somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিক্ষিপ্ত খাতা : আমার মৃত্যু

১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভূমিকা

আমার প্রথম বই আসছে এই বইমেলায়। নামটা আমি ইতিমধ্যে আমার এক লেখার শেষে ছোট্ট করে বলেছিলাম। আজ সেই বইয়ের শেষ অধ্যায়টা সামু এবং পাঠকদের জন্য তুলে ধরলাম।

এখন যে লেখাটা দিচ্ছি, এটা প্রকাশককে পাণ্ডুলিপি দেওয়ার আগের লেখা। পরে আমি নিজে অনেক পরিবর্তন করেছি, অনেক জায়গায় পরিমার্জন এনেছি — যা আমার মূল বইয়ে আছে। আশা করি, এই কাঁচা লেখাটা (RAW version) পড়তে আপনাদের তেমন অসুবিধা হবে না।

আমার বইটা হাতে পাওয়ার পর, বই নিয়ে খুব শিগগিরই একটা পোস্ট দেব।

আমার মৃত্যু

এই বইতে যাদের গল্প আছে, তারা সবাই চলে গেছে না-ফেরার দেশে। কিন্তু একজন এখনো বেঁচে আছে—সে আমি। হ্যাঁ, আমি এখনো হাঁটাচলা করি, শ্বাস নেই, হাসি। তবু এই বইয়ে আমি বলব আমার মৃত্যুর গল্প। কেমন মৃত্যু হবে, কেমন লাগবে—সবকিছু।
চলুন, সামনের পাতায় এগিয়ে যাই।

মৃত্যু আসবে—এটা সবাই জানে। অথচ আমরা কেউ মনে রাখি না। সারাদিন তুচ্ছ বিষয় নিয়ে মাথা গরম করি—কে কী বললো, কে সামনে এগিয়ে গেলো, কে পেছনে রইলো। স্বপ্ন দেখি, বাড়ি বানাবো, গাড়ি কিনবো, কোথাও ঘুরতে যাবো। অথচ একদিন সবকিছু ফেলে নিশ্চুপ হয়ে মাটির নিচে শুয়ে পড়তে হবে—এই সত্যিটা ভুলে যাই।

যেহেতু আমি অমর নই, একদিন না একদিন আমাকে যেতেই হবে। এটাই চূড়ান্ত সত্যি। তাই আমি মাঝে মাঝে আল্লাহর সাথে একটু দরকষাকষি করি—আমার মৃত্যুর ব্যাপারে কিছু শর্ত রাখি। হাস্যকর শোনাতে পারে, তবুও করি। ইউটিউবে ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে কিছু ধর্মীয় ভিডিও দেখেছি, সেখান থেকে মাথায় ঢুকেছে অনেক শর্ত। কত যে জমে গেছে তার হিসেব নেই। তার মধ্যে কয়েকটা লিখলাম ।

মৃত্যুর কথা লেখার আগে একটু বলে নিই। এখানে কিছু ধর্মীয় কথা আসবে। সেগুলো আমি ইউটিউবে শুনেছি। কতটা সত্য, কতটা মিথ্যা—আমি জানি না। লিংকটিংকও নেই। তাই কেউ আমাকে নিয়ে প্রশ্ন করবেন না। যা শুনে আমার ভেতরে আলোড়ন জেগেছে, তাই লিখছি। সত্য-মিথ্যা যাচাই করার দায়িত্ব আপনাদের। আমি শুধু একজন সাধারণ মানুষ, মৃত্যুকে সামনে ভেবে মনে যা আসে , সেটাই বলছি।

শর্ত ১

একটা ভিডিওতে দেখলাম—যে মানুষ প্রতি রাকাত নামাজের শেষে আয়াতুল কুরসি পড়ে, তার জানাজায় নাকি অগণিত ফেরেশতা আসে। ভিডিওটা দেখে আমার কেমন জানি ভালো লাগলো। তারপর থেকে নামাজ শেষে আয়াতুল কুরসি পড়াটা অভ্যাস করে ফেলেছি। এখন আমার মনে হয়—আল্লাহর কাছে তো আমি নিয়মিত এই কাজ করি, তাই আমার জানাজায় ফেরেশতা পাঠাতেই হবে। একেবারে ভিড় করে আসুক, যেন কবর বাসীরা দেখে বলে—“আরে, এ যে ফেরেশতাদের মেলা বসেছে!

