ধন্যবাদ আপনাদের সহযোগিতার জন্য। তিন পর্ব পেরিয়ে আজ আমরা চার নাম্বার পর্বে হাজির হয়েছি। আপনাদের ভালোলাগা আমাকে আবিভূত করেছে। পর্ণোগ্রাফীর ব্যাপারে কিছু নোঙ্গরা সত্য কে তুলে ধরার এই প্রচেষ্টায় আপনাদের সবাইকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। লেখার শেষে আগের তিন পর্বের লিঙ্ক দেয়া হচ্ছে। যারা আগের পর্ব গুলো মিস করেছেন তাদের জন্য!
আপনি কি জানেন ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফীর বেশীরভাগ ই মানুষ তার নিজের অফিসে বসে কিংবা কর্মক্ষেত্রে দেখে? পরিসঙ্গখ্যান মতে শতকরা সত্তুর ভাগ পর্ণ (টোটাল ইন্টারনেট পর্ণ এর) আদান প্রদান সকাল ৯টা থেকে বিকাল পাচঁটার মাঝে হয়ে থাকে! আইডিসি নামের বিশ্বজনীন একটি একটি গবেষণার মাধ্যমে দেখা গেসে অফিসে ব্যবহার করা ইন্টারনেটের শতকরা ত্রিশ থেকে চল্লিশ ভাগ ভাগ ই ব্যবসা কিংবা অফিস সংক্রান্ত কোন বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়! নেলসন নেট রেটিং সংস্থার মতে, শতকরা বিশ ভাগ এডালট সাইটে মানুষ তার কর্মক্ষেত্রের নেটে বসে ঢুকেন! এন এফ ও নামের একটি জরিপ প্রতিষ্ঠানের মতে, শতকরা সত্তুর ভাগ চাকুরীজীবী (সারা পৃথিবীতে) পর্নের আদান প্রদান করেন অফিসে বসে!
ইন্টারনেট পর্ণো গ্রাফী নিয়ে আরো আলোচনা করব। পর্নোগ্রাফী নিয়ে আলোচনাটা অস্বস্তিকর হলেও, ব্যাপারটা ছোট নয়! এবং একি সাথে ব্যাপারটা চরম বাস্তব! আরো কঠিন বিষয় হল পর্ণোগ্রাফী হাজারো মানুষের জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে! নষ্ট করসে হাজারো সঙ্গসার! বাইবেল এর ম্যাথিউ ৫ঃ২৮ এ ঈশ্বর বলেন
''when he said, I said to you, whoever looks at a woman to lust for her has already committed adultery with her in his heart . If your right eye causes you to sin, pluck it out and cast it from you for it is more profitable for you that one of your members perish than for your whole body to be cast into hell''
অর্থঃ-
''যখন সে বলল, আমিতো তোমাকে বলেছিই, যে ব্যক্তি কোন মহিলার দিকে কামের দৃষ্টিতে তাকাবে তখনই সে অন্তরের জেনা করে ফেলল। যদি তোমার চোখ তোমার পাপের কারণ হয়, তাহলে তোমার সেই চোখ তুমি উপড়ে ফেল, তোমার সারা শরীর জাহান্নামের আগুনে পোড়ানোর চেয়ে একটা অঙ্গ নষ্ট করাই কি বেশি লাভজনক নয়??'(অনুবাদ-কাজী মৈত্রী)
আদতে সৃষ্টিকর্তা আমাদের সতর্ক করলেন! এটাকে তিনি দুনিয়াতে যেমন পাপ বলেছেন, তেমনি পরকালেও এর জন্য শাস্তির বিধান রেখেছেন! ধরুন, সৃষ্টিকর্তার পরিসঙ্গখ্যান এ আপনি গুরুত্ব দেন না, বাট আমি আপনাদের কিছু জরিপ তুলে ধরসি, যা সত্য! দুইহাজার সালের যুক্তরাস্ট্রের নারী ও শিশু প্রতিরক্ষার ন্যাশনাল কোয়ালিশন পাচঁটি ধর্মীয় ক্যাম্পাসে বিশুদ্ধ যৌণ দৃষ্টিভংগি সম্পর্কে এই শতাব্দীর নতুন প্রজন্মের উপর জরিপ চালান, সেখানে শতকরা ৪৮ ভাগ পুরুষ স্বীকার করেন তারা পর্ন দেখেছেন এবং দেখেন! শতকরা ৬৮ ভাগ পুরুষ স্বীকার করেন তারা স্কুল জীবন থেকেই এডাল্ট সাইটে ঢুঁ মারেন!!!
১৯৯৬ সালে একবার এক খেলা চলাকালীন সময়ে এক জরিপে উঠে আসে উপস্থিত ব্যক্তিদের শতকরা ৫০ ভাগের বেশী মানুষ লাস্ট এক সপ্তাহের মাঝে পর্ণোগ্রাফী ব্যবহার করেছেন! এপ্রিল ৬, ২০০৭ সালে সিএনএন এ জোসেফ রোভ্যুর এক আর্টিকেলে বলা হয় শতকরা সত্তুরভাগ ব্যক্তি স্বীকার করেন যে তাদের দৈনন্দিন জীবনে পর্নোগ্রাফীর এডিকশন নিয়ে নিজের সাথে যুদ্ধ করতে হয়! এই জরিপটি ছিল ধর্মপ্রান খ্রিষ্টান নাগরিক নিয়ে। আসলেই দিন দিন এই সমস্যা বাড়ছেই কিন্তু!
