somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রামের দুঃখ চাক্তাই খাল নাকি চট্টগ্রামের মেয়র

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি এ লেখাটা তখনই লিখব ভাবছিলাম। কিন্তু আর সময় পায়নি। যাকে লিখব ভেবেছি তাকে আমরা চিনি বহু কর্মকীর্তির কারণে। তিনি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্ঠা। ড. হোসেন জিল্লুর রহমান। তার একটি সংগঠন আছে। নাম সম্ভবত ইনেশিয়েটিভ চট্টগ্রাম। এ সংগঠনের ব্যানারে তিনি চট্টগ্রাম নগরী পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তারই অংশ হিসাবে তিনি একদিন হঠাৎ চট্টগ্রাম শহরে এসে হাতে গ্লাভস ও মুখে মাস্ক লাগিয়ে ডাস্টবিনের ময়লা পরিস্কার করতে শুরু করলেন। এবং দিনব্যাপি কার্যক্রম চালিয়ে গেলেন। তিনি যদি আওয়ামী লীগ বিএনপির বা অন্য কোন রাজনৈতিব দলের নেতা হতেন তাহলে কী হত। মানে কি কী প্রচারণাই হত। আর যদি মন্ত্রী-এমপি হতেন তাহলে তো হৈ হৈ রৈ রৈ কা- ঘটত। কিন্তু তা কিছুই হলনা। পত্রিকাগুলো ও অন্য মিডিয়াগুলো সাধারণ একটা সংবাদই করল। অথচ তিনিও এক সময় সরকারের দায়িত্বে ছিলেন। দেশের একজন বিশিষ্ট নাগরিক। একজন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ। তার অনেক পরিচয়। কিন্তু তার কোন স্তাবকের দল নেই বলে তিনি আমাদের কাছে প্রাপ্ত মর্যাদাটুকু পেলেন না তার কাজের। কাজটা তিনি এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা মানুষকে সেই মর্যাদা দিতে জানি না যদি কারো বহর ভারি না থাকে। এটাই আমাদের সমস্যা। আসলে আমাদের সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার বহু রহস্য আছে। রহস্য মানে যে কথা আমি বলতে পারি না। মানে মিডিয়া কার নিউজ বেশি কাভারেজ দেয় আর কার নিউজ কম কাভারেজ দেয়। সেই যাই হোক। আসল প্রসঙ্গে আসি।
গতকাল সারা রাতব্যাপি চট্টগ্রামে বৃষ্টি হয়েছে। বলা যায়, বর্ষার প্রথমেই যেন পুরো বর্ষার বৃষ্টি হয়ে গেছে। কিন্তু এ বর্ষার আগে মাসখানেক হবে চট্টগ্রামে আরও একবার একটি জোরালো বৃষ্টি হয়েছে। তখন চট্টগ্রামে একটি পত্রিকায় জলাবদ্ধতার একটি ছবি ছেপেছিল। ছবিটা ছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র গাড়িতে করে গিয়ে উচুঁ একটি ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে নগরী জলে ভাসা চট্টগ্রামের নি¤œ এলাকা পরিদর্শন করছেন। মানুষ কোন কোন সময় ভান করে। সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদ বাংলাদেশের বানে-বন্যায় বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে বানভাসি মানুষের কাতারে নেমেছিলেন বানের পানিতে। আমরা দেখেছি। গত কয়েক বছর আগে থাইল্যা-ের প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা থাইল্যা-ে বন্যা হওয়ার পর বানের পানিতে নেমে মানুষের দুঃখ দুর্দশা ঘুরে দেখেন। বছর বছর চট্টগ্রাম শহর অল্প একটু বৃষ্টির পানিতে ডুবলেও কিন্তু চট্টগ্রামের মেয়র উপরেই থাকেন। তাকে কিন্তু আবদ্ধ পঁচা-গলা জলে নামানো যায় না। না তার কিন্তু কোন জলাতঙ্ক নেই। কোন