সরকার দলীয় এমপি কামাল মজুমদার এক মহিলা সাংবাদিককে মারধোর ও শারীরিক নির্যাতন করেছিলেন। তখন অনেকে সেই ঘটনার বিচার চেয়েছিলেন, তবে বর্তমানে যারা চিল্লাচিল্লি করছেন তারা তখন কেউ মুখ খুলেননি।
Click This Link
কেউ তখন সেই মহিলা সাংবাদিককে প্রকাশ্যে অপমান ও মারধোর করার ঘটনাটিকে মধ্যযুগীয় বর্বরতা বা স্বাধীন গনমাধ্যমের উপর আঘাত ইত্যাদি বলেনি।
এমনকি এই হেফাজতের লংমার্চের দিনেই জাহাঙ্গিরনগর সহ দেশের অন্তত তিনটি পয়েন্টে গনজাগরন আওয়ামী কর্মীরা যখন হেফাজতের লোকজনকে বাধা দিচ্ছিলো তার ছবি তুলতে গেলে তাদের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়। সেখানে জোর জবরদস্তি ও মারপিট করা হয়। জাহাঙ্গিরনগরের সেই ঘটনায়ও দুটি মিডিয়ার মহিলা সাংবাদিক অপমানিত হন। সেই ঘটনায় কেউ মধ্যযুগীয় বর্বরতা দেখেনি, দেখেনি স্বাধীন সংবাদ মাধ্যম বা ইনুর মতে গনতন্ত্রের উপর আঘাত হিসেবে কেউ দেখেনি।
ইনুরা গনতন্ত্রে বিশ্বাস করে , এমন কথা এদেশের কোনো সুস্থ মানুষ মনে করেন বলে আমি বিশ্বাস করি না। কারন এই দেশ ও গনতন্ত্র তাদের কিছুই দেয় নি। আমার মনে হয় দেশের একটি ইউনিয়নেও তারা নিজেদের একক সমর্থনে চেয়ারম্যান হতেও পারবে না। সেই লোক হেফাজতের এই ঘটনায় স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের উপর আঘাত খুজছে। মানুষ কতটা নির্লজ্জ হলে পরে এ ধরনের কথা বলতে পারে পারে !
সত্যকে সত্য বলতে তো দোষ নাই। কিন্তু আজীবন এই আওয়ামী ও বামদের সত্যের সাথে বিরোধ। তারা স্বীকার করবেন না যে হেফাজতের লংমার্চে অন্তত ৪০ লাখ লোক সমাগম হয়েছে। সেখানে এক নারী সাংবাদিকের উপরে হামলা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
তারপরেও হেফাজতে ইসলামী একটি পুরোপুরি অরাজনৈতিক সংগঠন হয়েও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের রাজনীতি কি করে করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়ে গেল। তারা দেখিয়ে দিলেন, কি করে একটি ঘটনার দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হয়।
মুখে গনতন্ত্র বলতে বলতে যারা ফেনা উঠিয়ে ফেলেন , সেই আওয়ামী লীগকে তো কখোনো দেখলাম না বিশ্বজিতকে এভাবে মারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে। কই দেখলাম না তো হলমার্ক বা শেয়ার বাজার নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতে। সুতরাং শুধু রাজনীতি না, গনতন্ত্র কি জিনিস তাও শিখিয়ে দিয়েছে হেফাজতে ইসলামী।
এখন হাম্বা আর বাম্বারা একত্রে লেগেছে হেফাজত মধ্যযুগীয় দাবি করেছে এটা প্রমান করতে। সেটা যে কতটা অযৌক্তিক তা বুঝিয়ে দিচ্ছি।
হলুদ মিডিয়াগুলো ও হাম্বারা বার বার হেফাজতের দুটি দাবি নিয়ে কথা বলছে। নারী পুরুষের মেলামেশার বিষয়ে আর নতুন মূর্তি না করার বিষয়ে। কিন্তু হেফাজত মূল যে দাবিটি করেছে সেটি হলো , ধর্মবিদ্বেষী ব্লগারদের শাস্তি, ও সেই সাথে তাদের সহযোগীতা করছে যে সংগঠনগুলো, ও মানুষগুলো তাদের শাস্তি। এদের মধ্যে মুরগীওয়ালা থেকে শুরু করে অনেক ভন্ড আছেন। এটাই মূল দাবি। আবার এক রাজাকারের নাতি দম্ভোক্তি করে বলে হেফাজতের রক্ত দিয়ে আমরা শুদ্ধ হব ,, বা এই জাতিয় কথাবার্তা। কোনটা মধ্যযুগীয় বর্বরতা, আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে।
কোটি কোটি মানুষের রক্ত দিয়ে হোলি খেলতে চায় যারা তাদের সাপোর্ট দেয়াটা বর্বরতা, নাকি যারা স্মরনকালের সবথেকে বড় সবাবেশ ঘটিয়েও কোনো সহিংস বক্তব্য না দিয়ে চলে গেলেন তাদেরটা বর্বরতা?
এই দম্ভোক্তি কি এদের মানায়? এরা এই বর্বর দম্ভোক্তি কোন সাহসে করে? এরা তো মুক্তিযুদ্ধের কেউ না। তাহলে তারা এই শক্তি পায় কোথায় ?
