somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূরত্বটা ক্রমশ বাড়ছে (বিচ্ছেদ)

১২ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দেয়াল ঘড়িটা আরো একবার শব্দ করে বেজে উঠলো। বিছানায় শুয়ে আবির আওয়াজটা আনুমানিক তিন বার শুনলো। হালকা মিষ্টি একটা আওয়াজ। আওয়াজটা একবারে চলে যায় না, রেশ রেখে যায় বেশ কিছুক্ষণ। ঘরে তেমন কোনো আলো নেই। ব্যালকনির জালানো মৃদু আলো পর্দার ফাক দিয়ে ঘরে প্রবেশ করছে। ছিমছাম সাজানো ঘরটার অন্ধকার পুরোপুরি না কাটলেও দেয়াল ঘড়িটা বেশ দেখা যাচ্ছে। রাত তিনটা বাজল। জানালার পর্দাগুলো এলোমেলোভাবে বাতাসে কাঁপছে। আলো আর অন্ধকারে এক অদ্ভুত পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে ঘরটায়।গ্রিলের সাথে বাধা উইন্ড চাইমের আওয়াজ টাও বেশ ভালো লাগছে আবিরের। টুংটাং শব্দ করে বাতাসের সাথে কথা বলছে। আবিরের পাশে নবনী শুয়ে আছে। ঘুমিয়ে আছে অথবা ঘুমায়নি। জেগে থেকে এক ঠায় শুয়ে থাকার অভ্যাসটা ভালোই রপ্ত করা আছে ওর। ডাক দিলে হয়তো অবাক করে সারা দিয়ে উঠবে। বিছানায় শুয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে না আবিরের। উঠে কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করতে পারলে ভালো হতো। আবার হাঁটাহাঁটি করতেও ইচ্ছে করছে না। হাঁটাহাঁটি করতে গেলে আবার তুলে রাখা সব জটপাকানো চিন্তাগুলো গুটি গুটি পায়ে চলে আসবে। আবির বিছানা থেকে উঠে সন্তর্পণে পর্দা সরিয়ে ব্যালকনিতে আসলো। মুহূর্তেই এক টুকরো ঠান্ডা বাতাস ছুঁয়ে গেল তাকে। বাতাসে মিষ্টি ফুলের সৌরভ। আশপাশের আম গাছগুলোতে মুকুল ছেড়েছে। অসম্ভব সুন্দর বুনো একটা সুবাসে অঞ্চলটা ভরে গেছে। চৈত্র শেষ হয়ে বৈশাখ সমাচার শুরু হলো কেবল। এরই মাঝে আম গাছ গুলো বেশ অহংকারী হয়ে উঠেছে। গন্ধে বর্ণেতাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতেই গাছগুলো ফলেফলে ভরে যাবে। সুতরাং কিছুটা অহংকার তারা করতেই পারে।

