলেন। বিবাহ বিচ্ছেদের বিষয়ে সর্বশেষ তিনি আত্মহত্যার মাত্র চারদিন আগে ১২ এপ্রিল আব্বাস সাহেবের কাছে দুই মাস সময় চেয়েছিলেন।

৪.৭ আব্বাস সাহেব বাসায় না থাকলে কাজী আরিফ আসতেন। আবার সুমনা মেহেরুন বাসা থেকে খাবার রান্না করে কাজী আরিফের অফিসে নিয়ে যেতেন। এসব নিয়ে সামাজিক ভাবে নানান কথা হওয়ায় মাঝে মাঝে আব্বাস সাহেব সুমনা মেহেরুনের উপর চাপ সৃষ্টি করতেন। এসব নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়া হতো।

৪.৮ সুমনা মেহেরুনের সাড়ে দশ বছর বয়েসী ছেলে বলেছে---“(আত্মহত্যার আগে) আম্মু দরজা লাগানোর আগে আমাদের দুই ভাই-বোনেকে ডেকে নিয়ে বললো, আমার মৃত্যুর জন্য তোমার বাবা আর ভুত আঙ্কেল দায়ী থাকবে। তোমারা বড় হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করবে। আম্মু প্রয়ই বাসা থেকে খাবার রান্না করে নিয়ে যেতো ভুত আঙ্কেলের জন্য। আমরাও বেশ কয়েকবার ভুত আঙ্কেলের আফিসে গিয়েছিলাম। আমার মা আর ভুত আঙ্কেল ফিসফিস করে কথা বলতো। আমরা কিছু্ই বুঝতে পারতাম না। বাসায় যতবারই ভুত আঙ্কেল আসতো ততবারই ভুত আঙ্কেল চলে যাবার পর আম্মু বলতো আব্বুকে কিছূ না বলার জন্যে। আমরাও তাই কিছু বলতাম না। ভুত আংকেলের আসল নাম কাজী আরিফ। ধানমন্ডী ষ্টার কাবাবের উল্টো দিকে তার আফিস। আমি অফিস চিনি এবং আম্মুর সাথে সে অফিসে আমি গিয়েছি।“

৪.৯ বাড়ী নং ৭৭, রোড ৯এ, ধানমন্ডীর দারোয়ান কালাম ফকির বলেছে, “আব্বাস সাহেব বাসায় না থাকলে প্রায়ই সকালের দিকে আপার সাথে দেখা করার জন্য কাজী আরিফ সাহেব আসতো। আর আপাও মাঝে মাঝেই খাবার নিয়া যাইতো। একদিন কাজী আরিফ বাসায় ঢুকতে নিলে সোহাগ(আরেকজন গার্ড) কোথায় যাবেন জিজ্ঞেস করলে কাজী আরিফ সাহেব ওকে অনেক হুমকি ধামকি এমনকি গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছিল। আর বলেছিল, তুই জানিসনা আমি কই যাই?“

৪.১০ কাজী আরিফের অফিসের দারোয়ান আরমান বলেছে, “আপা (সুমনা মেহেরুন) প্রায়ই সকালবেলা চলে আসতো (আমাদের অফিসে) স্যারের কাছে। আসার সময় খাবারও নিয়ে আসতো স্যারের (কাজী আরিফ) জন্য। আপা যখন আসতো তখন স্যারের রুমে ঢোকা বারণ ছিলো সবার। ১৫ তারিখ (১৫ ফেব্রুয়ারী ২০১০) দুপুরের দিকে আপা হঠ্যাৎ করে কেমন যেনো রেগে দ্রুত (আমাদের অফিস ফেকে) চলে গেলেন।“

৪.১১ একজন প্রবাসী জানিয়েছেন, “কাজী আরিফ আমার দুরের আত্মীয় এবং তার স্ত্রী আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। কাজী আরিফ দ্বারা প্রতারিত মেয়ে সুমনাই প্রথম নয়। দুঃখজনকভাবে সে কাজী আরিফ দ্বারা প্রতারিত শেষ ব্যক্তি হবে না, কারণ অল্প বয়েসী সরল মেয়েদের নিয়ে ছিনি মিনি খেলা কাজী আরিফের অনেক পুরানো অভ্যেস।“

৪.১২ সুমনার ঘনিষ্ঠ অপর একজন কবি ফেস বুকে লিখেছেন, “(সুমনা বললো) একদিন পেপারে দেখবো আরিফ ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে ও বাসর রাতের খবর। ওইটুকু কথা। পরে আবার জানালো সে অট্রেলিয়া তার মার কাছে যেতে চায় ততদিন তাকে একটা চাকরী দিতে পারি কিনা। ১৫ তারিখ চারুকলায় কাটানো উত্সবের কথা জানালো, টোকন ঠাকুরের সাথে দেখা, ছবি তোলা, আরিফ ভাইয়ের নীরবতা, এইসব কথা বললো। ১৬ তারিখ ফোনে ওকে খুব অস্থির লাগলো তবে আত্মহত্যার কোন আভাস ছিল না। তবে আরিফ ভাইয়ের সাথে রাগারাগি চলছে বললো।“

