কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খোজা জরুরী।
১। কতিপয় অখ্যাত ব্লগারকে ধরে যে আইওয়াশ সরকার করতে চাচ্ছে তা কতটা সফল হবে?
২। ব্লগারেদের ধরা ও একই সাথে ব্লগারদের অপকর্ম ফাঁস করে দেয়া সংবাদপত্রগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সরকারী সিদ্ধান্ত পরস্পর বিরোধী কিনা?
৩। সরকার আসলেই আন্তরীকভাবে ধর্ম বিদ্বেষী ব্লগারদের শাস্তি চায় কি না?
৪। সরকারের এই কর্মকান্ডে হেফাজতে ইসলামের লংমার্চে কোনো রকমের প্রভাব পড়বে কি না?
অথবা হেফাজতের দাবির সাথে এই গ্রেফতারের কোনো সম্পর্ক আছে কি না?
আসুন আমরা একে একে বিশ্লেষনে যাই,
প্রথম বিষয়টি নিয়ে যদি কথা বলি তবে দেখতে হবে কোন কোন ব্লগারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা আসলে বলা হচ্ছে। বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ও হেফাজতে ইসলামের বক্তব্যে যাদের নাম উঠে এসেছে, তারা হলেন,
আসিফ মহিউদ্দিন, আরিফুর রহমান ও থাবা বাবা সহ মোট ৮৪ জন।
সরকার প্রথম দিকের এসব ব্লগারদের গ্রেফতার তো দূরের কথা তাদের গানম্যান দিয়ে নিরাপত্তা দিচ্ছেন বলে শোনা যায়।
ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন সরকারের আয়ত্বে থাকলেও তাকে না ধরে কতিপয় অখ্যাত ব্লগারকে ধরে সরকার আসলে কি বোঝাতে চাইছে তা স্পষ্ট না।
জনগণ তাদের প্রানের ধর্ম ইসলামকে যারা গালাগালি করে পোষ্ট দিয়েছে তাদের সত্যিকারের বিচার চায়।
এখানে যুদ্ধাপরাধী ইস্যুর মত রাজনীতি হলে তার ফলাফল খুব একটা শুভ হবে না।
আমরা থাবা বাবা মারা যাওয়ার পরে দেখেছি আরো অন্তত সাতজন ব্লগারকে হত্যার টার্গেট ছিল খুনীদের। সুতরাং তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায় যেমন সরকারের তেমনি এইসব ব্লগারকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার দায়ও সরকারের।
এই আসিফ মহিউদ্দিন বা আরিফুর রহমানদের কেন আইনে সোপর্দ করা হচ্ছে না?
যদি তারা বাংলাদেশের আইনে দোষী না হন তবে ছাড়া পেয়ে যাবেন। আমাদের কারো কিছু বলার নাই। এমনকি মৌলবাদীরাও এটা নিয়ে কিছু বলতে গেলে আমরা সকলে মিলে প্রতিবাদ করবো।
অতীতের যে কোনো সময়ের মতই আমি সব সময় বাক স্বাধীনতার পক্ষে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা তো আর অন্যের মনে আঘাত দেয়াকে সমর্থন করে না।
মুসলমানদের জন্য মুহম্মদ সঃ অনেক সম্মানের যা তাদের পিতার থেকেও অনেক বেশি। এখন আপনার পিতাকে কেউ গালি দিলে যেমন গায়ে লাগে এক্ষেত্রে তার থেকে বেশি গায়ে লাগার কথা।
সামু কিছুটা পরস্পরবিরোধী কাজও করেছে। তারা নিজেরাই আসিফ মহিউদ্দিনের নিক ব্যান করেছে। কারন সে অপরাধী। সে যা করেছে তা কোটি কোটি মুসলমানকে আঘাত করেছে। সুতরাং সামুও মেনে নিয়েছে যে এই কতিপয় ব্লগার অপরাধী ।
সেখানে তাদের মধ্যে অখ্যাত তিন জনকে গ্রেফতারের পরে সামুতে তাদের উদ্ধারের জন্য যে পোষ্টটি স্টিকি করা হলো, তা কতটা যৌক্তিক হয়েছে তা অবশ্যই ভাবনার বিষয়।
আজকে সরকার যখন কতিপয় ব্লগারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সাথে সাথে তাদের এসব কর্ম প্রকাশকারী সংবাদপত্রগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছে তখন তাদের উদ্দেশ্য নিয়েও জনমনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।
এটা একটি দ্বিমুখী আচরন। যদি সংবাদপত্রগুলোর রিপোর্টের প্রেক্ষিতে সরকার ব্লগারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তাহলে তো সংবাদপত্রগুলো কোনো দোষ করেনি। তারা বরং জনস্বার্থে যা প্রকাশ করা দরকার তাই প্রকাশ করেছে। এবং সেই বিষয়ের বাস্তবতা আছে বলেই তো সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে।
সংবাদপত্রের রিপোর্টের বাস্তবতা ও প্রয়োগ আছে বলেই তো শাহবাগে ১২ দিনের পরে আযানের বিরতি দেয়া হয়েছে, বা কোরআন তেলাওয়াত করে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে।
সুতরাং সংবাদপত্রের রিপোর্টগুলো হয় গ্রহনযোগ্য, আর না হয় গ্রহনযোগ্য না। যেহেতু সরকার সেই সব রিপোর্টের উপরে ভিত্তি করে কিছুটা হেলেও অ্যাকশনে যাচ্ছে, তার মানে সেই রিপোর্টগুলো ছাপানো দরকার ছিলো। সেক্ষেত্রে সরকার সংবাদপত্রগুলোর বিপক্ষে কোনো ব্যবস্থা বা অবস্থান নীতিগতভাবে নিতে পারে না।
সরকার কি তবে কতিপয় ব্লগারকে ধরে হেফাজতের লংমার্চকে কিছুটা হলেও নিস্ক্রিয় করতে চাচ্ছে? দেখাতে চাচ্ছে যে আমরা তো ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু চিহ্নিত ধর্মবিদ্বেষি ব্লগারদের না ধরলে কি তাদের এই কর্মকান্ড অগনিত সাধারন ধর্মভীরু মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্যতা পাবে?
এখানে কিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য। মুহম্মদ সঃ এর নামে কটুক্তি কারী বা কার্টুন ছবি আকিয়েরা পৃথিবীর কোনো দেশেই কিন্তু খুব একটা প্রশংসিত হয়নি। কোনো না কোনোভাবে তাদের আইনের আওতায় পড়তে হয়েছে।
সুতরাং এই বিষয়ে বিচার চাওয়াটা কোনো ভাবেই ধর্মীয় গোড়ামী বা মৌলবাদ নয়। এটা নিতান্তই সাধারন ঘটনা।
এখন আমাদের বিবেচনা করার সময় এসেছে, আমরা কি বিষয়টি নিয়ে আবারো রাজনীতি হোক তা চাইবো,নাকি সাত্যিকারের বিচার চাইবো?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:২৭