নবনীর সাথে শেষ কবে আবিরের ঠিকমত কথা হয়েছিল মনে করতে পারছে না সে। দিনক্ষণের হিসাব রাখা হয়নি। দিনক্ষণ আর আংগুলের কর গুনে বের করলে দের দুই বছরের কম হবে না। অথচ একই ছাদের নিচে বাস করে আসছে বিগত পাঁচটি বছর। প্রেমের বিয়ে ছিল তাদের। দীর্ঘ তিন বছর প্রেম করে রীতিমতো দুই পরিবারের সাথে যুদ্ধ করে বিয়ে করেছিল তারা। ভরা বর্ষায় বিয়ে হয়েছিল তাদের। ঝুম বৃষ্টি হয়েছিল সেদিন রাতে। চারদিক ভেসে গিয়েছিল পানিতে। নবনী অনেক খুশি ছিল সেই দিন। বিয়ের মস্ত ভারী কাতান শাড়িটা পড়ে বৃষ্টিতে ভিজেছিল এই ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। বাসর রাতে চা খাবে বলে আমাকে তাড়া দিয়ে আগে থেকেই ইলেকট্রিক কেটলি কিনিয়েছিল। বাসর রাতটা ও যেমন চেয়েছিল ঠিক ঠিক তেমনই হয়েছে। ঝুম বৃষ্টি বাইরে, লোডশেডিং এর বদৌলতে অন্ধকারে ঢাকা বাড়ি, মগ ভর্তি লাল চা আর তার পছন্দের কিছু গান। আমরা সারারাত গল্প করেছিলাম সেদিন। এটা ওটা সেটা কত যে গল্প! স্কুলের বাচ্চাদের মত হাজারো এলেবেলে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসেছিলাম আমরা, যেন স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার তারা, তাই সব গল্প আজকেই শেষ করে বাড়ি ফিরতে হবে। নবনী বলেছিল আকাশে নাকি দুটি বাচ্চা আমাদের কাছে আসার জন্য কাঁদছে। একটি ছেলে একটি মেয়ে। ওদেরকে নাকি আমাদের কাছে নিয়ে আসতে হবে। নাম ঠিক করা নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আবিরকে নবনীর বেশকিছু চিমটি ও খামচি সহ্য করতে হয়েছিল। বিয়ের সাত দিনের মাথায় নবনী আর আবির হানিমুনে পাহাড়ে গিয়েছিল। পাহাড়ের প্রতি নবনীর এক গভীর টান ছিল। তার আবদার ছিল, আবিরের যখন অনেক টাকা হবে তখন যেন সে নবনীকে সবচেয়ে উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় একটা ঘর বানিয়ে দেয়, ও ঘরে বসে নবনী মেঘ দেখবে আর আবিরের সাথে গুটুর গুটুর করে কথা বলবে। সেই আবিরের সাথে নবনীড় কথা হয়না প্রায় দুই বছর অহং, মান অভিমান আর ভুল বোঝাবুঝির ভিড়ে দূরত্ব বাসা বেধেছে। কিছু কিছু ব্যাপারে কেউই আপস না করার দরুন দুজনের মাঝে আজ হিমালয় সমান পাহাড় তৈরি হয়েছে। নবনীর ইচ্ছামত আজ ঘর হয়েছে মনে পাহাড়ে দুইজনের, তবে আলাদা আলাদা। একটা থেকে আরেকটা দূরত্ব সহস্ত্র মাইল। না বলা কথা আর জেদের দাপটে দুইজনের অবস্থান আজ দুই মেরুতে।

ভোর হচ্ছে। আকাশে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বাতাসে পরিবর্তন টের পাচ্ছে আবির। সকাল হলেই উকিলের কাছে যেতে হবে। টেবিলের ওপর রাখা ডিভোর্স লেটারে নবনী গতকালই সাইন করে দিয়েছে। আবিরের সাইন করা বাকি কেবল। বৃষ্টিটা বাসর রাতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে আবিরকে । প্রকৃতিও একটি সম্পর্কের ইতি টানতে প্রস্তুত। মঞ্চ প্রস্তুত। ফ্ল্যাশব্যাকে পুরনো স্মৃতি দেখানো হচ্ছে।আবিরের ইচ্ছে করছে নবনীকে বিছানা থেকে টেনে তুলে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে আর বলতে, ‘অসম্ভব ভালোবাসি তোমাকে’। যদি এই বৃষ্টি ধুয়ে দিয়ে যেতো আবিরের সব অশ্রু ধারা! যদি এই বৃষ্টি দূরত্বের বড় বড় পাহাড় গুলো ভেঙে গুঁড়িয়ে দিত নিমিষেই! আবিরের কপল বেয়ে নামা অশ্রুধারা আর বৃষ্টির পানি এক হয়ে যাচ্ছে, ভোর হচ্ছে, বৃষ্টি বাড়ছে, সময় চলে যাচ্ছে, দূরত্বটা ক্রমশ বাড়ছে।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ১:১৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস শুধু দেশের রাজধানী মুখস্ত করার পরীক্ষা নয়।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:১৪

"আমার বিসিএস এক্সামের সিট পরেছিলো ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এ, প্রিপারেশন তো ভালোনা, পড়াশুনাও করিনাই, ৭০০ টাকা খরচ করে এপ্লাই করেছি এই ভেবে এক্সাম দিতে যাওয়া। আমার সামনের সিটেই এক মেয়ে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×