অনেকের ধারণা ধর্ম প্রাণ ব্যক্তিরা পর্ন দেখেন না, কথাটা আসলে মিথ্যা। ধর্মে আসক্ত ব্যক্তিদের পর্ণ আস্কতির সংখ্যাও দিন দিন বেড়ে চলছে, রবিবার দিন চার্চে যাওয়া প্রচুর খ্রিষ্টান ব্যক্তিও চার্চ থেকে বাসায় ফিরে দুবে যান পর্নোগ্রাফীতে! ইন্টারনেটের কারণে পর্ন সহজলভ্য যেমন হচ্ছে, তেমনি বাড়ছে পর্নে আসক্তি! আগেরদিনে এটা একতা সমস্যা ছিল যে আপনি একটি ন্যুড ম্যাগাজিন কিনতে দোকানে গেলে কিংবা সিডি/ভিসিডি/ডিভিডি দোকান থেকে ভাড়া আনতে কিংবা কিনতে গেলে পরিচিত কেউ দেখে ফেলবে! কিন্তু ইন্টারনেট এর মাধ্যমে তা এখন বাড়িতে নিজের রুমে বসেই পাওয়া যায়!
ইন্তারনেটে তিনটে ''A'' আছে, এই তিনটি ''A'' (এলফ্যাবেট) এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে পর্ণ ইন্ডাস্ট্রির বিস্ফোরণ কে সংগায়িত করা হয়। এগুলো হল
Accessibility-- প্রবেশযোগ্য!
Affordability--সহজলভ্যতা!
Anonymity--পরিচয় গোপন রাখা!
এই তিনটি শব্দের সাথে আপনি এখন 'Addiction' ও জুড়ে দিতে পারেন ইচ্ছে করলে! এই চারটি জিনিস ই মূলত পর্ণোগ্রাফীকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিস্ফোরিত হতে সাহায্য করেছে! বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, বর্তমান বিশ্বে প্রতি সেকেন্ডে তিন হাজার পচাত্তর ইউ এস ডলার ব্যয় হচ্ছে শুধুমাত্র এই পর্ণোগ্রাফীর পেছনে! আর প্রতি সেকেন্ডে এই পৃথিবীর কত জন মানুষ পর্ণ দেখছেন জানেন?
২৮০০০৩৫৮ জন মানুষ!! প্রতি সেকেন্ডে ৩৭২ জন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী নেটে পর্ণ কিংবা এই রিলেটেড বিষয় খুজঁছেন! প্রতি ৩৯ মিনিটে যুক্তরাষত্রে আপলোড হচ্ছে একটি নতুন পর্ন ভিডিও! পর্ণোগ্রাফী থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে রাজস্ব আয় করে, ইনফ্যাক্ট সেই পরিমাণ আয় সেই দেশের টেকনোলজি কোম্পানী যেমন এপল/মাইক্রোসফট এদের মোট আয়ের চাইতেও বেশী!
মাইক্রোসফট, এমাজন, গুগল, ই-বে, ইয়াহু, নেটফ্লিক্স, এপল, আর্থলিঙ্ক এদের মোট আয়ের চাইতেও পর্ন ইন্ড্রাস্টির ইনকাম বেশী! আমি কিন্তু আপনাদের বানিয়ে একটি কথাও বলছি না! ইন্টারনেট ফিল্টার রিভিউ ডট কম এর মতে, ২০০৩ সালে সেক্স ইন্ড্রাস্ট্রি ৫৭ বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে সারাদুনিয়া জুড়ে যার মাঝে ১২ বিলিয়ন ডলার আসে আমেরিকা থেকে! এই ইনকাম কে আপনি কিসের সাথে তুলনা করবেন? প্রফেশনাল ফুটবল , বেজবল এবং বাস্কেটবল (আমেরিকার প্রেক্ষিতে) ক্লাব গুলোর সম্মিলিত কিংবা এবিসি, সিবিএস এবং এনবিসি এর সম্মিলিত ইনকাম ও এর আশে পাশে নেই! সেই বারো বিলিয়ন ডলারের মাঝে আরাই বিলিয়ন ডলার এসেছিল সুধুমাত্র ইন্টারনেট পর্ণোগ্রাফী থেকে!
২০০৩ সালে বার্না রিসার্চ গ্রুপ একতি জরিপ চালায়, যাতে বলা হয়, শতকরা ৩৮ ভাগ প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ মনে করেন নগ্ন ছবি দেখা দোষের কিছু নয়! তারা আরো মনে করেন এধরণের যৌণক্রিয়ার দৃশ্য দেখাটা কোন পাপ নয়! শতকরা ৫৯ ভাগ প্রাপ্তবয়ষ্ক মানুষ স্বীকার করেন সেক্সুয়াল চিন্তাভাবনা কিংবা ফ্যান্টাসি স্বাভাবিক, কোন দোষের বিষয় নয়! ৩৮ ভাগ মানুষের কাছে পর্নোগ্রাফীর ব্যবহার খুব ই স্বাভাবিক বিষয়, এতে কোন পাপ নেই!!
পর্ণোগ্রাফীর টুকিটাকি-৩
পর্ণোগ্রাফীর টুকিটাকি-২
পর্ণোগ্রাফীর টুকিটাকি-১
আজকে এই পর্যন্ত থাকুক, ক্ষুধা লাগসে, হাত ও ব্যথা হয়ে গেসে! ধন্যবাদ সবাইকে!
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৬ রাত ১১:২০