থ্রিজি প্রযুক্তি বা তৃতীয় প্রজন্ম প্রযুক্তি হচ্ছে এমন এক মোবাইল প্রযুক্তি যাতে জিএসএম, ইউএমটিএস,ইডিজিই, এবং সিডিএমএ-২০০০ ইত্যাদি প্রযুক্তি অন্তর্ভূক্ত আছে । এই প্রযুক্তির সহযোগিতায় ওয়াইম্যাক্স এবং ডিইসিটি সার্ভিস, ওয়্যারলেস ডাটা ,ভয়েস কল এবং ভিডিও কল সবই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আদান-প্রদান করা যাবে।
এই থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করে মোবাইলে “জিপিএস” বা গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম ডিভাইসের মাধ্যমে এবং স্যাটেলাইটের সহযোগিতায় একজন ব্যবহারকারীর অবস্থান জানা সম্ভব । এটি সাপোর্ট করে আপলিংক ৫.৮ এমবিপিএস পর্যন্ত এবং ডাউনলিংক ১৪ এমবিপিএস পর্যন্ত । নোকিয়া, মটোরোলা, সনি এরিকসন, ব্ল্যাকবেরি প্রভৃতি কম্পানি থ্রিজি সাপোর্টেট বিভিন্ন মডেলের হ্যান্ডসেট বাজারজাত করে আসছে ।
সর্বপ্রথম জাপানের বাজারে ১ অক্টোবর ২০০১ সালে “এনটিটি ডোকোমো” নামক মোবাইল অপারেটর কোম্পানি থ্রিজি মোবাইল প্রযুক্তি নিয়ে আসে । যদিও ইউএসএ তে প্রথম থ্রিজি নিয়ে কাজ করা শুরু করে “এমওনেট মোবাইল নেটওয়ার্ক” । আফ্রিকায় থ্রিজি প্রযুক্তি নিয়ে ২০০৪ সালে বাজারে প্রথম আসে “ইএমটিএল অপারেটর” । আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতে ২০০৮ সালে মাহনাগার টেলিফোন নিগাম লিমিটেড (এমটিএনএল) প্রথম থ্রিজি নেটওয়ার্ক সুবিধা নিয়ে বাজারে আসে৷
থ্রিজি প্রযুক্তির সুবিধা হলো - এই প্রযুক্তির সাহায্যে একটি সাধারণ থ্রিজি সাপোর্টেট মোবাইল হ্যান্ডসেটের মাধ্যমে অনেকগুলো কাজ আপনি সম্পাদন করতে পারবেন । থ্রিজি প্রযুক্তির আকর্ষণীয় হলো - আপনি যে অবস্থানেই থাকুন না কেন এর মাধ্যমে আপনি উচ্চগতির ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন । এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি ভিডিও ক্লিপস আদান-প্রদান, টিভি দেখা, খেলা দেখা , ভিডিও কনফারেন্স ,গেমস খেলা সবই খুব সহজে করতে পারবেন । ভিডিও কল , ইমেজ এডিটিং , মুভি ট্রান্সফার সবই এটি দিয়ে করা সম্ভব । আপনি যেখানে-সেখানে বসে যেকোন ফাইল পড়তে , সংশোধন এবং আপলোড করতে পারবেন । আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী যেকোন ফাইল ডাউনলোড করতে পারবেন । টেলি-মেডিসিন সার্ভিস , লেখাপড়া , যাবতীয় ই- সার্ভিস , ব্যবসায়িক কাজসহ অনেক কাজ খুব সহজে আপনি সম্পাদন করতে পারবেন ।
বাংলাদেশে থ্রিজি মোবাইল প্রযুক্তি :
বাংলাদেশে খুব শীঘ্রই থ্রিজি মোবাইল প্রযুক্তি চালু হচ্ছে । এ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার চীনের এক্সিম ব্যাংকের সাথে এক হাজার ৪৭৭ কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করেছে । ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ এর উপস্থিতিতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মোশারফ হোসাইন ভূঁইয়া এবং চীনের পক্ষে চীনের রাষ্ট্রদূত জেং জিয়ানি চুক্তি সম্পন্ন করেন । রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান টেলিটক বাংলাদেশ থ্রিজি মোবাইল প্রযুক্তি এর শুরুটা করবে । এই সংস্থাটি ২০০৫ সালে সেবা দেওয়া শুরু করে । থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু হলে এই নেটওয়ার্কের নানা সুবিধার কারণে আশা করা যায় টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে । এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আমাদের দেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীরা প্রযুক্তির আরও কাছে চলে আসবে । এর ফলে আমরা অতি সহজে ভয়েজ কল , ভিডিও কনফারেন্স করতে পারব ।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ফোন গ্রাহকরা উচ্চগতিসম্পন্ন ডাটা প্রেরণ করতে পারবে । টেলিটকের পর বেসরকারি অন্যান্য টেলিযোগাযোগ সেবাদাতা সংস্থাও চাহিদা অনুযায়ী থ্রিজি নেটওয়ার্ক পাবে । আর এজন্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন তৈরি করছে । পরে তাদের লাইসেন্স দেওয়া হবে । বর্তমানের আমাদের দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহাররকারীদের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটি । আমাদের দেশে এই প্রযুক্তি আমাদের দেশের মানুষদের জীবন মান বাড়াবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ।