রুস্তম আলীর মেজাজটা আজকে চরম খারাপ ।। গত রাতে চারজনকে নিয়ে রিক্সা চালাতে গিয়ে বেচারার রিক্সার চেইনটা ছিঁড়ে গেছে ।।
ঘরে অসুস্থ বউয়ের ঘেন-ঘেনানি , স্বামী পরিত্যাক্তা অসহায় মেয়েদের করুন অসহায় চোখ , কিস্তি নিতে আসা সমিতির লোকজনের অমানবিক-নির্দয় আচরন এসব তার নিত্য দিনের সঙ্গী ।। এসব নিয়ে সে এতটা ভাবেও না আর...... ইদানিং তার ভাবনা চিন্তা একটা বিশেষ জায়গায় ......।।
বড় ছেলেটা S.S.C তে গোল্ডেন এ+ পেয়েছে , এবার H.S.C দিবে ।। শত চেষ্টার পরেও ফরম ফিল-আপের টাকাটা এখন পর্যন্ত যোগার করতে পারেনি রুস্তম আলী ।। সম্বল বলতে একটা পুরাতন রিক্সা আর তার পরিশ্রমী শরীর ।।
যাই হোক , পোড়া মরিচ আর পান্তা ভাতে ওর পেট ঠান্ডা করার পর বেড়িয়ে পড়লো রিক্সা নিয়ে ।। চেইনটা মেরামত করে প্রতিদিনের মত হাজির হলো সেই বড় রাস্তার মোড়ে ...।।
--মামা যাবেন ??
--কোথায় ??
--ঐতো , সেগুন বাগীচা ...।।
-- যাব , চলেন , ১৫ টাকা দিয়েন ।।
রিক্সা চালাতে চালাতে রুস্তম আলী ভাবে , আজকেই টাকা যোগার করতে হবে , কালকে ফরম ফিল-আপের লাস্ট ডেট ।। ছেলেটার একটা নূতন জামাও নাই , সেই যে এস এস সি পরীক্ষার সময় একটা কিনছিলো সেটাই এখনো আছে ......।।
ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে যায় রুস্তম আলী ।। তখন ...... একটা ঘাতক ট্রাক পিষে দিয়ে যায় তাকে , রক্তাক্ত শরীর আর নির্লীপ্ত চোখ নিয়ে সে পড়ে থাকে রাস্তায় ।। স্বপ্ন সহ তার শরীরের শেষ আশ্রয় হয় ঢাকা মেডীকেল কলেজের তৃতীয় শ্রেনীর মর্গে............।।
,
,
রুস্তম আলীর সেই বড় ছেলেটি এখন আর নিজেকে মেধাবী ভাবে না , ।। স্বপ্ন দেখে না একজন সুদক্ষ ইঞ্জিনিয়ার কিংবা নিখুত ডাক্তার হবার ।। তাকে যে বাবার মতই পরিশ্রমী হতে হবে , নইলে কে নেবে তার অসুস্থ মা এবং অসহায় বোনদের দায়িও্ব ?? তাইতো ম্যাটাডোরের বদলে এখন তার হাতে বাবার সেই রিক্সাটার হ্যান্ডেল ।।
সেও এখন বাবার মত প্রতিদিনই রিক্সা নিয়ে হাজির হয় সেই বড় রাস্তার মোড়ে ।। পরীক্ষা কেন্দ্রে যায় H.S.C পরীক্ষার্থীদের নিয়ে ।। কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে বন্ধুদের পরীক্ষা দেওয়া দেখে আর ময়লা যুক্ত গামছায় মুছে ফেলে কপালের ঘাম এবং লালিত স্বপ্ন ...।।