২০১১ সালের ১৪ জুলাই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে যারা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছিল তাদের বিচার শুরু হয়। বিচার শুরু হবার পর থেকে দেশে একটি পক্ষ বিচারের বিরুদ্ধে অঘোষিত যুদ্ধ শুরু করেছিল। এ অঘোষিত যুদ্ধের যাবতীয় উস্কানিদাতা ছিল বিএনপি। শুধু স্বচ্ছ বিচারের দাবিই ছিল তাদের। এ স্বচ্ছ বিচারের দাবির মধ্যে ছিল বিএনপির সুদূর প্রসারি নীল নকশা। আর বিচারের বিরুদ্ধে সরাসরি মাঠে নেমেছিল মানবতাবিরোধী অপরাধী রাজাকারদের সংগঠন জামায়াত ইসলামি ও ছাত্র শিবির। হরতাল ও অবরোধের নামে নাশকতা-ভাঙচুর-অগ্নি সংযোগ, মানুষ পুড়িয়ে মারা থেকে শুরু করে তারা সব চেষ্টাই করেছে বিচারকে ঠেকাতে। এমনকি বিএনপির প্রচারণার বিরুদ্ধে সরকারেরও কোন উপায় ছিল না বিচারের প্রয়োজনীয়তা মানুষকে বোঝানোর। বিএনপি এমনভাবে বক্তৃতা-বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছিল যেন আওয়ামী লীগ সরকার বিচার শুরু করেই আর একটা অপরাধ করে বসেছে। যেন বিএনপির সেই স্বচ্ছ বিচারের দাবি না মানলে আর একটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হচ্ছে। বিএনপি ঠিক এভাবে এটা প্রতিষ্ঠিত করে যাচ্ছিল। বিশেষ করে জামায়াতের মুখপত্রের ভূমিকা পালন করেছিলেন- মির্জা ফখরুল। তিনিই সবচেয়ে স্বচ্ছ বিচারের দাবিতে সোচ্চার ছিলেন। সরকারের জন্য কোন সংগঠিত সমর্থন ছিল না। আমরা দেখেছি সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশে কি অবস্থা হয়েছিল। তাকে চাঁদে দেখা গেছে- এ গুজব ছড়িয়ে পুলিশ আর সাইদীর ভক্তদের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিয়েছিল। তারা সাঈদীর ভক্তই হোক কিন্তু এতগুলো মানুষ মারা যাবার পর কোন প্রতিক্রিয়া হবে না- তা নয়। আর জামায়াত-শিবির সমানে পুলিশকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। হত্যাও করেছে। তারপর গত বছর -২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি মানবতাবিরোধী অপরাধী কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল যাবজ্জীবন জেল খাটার শাস্তি ঘোষণার পর ফুঁসে উঠেছিল শাহবাগের তরুণ সমাজ। যারা এখন সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চেতনার বাতিঘর স্বরূপ।
এ কথা বলার একটাই কারণ বিচারটা শুরু হবার পর আমরা যদি জামায়াতের তা-বের কথা স্মরণ করি- অপরদিকে বিশাল একপক্ষ মানুষ যখন অসহায়ের মত তাদের তা-ব দেখছিল বা তা-বের শিকারে পরিণত হয়েছিল তখন শুধু কাদের মোল্লার ফাঁসির জন্যই নয় জামাতের আষ্ফালনের বিরুদ্ধে এ গণ জাগরণ ছিল অত্যন্ত জরুরি। জামাতের তা-বের কারণে মনে হয়েছিল এদেশে জামাত-শিবির ছাড়া আর কারও রাজত্ব নেই। অন্য যারা ছিলেন তাদের সবাইকে জামায়াত-শিবির জিম্মি করেছে। এমনকি এদেশের সচেতন মানুষের বিবেকও।
এর আগে আমরা মনে করতাম মুক্তিযুদ্ধের সব দায়-দায়িত্ব আওয়ামী লীগের। কিংবা শাহরিয়ার কবির, মুনতাসির মামুন, সুলতানা কামালসহ এ ধরনের কিছু মানুষের। রাজাকারদের বিচারের দাবিতে বাংলাদেশের মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন শহীদ জননী জাহানারা ইমাম। এটাও অবাক বিষয়- ওই সংগঠনটি ছাড়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে অন্যরা সংগঠিত হবার দায় অনুভব করেছে খুব কমই।
কিন্তু সরাসরি মাঠে নেমে এভাবে তাদের বিরুদ্ধে ৪২ বছরে আর কেউ এমন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়নি। এটা যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যারা অনেকেই মাঠে নামার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারেনি তাদের মানসিক শক্তি অনেক অনেক বাড়িয়েছে। এছাড়া যারা এখন একেবারেই শিশু-কিশোর তাদের জন্য একটা বার্তা পৌঁছে গেছে গণজাগরণ মঞ্চের শ্লোগান থেকে। এ আলোর মশালটা হাতে নিয়ে আমাদের আরও অনেক দূর এগোতে হবে। যাতে জামায়াত-শিবির এদেশটা গ্রাস করতে না পারে মিথ্যা ছড়িয়ে। এছাড়া দুঃসময়ে কিভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হয় তাও আমাদের শিখিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ।
জয়তু গণজাগরণ মঞ্চ। অভিনন্দন তাদেরকে যারা এ মঞ্চ গড়ে তুলেছেন, যারা এটার সঙ্গে যুক্ত থেকে অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছেন।