তাহলে ভাইজান , কি দাঁড়াইলো বিষয়টা?
ঘাদানিক ও ইদানিং হরতাল ডাকতাছে !!!!
একেবারে দেশব্যাপী। অবশ্য কোনো কর্ম দিবসে না, তারা বন্ধের দিনে হরতাল ডাকছে!!!
বন্ধের দিনে এরা আর কি বন্ধ করবো কে জানে !!
আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সারা বাংলাদেশে তো অনেক দূরের কথা , দেশের যে কোনো একটি উইনিয়নেও সর্বাত্মক হরতাল করার মত লোকবল, বা জন সমর্থন ঘাদানিকের নাই। এরা আবারো প্রমান করলো যে তারা কতটা আওয়ামী লীগের বাই প্রডাক্ট।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শাহরীয়ার কবির পাকিস্তানী সেনাদের মুরগী সাপ্লাই দিত, আর সেই মুরগী খাইয়া মোটাতাজা হইয়া পাকিস্তানিরা আমাদের সাধারন নাগরীকদের গুলি করেছে, সেই লোকের মুখে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনতে হচ্ছে।
বলি, দেশে কি সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের লোকজনের এতই ঘাটতি পড়ছে ???
যারা বার বার মুক্তিযুদ্ধের নাম ভাঙিয়ে রাজনীতি করার কারনে দেশের মানুষের ও সাধারন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছ থেকে ধিকৃত হয়েছে তাদের কথায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিখতে হবে???
সাথে যোগ হয়েছে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম। এই ফোরামে সত্যিকারের সেক্টর কমান্ডার কয়জন আছে সেটা খুঁজতে রীতিমত স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের গোয়েন্দা লাগবে। আর আওয়ামী অপসংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন তো জাতির কাছে আজ ঘৃনীত । শাহবাগের ফুটন্ত গোলাপের মত পবিত্র ও স্বতঃষ্ফূর্ত একটি আন্দোলনকে সরকারের হাতে এভাবে তুলে দিয়ে , রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার সুযোগ দেয়ার জন্য এই লোকই সব থেকে বেশি দায়ি।
সুতরাং এরা জনবিচ্ছিন্ন ও সুবিধাভোগী শ্রেনী। এদের কাছ থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শিখতে হবে ???
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কি এতই ঠুনকো !!!
হেফাজতে ইসলাম যে ১৩ টি দাবি করেছে তার মধ্যে কোনো যুদ্ধাপরাধী বা তত্বাবধায়ক বা অন্য কোনো রাজনৈতিক ইস্যুই নাই। হেফাজতে ইসলামের বক্তব্য দেখেন, সংগঠনটির এই কর্মসূচি যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্র কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘আমাদের সংগঠন অরাজনৈতিক। আমাদের আন্দোলনও অরাজনৈতিক। যুদ্ধাপরাধের বিচার, পদ্মা সেতুর দুর্নীতি ও তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা—এগুলো রাজনৈতিক। এসব বিষয় আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়।’
Click This Link
খুবই স্পস্ট এবং ঝকঝকে কথা। এখানে কোনো ঘোরপ্যাচ নাই।
এখন এদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু কেন দেখলেন এনারা?
এই উত্তর দিতে গেলে কয়েকটি দিক খেয়াল রাখতে হবে।
১। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রশ্ন নিয়া রাজনীতি করা ছাড়া শাহরীয়ার কবির বা হুমায়ুন ভাইদের আর তেমন কোনো কাজও নাই। এরা যতটুকু রাজনৈতিক ফায়দা লোটার তা এই ইস্যুর মাধ্যমেই করে থাকে।
২। সরকারের একটি অংশের ধারনা তাদের সকল ক্রান্তিকালে এই ইস্যুই তাদের বাঁচিয়ে দেবে। সুতরাং তাদের অনুগত টিম মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলো।
৩। কোনো ভাবে হেফাজতের এই কর্মকান্ডে যুদ্ধাপরাধী ট্যাগ লাগাতে পারলে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যাবে বলে ধারনা করছে সরকার।
৪। এই কারনটি শেষে উল্লেখ করলেও এটিই প্রধান কারন হতে পারে, আর তা হলো, যেহেতু ১৮ দলের সমর্থন আছে এই লংমার্চে সুতরাং তাদের সরকার কোনো কারনেই জনগনের সমর্থন পেতে দিতে চায় না। মানে ভোটের রাজনীতি। মানে বিষয়টি নিয়ে হয়তো যুদ্ধাপরাধী, ইসলাম, এন্টি ইসলাম কোনো কিছুই তাদের বিবেচনায় নাই, শুধু ভোটের রাজনীতি ছাড়া।
সরকারের একটি অংশের ধারনা হেফাজতের যেহেতু জন সমর্থন অনেক এবং তাদের মধ্যে অনেকে আওয়ামী সমর্থক রয়েছেন। সেহেতু তাদের চটানোর কোনো কারন নাই। তারা তাদের কর্মসূচী পালন করুক। আর সেটা করতে দেয়া না হলে,যারা আসলে ভোটার সেই গ্রামের সাধারন মানুষের মধ্যে যখন এই সরকারকে ধর্ম বিদ্বেষী আখ্যা দিবেন আলেমরা তখন সাধারন মানুষও আর হাসিনাকে পছন্দ করলেও ণৌকায় ভোট দিবে না।
এই ধারনাটার আমি পক্ষে অবস্থান করছি। কারন আমি নিজে দেখেছি গ্রামের ভোটারদের মনোভাব। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগের নামে যখন বলা হলো যে তারা কুকুরের মাথায় টুপি পরিয়ে ধর্মের অবমাননা করেছে, যখন বলা হলো বায়তুল মোকাররমের সামনে দাড়ি টুপি ওয়ালাদের গুলি করে করে শুইয়ে দিয়েছে, তখন লাখ লাখ সাধারন ভোটার কিন্তু আওয়ামী লীগের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো।
হতে পারে হেফাজতের এই যে লাখ লাখ সমর্থক তারা কেউ আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় না। কিন্তু হেফাজতকে চটালে যে শুধু হেফাজতের ভোট পাবেনা তা নয়, এখানে মুল ভোটে সাধারন ভোটারদের আওয়ামী বাক্সের বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটা বিশাল হাতিয়ার কিন্তু বিরোধীদের হাতে চলে যাবে।
কিন্তু অন্য একটি গ্রুপ আছে সরকারে, যাদের ধারনা যারা হেফাজতে আছে তারা আসলে কেউ আওয়ামী লীগে ভোট দেয় না। সুতরাং তাদের চটালেই বা কি হবে?