শর্ত ২

আরেক ভিডিওতে শুনলাম—যে মানুষ মৃত্যুর ঠিক আগে জোরে কালেমা পড়তে পারবে, তার জন্য জান্নাতে বিশেষ জায়গা থাকবে। কথাটা শুনে মনে হলো—এটাই তো জীবনের আসল লটারির টিকিট! তারপর থেকে নামাজের সময় আল্লাহকে বারবার বলি—“আমাকে সেই সুযোগটা দিতে হবে।” ভাবি, শেষ মুহূর্তে যদি সত্যিই মুখ দিয়ে কালেমাটা বের হয়, তাহলে ফেরেশতারা নিশ্চয়ই হাততালি দেবে—“সাবাশ! পরীক্ষায় পাস।

শর্ত ৩

আবার শুনেছি—“যে মানুষ সবসময় তওবা করে, সে খুব সহজে জান্নাতে চলে যাবে।” শুনে মনে হলো, আচ্ছা! এ তো বেশ সহজ একটা শর্টকাট! তারপর থেকে সুযোগ পেলেই গুনগুন করি—“আস্তাগফিরুল্লাহ… আস্তাগফিরুল্লাহ…”। আমি মনে মনে আল্লাহকে বলে রাখি—“আমি তো সারাক্ষণ তওবা করি, সুতরাং জান্নাতের দরজাটা আমার জন্য সহজ করে রাখতে হবে।

শর্ত ৪

শুনেছি—বাবার জীবনের সবচেয়ে বড় কষ্টের সময় হলো, যখন তাঁর কাঁধে সন্তানের লাশ ওঠে। এ দৃশ্য আমি কল্পনাও করতে পারি না। তাই আল্লাহকে বলেছি—আমার আগে আমার সন্তানের মৃত্যু যেন না হয়। আমি চলে যাবো, তার পরেই যদি তাদের যেতে হয়।

শর্ত ৫

একটা ভিডিওতে দেখলাম—দাফনের পর কবরের মাটি মানুষকে চেপে ধরে, হাড়গোড় পর্যন্ত চূর্ণ হয়ে যায়। শুধু ফাতেমা (রা.) এই শাস্তি থেকে মুক্ত থাকবেন। ভয়ংকর ব্যাপার! আমার তো মনে হলেই , গা কেঁপে উঠে ভয়ে। কবরও এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে!
এটা শোনার পর আমি মামার বাড়ির আবদারের মতো, নামাজের পর মুনাজাতে আল্লাহকে বলতে থাকি—
“এইটা আমার সাথে করা যাবে না। আমাকে এই শাস্তি থেকে মাফ করে দিতেই হবে।

শর্ত–৬

শুনেছি—মানুষ মারা যাওয়ার পরও আসেপাশের সব বুঝতে পারে, কিন্তু কিছু করার ক্ষমতা থাকে না। যেহেতু আমার মৃত্যুর পর আমার কোনো ক্ষমতা থাকবে না, কিন্তু আমি সব দেখতে পারবো। আর যদি আমার জানাজায় অনেক অনেক ফেরেশতা আসে, তবে আমি আল্লাহর কাছে রিকোয়েস্ট করে বলবো—“দুইজন ফেরেশতাকে আমার সাথে দেয়ার জন্য, কারণ আমি কিছু মানুষ কে শাস্তি দিবো ।
শাস্তি কেন দেবো? তার বিবরণ শুনুন।

জনাজা আর দাফনের সময় যদি দেখি কেউ সেলফি তুলছে কিংবা গ্রুপ ছবি তুলছে—তাহলে তাদের শাস্তি হবে। আরে বেটা, আমি মরে গেছি, শোক পালন না করে সেলফি! ফ্যাশন শো নাকি? ওদের ধরে সোজা দু’থাপ্পড় মারা হবে।

আবার দাফনের সময় যদি কেউ খোশগল্পে মেতে ওঠে, তারাও ছাড় পাবে না। কারণ আমি তখন টেনশনে—সবাই চলে যাবে, আমার কি হবে আমি জানি না। আর ওরা আছে মজা করে আড্ডায়! বেটা ফাজিলের দল! ওদের শাস্তি হবে—মাথা তুলে আছাড় মারা।

আরও কিছু আছে, ওগুলো করলে শাস্তি দেবোই। তবে এখন আর বলছি না। শেষমেশ অবস্থা এমন দাঁড়াবে—আমার জনাজা কিংবা দাফনের সময় কেউই আসবে না!

সত্যি কথা বলতে কী, আমি আমার মৃত্যুকে চাই একেবারেই আলাদা করে।

যেদিন আমার মৃত্যু হবে, সেদিন হোক শবে কদরের রাত। দিনটা হোক শুক্রবার। আমি সেদিন জুম্মার নামাজ পড়বো—কিন্তু চাইবো, নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আজরাইল (আ.) যেন আমার কাছে না আসেন। সাথে চাই —সেদিন যেন বৃষ্টি হয়। বৃষ্টি আমি খুব ভালোবাসি। তবে বজ্রপাত চাই না, ওটা আমার ভয় লাগে। আমার ইচ্ছে—কবর দেওয়ার আগ মুহূর্তে, কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির পানি পড়ে থাকুক আমার লাশের ওপরে। মনে হবে, আকাশ কেঁদে দিচ্ছে আমার জন্য।

সৃষ্টিকর্তা আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৪
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×