মুরগীওয়ালা লাখ লাখ ধর্মপ্রান মুসলমানকে জঙ্গি বলে গালি দেয়ার ধৃষ্টতা কিভাবে দেখাতে পারে?
এই ভন্ডই তো কিছু দৈনিক পত্রিকা বন্ধ ও আসিফ নজরুল, মাহমুদুর রহমান, পিয়াস করিমদের শাস্তি দাবি করেছিলেন। এই লোকই তো মধ্যযুগীয় বর্বর।
হেফাজত যে সকল দাবি করেছে তার সবগুলি মানার মত না। এটা যেমন আমরা বুঝি তেমনি হুজুররাও বোঝেন। তবুও মূল দাবিটির সাথে তারা কিছু পুরোনো দাবিও জুড়ে দিয়েছে। এ ধরনের দৃষ্টান্ত আমাদের সমাজে প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আছে। দেখবেন যে কোনো আন্দোলনেই ১০ দফা বা ১৫ দফা ইত্যাদি দাবি থাকে। তার মধে সাধারনত প্রথম দুটি বা তিনটি মেনে নিয়েই আন্দোলন থামিয়ে দেয়া যায়। এটা যুগ যুগ ধরে এদেশে হয়ে আসছে।
অনেক্ইে হেফাজতের এই সমাবেশ থেকে বিএনপির যেটুকু লাভ হয়েছে তা খোয়ানোর আশায় একটা ভুল যুক্তি উপস্থাপন করার চেষ্টা করছে। তারা বার বার প্রশ্ন তুলছে যে বিএনপি তাদের সব দাবির সাথে একমত কি না।
আরে ভাই সব দাবির সাথে তো একমত হতে হবে না। প্রধান দাবির সাথে একমত কি না সেটাই দেখার বিষয়।
উদাহরনটা একটু হাম্বা আর বাম্বাদের গায়ে লাগিয়ে দেয়া যাক,
শাহবাগ আন্দোলনে মূল দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচার। কিন্তু সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করা, মাহমুদুর রহমানের গ্রেফতার , আমার দেশ বন্ধ, ইসলামী ব্যাংক বন্ধ, বা কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার বলতে হবে, অথবা ধর্মবিদ্বেষী ব্লগার রাজিব মুক্তিযুদ্ধের শহীদ, এগুলো কথায় যারা একমত না হবেন, বা এসব দাবির সাথে যারা একমত না হবেন তারা যে এই শাহবাগ আন্দোলনে সমর্থন দিতে পারবেন না এমনটি তো নয়। যারা যারা শাহবাগে গেছেন তারা সবাই সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করতে চান এটা আমি বিশ্বাস করি না। এটা বিশ্বাস করলে তো মানতে হয় শাহবাগীরাই দেশকে মধ্যযুগে নিয়ে যেতে চাচ্ছে।
কিন্তু আমি তা বলতে চাই না। আমি বলতে চাই , অন্যান্য দাবি না, কেবল যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রশ্নে এখানে সবাই একমত। এটাই এক নম্বর দাবি।
সুতরাং একটা আন্দোলনে একাত্মতা যারা জানাবেন, তারা যে আন্দোলনকারীদের সকল দাবির সাথেই একমত হবেন এমনটি নয়।
যদি না বুঝে থাকেন কথাটা, তবে আবারো আবারো কষ্ট করে একবার পড়ুন। তারপরে নোংরা অপপ্রচার বন্ধ করুন।
যতই মুখ ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে হেফাজত খারাপ, তাদের দাবি খারাপ, তাদের কাছে যারা গেছিল তারা খারাপ, তাদের যেসব সাধারন মানুষ স্বতঃস্ফ’র্তভাবে খাবার ও পানি খাইয়েছে তারা খারাপ ইত্যাদি বলার চেষ্টা করেন, ততই প্যাচে পড়বেন। ততই মানুষ হাম্বাদের আসল চেহারাটা চিনতে পারবে। এটাই বাস্তবতা।
এই হাম্বা সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেই, জাষ্টিজ হাবিবুর রহমান খারাপ, ড. ইউনিস নোংরা, ব্যারিষ্টার রফিকুল হক বয়স্ক পাগল, তাদেরই সাবেক এমপি, বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যান। সেই দল যে হেফাজতের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও অন্যায়ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমনের চেষ্টা করবে তা তো আমরা সবাই জানতাম।
তার পরেও যে হেফাজত তেমন কোনো বিতর্কের মধ্যে পড়েনি, তারপরেও যে তারা স্মরনকালের সব থেকে বড় সবাবেশ অত্যন্ত শান্তিপূর্ন ভাবে করতে পেরেছে, এটাই সবথেকে বড় শিক্ষা । সেই শিক্ষা অন্তত ইনু সাহেবদের বোঝার কথা না। কারন তারা জনগন নিয়ে দল করেন না। তাদের ডাকে একসাথে ৩০০ লোক আসে কিনা তাও অনেকের সন্দেহ আছে।
জাতির আজ সবথেকে বড় দুর্ভাগ্য হচ্ছে সেই চালচুলোহীন , জনবিচ্ছিন্ন মানুষগুলোই আজকে ক্ষমতায়।