কিন্তু গত তিনদিনের ইতিহাস প্রমান করে যে এই শেষোক্ত তত্বটি খোদ সরকারই পুরোপুরি গ্রহন করেনি।
তার মানে হেফাজতে ইসলামকে সর্বাত্মকভাবে চটিয়ে তুলতে চাইবে না সরকার , যদি তাদের আক্কল থাকে। বরং হেফাজতের এই আন্দোলনে যে যুদ্ধাপরাধী ইস্যু কোনোভাবেই নাই সেই কথাটিকে বার বার প্রচার করাই সরকারের কৌশল হতে পারতো।
তারা যদি ঘাদানিক বা এই জাতীয় জনবিচ্ছিন্ন সংগঠনের নাম সর্বস্ব নেতাদের কথা শুনে প্রমান করতে চায় যে এই লংমার্চে যে লাখ লাখ বা কোটি সমর্থক আসবেন তারা সবাই যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিরোধী তাতে কোনো লাভ তো নাই ই , বরং এই বিচারের ক্ষতিই হবে।
কারন আওয়ামী অতি উৎসাহী একটি গোষ্ঠি ইতিমধ্যেই বিএনপি সহ ১৮ দল , জাতীয় পার্টি ইত্যাদি দলকে এই বিচারের বিরোধী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। তাতে কি এই বিচারের কোনো উপকার হবে , নাকি ক্ষতি?
ধরেন আমরা যদি বার বার কোটি কোটি মানুষ দেখিয়ে বলি যে এরা সবাই হাসিনা বিরোধী , এরা সবাই হাসিনার বিপক্ষে, তাহলে আমরা কতটা হাসিনার ভাল চাই ?
আমরা যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই , তবে এই বিচারের পক্ষেই বেশি লোক, সেইটা দেখানোর চেষ্টা করবো, তাইনা?
নাকি যে কোনো মূল্যেই হোক সব প্রতিপক্ষকে যুদ্ধাপরাধীর বিচার বিরোধী বলে বিচার প্রক্রিয়াকে হাল্কা করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইবো?
শেষ করবো হেফাজতের আজকের সংবাদ সম্মেলনে করা একটি উক্তির বিশ্লেষন করে। তা হলো , ওনারা বলেছেন , দেশের মিডিয়াগুলো এখোনো আলেম ওলামাদের অনেক নেগেটিভ দৃষ্টিকোন থেকে তুলে ধরা হয়। যা আমাদের তরুন, কিশোর ও কিশোরীদের মনে এক ধরনের ধর্ম বিদ্বেষ তৈরি করে দেয়।
আমি মনে করি কথাটি সত্য। আলেম দেখলেই রাজাকার, প্রযুক্তি বিরোধী বা অপ্রগতিশীল ভাবার কোনো কারন নাই। কেউ কেউ দশ ডিগ্রী উপরে গিয়ে দাড়ি টুপি দেখলেই জঙ্গি বলতেও ছাড়েন না।
চোখ বন্ধ করে ভেবে দেখেন , আপনার আমার দাদা , নানারাও এই রকম দাড়ি -টুপিতে সজ্জিত হয়ে থাকেন। তারা ধর্মভীরু। তারা এইসব ইসলামী স্কলারদের ভক্তি করেন। কিন্তু তারাই বেশিরভাগ মুক্তিযোদ্ধা। তারাই স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি।
সুতরাং তাদের যদি কোনো মিডিয়া হেয় করে দেখায়, তাদের ভাবমূর্তী নষ্ট করতে চায় তবে আমরা কোনো শাহরীয়ার কবীরদের ইশারায় চুপ থাকতে পারি না। শুধু তাই নয় সরকারও যদি জনবিচ্ছিন্ন হতে না চায় তবে তাদেরো উচিত হবে এই আলেম ওলামাদের বিভিন্ন ট্যাগ না লাগিয়ে তারা যে দাবি করেছেন সেই দাবির যতটুকু সম্ভব মেনে নেয়া। আর তাদের কর্মসূচি যাতে শান্তিপূর্ন ও সফল হয় তার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।