৪.১৩ সুমনার ঘনিষ্ঠ অন্য একজন সিনিয়র কবি লিখেছেন, “১৩ই ফেব্রুয়ারী সুমনা আমায় ফোন করে বেলা ১২টার দিকে। বলে, আরিফের সাথে ১লা ফাল্গুনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল।..সুমনাকে আরিফ নিজের পাশে বসতে দেয়নি, অন্য জায়গার বসার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। এত সে খুব অপমাণিত বোধ করেছে...অনুষ্ঠান থেকে চলে এসেছে। সেদিন সুমনা বলেছিল, আমি আরিফকে শিক্ষা দেব। আমি আত্মহত্যা করব। ১৫ তারিখ কথা হয়, কিন্তু তার কন্ঠ খুব জড়ানো ছিল। ১৬ তারিখ বললো, পৃ-ইসলাম নামে আর একটি মেয়ের সাথে আরিফের এখন প্রেমের সম্পর্ক চলছে। আমি যখন বলি, জাহান্নামে যাক আরিফ, তুমি তোমার সংসার বাচ্চাদের কথা ভাবো, তখন সুমনা বলেছে, ওর কারণে আমার স্বামীর সাথে সম্পর্ক খারাপ হয়েছে, আমি ছেড়ে দিবনা। আমি আত্মহত্যা করব। এই বলে ফোন রেখে দেয়।আমি তখন ঢাকার পথে বাসে ছিলাম। ঢাকায় এসে ওকে শফান দিলে ফোন বন্ধ পাই। আমি ওর কথা সিরিয়াসলী নেইনি। কল্পনাই করিনি ও আত্মহত্যা করবে। সুমনা ওর স্বামীকে লুকিয়ে আরিফকে খাবার পাঠাতো দারোয়ানের হাতে। একথা আরিফ নিজেও আমায় বলেছেন।... তবে সুমনা আরিফকে বিয়ের জন্য খুব চাপ দিচ্ছিল, এটা সে নিজেই আমায় বলেছে।

৪.১৪ আগে কাজী আরিফ সুমনা মেহেরুনকে ফেসবুকের মাধ্যমে প্রতিদিন একটি করে গোলাপ পাঠাতেন। কিন্তু সেই সুমনার মৃত্যুর পর তিনি কোন ফুল দেয়া তো দুরের কথা, ফেসবুকে, ফোনে বা কোন পরিচিত জনের কাছে এতটুকু দুঃখও প্রকাশ করেন নি। যে শিশুরা তাকে ভুত আংকেল বলে ডাকতো তাদেরকে দেখতে যাননি, একটু সমবেদনাও জানান নি। তদন্ত দলের সাথে সাক্ষাতের সময় সুমনার বাসায় যাবার কথা, তার হাতের রান্না খাবার কথা, সবই তিনি অস্বীকার করেছেন। সুমনাকে অতি সাধারণ একজন কবি হিসেবেই তিনি চিনতেন, এমন একটি ভাব দেখালেন।

৪.১৫ ১লা ফাল্গুন আর ভ্যালেন্টাইস ডে’তে কাজী আরিফ যে কপালে সিঁদুর তিলক লাগিয়ে সুমনা মেহেরুনের সাথে দিনভর, এমন কি অনেক রাত পর্যন্ত সময় কাটিয়েছিলেন তাও ভুল গিয়েছেন, মনে করতে পারেন নি।


৪.১৫ আর একটি কথা এখানে না বললেই নয়। আত্মহত্যা ঘটনার পর পুলিশ যখন বাসায় আসে তখন সুমনা মেহেরুনের ছেলে জাবির আল আব্বাস তার মার মৃত্যুর আগের কথাগুলি পুলিশকে বলেছিল। কিন্তু পুলিশ তার কথায় কর্ণপাত না করে বরং বলেছে যে, এসব কথা আর কাউকে বলার দরকার নাই। পুলিশের এই ভূমিকাটি রহস্যজনক।

৫.০ সুপারিশ

তদন্ত দল মনে করে তরুন কবি মেহেরুন্নেছা (সুমনা মেহেরুন) প্রতারণা ও অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছেন এবং তার এই অত্মহত্যার জন্য কাজী আরিফ দায়ী। সুমনা মেহেরুনের ছেলের বক্তব্য বিবেচনায় নিয়ে এবং অন্যান্য যারা ঘটনা জানেন তাদের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কাজী আরিফকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দানের অপরাধে বিচারে সোপর্দ করা উচিৎ।

