ঈদের প্রতীক্ষা
ডা.সুরাইয়া হেলেন
বাবা-মা,
কোথায় আজ,,কেমন আছ তোমরা ?
তোমরা কি আমাদের খবর জান ?
কী করে দিন কাটছে আমাদের ?
তোমাদের ছেড়ে সংসার জীবনে
কেমন আছি,কোথায় আছি আমরা ?
আকাশ থেকে কি দেখতে পাচ্ছ তোমরা?
ঈদ এলে তোমরা যেমনি করে
আমাদের অপেক্ষায় থাকতে,
আমি আর আমার ছোট বোন
জামাই,বাচ্চাদের নিয়ে কখন আসব,,
আমাদের ময়মনসিংহের নিশ্চুপ বাড়িটা
কখন হাসি আনন্দ কোলাহলে ভরে উঠবে?
আমরা আসার আগ পর্যৃন্ত,তোমাদের
সে কী প্ল্যান প্রোগ্রাম আর কাজ !
ঘর-দেোর,উঠোন-বাগান পরিষ্কার করানো
লেপের কভার,মশারি,বিছানার চাদর,পর্দা,
সোফার কুশন-কভার ধুয়ে টুয়ে,
তোশক-বালিশ রোদ লাগানো,
আমাদের শূণ্য ঘরগুলো ঝেড়ে-মুছে সাজানো,
সে সময় বাড়িটা একবার করে রঙও করাতে,
আমাদের সমস্ত আরাম-আয়েশের আয়োজনে
হাঁক-ডাক আর ব্যস্ত সময় কাটাতে তোমরা !
বাবা,
তুমি তো বাজার আর বাড়ি,
বাড়ি আর বাজার করতে করতেই সারা !
মাছ,মুরগি,শাক-সবজি,কালিজিরা চাল,
ঘি,মশলা,সেমাই,চিনি,কিসমিস,
আরও কত কী !
খাসি-গরু কোরবানী হবে,
দা-ছুরি,বটি ধার করানো,কসাই ঠিক করা,
আমাদের সবার কাপড়-চোপড় কেনা,
একটুও অবসর মিলতো না তোমার ।
মায়ের খুঁতখুঁতানি,‘এটা পছন্দ হবে তো?
কী এনেছো?পছন্দ না হলে বদলে আনা যাবে তো?’
আমরা যখন বাড়িতে পা রাখতাম
সারাটা পাড়া যেন হেসে উঠতো
প্রাণ পেতো আমাদের নীরব বাড়িটা
কী কলরব,কী কলরব আর কোলাহল !
বড়দের আর বাচ্চাদের নিয়ে
তুমি যেতে কোরবানীর হাটে,
গরু-খাসি কিনে নিয়ে এলে,
আমরা মা-বোনেরা বারান্দায় ভীড় করে দাঁড়াতাম
এক নজর দেখতে,তা নয়তো,
তোমার চিৎকারে বেরিয়ে আসতেই হত !
মা,
তুমি তো রান্নাঘর থেকে বেরোতেই পারতে না!
কে,কী খাবে?কতরকম পিঠা-নাস্তা !
তোমার যেন কোন কিছুতেই ক্লান্তি নেই !
কে কোনটা ভালোবাসে,বলার আগেই হাজির !
পাড়াপড়শি আত্মীয়-স্বজন আসতো
আমাদেরকে দেখতে,সঙ্গে কাপড়-চোপড়,গরু-খাসি!
বাবা সবাইকে নিয়ে নামায পড়ে
কোরবানী নিয়ে ব্যস্ত,তারপর মাংস বিলানো ।
ঘরে মাংস এলে তোমার হাতের যাদুকরী
বিভিন্ন পদের রান্না,
কতরকম কাবাব,কাটলেট,কোপতা,কলিজা,মগজ!
কসানো মাংস প্লেটে করে পাঠাতে
সেদ্ধ হয়েছে কিনা খেয়ে দেখতে,
আসলে আমি ওটা খেতে পছন্দ করতাম
তাই তোমার এই ছল !
বাবা-মা গো,
হঠাৎ যদি কোন কারণে ঈদে
আমাদের বাড়ি আসা বন্ধ হয়ে যেতো,
সব আয়োজন ভেস্তে যেতো,
অন্ধকার হয়ে যেতো বাড়িটা আর
তোমাদের জগৎ-সংসার
কিসের ঈদ,কিসের কী !
তখন বুঝতাম না,
তোমাদের আদিখ্যেতা দেখে রাগ হতো ।
কিন্তু এখন বুঝি,কারণ-
আজ আমরা একই রকম অপেক্ষায় থাকি
ছেলে,মেয়ে,জামাই কখন আসবে,
কখন আসবে,ঈদে আসবে তো ?
আজ যে আমরা তোমাদের
স্থানটি দখল করে নিয়েছি !