(ডিসেম্বরের একটি সত্য ঘটনা)
আনুমানিক ২০ বছর আগের ঘটনা।আমাদের বাসার সামনে একটি বড় মাঠ ছিল।আকর্ষনীয় মাঠটি ব্যবহৃত হতো খেলাধুলা, বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান , সাংস্কৃতিকঅনুষ্ঠান ও এলাকার অন্যান্য কর্মকান্ডে। শীতের অনেক রাত পর্যন্ত ছেলেরা ব্যাডমিন্টন খেলতো। জাতীয় সঙ্গীত দিয়ে শুরু হত বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলো আর এই কাজটি করতেন মুলত এলাকার শিল্পীরাই।
এমনি এক ১৬ই ডিসেম্বরকে সামনে রেখে মাঠে চলছিল দেয়ালপত্রিকা প্রতীযগিতা এবং অন্যান্য সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড। মাঠটার বেশীর ভাগ অংশই বাসায় বসে দেখা যেত। বিকালে চা ,নাস্তা খেতে খেতে আমরা আমাদের দোতলা বাসার বড় জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতাম মাঠটার দিকে।
শীতের কূয়াসাচ্ছন্ন সকাল। কেন জানি ঐদিন খুব সকালে ঘুম থেকে উঠলাম।বাসার সবাইকে একটু অন্যরকম মনে হচ্ছিল।জানালায় তাকাতেই দেখলাম ,মাঠটার ঠিক এক প্রান্তে পিচঢালা রাস্তার পাশে হালকা উচু একটু মাটির অংশ,তার ওপর একটি ১৭/১৮ বয়সের একটি মেয়ে মৃতদেহ পড়ে আছে ।
সালোয়ার ,কামিজ পরা মেয়েটিকে কোনভাবে ঢাকা হয়েছে তার ওড়না দিয়ে।বাসা থেকে এর বেশী বোঝা যাচ্ছিলনা।তার ওপর ঘিরে থাকা ২০/২৫
জন লোকজন ।যতই সময় যাচ্ছিল মেয়েটিকে ঘিরে থাকা লোকসংখা ততই
বাড়ছিল।সকাল ৯টায় পুলিশের একটা বড়ো ভ্যান এসে মৃতদেহ সরিয়ে নেয়।
ফজরের নামাজের সময় লোকজন যখন লোকজন মসজিদে যচ্ছিল,মেয়েটি নাকি
খুবই কাতর অবস্হায় তাদের ডাকছিল ঠিক সেখানে শুয়ে শুয়ে।অন্ধকারে কেউ কেউ তার কাছে যেতে অসম্মতি জানালেও একজন বৃদ্ধলোক তার কাছে যেতেই মেয়েটি কাতর কন্ঠে বলেছিল"বাবা একটু পানি দেবেন"। বৃদ্ধলোকটির বাসা দুরে বিধায় কোনভাবে তার পরিচিত এক বাসা থেকে পানি এনে পান করান। এর পর নামাজ
পরতে সবাই চলে যায়। ফিরে এসে মেয়েটিকে মৃত অবস্হায় পায়।
সকলের অপরিচিত মেয়েটির মৃতদেহ উত্তর ,দক্ষিন বরাবর মাথা ও পা ঘুরিয়ে আনার জন্য সাহায্য করেন তিন মহিলা।তাদের একজন আমাদের পরিচিত। তার কাছে থেকে দেখার বিবরন অনুযায়ী "মেয়েটির গলায় ছিল চেইন,কানে বালি ও আঙুলে আংটি।যা স্বর্নের হওয়া স্বত্বেও অক্ষত ছিল।মুখ ও শরীরের বিভিন্ন অংশে ছিল জমাট রক্ত ও আঘাতের চিহ্ন। উজ্জ্বল বর্নের লাবন্য মুখের মেয়েটির
পরনের কাপর ছিল উল্টো করে পরানো" ।
৬/৭ বছরের এই আমি আমার মাকে অনেকবার জিগাসা করেছিলাম "মেয়েটি কে?
কেন? কি হয়েছে?কেন মেয়েটির পরনের কাপর উল্টো করে পরান?
উত্তর না পাওয়া এই আমার অবস্হা এমন হয়েছিল অনেকদিন পর্যন্ত আমি ভোরবেলা জানালায় বসতে পারিনি।
সেই ডিসেম্বরে আমাদের মাঠের কোনো আয়োজন বন্ধ হয়নি। এমনকি হয়নি মেয়েটাকে নিয়ে কোন শোক সভা।
প্রতি ডিসেম্বরে অনেক চেষ্টা করেও ভুলতে পারিনা, বার বার আমার কানে বাজে স্বাধীন দেশের মাটিতে এই বিজয়ের মাসে পরে থাকা, সকলের এড়ানো ঐ মেয়েটার তৃষ্নার্ত কন্ঠস্বর।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৮:৪৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