শেষ কথাঃ

বাংলাদেশে গণতন্ত্র চর্চা, বিচার ব্যবস্থা, আদালত ও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সবই বিদ্যমান আছে। কারো সামাজিক মর্যাদা ও ব্যক্তি পরিচয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হওয়া উচিৎ নয়। কাজেই এই মামলার বিষয়ে রাষ্ট্রকে উদ্যোগী হয়ে প্রকুত অপরাধীকে খুজেঁ বের করে বিচারে সোপর্দ করতে হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।


তদন্ত দলের পক্ষেঃ
শরীফ এ. কাফী, পরিচালক, বিডিপিসি,
১৩৮ক, পিসিকালচার, শ্যামলী, ঢাকা।
০১৯২৫ ৯৯৫ ১৪৬ / ০১৮১৯ ২৩৮ ৪৩৮

আজ ০৪ মে ২০১০ তারিখ ঢাকা রিপোর্টর্স ইউনিটি হলরুমে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে প্রকাশিত।

পুনশ্চঃ

৪.১৬ মার্চ ২০১০ মাসের ২০ তারিখের পর জনাব কাজী আরিফ সাহেবের অফিস ডেকন-এ গিয়ে দেখা যায় যে, তিনি একজন দারোয়ান বাদে তার অফিসের সমস্ত পিয়ন, দারোয়ান পরিবতর্ন করে নতুন কর্মচারী নিয়োগ করেছেন। তার অফিসের দারোয়ান আরমানও সে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ দ্বারা বুঝা যায় কবি সুমনা মেহেরুন ও কাজী আরিফ সাহেবের এফেয়ার এবং তাদের বিয়ে হবার কথা যে সকল কর্মচারী জানতো, সুমনা মেহেরুনের আত্মহত্যার পর তাদের সকলকে পরিকল্পিত ভাবে চাকরী থেকে বিদায় করে দেয়া হয়েছে।

৪.১৭ স্বামীর সাথে বিবাহ বিচ্ছেদর সিদ্ধান্ত নিয়ে সুমনা মেহেরুন কোন অন্যায় করেন নি। তিনি ধর্মীয় বা রষ্ট্রীয় কোন আইনও ভঙ্গ করেন নি। তার নিজের জীবন সম্পর্কে
সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার তার আছে। বিবাহ বিচ্ছেদ নেয়ার বা চাওয়ার অধিকার একজন পুরুষ নগরিকের যেমন আছে, একজন নারী নাগরিকেরও আছে। বরং এ ক্ষেত্রে সুমনা মেহেরুন তার সন্তানদের বৃহত্তর মঙ্গলের জন্য ঐ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু একজন প্রতারকের খপ্পরে পড়ে তার সে পরিকল্পনার করুন পরিণতি ঘটেছে।

৪.১৮ সুমনা মেহেরুন বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর প্রথম থেকেই একটি চাকরীর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন এবং অনেকের সাথে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু তীব্র বেকার সমস্যার এই দেশে একজন পুরুষ বা নারীর জন্য তাৎক্ষনিক ভাবে একটি চাকরী যোগাড় করা যে কত কঠিন তা কাউকে বুঝিয়ে বলায় প্রয়োজন হয় না।

৪.১৯ বাংলাদেশের বাস্তবতায় প্রফেশনাল নারীরা বাদে অন্য নারীরা বিয়েকেই তাদের আর্থিক ও দৈহিক নিরাপত্তার নিশ্চয়তা হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। স্বাভাবিক ভাবে, কাজী আরিফের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব ও প্রতিশ্রুতি (যদিও তা ছিল প্রতারণা) পাওয়া মাত্র তা গ্রহণ করতে সুমনা মেহেরুন বিলম্ব করেন নি।

৪.২০ ঠিক এই রকম একটি সময়ে কাজী আরিফ, কবি সুমনা মেহেরুনের আর্থিক, সামাজিক ও ইমোশনাল বিপর্যস্ত অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাকে এক্সপ্লয়েট করেছেন এবং অমানবিক আচরণের মাধ্যমে মনে আঘাত দিয়ে তাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছেন।

৪.২১ স্ত্রী সুমনা মেহেরুনকে নির্যাতনের কারণে তার স্বামী মাকসুদুর আব্বাসের বিরুদ্ধে ধানমন্ঢী থানায় দুটি মামলা আছে বলে যে তথ্যটি ফেসবুকে অনেকে উল্লেখ করেছিলেন, তদন্ত দল বাস্তবে সেইরূপ কোন মামলার (বা এমন কী সাধারণ ডায়রীরও) সন্ধান পায় নি। ধানমন্ডী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জনাব শাহ আলম তদন্ত দলকে এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মব রাজ্যে উত্তেজনা: হাদির মৃত্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪২

রোম যখন পুড়ছিল নিরো নাকি তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল; গতরাতের ঘটনায় ইউনুস কে কি বাংলার নিরো বলা যায়?



বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদটি সবসময় ছিল চ্যালেঞ্জিং।‌ "আল্লাহর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×