নাগরিকও নেই তাকে নামানোর। বাস্তবতা হচ্ছে থাকসিন, এরশাদ বা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র - সকলের আক্কেল তো আবার এক রকম নয়। আক্কেলের কথা আসছে এ কারণে- তত্ত্বাবধায়ক সকোরের উপদেষ্টা যিনি -যেদিন তিনি চট্টগ্রাম শহরে এসে ডাস্টবিন থেকে ময়লা পরিস্কার করছিলেন তখন চট্টগ্রামের মেয়রের কি সেখানে যাওয়া উচিত ছিল না। যাননি। কেন যাননি? আমি কোন আক্কেল বা কা-জ্ঞানের কথা বলছি না।
মানুষ দেখে শেখে। গেলাম না । তাহলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা তাকে কি শিক্ষা দিল। আর এটা যদি আদেশ হতো। কিন্তু তা হয়নি। কি দরকার- উদাহরণ , শাসন, অনুকরণ, আদেশ! নাকি ডা-া। হোসেন জিল্লুর রহমানের আসার খবর নিশ্চয়ই চট্টগ্রামের মেয়র তো পেয়েছেন। পেলে তার কি করা দরকার ছিল- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একজন প্রাক্তন উপদেষ্টার ‘আমলকে’ সম্মান করার জন্য। অন্তত সিটি কর্পোরেশনের তার পরিচ্ছন্নতা কর্মিদের আদেশ দেয়া -যাতে নগরী সাফ-সুতরো থাকে। কোন ডাস্টবিনে ময়লা পড়ে থাকবে না। কিন্ত ওই দিন থেকে আমি নগরীর আশে পাশের ডাস্টবিনগুলো লক্ষ্য করেছি। শহরের পরিস্থিতিও লক্ষ্য করেছি। চারপাশে সেই ময়লা আবর্জনার দোজখ। কিন্তু দোজখেই বেশ খোশ মেজাজে আছে নগরবাসী।
গতকাল বৃহস্পতিবারের রাত থেকে শুরু করে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গোটা চট্টগ্রাম নগরীর নি¤œ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। এ মেয়রের আগেও নগরীতে বৃষ্টি হলে পানি জমত। নি¤œ এলাকা তলিয়ে যেত। কোমর-বুক অব্দি পানি হত। কিন্তু বৃষ্টি শেষ হলেই পানি নেমে যেত। এমনকি কোন কোন জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে থাকার পরিমাণও কমে এসেছিল। সেই বুক অব্দি পানি এখন চট্টগ্রাম শহরে হয় না হয়তো। তবে বৃষ্টি হওয়ার পরও ৫/৬ ঘণ্টা পানি জমে থাকা আগে ছিল না। এটা হচ্ছে চট্টগ্রাম নগরীর নতুন মেয়রের অবদান। তার চমৎকার যোগ্যতা। মানুষ পানিতে ভাসে আর তিনি ব্রিজে উঠে মিটি মিটি হাসেন। কি চমৎকার মেয়র তিনি।
চাক্তাই খাল খননে টাকা সঙ্কট হতে পারে হয়তো। কিন্তু নালা নর্দমা পরিস্কার করার টাকা সঙ্কট তো নিশ্চয়ই নেই। ছাগলও বৃষ্টি আসার আগে ম্যাঁ ম্যাঁ ডাক ছাড়ে কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন বর্ষা শুরু হবার আগে চট্টগ্রামের নালা নর্দমাগুলো পরিস্কার করার কথাই ভাবতে পারে না। তারা মনে করছে কাজ হচ্ছেই। প্রতি দিন, প্রতি সপ্তাহে , মাসে মাসে চসিক মিটিংও করে। কিন্তু কোন ফায়দা নেই। টাকাও খরচ হচ্ছে বিশাল বাজেটের। কিন্তু তারা তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের কাছ থেকে কাজ আদায় করতে পারছে না। দুর্বল শাসন, ধ্বজভঙ্গ প্রশাসন। বাস্তবে তারা কিন্তু কুম্ভকর্ণ নয়। আসলে তারা এর চেয়ে বেশি মানের নগরসেবা বোঝে না বা নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার মত যোগ্য নয়। আর তাদের কাছে কেউ জবাবদিহিও চায় না। এটাই।
