সুরেশ কুমার দাশ
আমাদের শনৈ শনৈ উন্নতি হচ্ছে। এ কথা আমরা অহরহ শুনছি। বাস্তবে কি হচ্ছে কতটাই বা জানি।
অন্যের করে দেয়া কিছু নড়াচড়া করে খেতেই আমরা পছন্দ করি। নিজেরা মৌলিক কিছু করার চিন্তা করি না। তার ধারে কাছেও আমরা নেই। আমরা এমন জোরে দৌঁড়ানোর চেষ্টা করছি যেখানে সব কিছুই অন্যের কাছ থেকে পাওয়া। আমরা আমাদের খুঁজতে গেলে আসলে কি পাই। কিছুই পায় না। লালন, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল জীবননান্দসহ অন্যরা এবং আমাদের রাজনীতিবিদরা। বঙ্গবন্ধু বা অন্য যারা ছিলেন। তারাই আমাদের বর্তমান পথ প্রদর্শক। এর বাইরে আমরা চলছি নিজেদের খাওয়া পড়ার তাগিদে। উল্লেখিত ব্যক্তিদের নাম বেচেই বাঁচার চেষ্টা করছি। কিছুটা তাদের দেখানো পথেই। অথচ আমাদের অনেক কিছু করার কথা ছিল। অন্তত চেষ্টা থাকার দরকার ছিল। আমরা যতই সচেতনতার কথা বলি, সরাসরি টাকা আয়ের পথ ছাড়া আমাদের আর কোন সচেতনতার আওয়াজ নেই। এটাই আমাদের উন্নতির একমাত্র মাপকাঠি হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসলে সেখানেও কি হচ্ছে আমরা নিজেদের চোখ দিয়ে দেখছি ন।
এতটা ভড়ং করার একটাই কারণ - চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) আয়োজনে কক্সবাজারে আজ(মঙ্গলবার) থেকে শুরু হচ্ছে আন্তজার্তিক কনফারেন্স ৯ঃয ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঋড়ৎঁস ড়হ ঝঃৎধঃবমরপ ঞবপযহড়ষড়মু (ওঋঙঝঞ ২০১৪)। যেখানে যোগ দিচ্ছেন প্রায় শতাধিক বিদেশি বিজ্ঞানী। থাকবেন আমাদের ২ শতাধিক বিজ্ঞানীও। কিন্তু এতবড় একটা খবর কোন পত্রিকার পাতা বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া কাভার করেনি। এতবড় একটা অনুষ্ঠানের কোনো আগাম খবরও কেউ প্রকাশ করেনি। সেখানে মঙ্গলবার উদ্বোধনী দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু তিনিও সেখানে গিয়ে গতানুগতিক কথা বার্তা বলে আসলেন। এতগুলো বিজ্ঞানীর সান্নিধ্য তার জন্য কোনো অনুপ্রেরণা হল না। এটা একটা অবাক বিষয়। যখন একজন অন্যকে অনুপ্রাণিত করতে পারে না।
বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে গোটা পৃথিবীর বর্তমান ও ভবিষ্যত গড়ে উঠছে। আর সেই বিজ্ঞানীরা সমাজ ও রাষ্ট্রে কতটা অবহেলিত। তারা কোনো জায়গা থেকে অনুপ্রেরণা বা সামাজিক ও রাষ্ট্রের উপর মহলের কোন সম্মান পায় না।
অতি সম্প্রতি এদেশের বিজ্ঞান শিক্ষা নিয়ে কথা উঠেছে। বিশেষ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ক্ষেত্রে। যেখানে আমাদের ছাত্ররা বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি দিন দিন আগ্রহ হারাচ্ছে। বা ছাত্রছাত্রীরা বিজ্ঞান শিক্ষায় তেমন সাফল্য দেখাতে পারছে না।
বাস্তবতা হচ্ছে বিজ্ঞান শিক্ষা ও বিজ্ঞান মনষ্কতার জন্য যে যেখানে দায়িত্ববান আছে- তাদের সচেতনতা কতটুকু। তারা যদি সত্যি সচেতন হন -তাহলে অন্তত কক্সবাজারে এ সম্মেলনের আগাম একটা খবর আমরা পত্রপত্রিকায় দেখতাম। যারা এদেশে অনকে কিছুই করে- এমন দাবি করে- অন্তত মনে মনে। এমন একটা সম্মেলনে- কোন মিডিয়াই মনে হয় সংবাদ কাভারেজের জন্য রিপোর্টার পাঠায়নি। হয়তো লোকাল প্রতিনিধিরাই যতটুকু খবরটা সংগ্রহ করবে।
