ইতিহাসে জানা যায়, তৎকালীন সময় প্রিতিমপাশা ছিলেন সিলেট অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে নামকরা, স্বনামধন্য ও ধনাঢ্য জমিদার। রাজার ব্যাপার হলো প্রিতিমপাশা সিলেট, এমনকি বাংলাদেশেই জন্মগ্রহণ করেননি। তিনি ছিলেন ইরানের প্রভাবশালী ব্যক্তি রবী খানের ছেলে এবং শাহেনশা রেজা পাহলভী ইরানের দৌহিত্র বা নাতি। ১৭০০ সালের দিকে নবাব সৈয়দ আমজাদ হোসেন সপরিবারে ভারতীয় উপমহাদেশে চলে আসেন। তৎকালীন সময় সিলেট অঞ্চলের সুনাম শুনে তিনি সিলেটে আসেন। নিজেকে অত্র এলাকার জমিদার বলে ঘোষণা করেন। প্রিতিমপাশা ব্যক্তি হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। প্রত্যেক প্রজাই তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করত, মনে ও প্রাণে তাকে ভালোবাসত। প্রিতিমপাশাও জনগণের আশা ও প্রত্যাশা পূরণ করতে সদা ব্যস্ত থাকতেন। নিজেকে জমিদার হিসেবে সবার কাছে উপস্থাপন করলেও জমিদারি করার মতো কোনো বাড়ি তার ছিল না, প্রজারা (জনগণ) তাকে অনেক বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও তিনি নিজের আরাম, আয়েশের জন্য জমিদার বাড়ি নির্মাণ করেননি।
জমিদার হিসেবে প্রিতিমপাশার সুনাম যখন চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল, তখন সাধারণ জনগণ তাকে অনুরোধ করল জমিদার বাড়ি নির্মাণের। সাধারণ জনগণ ও নিজ আত্মীয়-স্বজনের অনুরোধে নবাব প্রিতিমপাশা একটি বাড়ি নির্মাণ করতে সম্মত হন। ১৭২০ সালের দিকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নবাব প্রিতিমপাশা নির্মাণ করেন এই নবাব বাড়ি। সিলেটবাসীর কাছে বাড়িটি জমিদার বাড়ি হিসেবে অধিক পরিচিত। কেননা নবাব প্রিতিমপাশা ছিলেন একজন খ্যাতনামা জমিদার ও নবাব। বাড়ির চারপাশে আরও বেশ কয়েকটি বাড়ি রয়েছে, সে বাড়িগুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার। প্রায় ৫০ একর জায়গা নিয়ে প্রিতিমপাশা নবাববাড়ির সীমানা। বাড়ির পাশেই রয়েছে নামাজ পড়ার জন্য বিদেশি মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি মসজিদ। সে পাথরগুলো কখনো লাল, কখনো হলুদ, আবার কখনো সবুজ রূপ ধারণ করে। নবাববাড়িটির ভেতরে রয়েছে অসংখ্য ফল ও ফুলের বাগান। পুরুষদের গোসল করার জন্য পুকুর, মহিলাদের বিনোদনের জন্য আলাদা পার্ক। বাড়িটির পরিবেশ সবসময় সুন্দর মনে হয়। বাড়িটি দেখে কারও কাছে মনেই হয় না এ বাড়িটির বয়স প্রায় তিনশ বছর। পুরনো এই বাড়িটি সংস্কারে সরকার নানা সময়ে নানা উদ্যোগ নিয়েছে, যা অনেক সময় যথাযথভাবে পালিতও হয়েছে। যে কারণে নবাববাড়িটি প্রাচীন ইতিহাস ও নবাব প্রিতিমপাশার কীর্তি যুগের পর যুগ মানুষের কাছে তুলে ধরতে সক্ষম হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই এপ্রিল, ২০১১ দুপুর ২:০৫