এ সবের আরও একটি চমৎকার উদাহরণ আছে। উদাহরণটা হচ্ছে - চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। উন্নয়নের নামে- শুধু আবেগের বশে কোন পরিকল্পনাই ছাড়াই চট্টগ্রাই শহরে তিনি জনগণের হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে ফ্লাইওভার নির্মাণ করেছেন। যে ফ্লাইওভার কারো কোনো কাজে আসছে না। কিছুদিন আগে চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউটে বঙ্গবন্ধু পরিষদ আয়োজিত চট্টগ্রামের যানজট ও উন্নয়ন সংক্রান্ত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এক বক্তা বলেছেন, যে ফ্লাইওভার বানানোর জন্য সিডিএ’র চেয়ারম্যানের নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল -এটি পরিকল্পনার সময় প্রধান আর্কিটেক্ট নাকি প্রকৌশলি এই দুটি ফ্লাইওভারের বিরোধিতা করেছিলেন। ওই দিন ওই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রায় ৯০ শতাংশ প্রকৌশলী ওই দুটি ফ্লাইওভারের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। এরমধ্যে সিডিএ চেয়ারম্যানের পালা আসলে তিনি দাঁড়িয়ে বলেন, আজ সিডিএ কাজ করেছে বলেই তার সমালোচনা হচ্ছে, যখন কাজ ছিল না তখন সমালোচনাও ছিল না। এজন্য তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
চিন্তা করেন, এ ফ্লাইওভার বানানোর জন্য ১১ জন মানুষ নিহত হন ফ্লাইওভার ধ্বসে পড়ে। খরচ সম্ভবত কয়েক হাজার কোটি। এরপরও ফ্লাইওভার কোন কাজে আসছে না। কিন্তু সিডিএ চেয়ারম্যানের বগল বাজানোর শেষ নেই। মানুষের জান-মাল ও জনগণের অর্থ সম্পদের ব্যাপারে কতটা দায়িত্ব জ্ঞানহীন হলে জনগণের সেবার নামে এতটা অন্ধ ও যুক্তহীন আবেগ নিয়ে এরা বসবাস করেন।
মাস্টারদা সূর্যসেনের শহর চট্টগ্রাম। একজন নোবেল লরিয়েট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শহর চট্টগ্রাম। আরও অনেকেই আছেন। বাংলাদেশে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম শহর। কিন্তু এমন শহরের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বে যারা অধিষ্ঠিত তাদের কাজকর্ম এবং যোগ্যতা দেখে আপনি কি বলবেন।
তারা অযোগ্য, আবেগি বা পরিকল্পনাহীন- কিভাবে বলবেন। উল্লেখিত ২ জনই কিন্তু সফল ব্যবসায়ী। তাদের ব্যবসা ঠিকই চলছে। জনগণের টাকা, জান মাল, নাগরিক মর্যাদার ক্ষেত্রেই কেবল যাচ্ছেতা।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:০২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ মিসড কল

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে ইসরাইল বিরোধী প্রতিবাদ বিক্ষোভ

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ০৩ রা মে, ২০২৪ সকাল ৮:০২

গাজায় হামাস উচ্ছেদ অতি সন্নিকটে হওয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিউইয়র্ক ও লসএঞ্জেলসে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পরেছিল। আস্তে আস্তে নিউ ইয়র্ক ও অন্যান্ন ইউনিভার্সিটিতে বিক্ষোভকারীরা রীতিমত তাঁবু টানিয়ে সেখানে অবস্থান নিয়েছিল।


... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×