প্রথম আলো এদেশে গণিত অলিম্পিয়াড করে। এটার ব্যাপক কাভারেজ দেয়। এক অংশ মানুষের মধ্যে বেশ সাড়াও পড়ে। চুয়েটের তত্ত্বাবধানে কক্সবাজারে এত বড় একটা কর্মকা-ের কোন কিছুই দেখা গেল না। অন্তত সেখানে অনেকগুলো বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণ থাকতে পারত। তারা যোগ দিতে পারত। খবরটা প্রকাশ হলে অনেক ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও যাওয়ার ইচ্ছা তৈরি হত। অর্থাৎ যাওয়ার ও দেখার এবং বিজ্ঞানীদের বক্তব্য শোনার সুযোগ পেত ছাত্রছাত্রীরা। যারা বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে তারাও যোগ দিতে পারত।
আমাদের মতো দেশে এ ধরনের আয়োজনগুলো অনেকবেশি ঘটা করে, বড় পরিসরে আয়োজন করা দরকার। এদেশে ছাত্রছাত্রীদের হাত- পা- চোখ বেঁধে সাঁতরানোর জন্য উপদেশ দেয়া হচ্ছে। উপদেশ দাতার অভাব নেই। কিন্তু উপদেশ দাতাদের জন্য কোনো উপদেষ্টা নেই। অধিকাংশই কা-জ্ঞানহীন মনে হয় এসব উপর তলার উপদেশ দাতাদের।
কৃতজ্ঞতার একটা বিষয় আছে। প্রযুক্তি দিয়ে আমরা খায়। মনে হয় উচ্চমানের কোন প্রযুক্তিও আমরা খাওয়ার জন্যও ব্যবহার করতে শিখিনি। বা জানিনা।
কিন্তু কৃতজ্ঞতার বিষয়টি - বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে। বিজ্ঞানের এত উপকারিতা পৃথিবীতে- আমাদের টিকে থাকার বিষয়টিকে স্বাচ্ছন্দে ভরিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যাদের অবদান - তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর কথা আমরা ভুলে যায়। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে-যে পাটের জিনোম আবিষ্কার করেছে - বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা সেই - পাট খাতকে আবার ডুবিয়ে দিচ্ছে। এমনি অনেক বিষয় আছে। যা বিস্তারিত লেখা যায়। বাস্তবে এদেশের বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান শিক্ষার অবস্থা কি? পৃথিবীতে বিজ্ঞান এমন এক উত্তুঙ্গ পর্যায়ে আছে- আমরা সেখানে কোনো অংশীদার নই। মাত্র খেয়ে বাঁচার জন্য প্রযুক্তিকে গ্রহণ করেছি।
এখানে উল্লেখ করছি ওঋঙঝঞ(ওহঃবৎহধঃরড়হধষ ঋড়ৎঁস ড়হ ঝঃৎধঃবমরপ ঞবপযহড়ষড়মু) বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গবেষকগণের নিকট তাদের সর্বশেষ গবেষণালব্ধ ফলাফল সবার সামনে তুলে ধরার একটি মাধ্যমে হিসেবে সমাদৃত। বাংলাদেশ থেকে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোরিয়া, রাশিয়া, চীন, মঙ্গোলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মোট ৮টি শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান ওঋঙঝঞ এর বর্তমান সদস্য। প্রতিবছর আইএফওএসটি কনফারেন্সের আয়োজন করে সদস্য দেশুগুলোতে। এটির প্রথম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল কোরিয়ায়- উলসান ভার্সিটির তত্ত্বাবধানে। মূলত বিজ্ঞানীরা কনফারেন্সে একাডেমিক, প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তাদের প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এবছর বাংলাদেশে এটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এটি আয়োজন করে। তিন দিন চলবে এই সম্মেলনটি।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে কিছু কথা বলেই শেষ করছি। তাদের অনেক কাজকর্মই এদেশে একেবারে নতুন ধরনের। এবং প্রেরণা সৃষ্টিকারি ও আশা জাগানিয়া। ভবিষ্যতে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক সুনাম অর্জন করবে বলেও আশা করছি।