তিনটিই উৎসব
ডা.সুরাইয়া হেলেন
জন্ম,মৃত্যু,বিবাহ,এই তিনটিই উৎসব!যে কোন শিশুর জন্ম হলে,প্রথম জিজ্ঞাসা,‘ছেলে না মেয়ে?’ছেলে শিশুর জন্মে,সবার মুখ হাসি-খুশি,আনন্দ!আর কোন জিজ্ঞাস্য নেই!আর কন্যা শিশুর জন্ম সংবাদে,মুখ কালা!তারপর বিরস বদনে জিজ্ঞাস্য,‘মাইয়্যার গায়ের রং কী?দেখতে কিমুন?’রং ফর্সা হলে,সবার মুখ ফর্সা আর কালো হলে,শিশুর রঙের চেয়েও সবার মুখের রঙ কালো আন্ধার!জন্ম হতে না হতেই চিন্তা শুরু,‘এই কন্যার বিবাহ হইবে কীভাবে?’
বিয়ের আসরে প্রধান আলোচ্য বিষয়,‘বউ দেখতে কেমন?গায়ের রং কী?নাক-চোখ-চুল,হাইট কত?’বউয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতা পি.এইচ.ডি-ই হোক আর যত বড় পদেই কাজ করুক,সে খোঁজ তত গুরুত্বপূর্ণ নয়!বরের ব্যাপারে প্রধান জিজ্ঞাসা,‘ছেলে করে কী?আয় রোজগার কত?’তারপর আসে তার শিক্ষাবিষয়ক প্রশ্ন!মেয়ে যদি দেখতে শ্যামলা রংয়েরও হয়,তবু বাড়িয়ে বলা হবে,‘আরে ,এই মেয়ে তো নিগ্রোরেও পাস করসে!এই কালো মেয়ের বাচ্চা-কাচ্চার বিয়ে শাদী হবে কীভাবে?’অনাগত ভবিষ্যৎ বংশধরদের বিবাহ বিষয়ক চিন্তায় বিস্তর আলাপ আলোচনার ডালপালা বিস্তার হতে থাকবে!আর বর যদি দেখতে কালো কুচকুচে,আবলুস কাঠের মতো,পাতিলের তলা বা জুতার কালির মতোও হয়,তাতে কিচ্ছু আসে যায় না!মনে হয় সন্তানের গায়ের রং,চেহারা-সুরৎ,পুরোপুরি নির্ভর করে মায়ের ওপর,বাবার ওপর নয়!
মৃতের বাড়িতে সবাই বেশ গম্ভীর হয়ে,দার্শনিক ভাবের কথাবার্তা বলতে থাকে!দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে বলবে,‘এই দুনিয়া কয় দিনের?সকলকেই একদিন তাঁর কাছে যাইতে হইবে!মানুষ সময় থাকতে বুঝে না!’ধনী-গরিব সবার মৃত্যুতেই বলতে শোনা যাবে,‘এইসব সন্তান জন্ম দিয়া,এতো কষ্ট কইরা মানুষ কইরা কী লাভ?ছেলে-মেয়ে কয়দিন বাপ-মার খোঁজ নিলো?মইরা বাঁচসে!এইসব কাফের আওলাদের হাত থাইক্যা রেহাই পাইসে!’
এরপর শুরু হবে কুলখানি আর চেহলামের খাওয়া-দাওয়া নিয়া ব্যাপক আলাপ-আলোচনা!গোশতের সোয়াদ কেমন হইসে?মুগডালটা আারেকটু কড়া ভাজার হইলে ভালো হইতো!বাবুর্চির হাতযশ কেমন?এবং নিশ্চিতভাবে আলোচনায় উঠে আসবে,অতীতে কোন বাড়ির কুলখানি,চেহলামের খাওয়া কতটা ভালো হয়েছিলো?এবং দেখা যাবে আজকের খানার চেয়ে পূর্বের সব খানাই স্বাদে-গন্ধে-পরিমানে অতুলনীয় ছিলো!
ওপরের তিনটিই কোনটি আনন্দ,কোনটি শোক!তবে আত্মীয়-বন্ধু-পরিচিতজন-পাড়াপ্রতিবেশি,নিমন্ত্রিত অতিথিদের কাছে তিনটিই একইরকম গীবৎ উৎসব!শুধুমাত্র জন্ম আর বিবাহের সময় পিতামাতা আর মৃত্যুর সময় সন্তানগন এই গীবৎ উৎসবের অংশীদার হতে পারে না!